০১ জানুয়ারি, ২০২২।
# অধিকাংশ মানুষ নিজেকে গড়পড়তা মানুষ হিসেবে দেখতে পছন্দ করে না। নিজেকে আরেকটু উন্নত করার চেষ্টায় সে অনুপ্রাণিত হতে চায়, প্রতিনিয়ত। আর মানুষকে সবচেয়ে বেশী অনুপ্রাণিত করে হাল ছেড়ে না দেয়া মানুষের জীবনের গল্প।
এক্ষেত্রে সচরাচর যে ভুলটা করা হয় তা হলো 'একবার না পারিলে দেখো শতবার' মতবাদ। সফল মানুষেরা অনেকগুলো এনালাইসিস করে একটা কাজের সহজ সমাধানের খুব কাছাকাছি একটা জায়গায় যায়, সেটা সফল করার চেষ্টা করে থাকে, সফল না হলে পরবর্তী কয়েকটা চেষ্টায় সেটা সফল করে। সেটাকেই আমরা রবার্ট ব্রুসের গল্পের ছকে ফেলে দিয়ে ভাবতে থাকি বাহ্, চমৎকার অধ্যবসায়!
প্রকৃত পার্থক্যটা হলো মানুষের বিশ্লেষণ ক্ষমতায়! একটা কথা কি জানো? তুমি যা করতে পারো সেটা আরো অনেকেই পারে, কিন্তু তোমার করার বিশেষ ধরণটাই তোমাকে সফল করে তুলবে। সাফল্যকে এমন জায়গায় রাখো যেটা তুমি ধরতে পারো, যেটা পেলে তুমি সত্যিকার অর্থে আনন্দিত হবে! আর নশ্বর এই পৃথিবীতে সফল না হলেই বা কি!!!
০২ জানুয়ারি, ২০২২।
# সৃষ্টির শুরু থেকে ঠিক কত মানুষ পৃথিবীতে এসেছে? সংখ্যাটা অনুমান করা খুব কঠিন। পপুলেশন রেফারেন্স ব্যুরো (PRB) এর সূত্রমতে ২ লক্ষ B.C.E. (Before Common Era) থেকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় ১১৭ বিলিয়ন মানুষ জন্মগ্রহণ করেছে! ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যাটা ১২১ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হয়! আর ২০৫০ এ পৃথিবীতে জীবিত মানুষের সংখ্যা কত হবে বলতে পারো? আনুমানিক ১০ বিলিয়ন!!! ২০২২ এ সংখ্যাটা ৮ বিলিয়নের কাছাকাছি। পৃথিবীর সাইজটা একই থাকলেও এর ক্ষেত্রফল বাড়িয়ে নিয়ে আমরা কিন্তু ঠিকঠাক মানিয়ে নিচ্ছি! আচ্ছা পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় কাজ কি বলতে পারো? আমি মনে করি সংখ্যা নিয়ে নাড়াচাড়া করা। আমরা মানুষেরা আমাদের সব কাজকে সংখ্যায় প্রকাশ করতে খুব ভালোবাসি। কিন্তু মানুষের ভালোত্ব বা মন্দত্ব সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না! বলা যায় না- তুমি ৩৩ একক ভালো বা তুমি ২০ একক মন্দ! কি অদ্ভুত!
০৩ জানুয়ারি, ২০২২।
# শালবন বিহারের অচেনা পথ ধরে গভীর রাতে ইকবুকা হেঁটে যাচ্ছিলো একা। চাঁদের আলোয় চারদিকটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বলে তার হাঁটতে তেমন একটা কষ্ট হচ্ছে না। হঠাৎ ধাতব কোনো কিছুর সাথে সে হোচট খেলো। হাত বাড়িয়ে অজানা জিনিসটা তুললো সে। গল্পে পড়া আলাদিনের জাদুর প্রদীপের মত একটা কিছু! পকেট থেকে রুমালটা বের করে একটু মুছে নিতে গিয়েই সে ঘুম ভাঙিয়ে দিলো জাদুর প্রদীপের দৈত্যের!!! সত্যিকারের দৈত্য!!!
ইকাবুকা মনে মনে ঠিক করলো সে কি চাইবে দৈত্যের কাছে। সে চাইবে অমরত্ব! তার আর কিছু চাই না।
দৈত্য বের হয়ে দেখলো একটা মানুষ প্রদীপটা হতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে এই মানুষটাই তার ঘুমটা ভাঙ্গিয়েছে! সময় নষ্ট না করে দৈত্য ইকাবুকার ঘাড় মটকে দিলো, তার এত সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করার জন্য এর চেয়ে কম শাস্তি দিলে অন্যায় হতো!
ইকাবুকার অমরত্ব প্রাপ্তি আর হলো না। গল্প আর বাস্তবতা সবসময় এক হয় না। কিছু কিছু বাস্তব ঘটনা একটা সময় পর গল্পে রূপ নিতে পারে, কিন্তু গল্পের বাস্তব ঘটনায় রূপ নেয়ার ঘটনা খুব একটা বেশী নেই!
০৪ জানুয়ারি, ২০২২।
# কবি রবার্ট গ্রেভস এর মতে, মিথ বা পৌরাণিক কাহিনীর দু'টো দিক আছেঃ একটি হলো বাচ্চাদের করা বেঢপ (awkward) সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া, আর অন্যটি হলো কোনো একটি সামাজিক ব্যবস্থার ন্যায্যতা এবং ঐতিহ্যগত আচার ও রীতিনীতির কারণ ব্যাখ্যা করা।
পৌরাণিক গল্পের প্রসঙ্গ আসলেই সবার আগে মনে আসে প্রাচীন গ্রিসের কথা। মার্ভেল কমিকস আর মার্ভেল এন্টারটেইনমেন্ট এর কল্যাণে এসব পৌরাণিক গল্পের অনেক চরিত্রই আমাদের সুপরিচিত। জীবনে একবারের জন্য হলেও গ্রিস যাওয়ার ইচ্ছে আছে এমন লোকের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়!
একটা প্রশ্ন মনে আসলো, আমরা মানুষেরা পূর্বপুরুষদের চেয়ে নিজেদের অনেকটা আধুনিক, সভ্য, মেধাবী ভাবলেও এমন সব পৌরাণিক গল্পের মতো কিছু কি তৈরি করতে পারছি ভবিষ্যতের মানুষদের জন্য! যা পড়ে তারা বিমোহিত হবে!
০৫ জানুয়ারি, ২০২২।
# দীর্ঘদিন করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরে যাওয়া হয় নি। আদৌ হবে কি না জানা নেই! গত দুই বছরের খন্ড খন্ড লকডাউনে অধিকাংশ মানুষের জীবনে আর কিছু আসুক আর না আসুক যেটা এসেছে সেটা হলো 'একঘেয়েমি ভাব'। মানুষ স্বাভাবিকভাবে ঘর থেকে যতটা না বের হয়, ঘর থেকে বের হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় বিষয়টা তার কাছে আরো কঠিন অনুভূত হয়েছে।
তো যে বিষয়টা বলতে চাচ্ছিলাম, একঘেয়েমি ভাব! একঘেয়েমি লাগলেই সবার প্রথমে আমরা যেটা করি- হাতের কাছে থাকা মোবাইলটা নিয়ে স্ক্রল করা শুরু করি, সেটা ফেসবুক হোক, বা ইনস্টাগ্রাম বা ব্লা ব্লা! স্ক্রল করা চলতেই থাকে যতক্ষণ না স্ক্রল করাটাও একঘেয়ে লাগে!
একটা বিষয় কি লক্ষ্য করেছো? এবার কিন্তু একঘেয়েমি লাগাটা আগের চেয়ে কিছুটা বেড়ে যায়! এটা কিন্তু আমার মনগড়া কথা নয়, টুকটাক গবেষণা হয়েছে এটার উপর!
আচ্ছা, সমুদ্রের সব পানি যদি মিঠা পানি হতো? কেমন হতো? এটা নিয়ে কি কোনো গবেষণা হয়েছে? আমি বলে দিতে পারি ভালো হতো না! আরেকদিন বলবো কেন ভালো হতো না।
০৬ জানুয়ারি, ২০২২।
# পৃথিবীতে অনেক অনেক বিরল রোগ আছে, এসব বিরল রোগের মাঝে কিছু কিছু রোগের আবার আছে চমৎকার সব নাম! যেমন ধরো 'অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম (AIWS)'। টড লুইস ক্যারলের বিখ্যাত উপন্যাস 'অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড' থেকে ব্রিটিশ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জন টড ১৯৫৫ সালে প্রথম এই রোগের এমন নামটি দিয়েছেন। এমন অদ্ভুত নামকরণের অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেকটা অ্যালিসের মত অভিজ্ঞতার মাঝ দিয়ে যায়। যেমন ধরো আক্রান্ত ব্যক্তি তার মাথা বা হাতের আকৃতি নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে, কখনো মনে হতে থাকে তার মাথাটা বেশ বড় আবার কখনো মনে হতে থাকে মাথাটা কি একটু ছোট হয়ে গেলো! আরেকটা সমস্যা হলো আক্রান্ত ব্যক্তি তার চোখ দিয়ে যেসব বস্তু দেখে যেমন মানুষ, গাড়ি, বিল্ডিং ইত্যাদি, সবকিছুই প্রকৃত সাইজের চেয়ে ছোট বা বড় হিসেবে দেখে, এমনকি দুইটি বস্তুর দূরত্ব সঠিকভাবে বুঝতেও সমস্যায় পড়ে! তার কাছে মাঝে মাঝে একটি করিডোর খুব দীর্ঘ বলে মনে হতে পারে। আরও মারাত্মক সমস্যার একটি হলো সময়ের উপলব্ধি, কখনো মনে হয় সময় খুব দ্রুত যাচ্ছে আবার পরক্ষণেই মনে হতে থাকে সময় কি থেমে গেলো! বিরল এই রোগের কোনো চিকিৎসা এখনো পর্যন্ত নেই।
০৭ জানুয়ারি, ২০২২।
# অনেক মানুষ প্রাণী পুষতে পছন্দ করে, আর পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের কদর আদিকাল থেকেই। কিন্তু কতটা আদিকাল থেকে তা কি বলতে পারো? অথবা কারাই বা বনের বিড়ালকে পোষা প্রাণী হিসেবে ঠাই দিয়েছিলো নিজ গৃহে? বিড়ালপ্রেমীরা এসব প্রশ্ন নিয়ে মাথা না ঘামালেও গবেষকদের এ নিয়ে চিন্তার কিন্তু অন্ত নেই। ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিম এশিয়া এবং প্রাচীন মিসরে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে থেকেই বিড়াল পোষা শুরু হয়! মানুষের সংস্পর্শে এসে বিড়ালদের আচরণ এবং তাদের অভ্যাস পরিবর্তন হতে থাকে। ধীরে ধীরে তারা বন্য বিড়াল থেকে গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত হয়।
তখনকার দিনে কৃষকরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়ার সময় সাথে করে আর কিছু নিক বা না নিক তাদের গৃহপালিত বিড়ালকে অবশ্যই সঙ্গে করে নিয়ে যেতো। নাবিকরাও তাদের জাহাজের মালামাল ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ইঁদুরের হাত থেকে বাঁচাতে বিড়াল পুষতো।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বিড়াল পোষা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৯-২০২০ এর হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোষা পাখির পর বিড়াল দ্বিতীয় জনপ্রিয় পোষা প্রাণী, সংখ্যাটা নেহাত কম নয়, প্রায় ৪২.৭ মিলিয়ন!!!
০৮ জানুয়ারি, ২০২২।
# মাঝে মাঝে আকাশে রোদ বৃষ্টি একসাথে খেলা করে। খেলা করে মেঘের সাথে সূর্যের আলো! সূর্য তার তাপে মেঘকে কখনো গলায় না, পরম মমতায় আকাশে ভাসতে দেয়, তার যতক্ষণ খুশি! আচ্ছা একদিন যখন সূর্য তার সব তাপ, সব আলো হারাবে, সেদিন কি মেঘ মনে রাখবে সূর্যের দেয়া আলোদের, ভালোবাসার উষ্ণতাদের? মনে রাখবে না খুব সম্ভবত! ক্ষণস্থায়ী বস্ত তার তুলনায় দীর্ঘস্থয়ী বস্তুকে মনে না রাখতে পারাটাই স্বাভাবিক।
০৯ জানুয়ারি, ২০২২।
# আচ্ছা এমন যদি হতো যে মানুষের জন্মের পর থেকে বয়স বাড়তে বাড়তে ৫০ বছর হলো, তারপর বয়স বাড়ার পরিবর্তে আবার কমতে কমতে শূন্য হয়ে অবশেষে মৃত্যুবরণ করলো! অথবা বয়স ৫০ বা শূন্য হবার আগেই মৃত্যুবরণ করলো! এমনটা হলে হয়তো বার্ধক্য আসতো না জীবনে কিন্তু তার চেয়ে খারাপ কিছু ঘটতো! একটা সময় অতিবাহিত হবার পর বৃদ্ধ মানুষের মৃত্যু মেনে নেয়া গেলেও শিশু মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। স্রষ্টার প্রত্যেকটা হিসাব নিখুঁত, তাই আমাদের বার্ধক্যে উপনীত হওয়াটাও একেবারেই নিখুঁত।
১০ জানুয়ারি, ২০২২।
# পৃথিবীতে কত রঙ আছে? এর সঠিক উত্তর হলো অসীম! তবে আমরা এই অসীম রঙের কয়টা দেখতে পাই তা ভিন্ন বিষয়। আমরা মানুষেরা সম্ভাব্য কয়টি রঙের শেড বুঝতে পারি বা উপলব্ধি করতে পারি সে বিষয়ে সাইকো ফিজিসিস্টরা গবেষণা করেছেন। গবেষণায় যা দেখা যায় তা রীতিমত অবাক করার মতো! তাদের গবেষণা মতে আমাদের চোখ প্রায় ১,০০০ রকম রঙের শেড আলাদাভাবে বুঝতে পারে, একইসাথে বুঝতে পারে লাল-সবুজ রঙের প্রায় ১০০ রকম লেভেল ও হলুদ-নীল রঙের প্রায় ১০০ রকম লেভেল! যার অর্থ হলো মানুষ প্রায় ১,০০০ x ১০০ x ১০০ = ১,০০,০০,০০০ (এক কোটি) রকম রঙের শেড আলাদাভাবে বুঝতে পারে!!! এই এক কোটি রঙের শেড কিন্তু ১১টি প্রধান রঙের সংমিশ্রণে তৈরি: লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, বেগুনি, গোলাপী, বাদামী, ধূসর, কালো এবং সাদা। তোমার প্রিয় রঙ কোনটি?
১১ জানুয়ারি, ২০২২।
# একজন মানুষ সারাজীবন সর্বোচ্চ কয়টা বই পড়তে পারে? সংখ্যাটা অনেক বড় হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। নেট দুনিয়ায় খুঁজলে অবশ্য কয়েকটি অবিশ্বাস্য সংখ্যা দেখা যায়, কিন্তু সেটাও বিশ্বাসযোগ্য কোনো সোর্স থেকে নয়। তাই সেদিকে আর মাথা ঘামালাম না! তবে গড়ে মানুষ বছরে ১২ থেকে ২০ টি বই পড়ে থাকে। এ বছর আমার ইচ্ছে আছে অন্তত ৫০ টা বই পড়ার! সবে মাত্র দ্বিতীয় বইটি চলমান! বই পড়ার সবচেয়ে ভালো দিক হলো এটা তোমার ভাবনার চোখটাকে আরো সুন্দর করে দেখতে সাহায্য করবে। সব বইয়ে এমন অন্তত একটা প্যাসেজ থাকবে যেটা তোমার ভাবনার জগতে দাগ কেটে যাবে। বই পড়ার একটা আশ্চর্য সাইড ইফেক্ট আছে, জানো? বই পড়তে পড়তে একটা সময় তোমার মনে হবে তুমি অনেকদিন বেঁচে আছো! বিশ্বাস না হলে শুরু করে দাও, বই পড়া!
১২ জানুয়ারি, ২০২২।
# পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির শপথ নিয়েছেন, নিয়েছেন স্বয়ং তার নিজের শপথ। এটা দিয়ে আসলে তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন? কোনো কিছুর সত্যতা প্রমাণের জন্য আল্লাহর তো শপথ নেওয়ার এতটুকু প্রয়োজন নেই! তাহলে এত এত শপথ কি শুধু শুধুই? অবশ্যই না।
আমরা সাধারণত শপথ করি কোনো কথা বা কাজের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য, আমরা যে সত্য বলছি তা বোঝানোর জন্য। আল্লাহর ক্ষেত্রে এই যুক্তি একেবারেই প্রযোজ্য নয়, আল্লাহ মিথ্যা বলার প্রশ্নই আসে না। আসলে কোরআনে যত জায়গায় আল্লাহ তায়ালা কোনো কিছুর শপথ নিয়েছেন সেটা আসলে সে বিষয়ের গুরুত্ব বোঝানোর জন্যই নিয়েছেন, তার কথাকে সত্য প্রমাণিত করার জন্য নয় (তার প্রতিটা কথাই সত্য আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি)। পবিত্র কোরআনে করা আল্লাহর অসংখ্য শপথের মাঝে আমার প্রিয় হলো সূরা হিজর এ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর জীবনের শপথ।
১৩ জানুয়ারি, ২০২২।
# আচ্ছা, অবচেতন মনেই হোক বা সচেতন ভাবেই হোক, তুমি সবসময় যা হতে চেয়েছো তা কি হতে পেরেছো? অধিকাংশ মানুষই স্বাভাবিকভাবে তা পারে না। মানুষ নিজে যা হতে চায় তা হতে পারলে জীবনে সফলতা আসুক বা না আসুক, প্রশান্তি আসে। আমরা অনেকেই আবার অন্য সফল মানুষের অনুকরণে নিজেকে সফল করতে চেষ্টা করি, গভীরভাবে চিন্তা করলে এটা নিছক পাগলামী। এমনটা করতে পারলে হয়তো তুমি টুকটাক সফলতা পেতে পারো, অথবা অনেক বেশীই সফল কেউ হয়ে উঠবে! কিন্তু সত্যি বলতে কি, বেশীদিন তোমার সে সাফল্য ভালো লাগবে না। নিজের মাঝে অন্যের গুণ খোঁজার মত বোকামীর কাজ আর দ্বিতীয়টি নেই। নিজের গুণগুলোকেই খুঁজে বের করতে হয়, নিজেকে নিজের মতো করেই সফল করে তুলতে হয়। আর তা করতে না পারলেও সমস্যা নেই, পৃথিবীর সবাই সফল হবে এমনটা খুব অস্বাভাবিক! পৃথিবীটাকে স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে তুমি না হয় বিফলই হলে!
জীবনের মধ্য গগনে এসে আবার নতুন করে কিছু হতে চাওয়ার ইচ্ছে জাগলেও তা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার সাহসটুকু আমাদের অধিকাংশেরই নেই বললেই চলে। একটু স্থিতিশীল জীবনের আশা আমাদের তা করতে দেয় না, যেখানে জীবনের স্থিতিশীলতার কোনো নিশ্চয়তাই নেই!
১৪ জানুয়ারি, ২০২২।
# আমাদের বলা সব কথাদের আমি তিনটা ভাগে ভাগ করি- সত্য, মিথ্যা আর সাধারণ কথা। সাধারণ কথা হলো সেই সব কথা যেটা সত্য বা মিথ্যা শ্রেণীবিভাগের মধ্যে পড়ে না। মজার বিষয় হলো, কথার মতো লেখারাও কিন্তু মিথ্যা হতে পারে। মিথ্যা কথার চেয়ে মিথ্যা লেখা বেশী ভয়ংকর, মিথ্যা কথা একটা সময় পর মন থেকে মুছে গেলেও মিথ্যা লেখা টিকে থাকে বহুদিন। আরেকটা বিষয় নিয়ে পরে কখনো লিখবো ভেবেছিলাম, তারপরও আজ ছোট্ট করে লিখতে ইচ্ছে করছে। বিষয়টা হলো, আমরা যে কোনো নেগেটিভ জিনিস প্রকাশে লাল রং ব্যবহার করি কেনো? সত্য মিথ্যার মাঝে সত্যকে যদি সবুজ রং ভাবি, মিথ্যাকে ভাবি লাল! নিষিদ্ধ বস্তু বোঝাতে লাল ক্রস ব্যবহার করি! আচ্ছা আমাদের রক্তের রং তো লাল! আমরা কি সে হিসেবে পৃথিবীর বুকে নেগেটিভ ফোর্স?
১৫ জানুয়ারি, ২০২২।
# টেটসুয়া নামে একজন বিখ্যাত তীরন্দাজ ছিলেন, যিনি খুব যত্নের সাথে তীরন্দাজ হিসেবে তার পরিচয় গোপন করে একজন সাধারণ কাঠ মিস্ত্রির জীবন অতিবাহিত করছিলেন। হঠাৎ করেই একদিন তার কাছে একজন আগন্তুক আসলো এবং আগন্তুকের তীরন্দাজির দক্ষতা যাচাই করার জন্য সে টেটসুয়াকে তার তীরন্দাজি দেখাতে চাইলো। সহজ কথায় আগন্তুক টেটসুয়াকে চ্যালেঞ্জ করে বসলো! এই চ্যালেঞ্জে কে জয়ী হয় বা কি ঘটে সেটা জানার জন্য পাওলো কোয়েলহো এর লেখা 'The Archer (দ্য আর্চার)' বইটা পড়ে নিতে বলবো। বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টেটসুয়ার সাথে একটি ছোট ছেলে ছিলো যাকে টেটসুয়া শিক্ষা দিয়েছিলো তীর-ধনুকের মূলনীতি। সমগ্র গল্প পড়া শেষে অবাক হয়ে লক্ষ্য করবে যে তীর-ধনুকের মূলনীতির অস্তিত্ব রয়েছে মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপে! যেমন ধরো, একজন তীরন্দাজের ধনুক থেকে তীর নিক্ষেপের বিষয়টার মাধ্যমে অনেক কিছুই শেখানো হয়েছে এই বইয়ে। টার্গেট বা লক্ষ্যবস্তু, ! তীরন্দাজ ছাড়া টার্গেটের অস্তিত্বই থাকে না, আবার তীরন্দাজই নির্দিষ্ট করে তার টার্গেট কোনটি! বিষয়টি বেশ মজার। এক একজন মানুষের টার্গেট এক এক রকম। কারো কারো টার্গেট অন্য কারো চোখেই পড়ে না হয়তো! যেমন- আম গাছ থেকে আম পারতে গেলে এক একজন মানুষ এক একটা আমকে টার্গেট করবে, এটা নিতান্তই নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির উপর! আমাদের নিজেদের দ্বারা নির্দিষ্ট করা টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হয়ে আবার আমরাই বিমর্ষ হই, খুব ইন্টারেস্টিং না? আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আমরা এমন অনেক কাজ করি যেটা দেখে মনে হয় সেটা অর্জন করাই আমাদের টার্গেট বা লক্ষ্য। কিন্তু আসলেই কি তাই? ধরো কেউ সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন সকাল সকাল ১ ঘণ্টা হাঁটেন। এখন ঐ ব্যক্তির টার্গেট কি প্রতিদিন ১ ঘণ্টা হাঁটা না কি সুস্থ থাকা? অবশ্যই সুস্থ থাকা। আমাদের অধিকাংশই জীবনে সঠিক টার্গেট নির্ধারণই করতে পারে না, টার্গেটে পৌঁছানোর পথটা ধরে ছুটতে ছুটতে শেষ পর্যন্ত আর সঠিক টার্গেটে পৌঁছানোই হয় না!
আরো চমৎকার সব বিষয় জানতে বইটি পড়ে নাও ঝটপট।
১৬ জানুয়ারি, ২০২২
# আচ্ছা, তোমার সবচেয়ে পছন্দের ফুল কোনটি? প্রশ্নটি করা হলে অধিকাংশ মানুষই বলবে তার সবচেয়ে পছন্দের ফুল গোলাপ! বাস্তবিকভাবেই পৃথিবীর মানুষ ফুল হিসেবে গোলাপকেই সবচেয়ে বেশী পছন্দ করে। পছন্দ-অপছন্দের ফুলের তালিকা করা বড্ড অসাধ্য কাজ, বিতর্কিত কাজও বটে! তবে সবচেয়ে বড় বা ছোট ফুলের নাম নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই! বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুলের নাম র্যাফলেসিয়া আর্নল্ডি (Rafflesia arnoldii)। এর নাম যেমন বিদঘুটে তেমনি এটি বিরলও বটে। এই ফুলটি শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ার রেইন ফরেস্টে পাওয়া যায়। এটি 3 ফুট জুড়ে বড় হতে পারে এবং 15 পাউন্ড পর্যন্ত ওজন হতে পারে! সবচেয়ে বড় হলেও ফুলটি গোলাপের মত সুগন্ধযুক্ত নয়, এর গন্ধ অনেকটা পঁচা মাংসের মতো!
১৭ জানুয়ারি, ২০২২
# পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপন্যাস কোনটি? বড় উপন্যাস বলতে আমি বোঝাতে চাইছি সবচেয়ে বেশী সংখ্যক শব্দ সম্বলিত উপন্যাস। আমার মতে এটিই প্রকৃত অর্থে একটা উপন্যাস বড় না ছোট সেটা নির্ধারণ করে। ৩.২৭ মিলিয়নেরও বেশী শব্দ নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপন্যাস হলো নাইজেল টমের "দ্য ব্লা স্টোরি"! তবে পৃষ্ঠার সংখ্যায় সবচেয়ে বড় উপন্যাস মার্ক লিচ এর "মারিয়েনবাদ মাই লাভ", পৃষ্ঠা সংখ্যা ১০,৭১০!!!
আবার ফিরে আসি "দ্য ব্লা স্টোরি" -তে। মোট ২৩টি ভলিউমে বিভক্ত উপন্যাসটি। বইটার প্রতিটা ভলিউমের প্রচ্ছদ দেখলে মনে হবে প্রচ্ছদ ডিজাইন করার সময় কই! এছাড়া বইটির ভলিউম ৮ এ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কবিতাটি রয়েছে! আমিও কবিতা লিখি বলে বিষয়টা আমাকে খুব বিমোহিত করেছে। গল্প বা উপন্যাসের মাঝে অনেক লেখকই খুব সুন্দর করে ছোট ছোট কবিতা লিখে! ভাবছি একটা কবিতার বই লিখবো, যেখানে গল্পের মাঝে কবিতা নয়, বরং কবিতার মাঝে মাঝে গল্প থাকবে!
১৮ জানুয়ারি, ২০২২
# নরখাদক বা ক্যানিবল নিয়ে আমরা বাস্তব জীবনে খুব একটা মাথা ঘামাই না। কিন্তু শুনতে অবাক লাগলেও আমাদের আশেপাশেই সত্যিকার নরখাদক আছে, যারা মানুষের মাংস খায়, যেমনটা আমরা গরু/মুরগির মাংস খাই! নরমাংস ভক্ষণের কারণ খুঁজতে গিয়ে গবেষকরা বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন। যেমন - সাংস্কৃতিক রীতি হিসেবে অনেক গোত্র মানুষের মাংস খায়। চরম কঠিন পরিস্থিতিতে বা চরম খাদ্য সংকটেও মানুষ তার তুলনায় দুর্বল কাউকে হত্যা করে তার মাংস খেতে পারে! মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ বা চরম অবসাদগ্রস্থ মানুষ অপর মানুষের মাংস খেতে পারে! সাম্প্রতিক সময়ে এমন অনেক সিরিয়াল কিলারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যারা মানুষ হত্যার পর সেই মৃত মানুষের মাংস খেয়ে রীতিমত শূন্যে মিশিয়ে দিয়েছে সে সব মানুষের অস্তিত্ব! বাংলাদেশেও এক ভয়ঙ্কর নরখাদক ছিলো, নাম তার খলিলুল্লাহ। ১৯৭৫ সালের দিকে ধরা পড়ে তার এই মানুষের মাংস খাওয়ার ঘটনা। ঘটনা জানাজানি হবার পর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং আদালতের রায়ে মানসিক চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হয় পাবনা মানসিক হাসপাতালে। চিকিৎসা শেষে সে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে নি, আজিমপুর কবরস্থানে ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়াতো। ২০০৫ সালে মারা যায় খলিলুল্লাহ। গ্রেফতারের পর দৈনিক বাংলায় তার একটা সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়:
সাংবাদিক: এখন বল, তুই কি সত্যিই লাশ খাস?
