শোমেশ্বর
শোমেশ্বরের হাতের খুঁটি,
তোমার আমার দাবার ঘুটি।
আগ বাড়ালেই সৈন্য কাটি,
নৌকা বোঝাই ঘোড়া-হাতি!
শোমেশ্বরের নাম পদবী
ঘোড়ার মতোই আড়াই ঘরি!
এই মনে হয় বোসের বসু,
ঘোটষে কিংবা নিমাই-তসু!
শোমেশ্বর, ও শোমেশ্বর!
দেখতে যাবি আবার চল!
সাদা-কালো ঘরের শেষে,
জীবন নদীর উজান-ভাটি!
মৃত্যুর পরও
মৃত্যুর পরও আমি বেচেঁ আছি,
আজ বারোটি বছর! গুনে গুনে
চার হাজার তিনশত আশি দিন!
মনে পড়ে না তখন মরবার কারণ!
তবে কারণ খোঁজারও নেই প্রয়োজন!
আরো বারো বা চব্বিশ বছর অথবা
বেশি করে হলে ছত্রিশ বা পঞ্চাশ বছর!
মৃত আমি বেচেঁ থাকতে চাই তোমাদের
মাঝে, জীবিত সব তোমাদের মাঝে।
ছন্দপতন
দিনের একটা সময়-
আমাদের বহু দিনের না বলা নানান কথারা,
নিজেদের মাঝে আলাপটা সেরে নেয়, সন্তর্পনে।
দিনের একটা সময়-
হয়তো আমার মাঝে আরো অনেকগুলো কথা,
জমতে থাকে অন্য কোনো এক দিন গল্পের আশায়!
কিন্তু আমি জানি,
আমার অবচেতন মনে বোনা এসব গল্পরা-
চেতনার জগতে একটা ঝড় তুলি তুলি করেও,
ঠিক ঠিক শান্ত হবে!
আমি এও জানি,
ঝড়ের মাঝে সমুদ্রের কিনারায় দাঁড়াতে হয়,
সমুদ্রের জল আর বাতাসের মাঝে ঝড়টাকে-
আলিঙ্গন করার জন্য!
আমাদের বড়বেলা
তোমার আমার ছোটবেলাটা অনেক রঙিন,
বড়বেলাটাও কি একেবারে নিরেট রঙহীন!
রঙিন আর রঙহীনের মাঝে সীমারেখাটা কি?
জীবনটা রঙধনু বানাতে চাওয়া অনেকে রঙহীন,
সাদামাটা অনেকের গায়ে আবার রঙের ছড়াছড়ি!
রঙধনু আর রঙহীনতার মাঝে ব্যবধান কতটুকু?
একটা আতশকাঁচ? না কি ব্যবধানটা-
জীবন আর মরণের!
আমাদের ছোটবেলায়-
মনের মাঝে কি একটা বড়বেলা উকি মারে?
সে কি উকি মারে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে! মিছে সব স্বপ্ন?
'কবে বড় হবো?' - প্রশ্নটা সেদিনের মতো
আজও বড্ড হাস্যকর!
তার চেয়ে হাস্যকর বড়বেলা নিয়ে-
আমাদের দেখা ছোটবেলার সব স্বপ্ন!
এর ষোল আনাই কি মিছে?
আমাদের বড়বেলায়-
চিন্তার মাঝে কি একটা ছোটবেলা খেলা করে?
সে কি খেলাচ্ছলে বুনতে থাকে একরাশ আশা!
যে আশাগুলো হয় একেবারে অন্য এক বড়বেলার!
তার সবটাই কি একেবারে মিছে?
'ইশশ! যদি আবার ছোট হতে পারতাম!'-এই আশাটা
সবচেয়ে বড় মিছে হয়েও, মিছে নয়!
রক্তিম আকাশ
এমন একটা রক্তিম লাল আকাশ-
আমারও ছিলো,
সেটা কিভাবে জানি হারিয়ে গেছে জুপিটারে,
বহু বছর আগে!
জুপিটারের চারটি উপগ্রহ আইয়ো, ইউরোপা,
গ্যানিমেড আর ক্যালিস্টো দেখা হয় না আর,
দেখা হয় না জুপিটারের গ্রেট রেড পয়েন্টও!
পৃথিবীর নাওটা নিয়ে পাড়ি কি দিবো জুপিটারে?
সৃষ্টি বা মৃত্যু
একটা 'ধ্বনি' ঠিক 'শব্দ' হবে হবে করেও,
আর সৃষ্টিই হলো না! বা হলেও তাকে কি-
ঠিক শব্দই বলা চলে? অন্য শব্দদের মতো!
আচ্ছা যার সৃষ্টি হবে হবে করেও হলো না,
তার কি মৃত্যু আছে? না কি সে থাকে-
সৃষ্টির অপেক্ষায়?
সৃষ্টির আগে সে কি অসীমে ছিলো?
না কি মৃত্যুর পর সে যাবে, অসীমে!
শুরুর আগের বা শেষের পরের অসীমতা,
মাঝের এই সসীমতার জন্ম কেনোই বা দিলো?
প্রতিটা সৃষ্টির একটা সময় থাকে,
সময় থাকে প্রতিটা মৃত্যুরও।
সৃষ্টি বা মৃত্যুর অর্থবহতা বা অর্থহীনতার
সূচনা 'সময়' সৃষ্টির সাথে হলেও,
সময়ের যেদিন ঠিক ঠিক মৃত্যু ঘটবে-
সেদিন প্রতিটি সৃষ্টি বা মৃত্যু অর্থবহ হবে!
