বায়োব্লাড
বায়োব্লাড
'ভাবতে অবাক লাগে পৃথিবীতে একটা সময় মানুষ রক্তের অভাবে মারা যেতো!', জিহান হাঁটতে হাঁটতে তার বন্ধু ইউশানকে কথাগুলো বলছিলো।
ইউশান মৃদু হাসলো শুধু। মুখ দিয়ে কিছু বললো না।
জিহান আর ইউশান প্রায় ৩ বছর ধরে 'বায়োব্লাড' প্রজেক্টে কাজ করছে। আরো পয়ষট্টি বছর আগে এই প্রজেক্টটি চালু করেন ইউহান নামের একজন বিজ্ঞানী। তার লেখা বই পড়ে জানা যায় 'বায়োব্লাড' প্রজেক্টের ধারণা তার মাথায় আসে বিভিন্ন পশুপাখির খামার দেখে। মানুষ তার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য মুরগির খামার, গরুর খামার, ছাগলের খামার গড়ে তুলেছিলো একটা সময়।
বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আক্রান্ত মানুষের রক্তের প্রয়োজন হলে প্রায় সময় প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত পেতে মানুষকে বেশ কষ্ট করতে হতো। এই কষ্ট দূর করতে ইউহানের মাথায় 'বায়োব্লাড' প্রজেক্টের চিন্তা আসে। আর এই প্রজেক্টের জন্য তার দরকার ছিলো একটা বিশাল মানুষের খামার!
হ্যাঁ, সত্যি সত্যি মানুষের খামার! মানুষের রক্তের জন্য 'মানুষের খামার'! ইউহানের আগে কেউ 'মানুষের খামার' গড়ে তোলার কথা ভাবতে পেরেছিলো কি?
সে সময় মানুষের ক্লোনিং নিষিদ্ধ ছিলো, তাই ইউহানের জন্য 'বায়োব্লাড' প্রজেক্ট চালু করা বেশ কষ্টকর ছিলো। দরিদ্র মানুষদের ধরে ধরে তাদেরকে রাসায়নিকভাবে এক ধরণের জীবন্মৃত পরিস্থিতিতে রেখে বছরের পর বছর রক্ত সংগ্রহ করে তা বিক্রি করা হতো বিভিন্ন হাসপাতালের রক্ত প্রার্থী মানুষদের কাছে।
এভাবে অনেকটা বছর কেটে গেছে, আস্তে আস্তে এই প্রজেক্টের ব্যাপকতা বেড়েছে, বেড়েছে ইউহানের প্রভাব প্রতিপত্তিও। আরেকটি জিনিস বেড়েছে, রক্তের দাম!
স্বেচ্ছা রক্তদান আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আইন করে মানুষের ক্লোনিংও বৈধ করা হয়েছে! এখন রক্তের প্রয়োজন হলেই সবাই ছুটে যায় 'বায়োব্লাড' এ, যেখানে যেকোনো গ্রুপের রক্তের কোনো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন একটা জিনিস, অগাধ টাকা!
সস্তায় রক্ত কিনে জীবনের মূল্য কমানো এ যুগে মানায় না!
সমাপ্ত