খলিলুল্লাহ: হ, খাই।
সাংবাদিক: কেন খাস?
খলিলুল্লাহ: ভালো লাগে।
সাংবাদিক: না খাইয়া থাকতে পারস না?
খলিলুল্লাহ: ঐ মাংস না খাইলে পাগল হইয়া যামু।
সাংবাদিক: শোন, কয়দিন পরপর খাস?
খলিলুল্লাহ: (আঙুল তুলে ২ দেখালো)
সাংবাদিক: কয়দিন আগে খাইসস?
খলিলুল্লাহ: পরশু দিন। একটা মাইয়া খাইসি। কইলজা স্যার। তেল ভি খাইতে পারি।
সাংবাদিক: কি খাইতে ভালো লাগে? কইলজা না তেল?
খলিলুল্লাহ: এইখানের মাংস (হাত দিয়ে উরু দেখালো)
সাংবাদিক: শোন, আর মাংস খাবি না। খাবি?
খলিলুল্লাহ: খামু।
সাংবাদিক: কেন? তোর খারাপ লাগে না? গন্ধ আসে না?
খলিলুল্লাহ: হা হা। ভালো লাগে।
১৯ জানুয়ারি, ২০২২
# ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামের নন্দনকাননে অবস্থিত 'মেমন গ্রামার স্কুল' এ ভর্তি হওয়ার পর প্রতিদিন রিকশায় করে স্কুলে যাওয়া হতো। স্কুলে যাওয়ার পথে জলসা সিনেমা হলের পাশে 'কারেন্ট বুক হাউজ' নামে একটা বুক স্টল ছিলো। বুক স্টলটা আমায় প্রচুর টানতো, ইচ্ছে হতো একটু ঘুরে দেখি বইয়ের দোকানটা! পরবর্তীতে অবশ্য সেই বুক স্টলে অনেকবার যাওয়া হয়েছে। ক্লাস ফোর বা ফাইভের দিকে টিফিনের টাকা জমিয়ে সেই স্টল থেকে কমিকস বই কিনতাম! চাচা চৌধুরী, বিল্লু, ফ্যান্টম, পিঙ্কী ইত্যাদি ভারতীয় কমিকসের বই পড়া হতো খুব। ২০০০ সালে মুসলিম হাই স্কুলে যখন ভর্তি হলাম এর পর আর কারেন্ট বুক হাউজে তেমন একটা যাওয়া হতো না। ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ার সময় কোনো এক বন্ধুর কাছ থেকে সেবা প্রকাশনীর 'তিন গোয়েন্দা' সিরিজের একটা বই নিয়ে পড়েছিলাম। কার কাছ থেকে নিয়েছিলাম নামটা এখন মনে পড়ছে না, তবে এর পর থেকে কত শত তিন গোয়েন্দা সিরিজ, মাসুদ রানা সিরিজের বই যে পড়েছি তার ঠিক নেই। নিউ মার্কেটের পাশে নূপুর মার্কেটের বইয়ের দোকান থেকে পুরনো বই কিনে পড়তাম। সে এক ভীষণ ভালো লাগা সময় কেটেছে আমার! সময়ের পরিক্রমায় স্কুল জীবন, কলেজ জীবন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে চাকরী জীবন চলছে..... কিন্তু ঢাকায় আসার আগ পর্যন্তও আমি নিয়মিত নূপুর মার্কেটের সেইসব বইয়ের দোকানে যেতাম, পছন্দের গল্প-উপন্যাস কিনে পড়তাম। তবে একটা সত্যি কথা হলো সেবা প্রকাশনীর সেই তিম গোয়েন্দা সিরিজই যে আমার মাঝে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করেছিলো, এতে কোনো সন্দেহ নেই! এত কিছু বলার কারণ হলো আজ সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা জনাব কাজী আনোয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৬৩ সাল থেকে ৫৯ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত অসংখ্য বইয়ের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে তৈরি করেছেন অসংখ্য বই পড়ুয়া। বিদেশী গল্প-উপন্যাসের বইয়ের চড়া মূল্যের কারণে অনেক বই কেনার ইচ্ছা হলেও কিনতে পারতাম না, সেবা প্রকাশনী থেকে অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত বইয়ের অনুবাদ এত সুলভ মূল্যে কিনে পড়েছি যে এর জন্য কাজিদার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে রীতিমতো অন্যায় হবে। পরপারে ভালো থাকুন কাজীদা।
২০ জানুয়ারি, ২০২২
# সৃজনশীলতার সাথে মানসিক অসুস্থতার কোথাও না কোথাও একটা সংযোগ আছে! বছরের পর বছর অনেক গবেষক এ বিষয়ে করেছেন বিশদ সব গবেষণা। কোনো না কোনো মানসিক রোগে বা মানসিক অবসাদে ভোগা মানুষের সৃজনশীলতার উপর বা তাদের নিজেদেরকে প্রকাশ করার ভঙ্গিতে সে মানসিক রোগ বা অবসাদের একটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। অসংখ্য বিখ্যাত ব্যক্তি হতাশা, উদ্বেগ, ম্যানিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়ার মত মানসিক রোগে ভুগেছিলেন। এসব মানসিক রোগের কারণেই কি তাদের সৃজনশীলতা প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়েছিল না কি সৃজনশীল কাজ তাদেরকে মানসিক রোগী বানিয়েছিল সেটা সঠিকভাবে বলা কঠিন! বিখ্যাত চিত্র শিল্পী 'ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ' এর বিখ্যাত চিত্রকর্ম 'স্টারি নাইট' অনেকের মতো আমারও বেশ পছন্দের। এ ছবিটি তিনি এঁকেছিলেন মানসিক আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অবস্থায়! জীবনের একটা বড় সময় বিষন্নতা আর বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগেছিলেন তিনি। তার একটা বিখ্যাত উক্তি আমার বেশ ভালো লাগে, "I put my heart and my soul into my work, and lost my mind in the process" সত্যিই, সৃজনশীলতার সাথে মানসিক অসুস্থতার কোথাও না কোথাও একটা সংযোগ আছে, অবশ্যই আছে!
২১ জানুয়ারি, ২০২২
# পৃথিবীর কোন প্রাণীটা মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী? বলতে পারো? প্রশ্নটা শুনে সবার প্রথমে ভয়ংকর দর্শন সব প্রাণীর কথাই আমাদের মাথায় আসে, যেমন- হাঙ্গর, সাপ, কুমির বা কারো কারো কাছে কুকুর! কিন্তু যার কথা আমাদের মাথায় আসেই না, সেই ছোট্ট প্রাণী 'মশা' মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী! সমগ্র পৃথিবীতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ মারা যায় মশার কামড়ে ছড়ানো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে। মানুষের প্রাণনাশে মশার নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাণীটার নামও তোমাদের বিস্মিত করবে তা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি! প্রাণীটা আর কেউ নয়, সেটা হচ্ছে 'মানুষ' নিজেই! পৃথিবীতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ অন্য কোনো মানুষের হাতে খুন হয়! বিষয়টা খুব লজ্জাজনক! পৃথিবীর আর কোনো বুদ্ধিমান সৃষ্টি তার স্বজাতির এত বিশাল একটা সংখ্যাকে কখনোই হত্যা করে না, এমনকি চরম খাদ্য সংকটেও! তালিকায় মানুষের পরে যে প্রাণীর নামটা আসে সেটা হলো সাপ, বছরে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে সাপের কামড়ে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। ভয়ঙ্কর দর্শন হাঙ্গরের কারণে প্রতি বছর গড়ে কতজন মানুষ মারা যায় জানেন? মাত্র ৬ জন! তাই ভয়ঙ্কর দর্শন হাঙ্গরের চেয়ে আপনার পাশের সুদর্শন মানুষটি আপনার জন্য আরো বেশী প্রাণঘাতী! (সুদর্শন মানুষ দূরে থাকলে প্রাণঘাতী না)
২২ জানুয়ারি, ২০২২
# ধরো, কোনো কাজ আমাদের পছন্দ না, তারপরও আমরা সেটা করি! আবার এমন অনেক কাজ থাকে যেটা আমাদের অনেক প্রিয়, কিন্তু আমরা সেটা করি না! এমনটা কেন করি আমরা? পারিপার্শ্বিকতার কারণে? না কি ছোটবেলা থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই সে শিক্ষা অনুযায়ী কাজের গুরুত্ব নির্ধারণের ভিন্নতার কারণে?
তুমি ভেবে দেখলে দেখবে প্রায় সময়ই এমন কিছু কাজ তুমি করছো যেটা তুমি আসলে করতে চাও না! কিন্তু মজার হলেও এটা সত্যি যে, তুমি কিছু করতে না চাইলে সেটা আসলে তুমি কখনো করবেই না! তাহলে আমরা কিছু করার পর কেন বলি আমরা কাজটা করতে চাই নি! কেনই বা নিজের কাছে নিজের সাফাই গেয়ে থাকি?
জন্মগতভাবে আমরা একটা স্বভাব পেয়ে থাকি, সেটা হলো 'চাওয়ার স্বভাব'! আমরা আমাদের জন্য অনেক অনেক কিছু চাই! আমরা চাই আমাদের গায়ের তাপমাত্রাটা ঠিক থাকুক, আমাদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণটা একদম ঠিক থাকুক, আমাদের বেশ কয়েকটা ভালো বন্ধু থাকুক, আমরা চাই আমাদের ক্যান্সার হোক বা যাই হোক, আমরা অনেকদিন যেন বেঁচে থাকি, আমাদের সবকিছু ঠিকঠাক থাকুক, একদম! দিনশেষে আমরা একটা ক্ষুধার্ত প্রাণী, চাওয়ার ক্ষুধায় ক্ষুধার্ত! আমরা যা করি তা আমাদের ইচ্ছার সাথে যুক্ত। কিন্তু মাঝে মাঝে আমরা এমন কিছু চাই যা নিয়ে আমাদের চাওয়া থাকে, আমরা যেন সেটা না চাই! এমন কেন করি সেটা একটা রহস্যজনক বিষয়।
কথা আর দীর্ঘায়িত করবো না, একটা ছোট্ট বিষয় বলে শেষ করছি। আমাদের সবার চাওয়াগুলো পাওয়ায় রূপান্তর হওয়া আরো অনেকের ছোট ছোট চাওয়ার উপর নির্ভরশীল। আমরা চাইলেও সব হবে না, আবার না চাইলেও অনেক কিছুই হবে। তাই জীবনে যা কিছু তোমার সাথে হবে ধরে নিবে সেটা আসলে তোমার মনের কোনো সুপ্ত চাওয়ার ফলেই হয়েছে! দেখবে বেশ ভালো লাগবে। আর তোমার জন্য অমঙ্গলজনক কিছুই স্রষ্টা নিজে থেকে তোমার জন্য করবেন না, যতক্ষণ না তুমি খুব বাড়াবাড়ি রকম ভাবে কোনো কিছু চাও, স্রষ্টার কাছে!
২৩ জানুয়ারি, ২০২২
# আজ কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না। আমার নিজের লেখা প্রিয় দুইটা লাইন উৎসর্গ করলাম জানুয়ারী তেইশকে!
"রাত কিন্তু ঘুমানোর জন্য। তুমি রাত জাগো, সাথে রাতকেও ঘুমোতে দাও না !"
২৪ জানুয়ারি, ২০২২
সকালটা শুরু হয় আমার বন্ধ চোখে, আমি বন্ধ চোখেই মোবাইলের দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখি, ঠিক ৬ টা বেজে ১৫ মিনিট! চোখ না খুলেই আমি বিছানা থেকে নেমে আস্তে আস্তে ভাবতে থাকি আজ কি করবো আমি সারাটা দিন! আজ কি বার? মনে করতে পারছি না, স্মৃতিরা মস্তিষ্কের সবক'টা সেল কি দখল করে নিলো! ছাদে গিয়ে একটু হেটে আসতে খুব ইচ্ছে করছে, ইচ্ছেদের আর গলা টিপে মারতে ইচ্ছে হয় না! বন্ধ চোখেই সিড়ি বেয়ে আমি চলে এলাম ছাদে, ছাদ থেকে পুরো শহরটা সবসময় দেখা হতো আগে, কখনো ছাদ থেকে নিচটা দেখা হয়নি আমার! ছাদ থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে আমি ভাবছি আমি কি চাইলে শুন্যে হাঁটতে পারবো?
এমন ভাবার অবশ্য একটা কারণ আছে, একটা বছর হলো আমি বন্ধ চোখেই সবকিছু দেখতে পাই! এতোদিন খোলা চোখেও দেখতে পেতাম, ইদানিং খোলা চোখে অন্ধকার দেখি, ঘুটঘুটে অন্ধকার! মাঝে মধ্যে সে অন্ধকারের মাঝে দুটি চোখ আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে! বড্ড শীতল সে চাহনী। অসহ্য!!!
একদিন খোলা চোখে শুন্যে ভাসার চেষ্টা করে দেখবো, মস্তিষ্কের সেলগুলো দমকা বাতাসে হয়তো সেদিন তার স্মৃতিগুলো ভাসিয়ে দিবে শুন্যে!!!
২৫ জানুয়ারি, ২০২২
"সঙ্গপ্রিয় মানুষের জন্য নিঃসঙ্গতার শাস্তি কঠিন শাস্তি।
এই শাস্তি মানুষকে বদলে দেয় . . ." কথাটি আমার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ স্যারের। কোন পরিস্থিতিতে তিনি এ কথাটি বলেছেন আমার জানা নেই, কিন্তু কথাটি অত্যন্ত মূল্যবান এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এই দুইটি লাইনের একটা নিজস্ব ব্যাখ্যা আছে আমার কাছে। তুমি যখন কাউকে শাস্তি দিবে, তোমার জন্যও একটা শাস্তি তৈরি হয়ে যাবে, যদি শাস্তি দেওয়ার যথেষ্ট কারণ তোমার কাছে থেকেও থাকে, তারপরও! সঙ্গপ্রিয় তোমার শাস্তি দেওয়ার মানসিকতা তোমাকে নিঃসঙ্গ করে দিবে, এটাই তোমার শাস্তি!
২৬ জানুয়ারি, ২০২২
# ভবিষ্যত পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে হুমকির কারণ কি হতে পারে বলে মনে করো তুমি? প্রশ্নটা করা হলে অনেকেই বলবে পারমাণবিক যুদ্ধ! অনেকে হয়তো বলবে আমাদের শরীরের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স! আমার মতে এটার সম্ভাবনা খুব খুব বেশী। তবে আরেকটা জিনিস আস্তে আস্তে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে আমি বলবো, সেটা হলো ব্যাটারি বর্জ্য! উন্নত দেশগুলো খুব দ্রুতই জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে চাইছে, এর পরিবর্তে তারা ঝুঁকছে ইলেকট্রিসিটি নির্ভর যানবাহন সহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের উপর, এর ফলে ব্যবহার বাড়ছে ব্যাটারীর! সমস্যার বিষয় হলো পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে যত ব্যাটারি উৎপাদিত হয়েছে, ব্যবহৃত হয়েছে, তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশী ব্যাটারি আগামী ১০/২০ বছরের মধ্যে ব্যবহৃত হবে! এ বিপুল পরিমাণ ব্যাটারি থেকে উৎপাদিত ব্যাটারী বর্জ্য আমরা কিভাবে সামলাবো? ব্যাটারি উৎপাদনে যেমন এর আশেপাশের পরিবেশ বেশ আক্রান্ত হয়, ব্যাটারি তার উপযোগীতা হারানোর পরও তা পরিবেশের ক্ষতি করে মারাত্মকভাবে। মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে যাওয়ার এত এত উন্নত প্রযুক্তি শেষ পর্যন্ত মানুষ অন্য কোনো গ্রহে যাওয়ার কাজে নয়, বরং পৃথিবীর বর্জ্য পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্রহে রেখে আসার কাজেই ব্যবহার করবে! অন্য গ্রহে মানুষের বেঁচে থাকার পরিবেশ তৈরির চেয়ে যা অনেক অনেক সহজ!
২৭ জানুয়ারি, ২০২২
# ফার্বিকে একদল স্বশস্ত্র রোবট গত রাতে আটক করেছে। তার অপরাধ হলো আরেকটু হলে সে ইউশিকাজু নামের ২ মাত্রার রোবটকে প্রায় খুনই করে ফেলেছিলো! এ নিয়ে ফার্বি খুব আপসেট, শেষ পর্যন্ত সে ইউশিকাজুকে খুন করতে পারে নি! ফার্বির মতো ৪ মাত্রার রোবটের জন্য এ ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। ৫ মাত্রার উপরের সব রোবটের জন্যই যে কোনো ধরণের ব্যর্থতা খুবই লজ্জাজনক! ফার্বিকে তৈরি করা হয়েছিলো ১২ মাত্রার রোবট হিসেবে, ৪ মাত্রায় আসতে তার অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিলো, সেসব কথা এখনো তার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। সে একাই ১৭ টা হিংস্র রোবোটাইগারকে সত্যিকার কুকুর-মানুষের মত করে শিকার করেছে! তার বাসার ড্রয়িং রুমে রোবোটাইগারগুলোর ঝুলন্ত মাথা এখনো তার বীরত্বের প্রমাণ বয়ে চলেছে। অবশ্য একদিনেই সে এমন শিকারী হয়ে উঠেনি, এজন্য তার অনেকটা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়েছিলো। টানা ৩ বছর সে টার্বোটার্মিনালে হাজার হাজার মানুষের শিকার করেছে মুড়ি মুড়কির মতো! এখন অবশ্য টার্বোটার্মিনালে আর মানুষ নেই, অনেক আগেই তারা বিলুপ্ত হয়েছে!
ইউশিকাজুকে খুনের চেষ্টা করার অপরাধে ফার্বিকে ১২,০০০ বছরের জন্য ডিএকটিভেট করা হবে! ফার্বির কন্ট্রোল সিস্টেম থেকে সবগুলো সিলিকন চিপ আস্তে আস্তে খুলে নেয়া হচ্ছে, ফার্বি এখন ঘুমিয়ে পড়বে। ঠিক ১২,০০০ বছরের জন্য!
২৮ জানুয়ারি, ২০২২
# দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা জন বয়েন এর 'দ্য বয় ইন দা স্ট্রাইপড পাজামাস' বইটি পড়লাম। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। অসাধারণ হৃদয়স্পর্শী গল্পটি পড়ে যে কারো মন দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠতে বাধ্য। নয় বছর বয়সী ব্রুনো আর শ্মুয়েল এর বন্ধুত্ব লেখক এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন যে শেষ পর্যন্ত তাদের নির্মম পরিণতি পাঠকের চোখকে অশ্রুসজল কর তুলবেই। যুদ্ধের নৃশংসতার মাঝে মানুষের মনের যে শূন্যতা তৈরি হয় তা খুব সম্ভবত ভুক্তভোগী পরিবার বয়ে চলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ২০০৮ সালে বইটির গল্প নিয়ে একটি মুভিও নির্মিত হয়েছে, মুভির নামও 'দ্য বয় ইন দা স্ট্রাইপড পাজামাস'। বইটি না পড়ে থাকলে ঝটপট পড়ে ফেলো, ছোট্ট ব্রুনোর এক বিস্ময়কর যাত্রার অংশ হয়ে নিজেকে ভাবতে শেষ পর্যন্ত মন্দ লাগবে না!
বইটির অনেকগুলো সুন্দর লাইনের মাঝে আমার পছন্দের একটি লাইন এখানে তুলে ধরলাম, "And who decided which people wore striped pajamas and which people wore the uniforms?"
২৯ জানুয়ারি, ২০২২
# মানুষের জীবনটা এমন যে, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য তোমাকে কিছুটা সময় পর পর অনুপ্রাণিত হতেই হয়! অনুপ্রেরণা ছাড়া বেঁচে থাকায় কোনো প্রাণ থাকে না। এক একজন মানুষের জন্য এ অনুপ্রাণিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তার হারটা ভিন্ন ভিন্ন, তবে অবশ্যই সেটার প্রয়োজন রয়েছে। অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য বর্তমানে অসংখ্য ভিডিও, অডিও পডকাস্ট, সেমিনার ইত্যাদি রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে পুরাতন যে পদ্ধতিতে তুমি নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে পারো, তা হলো অনুপ্রেরণামূলক বই পড়ে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশীদিন থাকে। তেমনি একটি অনুপ্রেরণামূলক বই পাওলো কোয়েলহো এর 'মাকতুব'। ১৬০টি ছোট ছোট অনুপ্রেরণামূলক অনুচ্ছেদ রয়েছে বইটিতে। সবকটি গল্পই আপনাকে দিবে চিন্তার খোরাক। বইটির একটি ছোট্ট গল্পের অনুবাদ এখানে তুলে ধরলাম:
এক শিষ্য ও তার গুরু এক সকালে মাঠে হাঁটছিলেন। শিষ্য তার গুরুর কাছে জানতে চাইলো, 'পবিত্রতা অর্জনের জন্য কোন খাবার প্রয়োজন?'
যদিও গুরু সবসময় জোর দিয়ে বলতেন যে সব খাবারই পবিত্র, কিন্তু শিষ্য তা বিশ্বাস করতো না।
শিষ্য বললো, 'অবশ্যই এমন কিছু খাবার আছে, যা আমাদেরকে ঈশ্বরের আরো কাছে নিয়ে যাবে।'
তখন গুরু বললেন, 'হুঁ, হয়তো তুমিই ঠিক। উদাহরণ হিসেবে ঐ মাশরুমের কথা বলা যেতে পারে।'
শিষ্যটি এ কথা শুনে উদ্দীপ্ত হলো। তার মনে হলো, এই মাশরুম তাকে পবিত্র করবে, ধ্যানমগ্ন করবে। কিন্তু একটি মাশরুম তুলেই সে চিৎকার করে উঠলো!
'এসব মাশরুম তো বিষাক্ত! একটা খেলেই সাথে সাথে মারা যাবো!'
গুরু বললেন, 'ঠিকই বলেছো। কিন্তু আমি তো আর কোনো খাবারের কথা জানি না, যা খেলে এত সহজে ঈশ্বরের কাছে তোমাকে নিয়ে যেতে পারে!'
চমৎকার একটি গল্প! এছাড়া বইটির একটি গল্পের একটি ছোট্ট লাইন আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে, "If you are still living, it’s because you have not yet arrived at the place you should be." আমাদের নিশ্চিত গন্তব্য আমাদের অপেক্ষায় আছে, যে কোনো সময় আমরা শুরু করবো- গন্তব্যের পথে যাত্রা!
সবশেষে আমার নিজের একটা উপলব্ধির কথা বলি। মানুষ অন্যান্য মানুষদের জীবনের গল্প শুনে তাদের করা ভুলগুলো নিজেদের জীবনে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বা এড়িয়েই চলে। কিন্তু নিজের জীবনে নিজের করা ভুলগুলো কখনো এড়ানো যায় না, কখনোই না! যদি কখনো মনে হয় যে তুমি ভুলটি এড়িয়ে গিয়েছো, তাহলে বুঝতে হবে, সে ভুলটা তোমার জীবনে হবার কথাই ছিলো না!
৩০ জানুয়ারি, ২০২২
# ছোটবেলায় আমাদের স্বপ্ন থাকে আমরা একদিন বড় হবো, অনেক বড়! কিন্তু আমাদের স্বপ্নেও থাকে না আমরা বুড়ো হবো, আমাদের বৃদ্ধ দাদা-দাদীর মতো, বা আমাদের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের মতো! আমাদের কল্পনায় বার্ধক্য থাকে না, থাকে একরাশ স্বপ্ন। একটা সময় আমরা শৈশব শেষ করে কৈশোরে পা দেই, তারপর যৌবন বয়স! জীবনে অসম্ভব বলে কিছু মনে হয় না বোধহয় সময়টায়। এরপর মধ্যবয়সে এসে মনে হয় আবার যদি ছোটবেলায় ফিরে যেতে পারতাম! বেশ হতো! ছোটবেলার স্মৃতিগুলো রিক্রিয়েট করার অনেক উপকরণ আজ নেই, বাসার আশপাশটাও বদলে গেছে সময়ের সাথে, অনেকটাই। বদলে গেছে যে পথ ধরে হাঁটতাম সে পথটাও! প্রযুক্তির কল্যাণে ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের অতীতকে খুব সহজেই ভার্চুয়ালি রিক্রিয়েট করা যাবে, আর ঘুরে আসা যাবে সেই বহুল আকাঙ্খিত ছোটবেলা থেকে!