অর্থহীন হবে না কোনো সৃষ্টি বা মৃত্যু।
একটা নির্জন বিকেল
আমার একটা নির্জন বিকেল চাই,
সাথে চাই এক পশলা বৃষ্টি!
আমার আরো চাই- এক কাপ চা,
ধোঁয়া উঠা গরম এক কাপ চা!
জানালায় দাঁড়িয়ে আমি দেখতে চাই-
বৃষ্টিতে ভিজতে চাওয়া না ভেজা আমায়!
আমায় দেখতে দেখতে কখন জানি
চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়েছি,
খেয়াল করি নি!
সেদিন চায়ের বিলটা কি দেয়া হয়েছিলো?
মনে পড়ছে না আমার। একদিন যাবে আবার?
চায়ের বিলটা না হয় সেদিন দেয়া যাবে!
আমাকে, আমি কিছু বলতে পারলাম না!
নিজের সাথে নিজের কথা না বললেই বা কী!
ভাবনাগুলো সবসময়ের
মাঝে মাঝে ভাবি,
এমন না হয়ে যদি-
ওমন হতো? তাহলে ঠিক কেমন হতো?
মাঝে মাঝে ভাবি,
যা হয়েছে তা ই বেশ!
আবার ভাবি,
না হলেই বা কি হতো সব শেষ!
মাঝে মাঝে মনে হয়,
শুনছি কোথাও হাসি।
না কি,
হৃদয় জুড়ানো অচিন সুরের বাঁশি!
মাঝে মাঝে মনে হয়,
নিজেকে খানিক দেখি!
নিজেকে ভুলে আনমনা হয়ে আয়নায় চোখ রাখি!
মাঝে মাঝে ভাবি,
ভাবনাদের দিবো- এবার খানিক ছুটি!
মেঘের চাদরে আকাশ ঢেকে
একলা পথে হাঁটি!
স্মৃতির ওজন
অনেকক্ষণ বসে আছি।
বসে আছি একা,
হাসপাতালের করিডোরে।
আমি বসে আছি,
অসুখের জন্য!
পকেটে পুড়ে নিয়ে যাবো-
কিছু অসুখ!
তবে ভেবো না।।
আমি মরণব্যাধি নিতে আসি নি।
বড়জোর হালকা জ্বর,
বা তার চেয়ে ভারী কিছু!
আচ্ছা, অসুখের কি ওজন হয়?
বলতে পারো?
তবে স্মৃতিদের ওজন হয়।
আমি জানি।
তোমার স্মৃতিগুলো-
ভীষণ ভারী,
নিয়মিত মাথা ধরায়!
বৃষ্টির আগমন
আচ্ছা, মানুষ। তুমি কি জানো?
প্রথম কবে আমি এসেছিলাম তোমার কাছে?
হ্যাঁ, এদিকেই তাকাও।
আমি আকাশ থেকে বলছি, বৃষ্টি!
হঠাৎ ইচ্ছে হলো তোমার সাথে কথা বলার!
তুমি হয়তো জানো না,
আমি কথা বলতে পারি,
গুন গুন করে গাইতে পারি!
আমার রিমঝিম শব্দ বুঝি শুনো নি?
এই যে আমার জন্য-
তুমি কাদঁছিলে,
ঠিক সেভাবেই কেঁদেছিলো-
তোমার বাপ-দাদারাও!
সহস্র কোটি বছরের মতো,
আজও আমি এসেছি,
তোমার চোখের জল ধুয়ে দিতে।
তবে তুমি কি জানো,
প্রথমবার আমি এসেছিলাম-
তোমার প্রার্থনা ছাড়াই!
সেদিন আমি এসেছিলাম-
তোমারই আগমনের আশায়!
সন্ধান
স্বর্গের সন্ধান, সে তো করেছি অনেকটা দিন।
সকাল থেকে সন্ধ্যায় বা সন্ধ্যা থেকে রাতে,
গভীর নির্ঘুমতায় কিংবা ভোরের শীতলতায়।
পাবো পাবো মনে হলেও এখনো কিন্তু পাইনি!
স্রষ্টার সন্ধান, করেছি বোধহয় আরও কিছুটা বেশি।
নীরব কোনো বিকেলে বা নদীর পাড়ে একা,
কিংবা আয়নায়! নিজেকে যখন দেখি!
স্রষ্টাতো সবার মাঝেই থাকে!
আমার মাঝেও নিশ্চয়ই আছেন!
তবে, নিজের মাঝে স্রষ্টা খুঁজেও
পাইনি আমি নিজেকে!
আচ্ছা,
স্বর্গের বাইরের সবটাই বুঝি নরক,
আর নরকের বাইরের সবটাই কি স্বর্গ!
ভালোবেসে তুমি আমি কি সেটাকে বলি-
পৃথিবী!
নিঃসঙ্গ শহরটা
একটা শহর।
একটাই তার বাড়ি।
আকাশের নিচে যে ছাদটা,
সেটাও- একটাই!
বাড়ির পাশেই-
একটা বটবৃক্ষ।
তাতে প্রতিদিন পাখি বসে,
সে কুহুকুহু ডাকে-
একাই!
বাড়িটায় যে জানালা,
বলাই বাহুল্য
তাও একটাই!
তার পাশেই বসে তুমি-
প্রতিদিন দেখো
পাখি আর গাছটা!
মাঝে মাঝে আমায় ডেকো!
আমার ঘরটায়
জানালা যে নেই-
একটাও!