প্রার্থনা
প্রার্থনা
১২৫৬ সালের ১৫ এপ্রিল।
সনেট বসে আছে তার বাবার বিছানার পাশে। সকাল থেকে বাবা বেশ অসুস্থ, সারাদিনে একটা কথাও বাবা বলেন নি, কোনো নড়াচড়াও নেই। শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে বুকের উঠানামা দেখে বোঝা যাচ্ছে বাবা এখনো বেঁচে আছেন।
সনেটদের গ্রামে কোনো কবিরাজ নেই, কয়েক গ্রাম পরে একজন আছেন, তার বাড়িও অনেক দূর। খুব দ্রুত হেঁটে গেলেও ছয় সাত ঘণ্টা সময় লেগে যায় কবিরাজের বাড়ি পৌঁছুতে! সনেটের বড় ভাই কবিরাজকে আনতে গিয়েছে সেই দুপুর বেলায়, এখন সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হতে চললো। এতক্ষণে সনেটের ভাই কবিরাজকে নিয়ে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছে হয়তো, ভোরের আগেই কবিরাজের আসা হবে না খুব সম্ভবত।
সনেট বাবার পায়ের তালুতে গরম সরিষার তেল মালিশ করে দিচ্ছে। কিন্তু কেনো সে তেল মালিশ করছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই, কিছু একটা করা দরকার বাবাকে সুস্থ করার জন্য, সনেট শুধু এতটুকুই জানে!
রাত আরেকটু গভীর হলো। অনেক চেষ্টা করেও বাবাকে কিছু খাওয়ানো গেলো না। বাবার শ্বাসের টানটা অনেকটা বেড়েছে। সনেট কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না, আবার খানিকটা সময় বাবার পায়ের তালুতে গরম সরিষার তেল মালিশ করলো সে। খানিক বাদেই সে তার মা কে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো, মন্দিরে গিয়ে একটু প্রার্থনা করতেই হবে। ভগবান ছাড়া কেউ যে নেই এখন আর! কখনো কি ছিলো আসলে!
সনেটের বড় ভাই শেষ পর্যন্ত কবিরাজকে নিয়ে আসতে পেরেছিলো কি না, বা সনেটের বাবা শেষ পর্যন্ত বেঁচে গিয়েছিলেন কি না সেটা আমার জানা নেই, মাঝে মাঝে লেখক ইচ্ছে করে অনেক কিছু জানতে চান না।
এখন ২০২২ সাল। জুলাই মাস।
এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে, এখন আর কবিরাজ খুঁজতে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয় না। তারপরও অনেক সন্তান এখনো তার অসুস্থ বাবার বিছানার পাশে বসে থাকে, হয়তোবা বাবার পায়ের তালুতে গরম সরিষার তেলও মালিশ করে, বাবার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করে। কবিরাজ বা ডাক্তার থাকুক বা না থাকুক, স্রষ্টা সবসময় আমাদের পাশে থাকেন। কবিরাজের কবিরাজি যাতে ঠিকঠাক কাজ করে, বা ডাক্তারের দেয়া ঔষধ যাতে ঠিকঠাক কাজ করে সে জন্য আমরা প্রার্থনা করি, আমাদের আপন মানুষের জীবনের জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা!
সমাপ্ত