অনেকে একটা কথা বলে থাকে, সময় বিবর্ণ হয়ে যায়! সত্যি কি তাই? সময় সবসময় একই থাকে, বিবর্ণ হই আমরা, আমাদের চারপাশ! আরেকটা জিনিস কি জানো? মানুষ বড্ড অস্থির! অন্য সবকিছুর তুলনায় মানুষ খুব দ্রুত বিবর্ণ হয়।
৩১ জানুয়ারি, ২০২২
বাড়ি নং-২৪/৩
পর্ব-১
রাত ১১ টা বেজে ২৪ মিনিট। সাধারণত এ সময়টায় আমি বই পড়ি। কিন্তু আজ ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছি! কোনো এক অদ্ভুত কারণে আমার কাছে আজকের চা টা অসম্ভব সুস্বাদু মনে হচ্ছে। কিন্তু কেন সেটা বুঝতে পারছি না। রুমে অবশ্য আমি একা নই, সাথে আছেন এক আগন্তুক! ভদ্রলোকের নাম শওকত ওসমান। নিশ্চয়ই অন্যদের মতো ব্যাক্তিগত কোনো সমস্যার সমাধানের জন্যই আমার কাছে এসেছেন।
চা খেতে খেতে শওকত ওসমান সাহেবকে পর্যবেক্ষণ করে যা দেখলাম তার সার সংক্ষেপ করলে বলতে হয়- ভদ্রলোকের কথায় কিছুটা কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক টান রয়েছে। তেল দিয়ে মাথার চুলগুলো শোয়ানো, তবে খুব একটা পরিপাটি করে আঁচড়ানো না। চোখের নীচে কালচে দাগ সদ্য নির্ঘুম রাতের জানান দিচ্ছে। খোঁচা খোঁচা আধপাকা দাঁড়িতেও চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ সুস্পষ্ট। ছাই রঙের পায়জামা পাঞ্জাবীতে অযত্নের ছোঁয়া থাকলেও পায়ের জুতোজোড়া সদ্য পালিশ করা, বিষয়টা বেশ আগ্রহোদ্দীপক! হাতের আঙ্গুলে এক ধরণের কালচে দাগ রয়েছে।
চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে আমি ভদ্রলোকের কথা শুনতে শুরু করলাম।
- 'আপনাকে এই অসময়ে বিরক্ত করার জন্য আমি লজ্জিত। আমার কিছু কথা বলার ছিলো, ঠিকভাবে বলতে গেলে আপনার সাহায্যের খুব প্রয়োজন আমার।', শওকত সাহেব বললেন।
শওকত সাহেব একটু থামলেন।
- 'আপনি কিছু মনে না করলে আমি একটা সিগারেট ধরাতে পারি?', ইতস্তত করে বললেন।
- 'হ্যা অবশ্যই।'
বলে আমিও একটি সিগারেট ধরালাম।
সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে শওকত সাহেব আবার বলতে শুরু করলেন।
- 'কুষ্টিয়ার বিখ্যাত মোহিনী মিলের কাছেই আমার বাড়ি। বাড়িতে শুধু আমার বৃদ্ধ মা আর একজন কাজের লোক রয়েছে। বাড়িতে আমরা মানুষ বলতে আমরা এই তিনজনই। সে তুলনায় বাড়িটা বেশ বড়। সব মিলিয়ে গোটা দশেক ঘর রয়েছে।
পৈতৃক সূত্রে আমি কাপড়ের ব্যবসা করি, বড় বাজারে বাবার থেকে পাওয়া দোকানটা ছাড়াও আরো দুইটি দোকান আছে আমার। বেশ কিছুদিন যাবৎ ব্যবসাটা ঠিক আগের মত ভালো চলছে না, তাই ভেবেছিলাম উত্তর পাশের তিনটা ঘর ভাড়া দিয়ে দিবো। ওগুলো অব্যবহৃতই পড়ে ছিলো, কিছুটা সংস্কার না করলে ভাড়া হবার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। ঘরের মেঝেটা মোজাইক করা থাকলেও বেশ পুরনো হয়ে গিয়েছিলো, টাইলস করে দিলে ঘর ভাড়াটা একটু বেশী পাওয়া যাবে ভেবে মেঝেতে টাইলস করানোর জন্য আমি তিনজন মিস্ত্রি নিয়োগ দেই।
সব কাজ ঠিকমতন চলছিলো, কিন্তু হঠাৎ করেই দুই সপ্তাহ আগে একটা ঘটনা ঘটে আমার বাড়িতে। দ্বিতীয় ঘরটার মেঝের মোজাইক সরাতেই মানুষের একটা কঙ্কাল পাওয়া গেলো! মিস্ত্রিরা আমাকে সাথে সাথেই বিষয়টি জানালে আমি তাদের কাজ বন্ধ করতে বললাম। বাইরের কাউকে যেনো এ বিষয়ে কিছু না জানায় তার জন্য বেশ মোটা অংকের অর্থও তাদের দিলাম। কিন্তু খুব একটা ভরসা পাচ্ছি না তাদের উপর, কখন কাকে কি বলে আমাকে একটা সমস্যায় ফেলে!
সে রাতেই আমি নিজেই মেঝেটা খুঁড়তে শুরু করি, মেঝে খুঁড়তে খুঁড়তে আমি আরো গোটা দশেক মানুষের মাথার খুলি আর কঙ্কাল পেলাম! আমি বুঝতে পারছিলাম না এতগুলো কঙ্কাল ঘরের মেঝেতে এলো কোত্থেকে! সে রাতের পর থেকে আমি আর ঘুমাতে পারছি না ঠিক মতো। প্রতিদিন আমি ঘরটায় গিয়ে আরো একটু করে খুঁড়তে থাকি, কালও খুঁড়েছি! সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২২ টি মাথার খুলি পেয়েছি আমি!'
- 'একগ্লাস পানি দিতে পারবেন আমাকে?', একটু থেমে বললেন শওকত সাহেব।
আমি টেবিলের উপর থেকে পানির বোতলটা এগিয়ে দিলাম।
- 'দুঃখিত, আমি গ্লাসে পানি খাই না, তাই বাসায় কোনো গ্লাস নেই।'
- 'সমস্যা নেই', বলেই শওকত সাহেব এক লিটার পানির বোতলের প্রায় পুরো পানিটাই ঢক ঢক করে খেয়ে নিলেন। পানি খেয়ে তিনি আবার বলতে শুরু করলেন।
- 'আমার ঘরের এই কঙ্কাল রহস্যের একটা কুল কিনারা না করা পর্যন্ত আমি স্বাভাবিক থাকতে পারছি না। আমাকে প্লিজ সাহায্য করুন! আপনার অনেক নাম ডাক শুনেছি আমি, আমার বিশ্বাস আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না। আপনার ফিস যা লাগে আমি দিবো, তবুও আমাকে এ সমস্যা থেকে বাঁচান, প্লিজ!', শওকত সাহেব থামলেন।
- আমি আরেকটা সিগারেট ধরালাম।
০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# আচ্ছা, তোমাকে যদি এমন একটা সুযোগ দেয়া হয় যাতে তুমি ভবিষ্যতের একটা সময়ে চলে যেতে পারবে এবং সে সময়টায় থেকে যেতে পারবে যতদিন বেঁচে থাকো ততদিন! তবে শর্ত থাকে, ভবিষ্যতের সময়টা হবে এখন থেকে কমপক্ষে ১০০ বছর পর! যাবে তুমি? যাবে এমন একটি জায়গায় যেখানে থাকবে না তোমার প্রিয় মুখগুলোর একটিও! এমনকি থাকবো না আমিও!
প্রশ্নটি করা হলে এক ধরণের মানুষ এমন পাওয়া যাবে যারা খুব উৎসাহী হয়ে যেতে চাইবে ভবিষ্যতে, আরেক ধরণের মানুষ যাওয়ার বিষয়ে একটুও আগ্রহী হবে না। আর সবচেয়ে মজার হলো তৃতীয় ধরণের কিছু মানুষ! যারা চাইবে ভবিষ্যতে গিয়ে ইচ্ছে হলে আবার বর্তমানে ফিরে আসতে, সেটা শর্ত ভঙ্গ করে হলেও! আর ইচ্ছে না হলে থেকেই গেলো! আমি নিজে চাইবো তৃতীয় দলে থাকতে।
তবে কেউ যদি ভবিষ্যতে একটা শর্ট ট্রিপ দিতে চাও তাহলে আমায় বলতে পারো, একটা ছোট্ট পদ্ধতি বলে দিবো! হ্যাপী টাইম ট্রাভেল!
২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# আজ তারিখটা বেশ সুন্দর! ০২.০২.২০২২। এত সুন্দর একটা তারিখ নিয়ে কিছু না লিখাটা একটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে যায়। তাই রিকশায় বসে একটা ছাইপাশ লিখলাম।
শূন্য দুই, শূন্য দুই,
দুই শূন্য দুই দুই !
এক বলে, দুই কই?
তিন বলে, দুই কই?
চুপিসারে হাসে দুই !
হাত পা ছুঁই-ছুঁই !
দুই বলে, তিন সই
একদিন পরে মুই
সাথে এক, হই তুই !
শূন্য তিন, শূন্য দুই,
দুই শূন্য দুই দুই !
আজ বাদে কাল তো তুই !
এক বলে, হায় হায় ! আমি কই !!!
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# মাঝে মাঝে বই পড়তে গিয়ে লেখকের কিছু কথা একদম মনে গেথে যায়। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর তেমন একটা লাইন আছে, আমার বেশ প্রিয়। "বাংলা ভাষার এই এক মাধুর্য, আসছি বলে স্বচ্ছন্দে চলে যাওয়া যায়।" যাই বা আসছি, যেটাই বলি না কেন, চলে যাওয়া মানেই আমার কাছে সেটা প্রস্থান, চিরতরে। রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর মত আমি বিশ্বাস করি না যে, চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়! আচ্ছা, যদি চলে যাওয়ার পর কখনো দেখা হয়েই যায়! তবে! তবে সবচেয়ে ভালো হয় চশমাটা খুলে রাখলে, দূরের জিনিস যে চশমা ছাড়া পরিষ্কারভাবে দেখা যায় না!
সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর আরেকটি পংক্তি বেশ জনপ্রিয়- "ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত"।
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# আচ্ছা এমন যদি হতো যে তুমি দিনের ২৪ ঘণ্টার মাঝে ২৩ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে থাকো! বাকি ১ ঘণ্টা সময় যেটায় জেগে থাকো সেটাও রাত ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত! তোমার এক একটা বছর হতো মাত্র ৩৬৫ ঘণ্টার! ভারী অদ্ভুত হতো তাই না? অদ্ভুত হলেও তুমি শুধুমাত্র নিতান্ত প্রয়োজনীয় কাজটাই করতে শিখতে ঐ মহামূল্যবান একটা ঘণ্টায়। হেনরি বিনস নামের আমেরিকান এক যুবক দিনের তেইশ ঘণ্টা ঘুমিয়ে এক ঘন্টা জেগে থাকতো! আর তার ঐ একটা ঘণ্টায় মাঝে মাঝে ঘটে যাওয়া রোমাঞ্চকর সব ঘটনা নিয়ে থ্রিলার লেখক নিক পিরোগ লিখেছেন হেনরি বিনস সিরিজটি। এখন পর্যন্ত পাঁচটি বই রয়েছে এ সিরিজে: 3:00 A.M., 3:10 A.M., 3:21 A.M., 3:34 A.M. এবং 3:46 A.M. ২০২২ সালের আগস্টে এ সিরিজের ষষ্ঠ বইটি আসতে যাচ্ছে, 3:53 A.M.! আজকে সিরিজের প্রথম বই 3:00 A.M. এর গল্প নিয়ে টুকটাক কথা বলি.....
গল্পটা যাকে নিয়ে তার নাম হেনরি বিনস। রাত ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত জেগে থাকা ছাড়া বাকি তেইশ ঘণ্টা অনেকটা মরা মানুষের মতো ঘুমায় সে, এক অদ্ভুত মেডিক্যাল কন্ডিশন! এ এক ঘণ্টায় খাওয়া, গোসল করা, বই পড়া, গেম অব থ্রোনস নামের টিভি সিরিয়াল দেখা, টুকটাক ব্যায়াম করা, কারেন্সি ট্রেড করা ছাড়া তেমন ভিন্ন কিছু করা হয় না তার। অবশ্য মাঝে মাঝে বাবার সাথে তাস খেলা হয়, সেটাও খুব কম। মূল ঘটনা শুরু হয় এক রাতে ঘুমিয়ে পড়ার একটু আগে সামনের বাড়ি থেকে এক মেয়ের চিৎকার কানে আসা এবং সে মুহূর্তে এক ব্যক্তিকে ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে হেনরির দেখে ফেলার পর থেকে। সে ব্যক্তি আর কেউ নয়, খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট! পরদিন হেনরি জানতে পারে সামনের বাড়ির মেয়েটি খুন হয়েছে! কে করেছে এ খুন? প্রেসিডেন্ট? না কি অন্য কেউ? শেষ পর্যন্ত হেনরি তার মহামূল্যবান এক ঘণ্টার অনেকগুলো দিন কাটিয়ে কি প্রকৃত খুনির পরিচয় জানতে পারে? না কি সে জানতে পারে খুনটা সে নিজেই করেছে,অবচেতন মনে! জানতে হলে বইটি পড়ে দেখো, সময়টা নষ্ট হবে না।
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# কোনো কিছু না করলে কোনো কিছু করার চেয়ে সময় কম লাগবে, প্রকৃতপক্ষে কোনো সময়ই লাগবে না। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে একটা কথা আছে, "There is no code faster than 'no code'" অর্থাৎ কোনো কোড না থাকলেই সেটা প্রসেস করার প্রয়োজন হয় না, ফলে সেটাই দ্রুততম! জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই দর্শন প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ, এমন কোনও মিটিং নেই যা মোটেও মিটিং না করার চেয়ে দ্রুত যায়। এর মানে এই নয় যে তুমি কখনই কোনো মিটিংয়ে যোগ দেবে না, কিন্তু সত্য হল যে আমরা এমন অনেক বিষয়ে হ্যাঁ বলি যা আমরা আসলে করতে চাই না। এমন অনেক মিটিং আছে যেগুলো করার দরকার নেই। কোনো একটা সফটওয়্যারে এমন অনেক কোড লেখা থাকে যা মুছে ফেলা যেতে পারে, সফটওয়্যারটির কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়েই! অনেকসময় এমন ঘটে যে তোমাকে একটা কিছু করতে বলা হয় আর তুমি উত্তর দাও, "হ্যাঁ, নিশ্চয়ই"। কিছুদিন পর তোমার To Do লিস্ট দেখে তোমার মাথা নষ্ট অবস্থা হয়! এখানে দোষটা কি তাহলে তোমারই! কারণ তুমিই তো হ্যাঁ বলেছিলে! তাই কোনো কাজে সম্মতি দেওয়ার আগে বুঝতে হবে তোমার সময় হবে কি না, জিনিসগুলি প্রয়োজনীয় কি না। আর তার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, জিজ্ঞাসা করা। যেটা আমরা সচরাচর করি না। তাই যেখানে একটি 'না' সহজ সমাধান হতে পারতো সেখানে আমরা 'হ্যাঁ' বলে একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থায় পড়ে যাই। কিন্তু যদি 'না' বলার এতো সুবিধা থেকেই থাকে, তাহলে কেন আমরা এতবার হ্যাঁ বলি? এর একটা বিশাল ব্যাখ্যা আছে, আরেকদিন আলোচনা করা যাবে।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# মাঝে মাঝে আমি কবিতা লিখি, কোনো কারণ ছাড়াই! কবিতাগুলো খুব যে একটা ভালো হয় তা নয়, কিন্তু আমি নিজে পড়ে শান্তি পাই। নিজের লেখা পড়ে শান্তি পাওয়া অনেক মজার একটা বিষয়, অনেকটা নিজেই নিজের শান্তির কারণ হওয়া!
একবার হঠাৎ মনে হলো একটা শহর মানুষের দেয়া যতটা অত্যাচার সহ্য করে সেটা যদি জড়ো শহর না হয়ে মানুষ হতো! একটা খুনোখুনি কান্ড হতো নির্ঘাত! তাই আমার মনে হয় একটা জড়ো শহর মানুষের চেয়ে উত্তম আচরণ করে, সত্যি নয় কি?
মানুষ
মাঝে মাঝে শহরটা কাঁদে, খুব নীরবে।
চোখের জল গড়িয়ে পড়ার আগেই
তাকে আবার হাসতে হয়, নকল হাসি!
মাঝে মাঝে শহরটা অবসাদে ভুগতে থাকে,
অবলীলায় ডুবতে থাকে সময়ের চোরাবালিতে!
অবসাদগ্রস্থ শহর অপেক্ষায় থাকে, পুরোপুরি
ডুবে যাওয়ার! অপেক্ষায় থাকে হারিয়ে যাওয়ার!
মাঝে মাঝে শহরটা এলোমেলো ভাবতে থাকে,
ইচ্ছে করে, কেঁপে উঠে ধ্বসিয়ে দিতে, সবকিছু!
অনেক অনেক কষ্টে সে নিজেকে সংবরণ করে!
শহরটা এমন করতে পারে না, কারণ সে যে মানুষ নয়!
মানুষ হলে ঠিকই সে শেষ করে দিতো, সবকিছু!
জড় শহরটা তার সব কষ্ট বয়ে নিয়ে বেঁচে থাকে,
আরো ক'টা দিন! অপেক্ষায় থাকে মানুষ হবার!
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# একটা বাসা, যেটায় আমরা থাকি, আমি বা তুমি, তার সবচেয়ে সুন্দর অংশ কোনটা বলতে পারো? এক একজনের কাছে বিষয়টা এক একরকম, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় বাসার সবচেয়ে সুন্দর অংশ হলো বাসার বারান্দা আর জানালা! বাসার ভিতরে থেকেও বাইরের জগৎটাকে খুব একটা দূর হতে দেয় না এই বারান্দা আর জানালা। অনেক সময় জানালার বাইরের পৃথিবীর সুন্দর একটা দৃশ্য নাটকীয়ভাবে তোমার মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে! কখনো বা প্রচন্ড খারাপ, সবচেয়ে খারাপ! সবচেয়ে ভালো হয় জানালার বাইরে তাকালে যদি আকাশ দেখা যায়, যে আকাশটা তুমি, আমি, আমরা অনেকটা একইরকম দেখি! আকাশ দেখে কেউ নিজের ক্ষুদ্রত্ব অনুধাবন করবে, কেউ বা আকাশের মত উদার হতে চাইবে, কেউ চাইবে পাখি হয়ে একটু আকাশে উড়ে বেড়াতে-জীবনে একবারের জন্য হলেও! বাসায় বারান্দা রাখার রীতি কিন্তু খুব একটা পুরাতন না, ১৮৫০ সালের দিক থেকে এর প্রচলন হয়! তবে বাসায় জানালা রাখার রীতি বেশ পুরনো, আনুমানিক ১০০ সাল থেকেই মানুষ বাসায় ছোট ছোট জানালা রাখতে শুরু করে, তবে তা মোটেও আজকের দিনের মতো ছিলো না।
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# মানুষ প্রচন্ড রকম কল্পনাপ্রবণ প্রাণী। মানুষ চাইলেই কল্পনায় সবকিছু পেতে পারে, চাইলে সেই পাওয়া জিনিসগুলো সব সময়ের জন্য রেখেও দিতে পারে তার কল্পনার রাজ্যের গড়ে তোলা ঘরে! যারা কল্পনার রাজ্যের ঘরটা তৈরি করতে জানে না তারা এই হিসেবের বাইরে। পাওলো কোয়েলহোর খুব ইন্টারেস্টিং একটা লিখা আছে মানুষের কল্পনা নিয়ে। লিখাটা অনেকটা এমন:
"গুরু বললেন, 'চোখ বন্ধ করো। কিংবা চোখ খো রাখতে পারো। এমন একটি দৃশ্য কল্পনা করো যে এক ঝাঁক পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে।'
এখন বলো, 'তুমি কয়টি পাখি দেখছো? ৫টি? ১১টি? ১৬টি?'
জবাব যাই হোক না কেনো, কয়টা পাখি আছে তা বলা কঠিন! এই ছোট্ট পরীক্ষা থেকে একটা বিষয় বেশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। তুমি এক ঝাঁক পাখি কল্পনা করতে পারো, কিন্তু ঝাঁকে কয়টা পাখি আছে তার হিসাব করার বিষয়টি তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও দৃশ্যটি পরিষ্কার, সুনির্দিষ্ট ও নির্ভুল।
প্রশ্নটির অবশ্যই একটি জবাব থাকতে হবে। কল্পিত দৃশ্যে কয়টি পাখি থাকবে তা নির্ধারণ করবে কে? তুমিই!"
৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# আচ্ছা আমাদের, বাংলাদেশীদের, একটা অভ্যাস যেটা থাকলে বেশ ভালো হতো কিন্তু অধিকাংশ মানুষের সে অভ্যাস নেই! সেটা কি বলতে পারবে? এর আসলে নির্দিষ্ট একটা উত্তর হয় না, অনেকগুলো অভ্যাস এর কথা বলা যায় যেটা থাকলে জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়টা হয়তো আরেকটু উন্নত হতো। আমি একটা অভ্যাসের কথা বলি যেটা একটা জাতিকে মেধায় মননে বেশ ভালো একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। অভ্যাসটা হলো বই পড়া! যেকোনো বই না, আত্নউন্নয়নমূলক বই বা ইতিহাস সম্পর্কিত বই বা এমন বই যেটা মানুষের মস্তিষ্ককে একটু খাটিয়ে নিতে পারে।ইতিহাসের বই পড়াটা আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আত্নউন্নয়নমূলক বই পড়ার চেয়েও। এছাড়া গল্প বা উপন্যাস পড়া যেতেই পারে, সেটা শুধুই আনন্দের জন্য। কিন্তু আমাদের ক'জনই বা বই কেনে, বা কিনলেও ক'জনই বা সে বইটা পড়ে! আমাদের কাছে বইকে বেশ দামী মনে হয়, মনে হয় বই কেনা একটা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়! বইয়ের দাম নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলীর একটা উক্তি আছে, "বই সস্তা নয় বলে লোকে বই কেনে না, আর লোকে বই কেনে না বলে বই সস্তা করা যায় না।" কি চমৎকার কথা, তাই না! প্রতি মাসে অন্তত একটা বই কেনার অভ্যাস আমাদের নিজেদের না থাকলেও, প্রতি মাসে নিজের সন্তানকে বা প্রিয় মানুষকে একটা বই কিনে দেয়ার অভ্যাস হয়তো ১৫/২০ বছর পর আমাদের দেশকে আরেকটু ভালো রাখবে!
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# আমরা শুধু একবার বাঁচি, মারাও যাই একবারই! নির্মম সত্য হলো একদিন আমরা সবাই মারা যাবো। কিন্তু সব ছেড়ে মারা যাওয়ার আগে আমরা অনেকগুলো দিন বেঁচে থাকি! দিনের সংখ্যাটা এক একজনের জন্য এক একরকম হলেও পরিমিত ঘুমিয়ে (অতিরিক্ত না ঘুমিয়ে!) বেঁচে থাকা সময়টাকে বাড়িয়ে নেয়া যায় খুব সহজেই! যতটা দিন আমরা বেঁচে থাকি, আমাদের ভাবনাগুলো আসলে কেমন হয়?
আমরা আমাদের মৃত্যু নিয়ে খুব কমই ভাবি, খুব কম ভাবি বেঁচে থাকা দিনগুলো নিয়েও! তাহলে আমরা আসলে কি নিয়ে ভাবি! আমার মনে হয় আমরা যেটা নিয়ে খুব বেশি ভাবি সেটা হলো ভবিষ্যত। এখন তোমার মনে হতে পারে ভবিষ্যত নিয়ে ভাবা মানে তো বেঁচে থাকা দিনগুলো নিয়েই ভাবা! সময়টা আসার একটু আগে ভাগেই সেটা নিয়ে ভাবা আর কি! বাস্তবিকভাবে আমরা আমাদের ভবিষ্যতটা যেভাবে ভাবি, ভবিষ্যতের সেই সময়টা আসার পর সেটা ঠিক ঠিক সেভাবে আমাদের ধরা দেয় না। তাই ভবিষ্যত নিয়ে ভাবটা ঠিক বেঁচে থাকা দিনগুলো নিয়ে ভাবা বলা যায় না, কারণ আমাদের ভাবনায় ভবিষ্যতটা যেভাবে থাকে সে অনুযায়ী আমাদের বেঁচে থাকা হয় না।
তাহলে বেঁচে থাকা দিন নিয়ে সত্যিকারভাবে ভাববে কিভাবে! তুমি হয়তো বলবে বর্তমান নিয়েই ভাবতে হবে তাহলে! বর্তমান জিনিসটা খুব দ্রুত অতীত হয়ে যায়, তাই সেটা নিয়ে খুব একটা ভাবার সময় কি আমরা আসলে পাই! বা বর্তমানটাও কি আমাদের ভাবনা মতোই হয় সবসময়? তাহলে বেঁচে থাকা দিন নিয়ে সত্যিকারভাবে ভাববে কিভাবে!!! আমার মতে বেঁচে থাকা দিন নিয়ে ভাবতে হলে অতীতের সুন্দর দিনগুলো নিয়ে ভাবো, বা তোমার কাটানো এমন সব সময়গুলো নিয়ে ভাবো যেগুলো তোমার কাছে মনে হবে, 'হুম, ঐ সময়টায় আমি আসলেই নিজের মতোই বেঁচে ছিলাম, একদম যেমনটা আমি চাই!'
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# গত সপ্তাহে আমি নিক পিরোগের হেনরি বিনস সিরিজ নিয়ে টুকটাক কথা বলেছিলাম, কথা বলেছিলাম সিরিজের প্রথম বই 3:00 A.M. নিয়েও। আজকে কথা বলবো এ সিরিজের দ্বিতীয় বই 3:10 A.M. নিয়ে।
ইনগ্রিড, ল্যাসি, মারডক আর বাবাকে নিয়ে হেনরির দিনগুলো ঠিকঠাক ভাবেই কেটে যাচ্ছিলো। হঠাৎ একদিন একটি ই-মেইল এসে হেনরির সবকিছু ওলটপালট করে দেয়, ই-মেইলে হেনরি জানতে পারে তার মায়ের মৃত্যু সংবাদ। স্বাভাবিকভাবে মারা যায়নি তার মা, খুন করা হয়েছে তাকে! মায়ের সাথে হেনরির শেষ দেখা হয়েছিলো প্রায় ৩০ বছর আগে, যখন তার বয়স ছিলো মাত্র ৬ বছর! মায়ের মৃত্যু রহস্য সমাধান করতে যেয়ে হেনরিকে কঠিন সব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। হেনরির মায়ের প্রকৃত পরিচয় কি? সিআইএ এর এজেন্ট? না কি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী! আর তার এই ২৩ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকার রহস্যই বা কি? তোমার কি মনে হয়? গল্পের শেষে কি হেনরি এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পারবে? খুব দ্রুত এগিয়ে চলা গল্পের সাথে এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পড়ে ফেলো 3:10 A.M.।
(তবে সত্যি বলতে সিরিজের প্রথম বইয়ের তুলনায় দ্বিতীয় বইটি তেমন একটা ভালো লাগে নি।)
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# আমাদের খুব প্রয়োজনীয়, খুব উপকারী একটা জিনিস আছে, কিন্তু আমরা একে খুব একটা পছন্দ করি না! এটা আমাদের সময়মত কাজ করতে অনেক সাহায্য করে, বলতে পারো আমাদের রীতিমত স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পর্কে, তারপরও আমরা একে পছন্দ করি না! বলতে পারো আমি কিসের কথা বলছি? আমি বলছি অ্যালার্ম ক্লকের কথা- অনেক মানুষের সকাল বেলার সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করে দেয় যে ঘড়ির বিকট শব্দ! স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনতে এর জুড়ি নেই।
আধুনিক অ্যালার্ম ক্লকের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় ১৭৮৭ সালে লেভি হাচিন্স নামের আমেরিকান ঘড়ি নির্মাতা সর্বপ্রথম অ্যালার্ম ক্লক প্রস্তুত করেন। তবে এটা শুধুমাত্র ভোর ৪ টায় বেজে উঠতো। এরও আগে ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে কিছু অ্যালার্ম ক্লক তৈরি করা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়। প্রযুক্তির কল্যাণে অ্যালার্ম ক্লক এখন আমাদের মোবাইলে, আলাদা করে আর অ্যালার্ম ক্লকের প্রয়োজন পড়ে না।
আচ্ছা, অ্যালার্ম ক্লক আবিষ্কারের আগে মানুষ যথাসময়ে ঘুম থেকে উঠার জন্য কি পন্থা অবলম্বন করতো? জানতে ইচ্ছে করছে না?
শুরুর দিকে কিছু বিত্তশালী মানুষ তাদেরকে ঘুম থেকে ডেকে তোলার জন্য মানুষ নিয়োগ দিতো! সবচেয়ে সহজ কিন্তু নির্মম একটা পদ্ধতি! এরপর আসলো ক্যান্ডেল ক্লক বা মোমবাতি ঘড়ি। প্রাচীন চীনে এর উৎপত্তি। একটা নির্দিষ্ট সময় পর মোম গলে ধাতব পাত্রের মধ্যে শব্দের উৎপত্তি করতো আর ঘুমিয়ে থাকা মানুষের ঘুম ভাঙিয়ে দিতো। তবে মানুষের দেহের অভ্যন্তরীণ সিস্টেম একটা ফর্মুলা মেনে চলে, আমরা যত বেশী সময় জেগে থাকি, আমাদের শরীর ততো বেশী ঘুমিয়ে পড়তে চায়; আবার আমাদের ক্লান্ত শরীরকে সতেজ করতে যতটুকু ঘুমের প্রয়োজন, ততটুকু ঘুমানোর পর আমাদের শরীর নিজ থেকে জেগে উঠতে চায়, বাকি যে অতিরিক্ত ঘুমটা আমরা ঘুমাই সেটা নিতান্তই আমাদের আলসেমী।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে কেনো ভালোবাসে সেটার কোনো সর্বজনীন উত্তর নেই। একজন মানুষকে ভালোবাসার জন্য আরেকজন মানুষের কোনো নির্দিষ্ট কারণ নাও থাকতে পারে, আবার থাকতে পারে হাজারটা কারণও! একটা মানুষকে হাজারবার অকারণ ভালোবাসা যায়; কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো কারণে ভালোবাসা, সে নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য একবারই হয়। ভালোবাসা নিয়ে একবার একটা কবিতা লিখেছিলাম, ছাইপাশ টাইপ কবিতা!
অকারণ ভালোবাসা
একটা কথা কি জানো? যখন তুমি কাউকে ভালোবাসবে,
সবসময় ভালোবাসি, ভালোবাসি. . . .বলা লাগবে না!
তোমার প্রতিটা কাজে, প্রতিটা কথায়, এমনকি নীরবতায়
তোমার ভালোবাসারাই তাকে বলে যাবে, ভালোবাসি!
ভালোবাসি, ভালোবাসি, অনেক অনেক ভালোবাসি!
আচ্ছা, তোমায় আমি কেন ভালোবাসি? তুমি কি জানো?
তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় ভালোবাসি বলেই!
তোমায় আমি ভালোবাসি আরো ভালোবাসবো বলেই!
তোমায় আমি ভালোবাসি রোদমাখা সকালের মতো,
তোমায় আমি ভালোবাসি এক টুকরো মেঘের মতো,
তোমায় আমি ভালোবাসি কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতো,
তোমায় আমি ভালোবাসি নীল আকাশের মতো,
তোমায় আমি ভালোবাসি আমার সবটা দিয়ে!
তোমায় আমি ভালোবাসি অসীম সময়ের জন্য!
মাঝে মাঝে তোমাকে হারানোর ভয়ে আমি কুঁকড়ে যাই!
ভয়ে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে, বন্ধ চোখে আমি-
নিজেকেও আর খুঁজে পাই না। কোথাও না!
এমনকি আমার একান্ত কল্পনার রাজ্যেও না!
আমি আমার চোখ দু'টো বন্ধ করতে চাই না!
আমি তোমাকে হারাতে চাই না, সত্যি বলছি!
আচ্ছা, তোমায় কি আমি বললাম, ভালোবাসি!
ভালোবাসি, ভালোবাসি, অনেক অনেক ভালোবাসি!
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# মানুষের সুখ কি পরিমাপ করা যায়? আমাদের অনেকের ধারণা সুখের কোনো পরিমাপ হয় না। এই যে সুখের পরিমাপ করা যায় না বলে মনে করা হয়, এটা কি গবেষকদের ব্যর্থতা যে তারা সুখ পরিমাপ করার কোনো বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতি বের করতে পারেন নি!
মজার বিষয় হলো- ডিপ্রেশন, উত্তেজনা বা স্ট্রেস পরিমাপ করার প্রচলিত পদ্ধতি নিয়ে কারো তেমন একটা মাথা ব্যথা না থাকলেও সুখের পরিমাপ নিয়ে সবার মনে রয়েছে বিশুদ্ধ অবিশ্বাস! তবে সুখ মাপার জন্য গবেষণা কিন্তু কম হয় নি, মোটামুটি পাঁচটি পদ্ধতিতে তারা সুখ মাপার চেষ্টা করেছেন। সেগুলো নিয়ে লিখতে গেলে বেশ বড় লিখা হয়ে যাবে, তাই সে পথে আর গেলাম না। সাধারণ কিছু বিষয়ে নিয়ে কথা বলি।
আমরা ধারণা করে থাকি সুখ বিষন্নতার বিপরীত একটা বিষয়। কিন্তু বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটোনিনের নিম্ন স্তর বিষণ্নতার পূর্বাভাস দিলেও উচ্চ মাত্রার সেরোটোনিন সুখের পূর্বাভাস দেয় না! অর্থাৎ বিষন্নতা আর সুখ একই সুতোর বিপরীত প্রান্ত নয়। আবার ধরো তোমাকে কেউ প্রশ্ন করলো, তোমার সারাটা জীবন পর্যালোচনা করে বলো তো, তুমি কি সুখী? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমরা সবসময় আমাদের মস্তিষ্কের দ্বারা প্রতারিত হয়! কেন জানো? কারণ এ প্রশ্নের উত্তর তুমি খুঁজতে শুরু করলে তোমার মস্তিষ্ক সাম্প্রতিক সব ঘটনা নিয়ে বিশ্লেষণ করে তোমাকে একটা উত্তরে উপনীত করবে, এবং তুমি সাম্প্রতিক সময়ে কোনো বিষয়ে দুঃখ বোধ করলে তোমার উত্তরটা হবে তুমি সুখী নও, যদি তুমি তোমার অতীত জীবনে অসম্ভব সুখী হয়েও থাকো!
আচ্ছা, তুমি কি সুখ মাপার কোনো পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করবে?
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সবার আগে অধিকাংশ মানুষ কোন কাজটা করে? বলতে পারো? সবার আগে মানুষ যেটা করে সেটা হলো সময় দেখা! কোনো প্রয়োজনীয় কাজ থাকুক আর নাই বা থাকুক! অধিকাংশ মানুষ সময়ের সঠিক মূল্য অনুধাবন করতে না পারলেও সময় কিন্তু ঠিকই দেখে। সময় দেখতে দেখতে মানুষ বছরের পর বছর পার করে দেয়, কিন্তু সে কখনো সময় দেখা ছাড়ে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ তার বেড়ে ওঠার সাথে বা বয়স বাড়ার সাথে বা বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার সাথে সময়ের একটা সম্পর্ক আছে ধরেই নেয়। কিন্তু আসলেও কি এমন কোনো সম্পর্ক আছে? আমার কাছে কিন্তু তা মনে হয় না (আমার ভাবনায় ভুল থাকতেই পারে!)। আমাদের বেড়ে ওঠার সাথে কিছু জৈবিক প্রক্রিয়া জড়িত, এবং সেসব প্রক্রিয়া এক ধাপ থেকে অন্য ধাপে যেতে একটা নির্দিষ্ট পরিসরের প্রয়োজন। বেড়ে ওঠার এ পরিসর কিন্তু অনেক এক্সটার্নাল নিয়ামক দ্বারা কমিয়ে আনা যায়, অথবা শরীরের ইন্টার্নাল কোনো কারণেও এ পরিসর কমে আসতে পারে। তবে, আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব পড়ে থাকলে আমার কথা ভুল মনেও হতে পারে!
মানুষের প্রসঙ্গ আসায় জোনাথন সুইফট এর একটা কথা মনে পড়ে গেলো। তিনি তার গালিভার'স ট্রাভেলস বইয়ে একটা সুন্দর কথা লিখেছেন,"Every man desires to live long, but no man wishes to be old"/"প্রত্যেক মানুষই দীর্ঘজীবী হতে চায়, কিন্তু কেউ বুড়ো হতে চায় না"!
অল্প বয়সী বুড়ো যেমন নেই, বয়স্ক শিশুও তেমন নেই! তবে আশ্চর্যজনকভাবে মধ্য বয়সী শিশু-বুড়ো দুইটাই আছে!
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# কখনো কেউ যদি তোমাকে শুধুমাত্র একটা পরম সত্য কথা বলতে বলে, তার উত্তরে তুমি কি বলবে? আমার মতে, পৃথিবীতে মিথ্যা কথার চেয়ে সত্য কথার সংখ্যা অনেক বেশি, পরম সত্য কথার সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। তাই এ প্রশ্নের উত্তরে ভিন্নতা খুব স্বাভাবিক। আমাকে কেউ এ প্রশ্ন করলে আমি কি বলবো জানো? "একদিন আমি মারা যাবো।" - এটাই আমার কাছে পরম সত্য। এর চেয়ে বিশুদ্ধ সত্য খুব সম্ভবত ইহজগতে আর নেই। এ প্রশ্নের বিপরীতে "স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে" - এ উত্তর না দেয়ায় আমার উপর অনেকেই বিরক্ত হতে পারে। কিন্তু এটা আমি ইচ্ছাকৃতভাবেই বলিনি, কারণ অনেকেই স্রষ্টায় বিশ্বাস করে না, কিন্তু স্রষ্টা প্রদত্ত মৃত্যুকে ঠিকই বিশ্বাস করে! আচ্ছা, মারা যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে একটা মানুষ কি ভাবে? পুরো জীবনের ফ্ল্যাশব্যাক? মনে হয় না। আমার মনে হয়, মারা যাবার আগে মানুষ ভাবে - কেউ কিছু একটা করুক যাতে করে সে বেঁচে যায়, কেউ অন্তত বলুক এটাই তোমার শেষ নিঃশ্বাস নয়, এটাই তোমার শেষ নয়!
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# মাঝে মাঝে লেখা-লেখি করার সময় পাই না, তখন মনে হয় লেখা-লেখি করার সময় পাওয়াটা একটা কঠিন ব্যাপার! আমার অধিকাংশ লেখা আমি লিখি রিকশায় করে অফিসে যাওয়ার সময় বা অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময়। তারপরও মাঝে মাঝে লেখার সময় বের করা যায় না, এই যেমন আজ! হজপজ_Hodgepodge এর জন্য একটা কিছু তো লিখা চাই!!! আমার একটা পুরোনো লেখা নতুন করে লিখলাম তাই . . .
অনেককিছু ভেবে আসলে লেখা-লেখি হয় না। মনের কথাগুলো লিখতে হয় না ভেবে, একটার পর একটা শব্দের গাঁথুনিতে। অনেক সময় মনে হয় আমার মনের অধিকাংশ কথা পৃথিবীর অন্য কেউ লিখে ফেলেছে অনেক অনেক আগে, বা যেটা আমি মনে আসা সত্বেও কখনো লিখি নি, ভবিষ্যতে কেউ হয়তো সেটা নিয়ে লিখবে! বিষয়টা অদ্ভুত মনে হলেও খুব স্বাভাবিক!
যে কোনো মানুষের To Do লিস্ট, চাওয়ার বিপরীতে পাওয়ার লিস্ট, পাওয়ার বিপরীতে চাওয়ার লিস্ট...... এমন হাজারটা লিস্ট কি তার মৃত্যুর সাথে বিলীন হয়ে যায়? না কি সে সবকিছু বয়ে নিয়ে যায় পরকালের জীবনে? এই প্রশ্নের উত্তরটা হলো- সবকিছু নিয়ে যাওয়া হয় নিজের সাথে করে, পরকালীন জীবনে! সাথে করে কি নিয়ে যাবে সেটা পুরোটাই তোমার উপর নির্ভর না করলেও অন্য কাউকে খুব সুন্দর কিছু স্মৃতি সাথে করে নিয়ে যেতে একটা কিছু তুমি অবশ্যই করতে পারো। দেখবে এর প্রতিদানস্বরূপ প্রকৃতি সুন্দর সুন্দর সব উপলক্ষ্য তৈরি করে রাখছে, শুধুই তোমার জন্য!
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# একজন মৃত্যু পথযাত্রী মানুষকে প্রশ্ন করা হলো, "তোমার শেষ ইচ্ছা কি?"
সে একটা সেকেন্ডও না ভেবে বললো, "আরো অনেকটা দিন বাঁচতে চাই!"
প্রশ্নকর্তা গোমড়া মুখে বললো, "যাওয়ার আগেও একটা প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারলে না!"
মানুষ অনেকটা বৃক্ষের মত, তারও শিকড় গজায়, তারও ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে! মানুষের শিকড় পরিবারকে আঁকড়ে ধরে মাটির মতো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিবার ছেড়ে মাটিতে যেতে তার মন চায় না! মানুষের ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে ঘিরে!
মানুষ হিসেবে আমি খুব উচ্চ মানের বৃক্ষ, খুব দ্রুত শিকড় আর ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে আমার! শিকড় আর ডালপালা ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে ভাবতেই বেশ কষ্ট লাগে। আচ্ছা, আমাকে যদি কেউ কখনো জিজ্ঞেস করে, "তোমার শেষ ইচ্ছা কি?" উত্তরে আমি কি বলবো জানো?
"আমি কি একটা প্লাস্টিকের বৃক্ষ হতে পারি?"
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# পঞ্চাশ! আজকে হজপজ_Hodgepodge এর ৫০তম লেখা! টানা পঞ্চাশ দিন বিচ্ছিন্ন কিছু বিষয় নিয়ে কিছু একটা লিখা আমার জন্য বেশ কঠিন ছিলো, খুব সম্ভবত সবার জন্যও বিষয়টা এমনই হবার কথা! মাঝে মাঝে 'Writer's block' এসে যে ভর করে নি এমন নয়! তবুও শেষমেশ শেষ রক্ষা হয়েছে! পঞ্চাশ সংখ্যাটার একটু আলাদা মাহাত্ম্য আছে, পঞ্চাশ নিয়ে আছে গণিতের কিছু মজাও! এই যেমন, পঞ্চাশ হল সবচেয়ে ছোট সংখ্যা যা দুটি ভিন্ন উপায়ে দুটি অশূন্য বর্গের সমষ্টিঃ 50 = 1² + 7² = 5² + 5²। এর চেয়ে ছোট আর কোনো সংখ্যা নেই যাকে এভাবে দুটি ভিন্ন উপায়ে দুটি অশূন্য বর্গের সমষ্টি আকারে প্রকাশ করা যাবে!
আবার পঞ্চাশ একইসাথে তিনটি ও চারটি বর্গক্ষেত্রের যোগফল! 50 = 3² + 4² + 5² = 1² + 2² + 3² + 6²। বেশ মজার না?
নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে ম্যাজিক নাম্বারের একটা কনসেপ্ট আছে, ৫o হচ্ছে ৫ম ম্যাজিক নাম্বার! বাকি ম্যাজিক নাম্বারগুলো হলো - ২, ৮, ২০, ২৮, ৮২, ১২৬।
পঞ্চাশ নিয়ে আমার পড়া সবচেয়ে সুন্দর লাইনটি হলো- "Forty is the old age of youth and Fifty is the youth of the old age!" কত অসাধারণ একটি কথা!
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# এবছর শীত যাই যাই করেও এখনো যায়নি। শীত চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেই হুট করে এক পশলা বৃষ্টি এসে তার যাওয়ার সময়টায় আরেকটু বিলম্ব ঘটাচ্ছে, অদ্ভুতভাবে! বেশ কিছুদিন যাবত একটা গল্প লিখছি, গল্পটায় বেশ কিছু কবিতা আছে, সবগুলো আমার লিখা। এমন এক শীত শীত বর্ষায় আমার গল্পের নায়ক ফ্লেমিংগো তার নায়িকা কিমোরাকে একটা কবিতা লিখে পাঠিয়েছিলো......
"বৃষ্টিস্নাত বিকেল বেলায় তোমায় খুব মনে পড়ে।
চায়ের কাপে টি ব্যাগটা অলসভাবে ডুবে আছে- অনেকক্ষণ ! হঠাৎ কাপে একটা চুমুক দেই, আবার-
দেই না ! ঘরের কোণে ঠিক যেখানটায় তুমি বসতে,
আমিও আজ বসে আছি সেখানটায়, একা একা!
সবকিছুতে ধূলো জমলেও, তোমার বসার জায়গাটায়-
আমি ধূলো জমতে দেই নি, একটুও না !
ঘোলাটে আকাশ আমার মনের আকাশ ঢেকে রাখে,
অদ্ভুতভাবে। এমন দিনগুলোয় শহরটাও কেমন যেন
বিষন্ন হয়ে থাকে ! এই বিষন্নতা আমার ভালো লাগে না,
একদমই না ! আমার ভালো লাগে তোমার হাসিমুখ,
আর তোমার হাতে ধোয়া উঠা এক কাপ চা !
যার অর্ধেকটা শুধুই আমার ! সবসময় !"
.........সব গল্পের একটা শেষ থাকে। এমন কোনো গল্প কেউ কি লিখেছে, যেটা ইচ্ছে করেই অসমাপ্ত! হঠাৎ একটা জায়গায় গিয়ে আর কিছু লিখা হয় নি! অনেক লেখকের মৃত্যুর পর তার অসমাপ্ত গল্প আমরা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে চাইলেও, বেঁচে থাকা লেখকের অসমাপ্ত গল্প প্রকাশিত হলে আমরা বিষয়টা কীভাবে নিবো?
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন! বাংলা ভাষার জন্য আবেগপ্রবণ বাংলাদেশীদের আত্মবিসর্জনে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি হয়েছিলো মহিমান্বিত। আজ ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। হজপজ_Hodgepodge এর ৫২তম পর্ব লিখতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখটা প্রতি বছরের ৫২তম দিবস! প্রতিবছর! ২১ আর ৫২ কি অদ্ভুতভাবে এক হয়ে গেলো! এভাবেই এক হয়ে থাকবে যুগের পর যুগ। বিষয়টা আমি আগে কখনো লক্ষ্য করিনি। তোমরা কেউ করেছো? আচ্ছা, বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবী তোলা প্রথম সংঘটন "তমদ্দুন মজলিস" এর তমুদ্দন কথার অর্থ জানো? এর অর্থ হলো সংস্কৃতি বা কৃষ্টি।
ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পর কি মনে হচ্ছে ৭০ বছর আগের বাংলা বেশ সুন্দর ছিলো! হয়তো! আমার কাছে মনে হয় বাংলা ভাষা সবসময়ই সুন্দর, এই ভাষা ৭০ বছরেও এর আকর্ষণ একটুও হারায়নি।
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# খুব ছোটবেলায় আমি জেব্রাকে ভাবতাম সাদা-কালো ডোরা কাটা ঘোড়া! ওরা যে আলাদা একটা প্রাণী সেটা বুঝেছি অনেকটা পরে। বাস্তব জীবনে প্রথম জেব্রা দেখেছিলাম চিড়িয়াখানায়। জেব্রা দেখলে সবার আগেই এর সাদা-কালো ডোরাই নজর কেড়ে নেয়। জেব্রার গায়ের এই সাদা-কালো ডোরা দেখে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে জেব্রার গায়ের সত্যিকার রং কি? সাদা? না কি কালো? অনেকেই ভাবে সাদার উপর কালো ডোরা কাটা, আবার অনেকেই ভাবে কলোর উপর সাদা ডোরা কাটা! সত্যিকার অর্থে এর গায়ের রং কালো, আর এই কালো রঙের উপর সাদা রঙের ডোরা সৃষ্টি হয় জেব্রার ভ্রুনাবস্থায়ই।
জেব্রার ক্ষেত্রে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এর ডোরার সাদা-কালো নকশা প্রত্যেকের জন্যে আলাদা! পুরো পৃথিবীতে একটা জেব্রার সাদা-কালো ডোরার সাথে অন্য আরেকটা জেব্রার ডোরায় কোনো মিল নেই! অনেকটা আমাদের হাতের আঙ্গুলের ছাপের মতো। জেব্রা সাধারণত পাল বেধে চলাফেরা করে, আর একপাল জেব্রাকে খুব সুন্দর একটা নামে ডাকা হয়, ড্যাজেল। তবে ঘোড়ার মতো জেব্রাকে পোষ মানানো যায় না। রাস্তা পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং নামটা জেব্রার সাদা-কালো ডোরা থেকেই এসেছে।
জেব্রা নিয়ে এতসব কথা বলার উদ্দেশ্য কি! জেব্রার সাদা-কালো ডোরার সাথে আজকাল মানুষের একটা মিল পাওয়া যায়। অধিকাংশ মানুষ মুখোশের আড়ালে নিজেকে লুকাতে গিয়ে একটা সময় দ্বিধায় পড়ে যায় তার আসল সত্ত্বা নিয়ে! আসল মানুষ কোনটা? মুখোশধারী সে, না কি মুখোশের আড়ালের সে! যারা মনে করেন তারা মুখোশধারী না, আসলে তাদের মুখোশের সংগ্রহ কম, তাই উপলব্ধি হয় না!
কিছু কিছু মানুষও জেব্রার মতো দল বেধে চলে, কিন্তু কখনো সে করো বশে আসে না! দলের মাঝে থেকেও সে হয় দলছুট!
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# আমরা মাঝে মাঝে আকাশে তাকিয়ে মেঘের মাঝে খুব পরিচিত কোনো জিনিসের অবয়ব খুঁজে পাই। আবার এমনও হয়, চলতে চলতে পথের মাঝে কোনো কিছুতে নজর আটকে যায়, মনে হয় এটি আমি আগে কোথাও দেখেছি! নিশ্চয়ই দেখেছি! কিন্তু কোথায় দেখেছি ঠিক মনে পড়ছে না। ভীড়ের মাঝে হুট করে মনে হয় চেনা জানা কাউকে দেখলাম বোধহয়! এই যে একটা কিছুর মাঝে অন্য কিছুর অবয়ব দেখতে পাওয়া, এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। এর একটা নামও আছে, "প্যারিডোলিয়া"! খুব চেনা জানা কিছু দেখেও না দেখারও একটা সুন্দর বাংলা নাম আছে, "অবজ্ঞা"! মাঝে মাঝে বেঁচে থাকার জন্য কাউকে অবজ্ঞা করতে পারতে হয়! আর দেখতে ইচ্ছে করলে তো প্যারিডোলিয়া ইফেক্ট আছেই!
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# একটা বিখ্যাত উক্তি আছে, "The only place where success comes before work is in the dictionary/অভিধান একমাত্র স্থান যেখানে কাজের আগে সাফল্য আসে!" জীবন ভীষণ কঠিন। তুমি যদি জীবনে কাঠিন্য অনুভব না করে থাকো, তাহলে তার অর্থ হলো তোমার জন্য অন্য কেউ সে কঠিন কাজটা সহজ করে রেখেছে, বা তোমাকে ছোট থেকে আস্তে আস্তে এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যে তুমি সে কাঠিন্য কাটিয়ে উঠতে খুব একটা বেগ পাও না!
কঠিন এ জীবনে সফল হওয়া আরো বেশি কঠিন। সাফল্যের সঠিক সংজ্ঞাও মানুষ ভেদে ভিন্ন। তাই কারো জন্য যেটা অর্জন করা কোনো বিষয় না, সেটা আবার অনেকের কাছে পরম আরাধ্য। তবে জীবনের একটা লক্ষ্য ঠিক করে সেটা অর্জনের জন্য টুকটাক কাজ করতে থাকলে নিজের সময়টা ভালো কাটে! মানুষ জীবনে অনেক কিছু অর্জন করে, কিন্তু একটা জিনিস শুধু খরচই করে যায়, সারাটা জীবন ধরে, 'সময়'! এই খরচটা যেন অপচয় না হয় সেটার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।
ছোট একটা টিপস দেই এই অপচয় কমানোর (এটা সম্পূর্ণ আমার মতামত, তাই ভুল হবার সমূহ সম্ভাবনা আছে!)। "যার জীবনে স্পেশাল মোমেন্ট যত কম, তার সময়ের অপচয় ততো কম। যারা বলে জীবনের প্রতিটা মোমেন্টকেই স্পেশাল ভাবো, তারা খুব সম্ভবত স্পেশাল কথাটার অর্থটাই বুঝতে পারে না!"
সবশেষে আজকের ছবিটার দিকে তাকিয়ে কি উপলব্ধি করছো? মাঝে মাঝে ব্যালান্স রক্ষা করার জন্য যেমন করো কাছে আসতে হয়, তেমনি কারো থেকে দূরেও যেতে হয়!
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে তুমি দেখলে, তুমি যে মানুষটাকে মনে প্রাণে চাও, তুমি নিজে সে হয়ে বসে আছো! শুধু তোমার চিন্তা চেতনায় তুমি আছো, তোমার শরীরটার জায়গায় তার শরীর! আয়নায় নিজেকে দেখতে গিয়ে প্রিয়জনের মুখটা দেখে তুমি ভীষণ ভয় পাবে, ভীষণ! বিষয়টা সত্যিই কেমন জানি, তাই না! সম্পূর্ণ ঘটনাটায় তুমি মোটেও সুখী হবে না, কারণ তুমি যে তোমার তোমাকে হারিয়ে ফেলেছো! তুমি সবকিছুর চেয়ে তোমার তোমাকেই যে চাও সেটা বুঝতে পারবে ঠিক সে মুহূর্তে।
প্রত্যেক মানুষ অন্য আরেকজন মানুষকে পছন্দ করে বা ভালোবাসে বা তার প্রতি যত্নশীল হয় শুধুমাত্র নিজের জন্যই! তুমি অন্য যাদের মঙ্গল চাও, সেটা চাও কারণ তুমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করো যে তারা ভালো না থাকলে হয়তো তুমি নিজে ভালো থাকবে না! দিনশেষে, সবটাই তোমার নিজের জন্য! আমার মনে হয়, জনহিতৈষী মানুষজনও মানুষের কল্যাণ করেন নিজের জন্যই, কারণ অন্যের কল্যাণে তিনি আনন্দিত হন!
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# যে পথে সবাই হাঁটে সে পথে তুমিও হাঁটবে। কিন্তু সবার উচিত নিজের একটা নতুন পথ তৈরি করা, যে পথের প্রথম পায়ের ছাপগুলো শুধুই তার! সে পথে তোমার সামনে কোনো পায়ের ছাপ থাকবে না! কোনো দিন পেছন ফিরে তাকালে দেখবে অনেকেই তোমার পায়ের ছাপ অনুসরণ করে এগিয়ে আসছে।
তোমার নিজের তৈরি করা সে পথে হাঁটার সময় মাঝে মাঝে পায়ের ছাপের পাশাপাশি হাতের ছাপও রেখো, প্রয়োজন না হলেও রেখো। যেনো পথ অনুসরণকারীদের মাঝে দুর্বল কেউ থাকলে সে বুঝতে পারে, কষ্ট হলেও এগিয়ে যেতে হবে, প্রয়োজনে দুই হাতে ভর করেও!
মাঝে মাঝে পায়ের ছাপের পাশে সাজিয়ে রেখো কিছু গোলাপ-কদম-রক্তজবা, যদি সেটা ততটুকু পথে হাঁটার পর তুমি না ও পেয়ে থাকো! কারণ তুমি জানো তুমি অবশ্যই সেসব পাবে, নিকট বা দূর ভবিষ্যতে হলেও! কারণ তুমি পথ চলার আগে পথের শেষটা কল্পনা করেছ অনেক ভেবেচিন্তে। ফুলগুলো তোমার পথ অনুসরণকারীদের অনুপ্রাণিত করবে, প্রাপ্তির আনন্দে তারা কিছু সময়ের জন্য হলেও পথ চলার কষ্ট ভুলে যাবে।
পথটা ধরে হাঁটতে থেকো, থেমো না। তুমি হাঁটবে বলেই পথটা এত দীর্ঘ, তোমার পায়ের ছাপের জন্য কতকাল অপেক্ষায় ছিলো এই পথটা, তুমি জানো?
২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# অধিকাংশ মানুষ তার সাথে ঘটে যাওয়া খারাপ ঘটনাগুলোর জন্য অন্য কাউকে না কাউকে দোষারোপ করে থাকে, কিছু না কিছু একটা অজুহাত দাঁড় করিয়ে থাকে! মানুষ এমনভাবে ভাবতে পছন্দ করে যে, ব্যর্থতাগুলো তার জীবনে আসতোই না যদি না অমুক লোক ঐ কাজটা (!) না করতো, বা অমুক বস্তুটা (!) আমার কাজের মাঝে এসে না পড়তো! এমন দোষারোপের কিছু কিছু বাস্তবিকই সত্য, কিন্তু অধিকাংশই আসলে আমাদের মনগড়া।
আবার দেখা যায় আমরা মানুষেরা আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া ভালো ঘটনাগুলোর জন্য নিজের যোগ্যতাকে দায়ী করি, সবটা ক্রেডিট শুধুই ব্যাক্তিগত, একান্তই ব্যক্তিগত! অধিকাংশ মানুষই বলে না যে, অমুক লোকের সহায়তায় আমার আজকের সাফল্য, অমুক জিনিসটা আমাকে সফল হতে বেশ সাহায্য করেছে! এক্ষেত্রে বিষয়টা কিন্তু বিফল হওয়ার ঘটনাটার মত নয়।
পৃথিবীতে একক কৃতিত্বে সফল হওয়ার ঘটনা খুব বেশি নেই, কিন্তু নিজের কারণে ব্যর্থ হবার উদাহরণ অগণিত! তবুও আমরা একক কৃতিত্বের বিরল ঘটনাকে সাধারণ বানিয়ে আত্নতুষ্টিতে ভুগতে ভালোবাসি। আমাদের সবকিছুর মতো আমাদের ভালোবাসার বিষয়গুলোও ভুলে ভরা!
আজকে আমার সপ্তম বিবাহ বার্ষিকী! আমার জীবনের এমন একটা গুরত্বপূর্ণ বিষয় হজপজ_Hodgepodge এ থাকবে না সেটা কিভাবে হয়! এই দিনে একজন সাধাসিধে মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে ত্রুটিপূর্ণ মানুষটার (আমার) সাথে সংসার ধর্ম করবে বলে একটা নতুন পথে যাত্রা শুরু করে। পথের মাঝে আমরা ইতোমধ্যে দুইটা রত্ন খুঁজে পেয়েছি (রাকিয়ান ও ইনিসা)। দুঃখের বিষয় ত্রুটিপূর্ণ আমি আমার নিজের মাঝে নিত্য নতুন ত্রুটির সংযোজন ঘটিয়েই চলেছি!
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
# বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর একটা জনপ্রিয় উক্তি আছে, "স্রষ্টা হলেন শিল্পী। তিনি জিরাফ, হাতি ও পিপঁড়া সৃষ্টি করেছেন। সত্যিকার অর্থে, তিনি কখনো একটিমাত্র কাঠামোয় কিছু গড়তে চাননি। তিনি যেভাবে চেয়েছেন, ঠিক সেভাবেই সবকিছু করেছেন।"
স্রষ্টা সৃষ্টি জগতের সবকিছু তৈরি করেছেন অসংখ্য ভিন্ন ভিন্ন কাঠামোয়। অসংখ্য প্রজাতির মাঝে করেছেন প্রাণের সঞ্চার। একই প্রজাতির প্রাণীর মাঝেও আছে অসংখ্য বৈসাদৃশ্য। অর্থাৎ ভিন্ন প্রজাতির সৃষ্টির মাধ্যমে স্রষ্টা আসলে প্রাণের সঞ্চার কোথায় হবে তার আদর্শ কোনো মানদণ্ড রাখেন নি। তিনি যেখানে চেয়েছেন সেখানেই প্রাণের সঞ্চার করেছেন।
কিন্তু আমরা তার সৃষ্টি হয়েও সবকিছুর আদর্শ মানদণ্ড তৈরি করে বসে থাকি! অধিকাংশ ক্ষেত্রে (খুব সম্ভবত সব ক্ষেত্রেই), মানুষ যে আদর্শ মানদণ্ড তৈরি করে সেটা ঠিক হয় না! হয়তো মানুষ তার জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে সে ভুলটা কখনো ধরতেই পারে না! আদর্শ মানদণ্ড নির্ধারণ করে সেটা অনুসরণ করা হলে, সে মানদণ্ড যে সঠিক আর তোমার করা মানদণ্ডের বিচ্যুতিই আসলে বিচ্যুতি, সে কথা শতভাগ সঠিক নয়। কোনো কিছুর আদর্শ মানদণ্ড নির্ধারিত হওয়ার অনেক বছর পরও দেখা গিয়েছে মানদণ্ডের নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিলো, যদিও সেটা নির্ধারণের সময় সবকিছু ঠিকঠাকই মনে হয়েছিলো! তারপরও আমরা, মানুষেরা, একটা কিছু মানদণ্ড ধরেই চলতে চাইবো!
আমাদের কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে, এটাই মূল কথা! ব্যস্ততার অভাবে অনেকেই তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ- সময়কে হেলায় নষ্ট করে! আচ্ছা ব্যস্ততার অভাব বিষয়টা ক'জন মানুষ অনুধাবন করতে পারে? খুব সম্ভবত অধিকাংশ মানুষ ব্যস্ততার অভাবে সময়কে হেলায় নষ্ট করাটাকেই ব্যস্ততা ভেবে বসে থাকে!
০১ মার্চ, ২০২২
# একটা পরীক্ষার হলে তুমি বসে আছো, অনেকগুলো প্রশ্নের কঠিন কঠিন সব উত্তর লিখতে লিখতে তুমি ক্লান্ত! যতো ক্লান্তিই আসুক না কেনো, তুমি চেষ্টা করছো যেনো সবগুলো প্রশ্নের উত্তর লিখে আসতে পারো!
তোমার মতো অধিকাংশ মানুষই চেষ্টা করে পরীক্ষার শেষ মুহূর্তে তার পরীক্ষার খাতায় অবশিষ্ট সব প্রশ্নের উত্তরগুলো সংক্ষিপ্ত করে হলেও সে যেন লিখে আসতে পারে। সেসব উত্তরগুলো হয় শুরুতে লেখা সব উত্তরের চেয়ে একদম ভিন্ন, ভূমিকা-উপসংহারহীন, যা কিছুটা অপরিপক্কতার পরিচয়ও বহন করে। পরীক্ষার হলের ঘটনার মতো জীবনের শেষ মুহূর্তেও কিছু কিছু মানুষ অনেকটা অপরিপক্ব ভাবে তার মনের সত্যিকার ভাবগুলো ভূমিকা-উপসংহারহীনভাবে প্রকাশ করে বসে! তার এই অপরিপক্কতা তার মনের অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করে, হয়তো!
আচ্ছা, জীবনের সবগুলো প্রশ্নেরই কি উত্তর দিতে হয়? হয়তো হয় না, কিন্তু সবগুলো প্রশ্ন হয়তো পড়ে দেখতে হয়!
সব প্রশ্নের উত্তর দিতে না চাওয়া অনেকেই অনেক সৌভাগ্যবান! তাদের অনেককে স্রষ্টা হুট করে নিয়ে যান, সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই! অনেকটা পরীক্ষার হলের কড়া শিক্ষকের খাতা ছিনিয়ে নেওয়ার মতো!
০২ মার্চ, ২০২২
# কোনো মানুষকে যদি বলা হয়, আজকের দিনে তুমি যা খুশি করতে পারো, এমন কিছু যেটা করে তুমি আনন্দিত হবে, যেটা করে তুমি বলতে পারবে আজকের দিনটি আমি উপভোগ করেছি! আজকের দিনে তুমি যা খুশি করো না কেনো তার জন্য কোনো ধরণের জবাবদিহিতা তোমাকে করতে হবে না! কখনো না!
মজার বিষয় হলো, স্বাভাবিকভাবে একটা মানুষ তার জীবনকে উপভোগ করতে যা যা করে, সেদিন খুব সম্ভবত সে তা করবে না। সবচেয়ে নিখুঁত মানুষটাও চাইবে কিছু খুঁতে ভরা কাজ করতে। মানুষের মনের গহীনে সবসময় নিয়ম ভাঙার, শিকল ভাঙার একটা চাপ কাজ করে হয়তো। হয়তো মানুষের ডিএনএ শৃঙ্খলের মাঝেও আছে নিয়ম ভাঙার কোনো সূত্র!
আরেকটা মজার বিষয় হলো, কিছু কিছু মানুষ যখন নিয়ম ভাঙে, সেটাও একটা নিয়মের মধ্য দিয়ে ভাঙে! এসব মানুষ নিয়ম ভাঙার পেছনে এমন সব যুক্তি উপস্থাপন করে থাকে যে, নিয়মের প্রবর্তক দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে- আসলে কোনটা নিয়ম আর কোনটা অনিয়ম! এ শ্রেণীর একজন মানুষের নাম বলতে পারো? আমি এমন একজনকে ব্যাক্তিগতভাবে জানি! খুব সম্ভবত সে এই লেখাটিও পড়বে!
*** অধিকাংশ মানুষ নিয়ম ভাঙার সুপ্ত বাসনা নিয়ে নতুন নতুন নিয়ম তৈরি করে। যার তৈরি করা নিয়ম যতো কঠিন, নিয়ম ভাঙার বাসনা তার মনে ততো প্রবল!
০৩ মার্চ, ২০২২
# মোবাইলের ব্যাটারী একবার চার্জে কতক্ষণ স্ক্রিন অন টাইম (SOT) দিতে পারে সেটা মোবাইল ব্যবহারকারীর জন্য বেশ গুরুত্ব বহন করে। আমাদের জীবনের আয়ুকে ব্যাটারীর সাথে তুলনা করলে ২৪ ঘণ্টায় আমাদের জেগে থাকা সময়টাকে স্ক্রিন অন টাইম এর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। আমাদের জেগে থাকা সময়টাই আসলে বেঁচে থাকা। ব্যাটারীর স্থায়িত্ব যদি এমন হয় যে SOT যতো বেশী হবে ব্যাটারী ততো কম দিন টিকবে, তাহলে তুমি কেমন জীবন চাইবে? কম SOT, বেশীদিন বেঁচে থাকা? না কি বেশী SOT, তুলনামূলক কম দিন বেঁচে থাকা? আমি কিন্তু দ্বিতীয় দলের মানুষ, মোবাইল সেট নতুন থাকতে থাকতে সব শেষ হওয়াই শ্রেয়!
মাঝে মাঝে মনে হয় ৬০ মিনিটে ঘণ্টা না হয়ে ৩০ মিনিট বা ১২০ মিনিটে ঘণ্টা হলে খুব কি মন্দ হতো! বেঁচে থাকা সময়টা একই হলেও বেশী ঘণ্টা বা কম ঘণ্টা বেঁচে থাকতাম! তখন হয়তো ৪৮ ঘণ্টার কোনো এক দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটানোর পর বলে উঠতাম, 'আরেকটু ঘুমাই? চোখ তো খুলতে পারছি না!' অথবা ১২ ঘণ্টার কোনো এক দিনে ৪/৫ ঘণ্টার একটা ঘুম দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলতাম, 'জীবন সুন্দর!'
*** আজকের হজপজ লিখেছি বাজার করতে করতে! এক একটা লাইন লিখে একটু করে বাজার করার এক ধরণের আনন্দ আছে, সময়ের সদ্ব্যবহারের আনন্দ!
০৪ মার্চ, ২০২২
# "Consequences!!!"
আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটে যায় তার কোনো না কোনো কারণ থাকে। এমন কিছু নেই যেটা অকারণ ঘটেছে। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি বোঝা না গেলেও ভবিষ্যতের একটা সময়ে গিয়ে উপলব্ধি করা যায় যে অতীতের নির্দিষ্ট কোনো একটা ঘটনা না ঘটলে হয়তো ভবিষ্যতের ঐ মুহূর্তটা তৈরীই হতো না। বর্তমানে দাঁড়িয়ে বর্তমানে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের ভবিষ্যতকে কিভাবে প্রভাবিত করবে তা আমরা বুঝতে পারি না, কিন্তু বর্তমানে দাঁড়িয়ে আমরা অতীতের কোন ঘটনার কারণে আমাদের বর্তমানটা এমন হলো সেটা অনুধাবন করার চেষ্টা করতে পারি। তাহলে অতীতের সাথে বর্তমানের সংযোগটা বোঝা যাবে। বোঝা যাবে বর্তমান যখন ভবিষ্যতে গিয়ে অতীত হবে আর ভবিষ্যতটা হবে বর্তমান, তখনকার সংযোগটাও!
জীবনের প্রতিটা হোচট খাওয়া, প্রতিটা ব্যর্থতা জীবনের প্রয়োজন ছিলো বলেই ঘটেছে, এই বিশ্বাস যে যতো বাস্তবভাবে আঁকড়ে ধরতে পারবে সে ততো সহজে জীবনকে গ্রহণ করতে পারবে।
জীবনকে মাঝে মাঝে বলতে হয়, "ভাই, আমি ভালো আছি, খুব ভালো আছি!"
০৫ মার্চ, ২০২২
# পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যারা তোমাকে তোমার অতীতের এমন সব বিষয় মনে করিয়ে দিয়ে একেবারে চমকে দিতে পারে যা তুমি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো ব্যাক্তি জানে না! এদেরকে তুমি কি নামে ডাকবে? জাদুকর/ম্যাজিশিয়ান? না কি ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান? আমাদের মানুষদের মাঝে কতজন আছে যারা ব্ল্যাক ম্যাজিকের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে?
ব্ল্যাক ম্যাজিক এর কথা পবিত্র কুরআনের সূরা আল ফালাক, সূরা আল বাকারা-তে উল্লেখ আছে। ব্ল্যাক ম্যাজিক এর অস্তিত্ব নিয়ে তাই সন্দেহের অবকাশ নেই। ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান এর অস্তিত্ব নিয়েও তাই সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে স্বস্তির কথা হলো আশেপাশে যতো ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান দেখা যায় তাদের অধিকাংশই নাম সর্বস্ব, ভন্ড। বিশেষ পন্থায় তোমার অতীত বলে তোমাকে চমকে দিয়ে তোমার অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নেয়া ছাড়া আর কিছু করার ক্ষমতা তাদের নেই। এসব ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান তোমার অতীত বলে দিতে পারলেও ১০০% নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে এরা কিছুই বলতে পারবে না! এমনকি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের নিয়ে কি ভাবছো সেটাও তারা বলতে পারবে না।
উপরের কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হলো আমাদের সমাজে প্রচলিত একটা বিষয় নিয়ে কথা বলা। বিষয়টি হলো তাবিজ পরিধান করা। অনেক মানুষকে দেখবেন তারা গলায়, বাহুতে বা কোমরে তাবিজ পরিধান করে আছে। অনেকের ছোট বাচ্চাদের গলায় দেখবেন তাবিজ ঝুলানো। কোনো খারাপ শক্তি বা ব্ল্যাক ম্যাজিক যেনো তাদের অনিষ্ট করতে না পারে তাই এই ব্যবস্থা। তাবিজগুলো যদি খুলে দেখা হয় তাহলে দেখা যাবে তাতে পবিত্র কোরআনের কোনো আয়াত লেখা আছে অথবা আরবীতে কিছু এলোমেলো কথা লেখা। প্রায় সময় দেখা যায় কোরআনের আয়াত ভুলভাবে লেখা আছে। আচ্ছা কোরআনের আয়াত এভাবে গলায় ঝুলিয়ে রেখে নিজেকে রক্ষা করার কথা কি কোরআন বা হাদীসে লেখা আছে? তেমন হলে কোনো একটা পেনড্রাইভে কোরআনের সফটকপি নিয়ে সেটা ঝুলিয়ে রাখলে তো আরো ভালো হতো! কয়েকটা আয়াত না থেকে পুরো কোরআন থাকতো সাথে! ভুলভাল জিনিস চর্চা না করে বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝে শুনে তার সুরাহা করাটা চেষ্টা করাই উত্তম, এতে সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
০৬ মার্চ, ২০২২
# প্রাত্যহিক জীবনে আমরা আমাদের আশেপাশে সফলতার গল্প যতটা শুনতে পাই, ব্যর্থতার গল্প তেমন একটা শুনতে পাই না। এর কারণ হলো, গল্প যার কাছ থেকে শোনা হয় সে সহজাতভাবেই সফলতার গল্পই তোমার কাছে করবে, ব্যর্থতার গল্প বলতে বা শুনতে কারই বা ভালো লাগে! এত এত সাফল্যের গল্প শুনতে শুনতে আমাদের অনেকে নিজেদের সফল হবার প্রকৃত সম্ভাবনা সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবে একটা ভুল বার্তা পেয়ে থাকি, নিজেদের সফল হওয়ার বিষয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ি! বাস্তবিক জগতে সফলতার হার খুব নগণ্য হলেও সমগ্র পৃথিবীতে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ হওয়ায় সে সংখ্যাটাও বিপুল মনে হয়। এ এক দারুন বিভ্রম! প্রতিটা সেক্টরে সফল লোকের তুলনায় ব্যর্থ লোকের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি! তাদের নিয়ে কেউ গল্প করে না বলে তুমি তাদের সম্পর্কে জানতে পারো না!
একজন সফল মানুষকে আমরা যখন দেখি, তার মানে সে আসলে জয়ী। সে যে সকল ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে সফল হয়েছে সেসব গল্পই তুমি জানো। কিন্তু তুমি যেটা জানো না সেটা হলো কোন আঘাতে সে সফল হতে পারতো না! তুমি জানতে পারো না, তার মত অনেকে যাত্রা শুরু করে কোন কোন কারণে সফল হতে পারে নি! তুমি সফল মানুষটার সেসব স্ট্রাগল দেখতে পাও যেটা সে অতিক্রম করে সফল হয়েছে, সেসব স্ট্রাগল তুমি দেখতে পাও না যেটার সম্মুখীন হলে সে হয়তো সাফল্যের দেখাই পেতো না!
প্রতিদিন রাস্তায় কতগুলো রোড এক্সিডেন্ট হয় তার সংখ্যা জানা গেলেও কয়টা রোড এক্সিডেন্ট হয়নি সে সংখ্যা কেউ কি বলতে পারবে? এক্ষেত্রে কয়টা রোড এক্সিডেন্ট হয়নি সেটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা তা জানতে পারি না। ঠিক তেমনি, একটা বিষয়ে সফল হতে গেলে সে বিষয়ে ব্যর্থদের সম্পর্কেও জানা জরুরী, এটা জানা খুব কঠিন না হলেও আমরা ধরেই নেই আমরা তো সফল হবোই! শুধু শুধু ব্যর্থদের ব্যর্থতার কাহিনী শুনে নিজের মাঝে নেগেটিভিটি তৈরি করবো না কি!
এই যে এতসব কথা বললাম, এর একটা ভারিক্কি নাম আছে, "Survivorship Bias"! অর্থাৎ মানুষ স্বভাবগতভাবেই তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে অতিরিক্ত ধারণা পোষণ করে।
এর থেকে মুক্তির উপায় কি? মুক্তির উপায় হলো সফলদের পাশাপাশি ব্যর্থদের গল্পও শুনতে হবে। যদিও এটা আনন্দদায়ক কিছু নয়, তবে এটা তোমাকে তোমার সফলতার পথে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা ব্যর্থতাদের এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে।
০৭ মার্চ, ২০২২
# অন্যসব দিনের মতো আজও ঘুম থেকে উঠতে তোমার দেরি হয়ে গেলো। হন্তদন্ত হয়ে কোনমতে তৈরি হয়ে তুমি ছুটলে অফিসের উদ্দেশ্যে। পথে চলতে চলতে হঠাৎ দেখতে পেলে একদল লোক আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে! তুমিও হাঁটা থামিয়ে একটু আকাশপানে চেয়ে দেখলে সবাই আসলে কি দেখছে?
শনিবার খুব ভোরে উঠে সপ্তাহের বাজার করতে বাজারে গেলে। মাছের বাজারে একটা দোকানে বেশ ভীড়। কৌতুহলবশত তুমিও গেলে দোকানটায়। সবাই দল বেঁধে পাঙ্গাস মাছ কিনছে, সবার মুখে একই কথা, এমন তাজা পাঙ্গাস মাছ আজকাল পাওয়াই যায় না! কেউ যদি না কিনে তাহলে সে নির্ঘাত ঠকবে! তুমি পাঙ্গাস মাছ একদম পছন্দ করো না, কিন্তু সবার দেখাদেখি বেশ কয়েক কেজি মাছ তুমি কিনে ফেললে! খুব একটা স্বস্তি পাচ্ছো মনে, ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা আর থাকলো না!
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মসজিদে একটু আগে আগেই যাও তুমি। একটা সারির মাঝামাঝি জায়গায় বসে আছো। একটা সময় সারির এক প্রান্ত থেকে দান বাক্স ছাড়া হলো, একজন একজন করে তোমার দিকে এগিয়ে আসছে দান বাক্স। তুমি সচরাচর নামাজ পড়তে গিয়ে দান বাক্সে টাকা দাও না, কিন্তু আজ তোমার সারির সবার দান করা দেখে তোমার কাছে একটু কেমন কেমন বোধ হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত তুমি কিছু দান করে এই কেমন কেমন লাগে থেকে মুক্তি পেলে। কেউ তোমাকে বলে নি যে দান করো, প্রকৃতপক্ষে কেউ তোমার দিকে ভ্রুক্ষেপও করে নি!
এমনটা কেনো হয়? বলতে পারো? অবস্থাটা ব্যাখ্যা করার জন্য একটা সুন্দর টার্ম আছে, 'Social Proof', এটা হলো একটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা যেখানে মানুষ কোনো একটি পরিস্থিতিতে ঠিক কাজটি করার জন্য অন্যের ক্রিয়াকলাপ অনুসরণ করে।
১৯৫০ সালে বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট Solomon Asch এ বিষয়ে একটি সহজ পরীক্ষা করে দেখান। একটি কক্ষে একজন ব্যক্তিকে একটা কাগজ দেখানো হলো যেখানে একটা লাইন আঁকা। এর পাশেই আরেকটি কাগজ রাখা ছিলো যেখানে তিনটি লাইন আঁকা, একটি আগের কাগজটার লাইনের চেয়ে ছোট, মাঝেরটি বড়, আর তৃতীয়টি ঠিক আগের কাগজের লাইনটার সমান। ব্যাক্তিটি ঠিকঠাকভাবে বললো দ্বিতীয় কাগজের তৃতীয় লাইনটিই প্রথম কাগজটার লাইনটার সমান। এরপর কক্ষে আরেকজন ব্যক্তিকে আনা হলো যাকে আগে থেকেই বলা হয়েছিলো সে যেনো ইচ্ছে করেই ভুল লাইনটি সিলেক্ট করে। দ্বিতীয় ব্যাক্তিটি বললো, দ্বিতীয় কাগজের প্রথম লাইনটি প্রথম কাগজের লাইনটির সমান। এভাবে আরো কয়েকজন ব্যক্তিকে দিয়ে একই জিনিস করানো হলো! এরপর প্রথম ব্যক্তিকে আবার বলা হলে খুব জোর সম্ভাবনা আছে যে সে বলবে, দ্বিতীয় কাগজের প্রথম লাইনটি প্রথম কাগজের লাইনটির সমান! এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, অনেক মানুষ যখন কিছু একটা করে, আমরা ধরেই নেই সেটা সঠিক!
বিখ্যাত ঔপন্যাসিক Somerset Maugham বলেছেন, "If fifty million people say something foolish, it is still foolish." তাই সবাই যা করে সবসময় তা করা ভুলও হতে পারে!
০৮ মার্চ, ২০২২
# মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব ইচ্ছে জাগে আমার। ইচ্ছেগুলো সত্যিই বেশ অদ্ভুত! বেশ কিছুদিন আগে আমার এমন একটা অদ্ভুত ইচ্ছে নিয়ে আমি একটা কবিতা লিখছিলাম...... ভাবছি পরের কবিতার বইটা বের করবো না, লিখে রাখা অসংখ্য কবিতাদের আমি আমার গদ্যের হাতে সপে দিয়ে কবিতায় ঠাসা একটা গদ্যের বই লিখে ফেলবো! এই ভাবনাটাও অদ্ভুত!
ভাবছি, একটা মানুষ কিনবো! ৩৩ বছর বয়সী
সুস্থ-সবল, বড় বড় চোখের, সাদা মনের একটা মানুষ!
মানুষটার সব সুখ-দুঃখ গুলোও, কিনে নিবো ভাবছি!
মানুষটার সুখের গল্প শুনে খুব করে হাসবো,
উন্মাদের মত! অথবা তোমার মত! পারবো?
মানুষটার দুঃখগুলোর আবেগে কেঁদে কেটে
ভাসাবো আমার দু'চোখ! তার দুঃখের সাথে
হয়তো আমার দুঃখও ভাসাবো, একটুখানি!
মানুষটা কখনো মিথ্যা বলবে না আমাকে,
কখনো না! চুল পরিমাণ মিথ্যাও না!
মানুষটাকে আমি আস্তে আস্তে করে আমার
আমিত্ব দান করবো, ৩৩ বছর বয়সী আমার আমিত্ব!
আচ্ছা, এমন একটা মানুষের দাম কতো? বলতে পারো?
বলতে পারো, আমার সবটা দিলেও সে কি হতে পারবে-
আমার আমি?
০৯ মার্চ, ২০২২
# বর্তমান সময়ে কোনো কিছু কিনতে গেলে আমরা প্রতিটা জিনিসের অনেকগুলো অপশন খুঁজে পাই। এর ফলে আমরা প্রায়শই দ্বিধায় ভুগি যে এত এত অপশনের মাঝে কোন জিনিসটা নির্বাচন করা উচিত! অপশনের প্রাচুর্য আমাদের মাথা নষ্ট অবস্থা করে ফেলে। আমেরিকান সাইকোলজিস্ট ব্যারি শোয়ার্টজ তার 'প্যারাডক্স অফ চয়েস' বইতে মজার একটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন। সুপার মার্কেটের কোনো এক দোকানে একবার অফার দেয়া হলো, ২৪ ধরণের জেলির মাঝে ইচ্ছেমত পরখ করে ডিসকাউন্টে জেলি কেনা যাবে! মানুষজন খুব আগ্রহ নিয়ে জেলিগুলো পরখ করলেও অধিকাংশ মানুষই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে জেলি না কিনেই চলে যায়। পরদিন একই অফার দেয়া হলো, পার্থক্য শুধু ২৪ ধরণের জেলির পরিবর্তে এবার মাত্র ৬ ধরণের জেলি পরখ করতে দেয়া হয়েছে। দেখা গেলো সেদিনের বিক্রি এর আগের দিনের চেয়ে অনেক অনেক বেশি! এমনটা কেন হয়েছিলো? এমনটা হয়েছিলো কারণ অনেক বেশী অপশন থেকে কোনো একটি সিদ্ধান্তে আসা মানুষের পক্ষে বেশ কঠিন। অপশনের আধিক্য অনেক সময় বাজে সিদ্ধান্ত এমনকি সিদ্ধান্তহীনতার কারণ হয়ে পড়ে!
এই সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের আগে বুঝতে হবে আমাদের আসলে কি প্রয়োজন? আমরা কি চাই? এরপর শুধুমাত্র সে বিষয়টা মাথায় রেখে এগিয়ে চললে সিদ্ধান্ত নেয়া অনেকটা সহজ হয়। তবে মনে রাখতে হবে, আমাদের সব সিদ্ধান্তই ভালো হবে এমনটা ভাবাও ঠিক নয়। সিদ্ধান্ত যদি কখনো ভুল মনে হয় তাহলে ভুলটা মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। 'কম'-এর মাঝেই আমাদের খুঁজতে হবে 'বেশী'-কে, মনে রাখতে হবে, "কমই উত্তম"।
১০ মার্চ, ২০২২
# ৪২৬, ৯৬১, ৬১৩, ১৬৮, ৫৫৬, ৬৬৬, ২৯৬, ৩৬৭, ৫৬৫। সংখ্যাগুলোর দিকে তাকালে তুমি কি দেখতে পাও? একটু ভেবে দেখো। প্রতিটা সংখ্যায় ৬ অংকটি আছে। এবার আরো কয়েকটা সংখ্যার দিকে মনোযোগ দাও। ৬৪৯, ১৫৮, ২৪৭, ৯০৬, ৭২৭, ০০৯, ৮৪৫, ১৯৭, ৬৭২। এবার সংখ্যাগুলোর দিকে তাকিয়ে কি আগের মত খুব সহজেই কোনো একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারছো? আমি জানি, আসতে পারছো না। পরের সংখ্যাগুলোর একটাতেও ৩ অংকটি নেই! এ থেকে খুব সহজ একটা জিনিস আমরা অনুধাবন করতে পারি, 'কোনো কিছুর অনুপস্থিতি সনাক্ত করাটা তার উপস্থিতি সনাক্ত করার চেয়ে অনেক কঠিন!'
বাস্তবিক জীবনে আমরা যখন কোনো কষ্টে থাকি তখন আমাদের সমগ্র চেতনা শুধু সে কষ্টকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু যখন আমাদের জীবনে কোনো কষ্ট থাকে না, তখন আমরা একবারের জন্যও জীবনের কষ্টের অনুপস্থিতি টের পাই না! এজন্য 'ধূমপান না করলে আপনি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিমুক্ত' বলার চেয়ে 'ধূমপান ফুসফুসের ক্যানসার ঘটায়' শুনতে অধিক চিত্তাকর্ষক।
বিজ্ঞানের ভাষায়, কোনো কিছুর অনুপস্থিতি সনাক্ত করার এই কাঠিন্যের একটা সুন্দর নাম আছে, 'Feature-Positive Effect'
এই ইফেক্টের বাস্তবিক প্রয়োগ কিন্তু বিভিন্ন পণ্যের বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে প্রায়শঃই দেখা যায়। ধরো কোনো একটি পণ্যে শরীরের জন্য উপকারী অনেক উপকরণের পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষতিকারক উপকরণও আছে। পণ্যের গায়ে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী সব উপাদানের উল্লেখ থাকলেও অপকারী উপকরণটির উল্লেখ প্রস্তুতকারকগণ সূক্ষ্মভাবে এড়িয়ে যায়! আমরা স্বাভাবিকভাবেই মনে করি পণ্যটিতে সে সব উপকরণই আছে যেগুলোর কথা বলা আছে!
'Feature-Positive Effect' কিন্তু বেশ উপকারী। কেন? সেটা একটু ভাবলেই বুঝতে পারবে।
১১ মার্চ, ২০২২
# আমরা আমাদের জানাশোনা ধ্বনির বাইরে সাধারণত আর কোনো শব্দ করি না, বা করতে পারি না, বা করার চেষ্টাও বোধহয় কখনো করি না। আমরা আমাদের জানা ভাষার বর্ণমালার বাইরে আর কোনো কিছু আসলে ভাবতে পারি না! এই ভাবতে না পারাটা খুব স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক বিষয়টা মানুষকে ভাষাগতভাবে করেছে দুর্বল! সত্যি কি তাই?
পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অনেক প্রাণী আছে যারা মানুষের মতোই ভিন্ন ভিন্ন দেশে বাস করে। কিন্তু তাদের ধ্বনি আশ্চর্যজনকভাবে এক! যেমন: পৃথিবীর যে কোনো দেশের কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল ইত্যাদি যে কোনো প্রাণীর কথাই ভাবো না কেন নির্দিষ্ট একটি প্রাণীর ধ্বনি সবক্ষেত্রে একই! এটা কিন্তু কোনো কাকতাল নয়।
কখনো ভেবে দেখেছো, সৃষ্টির সেরা জীব বলে গলা ছিঁড়ে ফেলা মানুষদের মুখ নিঃসৃত ধ্বনি দেশ ভেদে এত বৈচিত্র্যময় কেন? যদি ভেবো থাকো, যতো বেশী ভাষাগত বৈচিত্র্য, ততো বেশী শ্রেষ্ঠত্ব, তাহলে সেটা একটা ভুল ধারণা হবে। বৈচিত্র্যময়তা সবসময় শ্রেষ্ঠত্ব বোঝায় না। বৈচিত্র্যময়তা অনেক সময় আমাদের ছাড় না দেয়ার মানসিকতাকে বোঝায়, বোঝায় আমাদের অহং বোধকেও!
১২ মার্চ, ২০২২
# আমার গল্পের সোজাসাপ্টা নায়ক 'ফ্লেমিংগো' আর সরলরেখার মতো বক্র নায়িকা 'কিমোরা'। গল্পের একদম শেষ পর্যায়ে তারা একে অপরকে কিছু টেক্সট পাঠায়। অত্যন্ত সহজ সরল কিছু কথা, কিন্তু কথাগুলো সত্য...... গল্পে এবং জীবনে।
কিমোরা:
"পৃথিবীতে ভালোবাসা ছাড়া আরো অনেক কাজ আছে- করবার মতো,
নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মতো আছে- হাজারটা উপায়।
তুমি শুধু ভালোবাসতেই জানো, আর জানো ভালোবেসে মাকড়শার জালের মতো
আস্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখতে! অথচ আমি উড়তে চাই,
তুমিই তো ভালোবেসে আমায় নাম দিয়েছো বসন্তবৈরী!
একবার যাকে উড়তে দিয়েছো সে কেনো তোমার
ডালে প্রতিদিন বসতে আসবে? তুমি এতটা ছেলেমানুষ!
এতটা ছেলেমানুষী তোমাকেই মানায়, তুমি হয়তো জয়ী,
কিন্তু তুমি কি জানো ভালোবাসার যে রূপ আমি চেয়েছি
তুমি তার চেয়ে বেশী ভালোবেসেছো, আমার জন্য-
করেছ ভালোবাসার অপচয়! তোমার দুঃখহীন জীবনে-
তুমি করেছো দুঃখ বিলাস। এতটা বিলাস কেন করেছো-
তুমি আমায় নিয়ে? তোমায় আমি ভালোবেসেও হয়তো
ভালোবাসিনি কখনো! তুমি কি সবটা বুঝতে পেরেছো?"
ফ্লেমিংগো: "পৃথিবীতে আজকাল সবকিছু আছে, ভালোবাসা ছাড়া ভালোবাসাও আছে! নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে অনেক কিছুই করা যায়, তবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ভালোবাসার মাঝে যা আছে, তা পরিপক্ব মানুষেরা প্রায়শঃই বুঝতে পারে না। ভালোবাসায় আস্টেপৃষ্টে বাঁচার আকুতি বুঝতে পারোনি, পারোনি দুজনে মিলে একাত্বতার স্বাধীনতা বুঝতে! বুঝেছো আমার ছেলেমানুষী, আমার দুঃখ বিলাস! সবকিছুর পরও আমার অপরিপক্ব মন কখনো চায় নি, পরিপক্ব হতে। চাই নি হতে তোমার কৃত্রিম কোনো সাথী!"
১৩ মার্চ, ২০২২
# সারাদিন কাজ করে যখন তুমি খুব ক্লান্ত, মনে হচ্ছে এখনই তোমার দু'চোখ ভেঙে ঘুম আসবে, আসলে ঘুম আসবে বললে ভুল হবে, ঘুম আসছে.... তুমি রিকশায় করে অফিস শেষেরও আরো শেষে বাসায় ফিরছো, অবস্থা এমন যে যেকোনো সময় তোমার দু'চোখ বুঁজে আসবে.... খুব কষ্ট করে রিকশা আঁকড়ে ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছো তুমি!
এমন সময় প্রচন্ড ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো তোমার শহর, তোমার রাস্তা, তোমার রিকশা আর সাথে তুমিও! তুমি এতটাই ক্লান্ত যে ভূমিকম্পের কাঁপুনিকে তোমার কাছে বেশ আরামদায়ক মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে তুমি ফিরে গিয়েছো তোমার জন্মের ঠিক পরের সময়টায়, যখন তোমার মা পরম মমতায় তোমাকে দোলনায় দোল খাওয়াচ্ছে অথবা তোমাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে ঘরের এপাশ থেকে ওপাশ..... তুমি প্রচন্ডভাবে চাইছো ঘুমিয়ে পড়তে.... এই মুহূর্তে তুমি মিস করছো তোমার মা কে, প্রচন্ডভাবে, যার কাছে রয়েছে একটি দোলনা, একটি কোল, তোমাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য!
মাঝে মাঝে স্রষ্টা তোমাকে খুব ক্লান্ত করে দেন, খুব দূর্বল করে দেন, এতটা দুর্বল যে তোমার কাছে মনে হবে, যাওয়ার সময় হয়েছে, এখন বসে না থেকে যাওয়া উচিত!
১৪ মার্চ, ২০২২
# একটা বিষয় কি জানো? তোমাকে গণিত, পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, ইতিহাস, ভূগোল...... সবকিছুই শেখানো যাবে। কিন্তু তোমাকে যেটা শেখানো যাবে না সেটা হলো বিশ্বাস! কোনো কিছুকে বা কাউকে বা স্রষ্টাকে কিভাবে বিশ্বাস করবে বা কেনই না বিশ্বাস করবে সেটা তোমাকে কেউ সত্যি শেখাতে পারবে না। তুমি বিশ্বাস করবে কারণ তুমি বিশ্বাস করতে চেয়েছে, অথবা বিশ্বাস করবে না কারণ তুমি চাওনি বিশ্বাস করতে! খুব স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীতে স্রষ্টায় বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা আত্মবিশ্বাসী মানুষের চেয়ে বেশী।
আজকে বিশ্ব পাই (π) দিবস! ছাত্রজীবনে ইউটিউবে দেখতাম অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাইয়ের মান নির্ভুলভাবে বলেই যাচ্ছে! বিষয়টা আমার খুব অবাক লাগতো! ইচ্ছে হতো তাদের মতো কোনোদিন হয়তো আমিও এমন অনর্গল বলতে পারবো! আত্মবিশ্বাসটা আজও সে পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি নি, তাই ইচ্ছেটাও পূরণ হয়নি!
১৫ মার্চ, ২০২২
# পাওলো কোয়েলহোর 'মাকতুব' বইতে অনেকগুলো ছোট গল্পের মাঝে একটি গল্প এমন:
"মরুভূমির এক কিংবদন্তিতে এক লোকের গল্প আছে। লোকটি অন্য একটি মুরুদ্যানে চলে যেতে চেয়েছিলো। সে তার উটে মালামাল বোঝাই করতে লাগলো। সে তার কম্বল জড়ো করলো, তার রান্না-বান্নার সামগ্রী নিলো, তার জামা-কাপড় গোছালো। উটটি সবকিছুর ভারই বহণ করলো। বাড়ি ত্যাগ করার ঠিক আগ মুহূর্তে তার মনে পড়লো সুন্দর একটি নীল পালকের কথা, যেটি তার বাবা তাকে দিয়েছিলো। পালকটি খুঁজে সে উটের পিঠে রাখলো। পালকটি রাখার সাথে সাথে উটটি বোঝার ভারে পড়ে মারা গেলো! লোকটির নিশ্চিতভাবে মনে হয়েছিলো, 'আমার উটটি এই সামান্য পালকের ভার পর্যন্ত বইতে পারলো না!'
এমন আরো অনেক ব্যাপারেও আমরা একই চিন্তা করি। অথচ আমরা বুঝি না যে আমরা কৌতুক করে সামান্য যে পানির ফোঁটা গুবরে পোকার উপর চাপিয়ে দেই, তা তার পক্ষে বহণ করা সম্ভব নয়।"
উপরের গল্পের মতো আমাদের বাস্তব জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে। মাঝে মাঝে আমরা দেখি আমাদের সামান্য কথায় কেউ কেউ অসামান্য রিয়েক্ট করছে! আমাদের কাছে যদিও বিষয়টা অমূলক মনে হয়, কিন্তু আমরা একটু গভীরভাবে ভেবে দেখলে দেখবো, বর্তমানে তার এই অসামান্য প্রতিক্রিয়া অতীতে তার সাথে করা অনেক সামান্য অ্যাকশনের সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়!
মা-বাবা মারা যাওয়ার পর আমি ভীষণ কষ্টকর একটা সময় কাটিয়েছি, অন্তত তাদের মৃত্যু পরবর্তী ৬/৭ মাস। কষ্টটাকে কয়েকটা লেভেলে ভাগ করা যায়। যেদিন মা মারা যায় সেদিনের কষ্টের কোনো তুলনা হয় না, ধরলাম সেটা ১ মাত্রার কষ্ট! এরপর বাবা মারা গেলো, সেটা আরো তীব্র কষ্ট, তবুও মাত্রাটা ১ ই ধরলাম। ১০ দিন/১ মাস পরও কষ্টটা ১ মাত্রতেই থাকলো, কমলো না একটুও! ২/৩ মাস গেলে আমি আস্তে আস্তে মেনে নিতে শিখলাম যে মা-বাবা আসলেই নেই, আর দেখা হবে না ইহজীবনে, কষ্টটা ততদিনে কিছুটা কমে আসলো, মাত্রা হিসেবে সেটাকে ২ মাত্রার কষ্ট ধরলাম। এরপরের কয়েকটা মাসে বাস্তবতা আমার কষ্টটাকে একটু একটু করে ভোতা করে দিলো। ধরে নিলাম সেটা মাত্রা ৩, মাত্রা ৪ এ এসে থামলো ৬/৭ মাস পর। এখনো মাঝে মাঝে আমি কষ্ট পাই, ২ মাত্রার তীব্র কষ্ট! ১ মাত্রার তীব্রতম কষ্ট আমি আর কোনোদিন পেতে চাই না, কোন্ কোন্ উপায়ে সেটা পেতে পারি আমি তা জানি বলেই কষ্টটা আর পেতে চাই না!
১৬ মার্চ, ২০২২
# প্রত্যেকটা মানুষ কিছু সময় পর পর নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে চায়। কারো কারো কাছে সময়টা অনেকদিন, কারো কারো কাছে সময়টা অনেক মাস, আবার কারো কারো কাছে সময়টা অনেক বছর পর পর ফিরে আসে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকের জীবনে সময়টা আসেই না!
তবে প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই পরিশুদ্ধ হবার চেষ্টায় নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা খুব বেড়ে যায়। কোন সময়টার কথা বলছি বুঝতে পারছো কি? সময়টা খুব সন্নিকটে, পবিত্র রমজানের মাস। অনেক মানুষ জীবনটাকে আরেকবার রিসেট করার চেষ্টা করবে সময়টায়! আসলেই সময়টা জীবনকে রিসেট করার জন্য বেশ উত্তম। আসছে রমজানের আগে নিজেকে আরেকটু বোঝার চেষ্টা করো, বোঝার চেষ্টা করো তোমার কি জীবনকে রিসেট করার প্রয়োজন আছে? আচ্ছা, জীবনটা নতুন করে রিস্টার্ট করার পর সবার আগে তুমি কোন কাজটি করবে?
১৭ মার্চ, ২০২২
# প্রতিদিন খুব ভোরে দুই বন্ধু একসাথে পার্কে হাঁটতে বের হয়। জুন মাসের কোনো এক শুক্রবার 'গ্লোবাল রানিং ডে' উপলক্ষে একটি ম্যারাথনের আয়োজন করা হলে ঐ দুই বন্ধু তাতে অংশগ্রহণ করে। ম্যারাথনের শেষে আয়োজক সংস্থা উপহারস্বরূপ সবার জন্য ফ্রি ফল খাওয়ার ব্যাবস্থা করে। ব্যবস্থাটা বেশ চমৎকার হলেও অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাধিক্যের কারণে সবাইকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ফল খাওয়ার জায়গায় যেতে হচ্ছিলো।
দুই বন্ধুর প্রথমজন বললো, 'চলো, লাইনে দাঁড়াই, বেশ তাজা ফল খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে দেখছি!'
দ্বিতীয়জন বললো, 'নাহ্, অনেক লম্বা লাইন! তার চেয়ে বরং বাসায় চলো।'
প্রথমজন আবার বললো, 'ফ্রি ফল! না খেয়েই চলে যাবো! এতটা পথ দৌড়ালাম!'
প্রত্যুত্তরে দ্বিতীয়জন বললো, 'আমার লাইনে দাঁড়াতে ভালো লাগে না, কত লম্বা লাইন দেখছো না!'
প্রত্যেকটা জিনিসকে দেখার দুইটা দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। পৃথিবীর কিছু কিছু মানুষ যা পেতে চায় শুধু তার দিকেই মনোনিবেশ করে থাকে। আরেকদল মানুষের দৃষ্টি থাকে লক্ষ্যবস্তুর পথের প্রতিবন্ধকতার উপর। তাই উপরের গল্পে প্রথম বন্ধু শুধু ফ্রি ফলটাই দেখতে পাচ্ছিলো, আর দ্বিতীয় বন্ধু ফ্রি ফলটা পাওয়ার জন্য লম্বা লাইনটি দেখতে পাচ্ছিলো! তুমি তাই দেখবে যা তুমি দেখতে চাও, তোমাকেই ঠিক করতে হবে তুমি কি দেখতে চাও?
১৮ মার্চ, ২০২২
# মাঝে মাঝে ঘুমের মাঝে আমাদের দেখা স্বপ্নগুলো মনে হয় একদম বাস্তব। আবার অনেক সময় বাস্তবে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে হয় ঠিক যেন স্বপ্ন!
নিক পিরোগের হেনরি বিনস সিরিজের তৃতীয় বই 3:21 A.M. পড়লে মনে হবে হুট করে কেউ বাস্তবতা থেকে তোমাকে স্বপ্নে ছুঁড়ে ফেলেছে, আর সে ছুঁড়ে ফেলা এতটা তীব্র যে তোমার মনে হচ্ছে তোমার সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে, সবকিছু! সামগ্রিকভাবে বইটি পড়ে আহামরি ভালো লাগে নি, সিরিজের আগের দুইটি বইয়ের তুলনায় তুলনামূলক কম ভালো লেগেছে।
প্রাণী হিসেবে মানুষ অত্যন্ত বিচিত্র। আমি অনেক সমজাতীয় মানুষের মাঝে অসম আচরণ যেমন দেখতে পেয়েছি, তেমনি দেখতে পেয়েছি অসম জাতের মানুষের সমজাতীয় আচরণ! মানুষ স্বপ্নে দেখা অত্যন্ত ভালো স্মৃতিও বাস্তবতায় এসে ভুলে যায়, আবার বাস্তবে ঘটে যাওয়া তীব্রতম কষ্টকর মুহূর্তগুলোও মাঝে মাঝে স্বপ্নের মাঝে খুঁজে ফিরে।
১৯ মার্চ, ২০২২
# কেভিন সিমলার ও রবিন হ্যানসন এর "দ্যা এলিফ্যান্ট ইন দি ব্রেইন" বইয়ের শুরুতে ঔষধ এর সাথে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে একটা সুন্দর আলোচনা আছে। বিষয়টা আমি আমার মতো করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।
আমরা, মানুষেরা, ঔষধ সেবন করি মূলত অসুস্থ অবস্থা থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য, আরো নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্যই ঔষধ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত বিশ্বে যেখানে অধিকাংশ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়া হয়, সেখানে মানুষ স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বা বলা যায় সুস্বাস্থ্যের জন্য উন্নয়নশীল/দরিদ্র দেশের মানুষের তুলনায় বেশি মাত্রায় ঔষধ সেবন করে। সাধারণভাবে ভেবে দেখলে তুমি দেখবে, তুমি যখন কোনো অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হও, তখন ডাক্তার তোমাকে ভালোভাবে চেক করে যদি খুব কম ঔষধ দেয়, বা যদি বলে আপনার অসুখ এমনিতেই দুইদিনের মধ্যে সেরে যাবে, কোনো ঔষধ লাগবে না। তুমি কি মানসিকভাবে শান্তি পাবে? না কি মনের এককোণে খচখচ করতে থাকবে! আমাদের মাইন্ডসেটটাই এমন হয়েছে যে, আমরা ধরেই নেই অসুস্থ হলে আমাকে বেশ কিছু ঔষধ অবশ্যই সেবন করতে হবে! অবস্থাটা অনেকটা এমন যে, তুমি হয়তো এমনও ভাবতে পারো, 'যতো বেশি ঔষধ, ততো তাড়াতাড়ি সুস্থতা!'
মানুষ সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, খাদ্যাভ্যাস, বাতাসের গুণাবলী ইত্যাদি প্রয়োজনীয় উপকরণের কথা ভুলে গিয়ে ঔষধের পেছনে ছুঁটে চলেছে, এমনকি নীতি নির্ধারকেরাও! কিভাবে পরিবেশটাকে পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে, খাদ্যের গুণগত মান ঠিক রাখা যাবে, পরিবেশ দূষণকে একটা সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা যাবে, এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেগুলো আমাদের সুস্থ্য রাখার জন্য অবশ্যই প্রয়োজন, সেসবের দিকে খুব একটা মনযোগ না দিয়ে আমরা কি ঔষধের ক্ষমতা বা কার্যকারিতা বৃদ্ধির পেছনেই শুধু মনোনিবেশ করছি? দু'টো কাজের দায়িত্বে থাকা লোক ভিন্ন হলেও কেনো জানি একটা হয় (শুধু বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে না), একটা হয় না! এটা কি উদাসীনতা! না কি শর্টকাট সুস্বাস্থ্যের আশায় ঔষধ সেবনের বদভ্যাস! না কি পুরোটাই একটা বাণিজ্য! যে বাণিজ্যে তুমি নিজেও অংশগ্রহণ করছো, অবচেতনভাবে!
২০ মার্চ, ২০২২
# খুব সম্ভবত এই সিরিজটা লিখা ছেড়ে দিতে যাচ্ছি। Writer's Block জেকে বসেছে প্রচন্ডভাবে। আজকে লিখতে বসে কেমন যেনো অর্থহীন মনে হচ্ছে এসব লেখালিখি!
লিখার মতো কিছু মাথায় না এলে আমি কি করি! আমার লেখা একটা কবিতা পোস্ট করি! (লিখে রাখা অনেক কবিতা Writer's Block এর সময় ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়, বিষয়টা বেশ মজার)!
হয়নি শুধু বিদায় বলা!
কিছু কিছু যাত্রা শুরু হয় আমাদের মৃত্যুর পর,
যে তোমায় পাওয়া হয়নি এ জীবদ্দশায়,
সে তোমায় পাওয়ার যাত্রা যেমন শুরু হবে!
অধীর আগ্রহে আমি অপেক্ষায় আছি,
অন্তিম সে যাত্রা শুরুর, তোমায় ছাড়া!
যাত্রা শুরুর অনেক অনেক পর দেখা হবে-
তোমার সাথে! কি বলবো তোমায় আমি সেদিন!
কিছুই বলবো না হয়তো! হয়তো শত সহস্র বছর
শুধু তোমার চোখে চোখ রেখেই কাটিয়ে দিবো!
হয়তো একটু হেসে বলবো, শেষ পর্যন্ত দেখা হলো!
আচ্ছা, তোমার কি মন খারাপ হবে আমায় দেখে!
আমার উপর কি রাগ করে থাকবে? যেমনটা থাকো?
এ বেলায় তোমার সাথে শেষ দেখাটা হয়ে গেছে।
হয়নি শুধু বিদায় বলা! হয়নি বলা অনেক কিছুই!
তোমার সবটা স্মৃতি আমি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি,
নিয়ে যাচ্ছি সবটা না বলা কথা, তোমারই জন্য!
পরের জন্মে আমায় অনেক অনেক ভালোবেসো,
ঠিক যেমনটা আমি তোমায় বেসেছি, এই জন্মে!
এই জন্মে একবার কি আমায় বলবে, ভালোবাসি!
• কবিতা লিখার একটা বিরক্তিকর বিষয় আছে। বিষয়টা হলো কবিতাকে সবাই কবির ব্যক্তি জীবনের সাথে এক করে ফেলে। খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি! বাংলাদেশে আসলে সব কাজই বিব্রতকর! সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় হলো 'মানুষ' হওয়া! অমানুষের দেশে মানুষ হওয়া বিব্রতকর হবে সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক!
• বিশেষ করে এই কবিতার আরেকটা বিব্রতকর বিষয় আছে। কেউ কেউ বলবে মৃত্যুর পর নিজের কৃতকর্মের হিসাব দিতে দিতে কূল কিনারা পাবা না, আবার আসছো ভালোবাসার মানুষ খোঁজার জন্য! বেটা ফাউল কোথাকার!
বিষয়টা আসলেই ফাউল! লেখকদের একটা বৈশিষ্ট্য আছে, যার কারণে তাদের ফাউল বলা যায়! বলতে পারো সেটা কি?
২১ মার্চ, ২০২২
# ধরো, তুমি বিশেষ বন্দী দশায় আছো। বন্দী হলেও তোমাকে শারীরিক বা মানসিক কোনরকম শাস্তি দেয়া হচ্ছে না! পরিধানের জন্য তোমাকে সুন্দর ইস্ত্রি করা কাপড় দেয়া হলো, অনেক দামী পাত্রে সুস্বাদু পুষ্টিকর খাদ্য দেয়া হলো, ঘুমানোর জন্য আরামদায়ক বিছানা দেয়া হলো, মোট কথা তুমি বেশ আছো!
হঠাৎ একদিন তোমাকে বলা হলো, পরিধানের জন্য যে কাপড়গুলো তোমাকে দেয়া হয়েছে সবগুলো ফাঁসির দন্ড পাওয়া কোনো না কোনো আসামির! কেউ এখন আর জীবিত নেই! সবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। যেসব পাত্রে তোমাকে খাবার দেয়া হয় সেগুলো হলো সেসব পাত্র যেগুলোতে করে ফাঁসি কার্যকরের আগে শেষবারের মতো আসামিদের খেতে দেয়া হয়েছিলো! আরামদায়ক যে বিছানায় তুমি এতদিন ঘুমাচ্ছো, তাতে আসামিরা মৃত্যুর আগে শেষবারের মতো ঘুমিয়েছিলো!
আমি নিশ্চিত তোমার প্রচন্ড খারাপ লাগা শুরু হয়েছে, মানসিকভাবে, শারীরিকভাবেও! কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে, তুমি ঘামতে শুরু করেছো! তোমার পরিধেয় কাপড়, ব্যবহার্য পাত্র, বিছানা- প্রতিটা জিনিস কত শতবার পরিষ্কার করা হয়েছে, তারপরও তুমি সেসব ব্যবহার করতে এখন থেকে অস্বস্তি বোধ করবে। তোমার কষ্ট শুরু হয়ে গেছে, এখন থেকে তুমি আর শান্তিতে নেই! তোমার মনে হচ্ছে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি তোমাকে সংক্রমিত করে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েই ছাড়বে! তোমার আধুনিক মন তোমাকে বার বার বলছে এটা নিছক কুসংস্কার, তারপরও তুমি শান্তিতে নেই! সত্যিকার অর্থে, তোমার মনের শান্তি হরণ করেছে কে? যে তোমাকে বলেছে তোমার ব্যবহার্য সবকিছু ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের, সে? না কি ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা? না কি তোমার মনের কুসংস্কার?
কুসংস্কারের কথা বলতে গিয়ে একটা প্রশ্ন জাগলো মনে! কুসংস্কারের কথা বললে আমাদের অধিকাংশ মানুষের মাথায় কালো বিড়ালের মত নিরীহ একটা প্রাণীর ছবি ফুটে উঠে কেন!
২২ মার্চ, ২০২২
# জন্মের পরপরই আব্বা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি করিয়ে দিলো। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি! বয়স ২৮ বছর! পিএইচডির বিষয়বস্তুটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে, 'বয়স্কদের বুদ্ধি বিকাশে শিক্ষার ভূমিকা'। আস্তে আস্তে আমি ছোট হতে থাকলাম, পিএইচডি শেষ করে এমএস, ইঞ্জিনিয়ারিং, কলেজ শেষে স্কুলে উঠলাম! স্কুলে উঠেই মনে এক ধরণের প্রশান্তি লাগতে লাগলো, আর কয়টা ক্লাস পরেই পড়াশুনা শেষ! আহ্! ক্লাস নাইন, এইট করতে করতে ক্লাস ওয়ানে এসে আমার মন থেকে সব আনন্দ চলে যেতে শুরু করলো! আমার পিএইচডির বিষয়বস্তুটা আবার মনে পড়ে গেলো, এতটা দিন পর মনে হচ্ছে বয়স্কদের বুদ্ধির বিকাশের চেয়ে মানবিকতার বিকাশের খুব বেশি প্রয়োজন! জগতে বুদ্ধিমান হওয়ার চেয়ে মানবিক হওয়া আরো বেশি জরুরী। যাই হোক শেষমেশ ক্লাস ওয়ান পাশ করে আমি আমার পড়াশুনার পাঠ শেষ করলাম। আমার হাতে সময় আছে আর ৪ বছর। এ সময়টা একান্ত আমার, এ সময়টায় কোনো পড়াশুনা নেই। ৪ বছর বয়সী একটা মানুষ আর কি ই বা করবে! ও হ্যা, আমার একটা সন্তানও আছে, ওর বয়স এখন ১৪ বছর। তুমি আমার কথা শুনে খুব অবাক হচ্ছো? ভাবছো কিসব আবোল তাবোল বকছি! আসলে আমাদের এখানে জন্মের পরপর জানতে পারি আমরা কতটা সময় বেঁচে থাকবো। জীবনের শেষটা থেকে শুরু করে একদম শুরুর দিনটায় আমাদের মৃত্যু হয়!
আচ্ছা, তুমি কি জানো, কতদিন বেঁচে থাকবো এটা জানাটা একটা কষ্টকর বিষয়? তুমি বা তোমরা খুব ভাগ্যবান, কতদিন বেঁচে থাকবে জানো না! তাই যে কোনো দিন ঘুম থেকে উঠে তুমি ভাবতে পারো, আরো বিশ বছর পর আমি এটা করবো, ওটা করবো..... বিশ বছর পর বেঁচে থাকলে কোনো আরেকদিন ঘুম থেকে উঠে হয়তো ভাববে আরো ত্রিশ বছর পর আমাকে এটা করতেই হবে! তোমার কাছে কল্পনা করার জন্য অসীম সময়ের ভান্ডার কিন্তু পড়ে আছে, তুমি এর কয়টা মাইলফলক ছুঁতে পারবে সেটাও তুমি জানো না! কত মজার একটা বিষয়, কখনো ভেবেছো?
২৩ মার্চ, ২০২২
# মাঝে মাঝে আমার মনে হয় মানুষের খারাপ কাজগুলোর দিকে নজর পড়লেও খুব অমনোযোগী হই, যেন পরবর্তীতে সেটা ভুলে যেতে পারি বা মনে থাকলেও অন্তত তাকে ক্ষমা করে দিতে পারি।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় মানুষের ভালো কাজগুলো খুব সুক্ষ্মভাবে দেখি, খুব মনোযোগ দিয়ে দেখি, যেন সারাটা জীবন তার ভালো কাজটা আমার মনে থাকে, তাকে দেখলে যেন আমার মনে অকৃত্রিম শ্রদ্ধার উদয় হয়।
বাস্তবে কোনোটাই খুব মনোযোগ দিয়ে দেখা হয় না, আবার অমনোযোগীও হতে পারি না! তাই অসংখ্য ভুলের জন্যও দেখা যায় কাউকে ক্ষমা করে দেই, আবার অসংখ্য ভালো কাজের প্রতিদান দিতে ভুলে যাই!
সঠিক পদ্ধতি কোনটি? আমার মনে হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুব মনোযোগ সহকারে অমনোযোগী হতে শিখতে হবে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অমনযোগী মনেও মনোযোগ দিতে শিখতে হবে। প্রথমটা মোটামুটি সহজ হলেও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সাধনার প্রয়োজন আছে।
২৪ মার্চ, ২০২২
# প্রখ্যাত ইহুদী রাব্বি হিল্লেল আইন সম্পর্কে একটা সুন্দর কথা বলেছেন, "তুমি কারো উপর এমন কিছু চাপিয়ে দিয়ো না, যেটা তুমি চাও না যে অন্যরা তোমার উপর তা চাপিয়ে দিক। এটিই আইন। বাকি সবকিছুই বিচারিক ব্যাখ্যা।"
প্রাত্যহিক জীবনে আমরা প্রায়শই আমাদের নিজ মনের ইচ্ছা অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু অন্যের চাপিয়ে দেয়া ইচ্ছা মেনে নিতে চাই না। অন্যের চাপিয়ে দেয়া ইচ্ছা এড়াতে মাঝে মাঝে আমরা আইনের দ্বারস্থ হলেও অন্যের উপর নিজের চাপিয়ে দেয়া ইচ্ছা আমাদের কাছে পরিশুদ্ধ ভালো কাজ মনে হয়। এমনটা কেন হয় বলতে পারো? এটা কি আসলে কোনো ব্যক্তি চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? আইনের বাইরে বিচারিক ব্যাখ্যা বোঝার মতো বুদ্ধি প্রায় মানুষের থাকেলও সেটা মেনে নেয়ার মতো ইচ্ছা কয়জনের আছে!
২৫ মার্চ, ২০২২
# অফিস থেকে বাসায় এসে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল সেরে নিলাম। বাসায় কিছু একটা গন্ডগোল মনে হচ্ছে, কিন্তু এখনো বুঝতে পারছি না গণ্ডগোলটা কি! মা কে কয়েকবার ডাকলাম, জবাব আসলো না! ক্ষুধা লেগেছে বেশ। সব ঘরে মা কে খুঁজলাম, পেলাম না! বউকে জিজ্ঞেস করলাম, 'মা কোথায়?' বউ হাসলো। বুঝলাম না হাসির কি হলো! আবার জিজ্ঞেস করলাম, 'মা কই? বাইরে কোথাও গেছে?' বউ আবার হাসলো। এবার সত্যি সত্যি মেজাজটা বেশ খারাপ হলো। বিষয়টা কোন দিক থেকে হাসির সেটা বুঝতে পারলাম না। ড্রয়িংরুমে এসে দেখি সোফাটা সোফার জায়গায় নেই! এত বড় একটা ফার্নিচার ধুম করে নাই হয়ে যাওয়া তো সম্ভব না! বেডরুমে গেলাম আবার, বউকে জিজ্ঞেস করি বিষয়টা কি। বেডরুমে গিয়ে আমি একটা বিশাল ধাক্কা খেলাম, বউ সেখানে নেই, মাত্রই কথা বলে গেলাম! ওয়াশরুমে গিয়েও পেলাম না! হচ্ছেটা কি এসব! সারা ঘর খুঁজে আমি কাউকে পেলাম না, মা, বউ, বাচ্চারা! এটা কিভাবে সম্ভব! আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসলো, চোখ থেকে টুপ টুপ করে পানি ঝরে পড়ছে.......
আমার কাঁধ ধরে কেউ একজন বেশ ঝাঁকুনি দিচ্ছে। 'এই তুমি কাদঁছো কেনো?' আমি ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম। বউ বসে আছে পাশে। চোখে হাত দিয়ে দেখি সত্যি চোখটা ভেজা। স্বপ্নটা এতটা বাস্তব ছিলো আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কোনটা আসলে স্বপ্ন! সপ্ন আর বাস্তব যদি অদলবদল করা যেতো বেশ হতো, মা কে খুঁজে না পেলেও অন্তত স্বপ্নে মা তো বেঁচে ছিলো!
২৬ মার্চ, ২০২২
# অফিস থেকে একটা ট্যুরে যাওয়ার প্ল্যান হচ্ছে। কক্সবাজার বা সুন্দরবন, এই দু'টো থেকে যে কোনো একটি স্থান বেছে নিতে হবে। যেদিকে বেশী সংখ্যক সহকর্মীর ভোট পড়বে সেখানে যাওয়া হবে। তোমার পছন্দ সুন্দরবন, তুমি মনে মনে ভাবছো তোমার অধিকাংশ সহকর্মীও সুন্দরবনেই যেতে চাইবে! এই যে তুমি ভাবছো তোমার পছন্দের সাথে তোমার অধিকাংশ সহকর্মীর পছন্দ মিলে যাবে, এমন ভাবনা শুধু তোমার তা কিন্তু না! খুব সম্ভবত মানুষ যখন থেকে ভাবতে শিখেছে এমন ভাবনার উৎপত্তিও তখন থেকেই। নিজের পছন্দটাই সেরা, এমন ভাবনা বোধহয় আমাদের সবার! তাই পছন্দটা যেমনই হোক, উত্তম কিংবা অধম, আমরা আমাদের পছন্দ নিয়ে মেতে থাকি! বিষয়টা কিন্তু বেশ!
আমাদের মস্তিষ্কটা এমনভাবে তৈরি যে এটা নিজ থেকে সত্য বা মিথ্যা আলাদাভাবে বুঝতে পারে না। মস্তিষ্কের সামনে যেটা সত্য বলে উপস্থাপন করা হয় সেটাকে সে সত্য হিসেবে বিবেচনা করে নেয়, আর যেটা মিথ্যা বলে উপস্থাপিত হয়, সেটাকে মিথ্যা বলে ধরে নেয়। মস্তিষ্ক সবসময় সঠিক বা ভুলও যে নির্ভুলভাবে বুঝতে পারে, এমনটাও নয়! তাই এই সত্য-মিথ্যা-সঠিক-ভুল নিয়ে সর্বদা দ্বন্দ্বে থাকা মস্তিষ্কের সব সিদ্ধান্ত নিয়ে উৎফুল্ল বা মন খারাপ করা উচিত নয়।
আচ্ছা, উপরের লিখাটা কি সঠিক? না কি ভুল? আমি নিশ্চিত তোমার মস্তিষ্ক এটাকে সঠিক হিসেবেই ভেবে নিয়েছে! (আমি কিন্তু আমার পছন্দটাই ঠিক ঠিক তোমার উপর চাপিয়ে দিলাম!)
২৭ মার্চ, ২০২২
# জীবনে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার পথে মানুষ একটা জিনিস নিয়মিত পেয়ে থাকে, সেটা হলো- একগাদা অপশন! অধিকাংশ মানুষই তাদের জীবনে পাওয়া অপশনগুলোর সবগুলো পরখ করে দেখতে চায়, চায় চোখের সামনে যতগুলো সম্ভাবনার দুয়ার আছে সবগুলো খুলে দেখতে! কেনো জানি আমরা, মানুষেরা পারি না একটা নির্দিষ্ট অপশন বেছে নিয়ে এগিয়ে যেতে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের বাধ্য করা হয় তা করতে!
আমাদের জীবনে এমন একজনকে দরকার যে আমাদের এই অপশনগুলোকে একটা কাঠামোয় এনে সেগুলো থেকে একটি বেছে নিতে সাহায্য করবে, আর সঠিক অপশন বেছে নেয়ার পর বা বলতে গেলে সম্ভাবনার একটি দুয়ারে প্রবেশ করার পর অন্য দরজাগুলো বন্ধ করে দিবে। তোমার এই এমন একজনটা তুমি নিজেও হতে পারো।
তোমার মনে হতে পারে বেশী অপশন থাকাটা মন্দ কেনো হতে যাবে! মন্দ হবে কারণ বেশী অপশন তোমার মনকে সমসময় বিক্ষিপ্ত করে রাখবে। জীবনে বেশী বেশী অপশনের দরজা বন্ধ করার দক্ষতা যার যতো বেশী, সে ততো বেশী সুখি।
জীবনে কোনো কোনো সম্ভাবনার দুয়ার কখনো খুলতে হয় না। হতে পারে সেই সম্ভাবনার দুয়ারটা সবচেয়ে সুন্দর, হতে পারে দুয়ারের হাতলটা খুব মসৃণ! তারপরও! জীবনে সৌন্দর্য বা মসৃণতার চেয়ে প্রশান্তির প্রয়োজন অনেক অনেক বেশী।
২৮ মার্চ, ২০২২
# আচ্ছা, বলতে পারো, আগামী ৫০ বছর পর পৃথিবী কেমন হবে? আমরা এখন যারা বেঁচে আছি, আগামী ৫০ বছর পরের পৃথিবীতে (যদি বেঁচে থাকি) আমরা কি সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিতে পারবো?
বিষয়টা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হবার কথা না, আজ থেকে ৫০ বছর আগে, মানুষ আজকের পৃথিবী সম্পর্কে যা যা ভেবে রেখেছিলো, তার সবটাই কি সঠিক হয়েছে? বা ভাবনার সবটাই কি ভুল ছিলো! সঠিক বা ভুলের হিসেবে না গিয়ে যদি ভেবে দেখো, ৫০ বছর আগের কোনো তরুণ বা যুবক যে এখনো বেঁচে আছে, তার কি খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছে বর্তমানের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে? হচ্ছে না। কারণ পরিবর্তনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় সে ব্যক্তির উপস্থিতিও ছিলো সমান সমান!
তোমাকে যখন বলা হবে ৫০ বা ১০০ বছর পর যাতায়াতের যানবাহন কেমন হতে পারে বলে মনে করো? তুমি যেমনই কল্পনা করো না কেনো, আমি নিশ্চিত তোমার কল্পনায় ধরা দেয়া যানটা একদম ঝকঝকে নতুন! তুমি চাইলেও তোমার কল্পনায় ভবিষ্যতের পুরনো কোনো যানবাহন ধরা দিবে না। আমাদের কল্পনায় ভবিষ্যতের সব বস্তু অদ্ভুতভাবে নতুন!
লেবাননের প্রখ্যাত লেখক নাসিম তালেব তার Antifragile বইয়ে একটি সুন্দর কথা বলেছেন, 'মনে করতে পারো যে গত পঞ্চাশ বছর ধরে বিদ্যমান প্রযুক্তির বেশিরভাগই আমাদের আরও অর্ধ শতাব্দী সার্ভিস দিবে। আর বর্তমানের অনেক আবিষ্কারই অল্প সময়ের মধ্যেই হারিয়ে যাবে!'
আচ্ছা, কখনো কি লক্ষ্য করেছো যে তোমার খুব প্রিয় কোনো পণ্য এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না! পণ্যের উৎপাদক শ্রেণীর অংশ হতে পারলে অধিকাংশ সময় তোমার পছন্দ পরিবর্তনের সাথে সাথে আরো অসংখ্য মানুষের পছন্দের পরিবর্তন সাধন করা যায়, পরিবর্তন করা যায় অনেক বছর পরের মানুষের ভাবনাও!
২৯ মার্চ, ২০২২
# আজ আমার প্রিয় সহকর্মী, বন্ধু, ভাই, ইমন আকস্মিকভাবে মারা গিয়েছে। সবার মৃত্যু অনিবার্য হলেও কিছু কিছু মৃত্যু আমাদের মানব মন মেনে নিতে পারে না। ইমনের মতো ভালো মানুষ সত্যিকার অর্থেই খুব কম আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কখনো গেলে মনে হবে হয়তো ইমনের সাথে দেখা হয়ে যাবে! ইমনকে নিয়ে আর কি বলবো!
ইমন
হঠাৎ মনে হচ্ছে আমি ঘুমিয়ে আছি অনেকক্ষণ,
আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমি দেখেছি এক দুঃস্বপ্ন!
'রবি ভাই, আবার দেখা হবে!' বলে সেই যে গেলি-
আর দেখা হলো না যে ভাই! এতটা মিথ্যে কথা-
আগে কখনো বলিস নি তো ভাই!
মায়ের কাছে যাওয়ার বেশ তাড়া ছিলো তোর।
নভেম্বরের চব্বিশ তারিখ, মনে আছে? যেদিন-
তোর অর্ডার হয়েছিলো, নীলফামারী যাওয়ার!
আমায় ফোন করেছিলি ভাই! মনে আছে?
আমি বলেছিলাম- 'আলহামদুলিল্লাহ ভাই,
এবার তোমার বিয়ের দাওয়াত চাইই চাই!'
খুব করে হেসে বলেছিলি, 'সামনের বছর ভাই!'
যাওয়ার আগে আমার বাচ্চাদের জন্য খামে করে
এনেছিলি তাদের জন্য একগুচ্ছ ভালোবাসা!
একগুচ্ছ চকোলেট! আমিতো বেশ অবাক!
বললি, 'ভাতিজিকে তো দেখতে যাওয়া হয় নি,
তাই ওর জন্য এটা ভাই, পরের বার ঢাকা আসলে
অবশ্যই বাসায় যাবো ওকে দেখতে, কথা দিলাম।'
মনে আছে, গত বছর জানুয়ারির একুশ?
খুব শখ হয়েছিলো একটা গিটার কেনার!
ফোন দিতেই বললি, 'চলে আসেন ভাই,
অফিস শেষে দুই ভাই মিলে কিনতে যাওয়া যায়।'
তোর সাথে সায়েন্স ল্যাব থেকে কিনেছিলাম,
তোর পছন্দের আমার প্রথম গিটার! এখনো আছে,
একদম সেদিনের মতো, তোর সাথের এই স্মৃতিটা!
ভালো থাকিস ইমন, বড্ড ভালো থাকিস ভাই।
তবে সবচেয়ে খারাপ লাগছে কি জানিস?
তোর সাথে আর কোনোদিন কথা হবে না!
৩০ মার্চ, ২০২২
# তুমি পশুপাখি নিয়ে খুব একটা মাতামাতি পছন্দ করো না, সহজ কথায় বললে এ বিষয়ে তোমার খুব একটা আগ্রহ নেই। হঠাৎ একদিন ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে দেখতে পেলে পৃথিবীতে গন্ডার একদম বিলুপ্তির পথে, সমগ্র পৃথিবীতে মাত্র ছয়টি গন্ডার আছে! (বাস্তবে সংখ্যাটা বেশ কয়েক হাজার)
তোমার দেশের চিড়িয়াখানায় রাখা একমাত্র গন্ডারটিও অসুস্থ! এখনই যদি দেখা না যায় হয়তো সারাজীবনে আর কোনোদিন গন্ডার নাও দেখতে পারো তুমি! এমন অবস্থায় তোমার কোনো পূর্ব ইচ্ছা না থাকলেও তুমি খুব আগ্রহ নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাবে, গন্ডার দেখবে, খুব সম্ভবত গন্ডারের সাথে একটা সেলফিও তুলবে! এমনটা তুমি কেন করবে, জানো?
মানুষের মাঝে সবসময় একটা জিনিস কাজ করে, অনুশোচনার ভয়! মানুষ সবসময় ভয়ে থাকে যে, কোনো একটা বিষয়ে জীবনে যদি আর দ্বিতীয় কোনো সুযোগ বা সেকেন্ড চান্স না আসে? এ ভয় আমাদের দিয়ে এমন অনেক কিছু করিয়ে নেয় যা আমরা হয়তো মন থেকে করতে চাই না!
আচ্ছা, আমাদের জীবনে প্রতিদিনই যে অনেকগুলো বিষয়ের শেষ সুযোগ আসে সেটা কি তুমি বুঝতে পারো? অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারে না, বা এটা নিয়ে ভেবেও দেখে না!
৩১ মার্চ, ২০২২
# ধরো, তুমি কোনো একটা সমস্যায় আছো। সমস্যার সুন্দর একটা সমাধানের জন্য তোমার জানাশোনা সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি/বন্ধুর কাছে তুমি পরামর্শের জন্য গিয়েছো। সবটা শুনে সে মহাবুদ্ধিমান বন্ধু তোমাকে একটা পরামর্শ দিলো, সাথে এটাও বলে দিলো, 'সমস্যা সমাধান হওয়ার আগে কিন্তু সমস্যাটা আরো বেড়ে যেতে পারে!'
সম্ভাবনা-১: এরপর কিছুদিন অতিবাহিত হলো, তোমার সমস্যা আস্তে আস্তে আরো বাড়তে থাকলো! মহাবুদ্ধিমান বন্ধু কিন্তু বলেছিলো সমস্যা সমাধান হওয়ার আগে সমস্যা বাড়তে পারে! অর্থাৎ সবকিছু তার কথা অনুযায়ী হচ্ছে দেখে তুমি ঠিক করেছো, কষ্ট হলেও সবকিছু সহ্য করে যাবে!
সম্ভাবনা-২: এর কিছুদিন পর হঠাৎ করেই তোমার সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো! তুমি খুব খুশি যে মহাবুদ্ধিমান বন্ধুর পরামর্শে তোমার সমস্যার সমাধান হয়েছে।
দুই ধরনের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে দেখলে তুমি দেখবে, দুই ক্ষেত্রেই তোমার মহাবুদ্ধিমান বন্ধুর জয় হয়েছে! সমস্যা বেড়ে গেলেও তোমার কাছে তার কথা ঠিক মনে হবে, সমস্যার সমাধান হলেও তোমার কাছে মনে হবে তার পরামর্শ ঠিকঠাক কাজে দিয়েছে! বেশ ইন্টারেস্টিং না?
তবে কিছু কিছু সময় সত্যিকার অর্থেই সমস্যা সমাধানের পূর্বে সমস্যা বহুগুণ বেড়ে যায়।
০১ এপ্রিল, ২০২২
# প্রতিদিন তুমি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠো, সূর্য উঠারও আগে। তোমার ঘুম ভাঙ্গার কিছুক্ষণ পরই পৃথিবী আলোকিত করতে সূর্যের আগমণ ঘটে। তোমার কি কখনো মনে হয়েছে, প্রতিদিন তুমি ঘুম থেকে এত ভোরে উঠো বলেই সূর্য উঠে! ঘন কুয়াশায় ঢাকা কোনো এক দিন একটু দেরিতে ঘুম ভাঙলো তোমার, আর আশ্চর্যজনকভাবে সেদিন সূর্যের দেখা মিললো না! সূর্যটা সেদিন ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পরেছিলো।
প্রতিদিন সকাল ৯ টায় একজন ভদ্রলোক ব্যস্ত এক রাস্তার পাশে এসে কয়েক মিনিট হুইসেল বাজিয়ে চলে যান। একদিন তুমি আর কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে ভদ্রলোককে জিজ্ঞেসই করে বসলে, 'আপনি প্রতিদিন ঠিক ৯ টায় এসে হুইসেল বাজান কেনো?' ভদ্রলোক সহজ সরল ভাবে বললেন, 'আমি সব সিংহদের রাস্তা থেকে দূরে রাখি।' উত্তর শুনে তুমি খুব বিরক্ত হলে। বললে, 'এখানে তো কোনো সিংহ নেই!' ভদ্রলোক তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললেন, 'তাহলে বুঝতেই পারছো আমি হুইসেল বাজিয়ে সত্যিকার অর্থেই সিংহদের এখানে আসা থেকে বিরত রাখতে পেরেছি।'
পরিবারের সবাই মিলে লুডু খেলতে বসলে একটা বিষয় কি কখনো লক্ষ্য করেছো? তোমার যখন ৫ বা ৬ তোলা প্রয়োজন তখন তুমি ছক্কার গুটিকে খুব জোরে নিক্ষেপ করো! আবার যখন যখন ১ বা ২ তোলা প্রয়োজন তখন তুমি ছক্কার গুটিকে খুব আস্তে নিক্ষেপ করো! প্রকৃতপক্ষে জোরে বা আস্তে নিক্ষেপ নির্ধারণ করে না ছক্কায় কত উঠবে। তারপরও তুমি মনে করে থাকো যে, জোরে নিক্ষেপ করে তুমি ৫ বা ৬ উঠাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো অথবা আস্তে নিক্ষেপ করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো ১ বা ২ উঠা!
বাস্তবিক জীবনে আমরা প্রায়শই আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে খুব ভুল ধারণা পোষণ করে থাকি। আমরা এমন সব বিষয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে শেষমেশ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকি। যেটা প্রকৃতঅর্থে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বা করতে পারা উচিত, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, সেটা আমরা ক'জনই বা করি!
০২ এপ্রিল, ২০২২
# সন্ধ্যে ৬ টায় তোমার ফ্লাইট। তোমার বাসা থেকে এয়ারপোর্ট যেতে ২ ঘণ্টার মতো সময় লাগলেও ঢাকার জ্যামের কথা চিন্তা করে তুমি ৩ ঘণ্টা আগেই বের হয়েছো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। তারপরও তুমি সঠিক সময়ে পৌঁছুতে পারলে না, এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আসতেই ৭ টা বেজে গেলো! তোমাকে ছাড়াই বিমান তার গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। মন-মেজাজ সবটাই খারাপ তোমার! কিছুক্ষণ পর জানতে পারলে তুমি যে বিমানে করে যাওয়ার কথা ছিল সে বিমানটা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে, একজন যাত্রীও বেঁচে নেই, বেঁচে নেই বিমানের ক্যাপ্টেন, কেবিন ক্রুদের কেউই! মুহুর্তের মাঝে তোমার মনে হতে থাকলো স্রষ্টা তোমাকে বিশেষভাবে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। তোমাকে বাঁচিয়ে দেয়ার জন্যই রাস্তার জ্যামেরা আজ পণ করেছে তারা আজ আটকে রাখবে সব যানবাহন!
এবার একটু ভিন্নভাবে ভেবে দেখো। তোমার জ্যামে পড়া আর বিমান বিধ্বস্ত হওয়া, এই দুইটি ঘটনার সম্মিলিত সম্ভাবনা হয় ৪ টি: (১) তুমি জ্যামে আটকা পড়োনি, বিমান বিধ্বস্ত হয় নি, (২) তুমি জ্যামে আটকা পড়োনি, বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে (সাথে নিঃশেষ হয়েছো তুমিও!), (৩) তুমি জ্যামে আটকা পড়েছো, বিমান বিধ্বস্ত হয় নি, (৪) তুমি জ্যামে আটকা পড়েছো, বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। উপরের ঘটনাটি ৪ নম্বর সম্ভাবনার সাথে মিলে যাচ্ছে। একটু লক্ষ্য করলে দেখবে ১ নম্বর সম্ভাবনাটিই অধিকাংশ সময়ের জন্য সত্য। ৪ নম্বর সম্ভাবনার মতো ঘটনার সংখ্যা ১০০ বছরেও একটি বা বড়জোর দুটি ঘটে! কিন্তু ঘটতে পারে, স্বাভাবিকভাবেই! তাই তোমাকে বাঁচিয়ে দেয়ার জন্যই সব আয়োজন এমনটা ভেবে আত্নতুষ্টি পাওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে কি?
পৃথিবীতে সবাই মূল্যবান, আবার সবাই মুল্যহীন! আচ্ছা, এই মূল্যটা নির্ধারণ করে কে? বলতে পারো? স্রষ্টা?
নাহ! মানুষের মতো এত দুর্বল একটা সৃষ্টির মূল্য নির্ধারণের জন্য স্রষ্টার সৃষ্ট 'সময়'-ই যথেষ্ট।
০৩ এপ্রিল, ২০২২
# ক্যাসিনোতে এক জুয়ার আসরে সবাই টানটান উত্তেজনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা রুলেট টেবিলের চারপাশে। একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটে চলেছে আজ! টানা ২০ বার বলটি কালো ঘরে পড়ছে! সচরাচর এমন টানা একই রঙের ঘরে বলটি পড়তে দেখা যায় না। এখন ধরো তুমি একুশতম দানে বাজি ধরতে চলেছ, তুমি তোমার বাজি কোনো রঙের নম্বরে ধরবে? কালো না কি লাল? মানুষের সাইকোলজি বলে, তুমি খুব সম্ভবত লাল কোনো নম্বরে বাজিটি ধরবে! কিন্তু তোমার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে ২১ তম বারও বলটি কালো ঘরেই পড়লো! এভাবে টানা ২৭ বার বলটি কালো ঘরেই পড়লো এবং এর মাঝে অনেককে নিঃস্ব করে গেলো! ঘটনাটা বাস্তবে ঘটেছে ১৯১৩ সালে মন্টে কর্লোতে।
কোনো ঘটনা যখন টানা ঘটতে থেকে মানুষ ধরেই নেয় পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী! কিন্তু এটা বুঝতে পারে না পরিবর্তনের আগে ঠিক কতবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে! মানুষ বিশ্বাস করে প্রকৃতি সবসময় ভারসাম্য বজায় রাখে, কিন্তু বুঝতে পারে না ঠিক কখন সে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকলাপ শুরু করবে!
আরেকটা ঘটনা বলা যাক। ঘটনাটা কাল্পনিক। এক গণিতবিদ সম্ভাব্যতা বিষয়টাকে বেশ সিরিয়াসলি দেখেন। জীবনের সব ক্ষেত্রে তিনি সম্ভাব্যতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আবার বিমানে করে ভ্রমণ করতে ভয় পান, কারণ তার মনে হয় এই বুঝি বিমানে কোনো একটা টেরোরিস্ট অ্যাটাক হবে! গাণিতিকভাবে এর সম্ভাবনাও কিন্তু একদম শূন্য নয়! তো তিনি এই ভয় দূর করার জন্য প্রতিবার বিমানে করে ভ্রমণের সময় তার হ্যান্ড ব্যাগে একটি ছোট বোমা বহণ করেন! (বাস্তবে এটা সম্ভব নয়) এটা তিনি কেনো করেন বলতে পারো? এটা তিনি করেন কারণ, একটা বিমানে একটি বোমা থাকার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি হলেও দুইটি বোমা থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে!
আবার ধরো একটি কয়েন টস করলে হেড অথবা টেইল আসবে। এখন এমন যদি হয় যে কয়েন টস করলে টানা পঞ্চাশ বার হেড উঠেছে, একান্নতম বার হেডই উঠবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই, নিশ্চয়তা নেই টেইল উঠারও! কয়েন টসের ক্ষেত্রে প্রতিবারের ঘটনাই একটা অনন্য ঘটনা, আগেরবার টসে কি উঠলো সেটা কোনোভাবেই পরের বারের টসকে প্রভাবিত করতে পারে না।
বাস্তব জীবনের ঘটনাগুলো ক্যাসিনো বা টসের মতো ঘটনাগুলোর মতো নয়, বাস্তব জীবনে কোনো একটা ঘটনা এর পরের ঘটনাকে বেশ প্রভাবিত করে। বাস্তব জীবনে অনেক সময় আমাদের মনে হয় 'যেমন কর্ম, তেমন ফল' কথাটি বোধ হয় ভুল! অনেকেই খারাপ কর্মের জন্য শাস্তি না পেয়ে উল্টো পুরস্কৃত হয়! আমাদের বুঝতে হবে জীবনের হিসাব মিলানোর জন্য এই জীবনই শেষ নয়, আরো একটা জীবন থেকেই যায়, পরকালের জীবন!
০৪ এপ্রিল, ২০২২
# তোমার সামনে দু'টো বক্স রাখা আছে। প্রথম বক্সে ১০০ টি বল রাখা আছে যার মধ্যে ৫০ টি লাল আর ৫০ টি কালো। দ্বিতীয় বক্সেও ১০০ টি লাল আর কালো বল রাখা আছে, কিন্তু কয়টি লাল আর কয়টি কালো সে সংখ্যা তোমার অজানা।
তোমাকে বলা হলো চোখ বন্ধ করে তোমার পছন্দমত যে কোনো একটা বক্স থেকে একটি লাল বল তুলতে পারলে তোমাকে ১০,০০০ টাকা পুরষ্কার দেয়া হবে! তুমি কোন বক্স থেকে বল তুলবে? খুব সম্ভবত তুমি প্রথম বক্স থেকে লাল বল তোলার চেষ্টা করবে, কারণ তুমি নিশ্চিতভাবে জানো প্রথম বক্সে ৫০ টি লাল বল আছে। ৫০-৫০ চান্স। এক্ষেত্রে তুমি ধরে নিচ্ছো দ্বিতীয় বক্সে লাল বলের সংখ্যা কালো বলের চেয়ে কম।
এখন তোমাকে যদি আবার বলা হয়, চোখ বন্ধ করে তোমার পছন্দমত যে কোনো একটা বক্স থেকে একটি কালো বল তুলতে পারলে তোমাকে ১০,০০০ টাকা পুরষ্কার দেয়া হবে! তুমি কোন বক্স থেকে বল তুলবে? এবারও খুব সম্ভবত তুমি প্রথম বক্স থেকে কালো বল তোলার চেষ্টা করবে, কারণ তুমি নিশ্চিতভাবে জানো প্রথম বক্সে ৫০ টি কালো বল আছে। ৫০-৫০ চান্স। আচ্ছা, দাঁড়াও! কোথাও একটা ভুল হচ্ছে! প্রথমবার তুমি যখন প্রথম বক্স থেকে লাল বল পাওয়ার আশায় বল তুলেছো তখন তুমি ধরে নিয়েছ দ্বিতীয় বক্সে লাল বলের সংখ্যা কালো বলের চেয়ে কম, অর্থাৎ দ্বিতীয় বক্সে কালো বলের সংখ্যাই বেশী। তাহলে দ্বিতীয়বার তোমার উচিত ছিলো দ্বিতীয় বক্স থেকে বল তোলা, কারণ সেক্ষেত্রে কালো বল পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যেতো।
এ ধরণের ভুলের একটা নাম আছে, "এলসবার্গ প্যারাডক্স"। এই প্যারাডক্স আমাদের, মানুষের একটা বৈশিষ্ট্যের দিকে ইঙ্গিত করে, আমরা অজানা সম্ভাবনার চেয়ে জানা সম্ভাবনাকেই বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকি। সোজা কোথায় বলতে গেলে, আমরা ঝুঁকি নিতে চাইলেও অনিশ্চয়তায় পড়তে চাই না।
"এলসবার্গ প্যারাডক্স" নামটা সাইকোলজিস্ট ড্যানিয়েল এলসবার্গ এর নাম থেকে এসেছে।
আচ্ছা, তুমি কি দুইবারই সঠিক বলটি তুলতে পেরেছিলে? যদি পেরে থাকো তাহলে তো বেশ হলো! তোমার হাতে ২০,০০০ টাকা আছে! ট্রিটটা পাওনা রইলো!
০৫ এপ্রিল, ২০২২
# হঠাৎ তোমার মনে হলে নিজে নিজে কিছু একটা বানানো উচিত, একদম শুরু থেকে, শূন্য থেকে। যে জিনিসের সব ক'টা উপাদান তুমি নিজে হাতে তৈরি করবে, একদম মূল উপাদান থেকে।
বাসায় একটা টোস্টার প্রয়োজন। তুমি ঠিক করলে, তাহলে টোস্টারই বানানো যাক! কিন্তু সমস্যা হলো টোস্টার কিভাবে বানাতে হয় বা কি কি উপাদান দিয়ে তৈরি সে সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই। এর একটা সহজ সমাধানও বের করে ফেললে তুমি! বাজার থেকে সস্তা একটা টোস্টার কিনে এনে আস্তে আস্তে এর প্রতিটা যন্ত্রাংশ আলাদা করে ফেললে। সব যখন আলাদা করলে, কমবেশী ৪০০ এর মত ছোট বড় যন্ত্রাংশ পেলে! এতো এতো যন্ত্রাংশ দেখে তুমি বেশ হতাশ হলে। কয়দিনে তুমি এসব যন্ত্রাংশ নিজে তৈরী করবে আর কবে একটা টোস্টার তৈরী করবে!
একেবারে শূন্য থেকে প্রতিটা যন্ত্রাংশ নিজে তৈরি করে একটা টোস্টার বানাতে হয়তো সম্পূর্ণ জীবন চলে যাবে! তাই শূন্য থেকে একা একা কিছু শুরু না করে দলগতভাবে কোনো কাজ শুরু করলে মহামূল্যবান জীবনের উপযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
আচ্ছা একটা অদ্ভুত বিষয় কি জানো? মানুষ কোনো কোনো বিষয়ে দলগতভাবে দুঃখিত হয়, কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে মানুষ কখনোই দলগতভাবে সুখী হতে পারে না! বিশেষ কোনো ঘটনায় দলগতভাবে নিজের ব্যক্তিগত সুখগুলোকে একপাশে সরিয়ে রেখে আমরা দুঃখকে সাময়িকভাবে বরণ করে নিতে পারলেও বিশেষ কোনো ঘটনায় দলগতভাবে নিজের ব্যক্তিগত দুঃখগুলোকে একপাশে সরিয়ে রেখে আমরা সুখকে সাময়িকভাবে বরণ করে নিতে পারি না।
০৬ এপ্রিল, ২০২২
# মানুষ জেগে থাকা প্রতিটা মুহূর্তে কারো না কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়। এটা হতে পারে পরিচিত কারো দ্বারা অথবা একদম অপরিচিত কারো দ্বারা অথবা কোনো বস্তু দ্বারাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পত্রিকা, টিভি কমার্শিয়ালস, পাশের ডেস্কে বসা সহকর্মীর কোনো কথা, এমনকি রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় অপরিচিত মানুষজনের কথোপকথনও আমাদের প্রভাবিত করতে পারে দারুণভাবে! মজার বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ সময় আমরা বুঝতে পারি না মনের অজান্তে কখন আমরা প্রভাবিত হয়ে বসে আছি!
১৯৫৭ সালে পোলিশ-আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী সলোমন এলিয়ট অ্যাশ এ বিষয়ে একটা পরীক্ষা পরিচালনা করেন। দীর্ঘ সে পরীক্ষার মূল বিষয়ের সাথে সাদৃশ্য রেখে একটু গল্প করা যাক!
ধরো একটা কক্ষে ১০০ জন মানুষ রয়েছে। সবাইকে বলা হলো তাদের একটা পরীক্ষা নেয়া হবে। এই ১০০ জনের মাঝে ৭০ জন আগে থেকেই জানে কি ঘটতে যাচ্ছে, অর্থাৎ এই ৭০ জন মানুষ পরীক্ষক যেভাবে ঘটনাপ্রবাহ সাজিয়েছেন ঠিক সেভাবে কাজ করে যাবে, সেটা সঠিক বা ভুল যা ই হোক না কেন, তারা সেটাকে সঠিক বলবে। অবশিষ্ট ৩০ জন আগে থেকে কিছুই জানে না! তাদের প্রথমে কিছু ছবি দেখতে দিয়ে জানতে চাওয়া হলো এটা কিসের ছবি? সবাই একই উত্তর দিলো। এক্ষেত্রে সবাই আসলে সঠিক উত্তর দিয়েছে। পরবর্তীতে আরো কিছু ছবি দেখানো হলে ৭০ জন ভুল উত্তরটাকেই সঠিক হিসেবে দিলো। এতজনের একই উত্তর শুনে বাকি ৩০ জন দ্বিধায় পড়ে গেলো! তাদের কি ভুল হয়েছে! দেখা গেলো ৩০ জনের অনেকেই নিশ্চিতভাবে জেনেও ৭০ জনের মতো ভুল উত্তরটাকেই সঠিক হিসেবে উপস্থাপন করলো! পরবর্তীতে তাদের এমন আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে জানা গেলো, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যা বলেছে তার বিপরীতে কিছু বলে উপহাসের পাত্র হতে না চাওয়াই এর মূল কারণ! এখানে ঘটনাটা অন্য রকম ঘটতো, যদি ৭০ জনের গ্রুপটা আরো ছোট হতো, ২০/৩০ জনের।
মানুষের একটা বিশ্রী স্বভাব হচ্ছে, একজন মানুষ অন্য আরেকজন মানুষকে প্রভাবিত করতে (সেটা যে কোনো ভাবেই হতে পারে) খুব পছন্দ করলেও নিজে অন্য করো দ্বারা প্রভাবিত হতে একদম পছন্দ করে না (যখন প্রভাবিত হওয়ার বিষয়টা অনুধাবন করতে পারে)।
আচ্ছা, এতক্ষণ আমার লেখা পড়ে তুমি কি একটুও প্রভাবিত হয়েছ? প্রভাবিত হয়ে থাকলে সেটা কিসের প্রভাব বলতে পারো? আমার মনে হয় বিষয়টা এমন: এখন থেকে তুমি কারো সাথে কথা বলতে গেলে মনে হবে- 'সে কি আমাকে প্রভাবিত করছে!' আরেকটা বিষয়ও তোমার সাথে ঘটবে আমি নিশ্চিত, অনেক মানুষের মাঝেও নিজের মতামত প্রভাববিহীনভাবে বলতে শিখে যাবে!
০৭ এপ্রিল, ২০২২
# আচ্ছা, পুনরুত্থান আর পুনর্জন্ম কোথাও কি এক হয়ে মিশেছে? বলতে পারো?
আচ্ছা, ঘাসফড়িং এর কি পুনর্জন্ম হয়?
আচ্ছা, ঝরে পড়া বকুল ফুল দেখতে কতটা সুন্দর হয় কখনো লক্ষ্য করেছ?
আচ্ছা এতো কিছু না ভেবে একটা কবিতায় ডুব দাও ........
ঘাসফড়িং এর পুনর্জন্ম
আমরা কোথাও যাইনি, তুমি-আমি কেউ না!
তবু আমরা একে অপরকে দেখি না, অনেকদিন!
আমার অনেক ইচ্ছের মত তোমাকে দেখার ইচ্ছাকে
আমি চেপে রাখি খুব সন্তর্পনে! খুব যত্ন করে!
তোমার চলার পথে অসময়ের বকুল ফুলের মত
আমি ঝরে পড়ি মাঝে মাঝে, অসময়ের বলে
তুমি আমায় দেখেও দেখো না। আবার যখন
পুনর্জন্ম হবে আমার, আমি সময়ের বকুল ফুল
হয়ে ঝরে পড়বো ঠিক ঠিক, একটু সময় করে
আমায় তুলে নিয়ে মাথায় গুঁজে নিবে তো?
পরের জন্মে আমি না হয় ঘাসফড়িং হবো,
ছোট্ট ডানায় ভর করে স্বপ্ন নিয়ে উড়বো!
আচ্ছা, আমার কি পুনর্জন্ম হবে! বলতে পারো?
০৮ এপ্রিল, ২০২২
# তোমার স্কুলের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে স্কুলের এক প্রাক্তন বড় ভাই (কোনো এক বহুজাতিক কোম্পানির কান্ট্রি হেড) দু'টো গেমের আয়োজন করলেন। প্রথম গেমে প্রাইজমানি হিসেবে ১০ কোটি টাকা জেতার সুযোগ আর দ্বিতীয় গেমে ১০ লক্ষ টাকা জেতার সুযোগ আছে! তবে গেমে অংশগ্রহণের দু'টো শর্ত আছে, (১) প্রথম গেমে প্রাইজমানি জেতার সম্ভাবনা ০.০০০০০০০১% আর দ্বিতীয় গেমে জেতার সম্ভাবনা ০.০০০০১%, (২) দু'টোর মধ্যে যেকোনো একটি গেমে অংশ নেয়া যাবে।
তুমি কোন গেমটা খেলবে? মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কমবেশী ৯৫% মানুষ প্রথম গেমটি খেলতে চাইবে, যদিও সেক্ষেত্রে জয়ী হবার সম্ভাবনা দ্বিতীয় গেমের তুলনায় অনেক অনেক কম। এক্ষেত্রে মানুষের মাথায় সম্ভাব্যতার কোনো সূত্র কাজ করে না, যেটা কাজ করে সেটা হলো ভাগ্যে থাকলে বেশীটাই পাবো, না পেলে একটাও না!
আরেকটা মজার এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কে বলি আজ। দু'টো কক্ষে সমান সমান ১০০ জন মানুষকে রাখা হলো। কক্ষগুলোতে বিশেষ এক ধরণের সেন্সর বসানো আছে যা মানুষের মেন্টাল স্ট্রেস বা মানসিক চাপ পরিমাপ করতে পারে। এখন দুটো কক্ষেই ঘোষণা করা হলো প্রত্যেক কক্ষ থেকে দৈবচয়নে ২০ জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হবে! দেখা গেলো উভয় কক্ষের মানুষদের মেন্টাল স্ট্রেস অস্বাভাবিক বেড়ে গেলো। ধরে নিলাম প্রথম কক্ষের মানুষদের গড় স্ট্রেস ৭০ একক, দ্বিতীয় কক্ষের মানুষদের স্ট্রেসও একই, ৭০ একক। কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় কক্ষে পুনরায় ঘোষণা করা হলো ২০ জন নয়, ১০ জন মানুষকে হত্যা করা হবে। আশ্চর্যের বিষয় দ্বিতীয় কক্ষের মানুষদের গড় স্ট্রেস এখনো ৭০ এককই আছে, বিন্দুমাত্র কমেনি! এভাবে কমাতে কমাতে সংখ্যাটা পর্যায়ক্রমে ৫, ৩, ১ করা হলেও গড় স্ট্রেসের কোনো তারতম্য লক্ষ্য করা গেলো না! শেষমেশ দ্বিতীয় কক্ষে ঘোষণা করা হলো দ্বিতীয় কক্ষের কোনো মানুষকেই হত্যা করা হবে না! মজার বিষয় হলো সাথে সাথে সে কক্ষের মানুষের মেন্টাল স্ট্রেস ২০ এককে নেমে আসলো!
মানুষ যে কোনো বিষয়ে বিষয়টার প্রত্যাশিত মাত্রার উপর নির্ভর করলেও কোনো এক অদ্ভুত কারণে বিষয়টার সম্ভাব্যতার উপর নির্ভর করে না। সম্ভাব্যতার কি এক নিদারুণ অবহেলা, কি দারুণ অপচয়!
আগামী রমজানে #হজপজ_Hodgepodge লেখার সম্ভাব্যতা শূন্য (০)! সম্ভাব্যতার কি অভিনিবেশিত প্রয়োগ!
০৯ এপ্রিল, ২০২২
# তুমি ঠিক করলে আজ থেকে ঠিক ৬ মাস পর তুমি এমন একজন হবে শেয়ার বাজার সম্পর্কে যার প্রত্যেকটা ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হয়! এবং আক্ষরিক অর্থেই তোমার প্রতিটি ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হবে!!! তোমাকে ধরা হবে 'শেয়ার বাজারের দেবতা'!
এমনটা করতে হলে তোমার কাজ শুরু করতে হবে আজই। প্রথমেই সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটের সাথে জড়িত এমন এক লক্ষ মানুষের ই-মেইল এড্রেস বা মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতে হবে। সংখ্যাটা এক লক্ষের চেয়ে বেশী হলে আরো ভালো।
এবার এই এক লক্ষ মানুষের মাঝে ৫০,০০০ জনকে একটা নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ার সম্পর্কে এই মেসেজ দিবে যে আগামী মাসে এর মূল্য বৃদ্ধি পাবে, বাকি ৫০,০০০ জনকে মেসেজ দিবে যে আগামী মাসে এর মূল্য হ্রাস পাবে! প্রথম মাস শেষে যে কোনো একটা গ্রপের কাছে তোমার ভবিষ্যৎবাণী সত্য বলে প্রমাণিত হবে। এবার যে গ্রুপটার কাছে তোমার ভবিষ্যৎবাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছে সে ৫০,০০০ জনের গ্রুপটাকে দুই ভাগে ভাগ করে একইভাবে মেসেজ পাঠাবে। দেখা যাবে দ্বিতীয় মাস শেষে ২৫,০০০ জনের একটা গ্রুপের কাছে আবার তোমার ভবিষ্যৎবাণী সত্য বলে প্রমাণিত হবে! এই ২৫,০০০ জনের কাছে তোমার প্রথম ভবিষ্যৎবাণীও কিন্তু সত্য প্রমাণিত হয়েছিলো। এভাবে ৬ মাস মেসেজ দিতে থাকো। ৬ মাস পর ১৫০০+ মানুষের একটা গ্রুপ থাকবে যাদের প্রত্যেকের কাছে তোমার প্রতিটা ভবিষ্যৎবাণী সত্য, যাদের প্রত্যেকের কাছে তুমি একজন 'শেয়ার বাজারের দেবতা'!
মানুষের একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য কি জানো? এক জীবনে মানুষ তার পছন্দের মানুষের আসনে যতো জনকে বসায়, দেবতার আসনে বসায় তার চেয়ে অনেক বেশি জনকে!
১০ এপ্রিল, ২০২২
# আজকে হজপজ_Hodgepodge এর ১০০ তম পর্ব! ১, ২, ৩ করতে করতে ১০০! আজকের লেখাটা একটু অন্যরকম। লেখার একদম শেষে সেটা বলবো।
একজন গড়পড়তা মানুষ, যার ভালোত্ব বা মন্দত্ব সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না, যে হয়তো গভীর রাতে চাঁদের আলোয় একা একা হেঁটে বেড়াতে পছন্দ করে, অনেকটা পৌরাণিক গল্পের কোনো চরিত্রের মতো, তার একঘেয়েমী লাগা দূর করার জন্য ঠিক করলো অ্যালিসের ওয়ান্ডারল্যান্ড থেকে ঘুরে আসবে। সাথে থাকবে তার পোষা বিড়ালটা।
এখানে আকাশে রোদ বৃষ্টি একসাথে খেলা করে, বয়স বাড়ার পরিবর্তে কমতে থাকে, বুঝতে পারা যায় সবগুলো রঙের শেড। ভেবোনা এসব আমার বই পড়ার সাইড ইফেক্ট! শপথ করে বলছি।
অবচেতন মনে হোক বা সচেতন ভাবে হোক, সবার মতো আমার বলা কথারাও তিন রকম- সত্য, মিথ্যা, আর সাধারণ কথা। টেটসুয়া নামের সেই আর্চারের মতো বা নাইজেল টমের মতো বা খলিলুল্লাহর মতো বা খুব বেশি হলে কাজিদার মতো তোমার সবচেয়ে পছন্দের ফুলটা নিয়ে আমি আসবো কোনো এক স্টারি নাইটে!
কোত্থেকে জানি একটা মশা এসে হাতে একটা কামড় বসালো! আমার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণটা একদম ঠিকঠাক আছে কি না সেটাই কি মশাটা পরখ করে দেখলো! মশাটা কি জানে না, রাতটা ঘুমানোর জন্য!
বন্ধ চোখে সকালটা শুরু করলাম, সঙ্গপ্রিয় আমার নিঃসঙ্গ সকাল! ভবিষ্যত পৃথিবীর জন্য এই নিঃসঙ্গতা একটা বড় হুমকি। আমি ঠিক নিঃসঙ্গ নই, ফার্বি নামের সাজাপ্রাপ্ত রোবটটি আমার খুব কাছেই আছে, ঘুমন্ত ফার্বি! নিজের পরনের পায়জামার দিকে নজর পড়তেই জন বয়েনের কথা মনে পড়ে গেলো, দ্য বয় ইন দা স্ট্রাইপড পাজামাস! আমার পরনের পায়জামাটা ঠিক যেন সে গল্পের মতো! আমি কি বলতে পারি, আমি সুন্দরভাবে বেঁচে আছি? না কি বিবর্ণ সময়ের মতো চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে ভবিষ্যত থেকে একটা শর্ট ট্রিপ দিয়ে আসবো! শূন্য দুই, শূন্য দুই বলে খুব সহজে চলে এলাম, ভবিষ্যতে! সময়টা এখন রাত ৩:০০ টা! বলতে গেলে ভবিষ্যতে আসতে কোনো সময়ই লাগে নি! হঠাৎ মনে হলো কোথাও কেউ কাদঁছে, না, এটা বোধহয় হাসির শব্দ!
হেঁটে হেঁটে বারান্দায় গেলাম, আকাশে এক ঝাঁক পাখি উড়ছে, পাখি নিয়ে সালিম আলীর একটা বই পড়েছিলাম, নামটা মনে পড়ছে না, আজকাল অতীতের অনেক কিছুই মনে পড়ে না, অতীতের নিজেকেও না! হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ গেলো, সময়টা ৩:১০। আচ্ছা ঘড়িতে তো কোনো অ্যালার্ম দেয়া ছিলো না! তবুও কেনো আমি ঘড়িটা দেখলাম? সময়ের অসীমতা আমাকে প্রায়শই বিমোহিত করে। সময় নিয়ে ভাবলে কেনো জানি নিজেকে সুখী সুখী মনে হয়। তাই ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন আমি সময় দেখি! সত্যি বলছি।
এই যে এতো কিছু লিখলাম, খুব কি ভেবে লিখলাম? না বোধহয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে নিজেকে অনেকটা বৃক্ষ বৃক্ষ মনে হতে থাকলো। কতটা সময় গেলো? ৫০ মিনিট! হঠাৎ খুব চা খেতে ইচ্ছে করছে, খুব! আরো ২ মিনিট চলে গেলো। ৫২ মিনিট ধরে বারান্দায়। নিজের পরনের পায়জামাটায় আবার চোখ পড়লো, এটাকে এখন জেব্রার মতো মনে হচ্ছে, সাদা কালো ডোরা কাটা। প্যারিডোলিয়ায় আক্রান্ত হলাম না কি বুঝতে পারছি না। যাই হোক, এসব ভেবে এই আপাত স্পেশাল মোমেন্টটাকে নষ্ট করার কোনো অর্থ হয় না, দিনশেষে সবটাই আমার নিজের জন্য! যদিও যে পথে সবাই হাঁটে আমিও সেই পথেই হাঁটি, এটা আমার মনগড়া কথা না, বাস্তবিকই সত্যি।
আমাকে কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে, যতো ক্লান্তিই আসুক না কেনো! আমার তৈরি করা নিয়মগুলো বেশ কঠিন, নিজেরই মানতে কষ্ট হয়! ৪৮ ঘণ্টায় এক দিন হলে বোধহয় নিয়মগুলো আরেকটু সহজে মানতে পারতাম। Consequences! সবটাই Consequences!
হঠাৎ আমার সেই জাদুকরের কথাটা মনে পড়লো, যে আমাকে দেখেই আমার সব সাফল্য-ব্যর্থতাদের কথা এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলেছিলো। আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম।
বারান্দায় হাঁটা থামিয়ে আকাশের দিকে দেখলাম, ৩৩ বছরের এই আমাকে আকাশের তুলনায় কতো ছোট দেখায়! ধুর! কিসব ভাবছি! এখন আমার বারান্দা থেকে ঘরে যাওয়া উচিত। ঘড়ির দিকে তাকালাম, ঘণ্টার কাটায় এখন আর ৩ সংখ্যাটা নেই। মুখ থেকে আপনা আপনি একটা দুঃখের ধ্বনি বের হলো। সময় চলে যাচ্ছে। ছেলেমানুষী করে সময়গুলো নষ্ট করছি! বারান্দা থেকে আসার পর দু'চোখ ভেঙে ঘুম আসছে। মনে হচ্ছে কেউ আমায় শিখিয়ে দিয়েছে, ঘরে আসলেই চোখ বুঝতে হবে, ঘরে আসলেই ঘুমিয়ে পড়তে হবে।
আচ্ছা, এসব কিছু কি বাস্তবে ঘটছে? আমি কি আমার জীবনের রিস্টার্ট বাটনে চাপ দিয়েছি! নাকি আমি কল্পনায় আছি? কল্পনায় যা দেখতে চাইছি তাই দেখছি! অনেকটা ঘুমের মাঝে দেখা কিছু কিছু স্বপ্নের মতো, একদম বাস্তব! আমার চোখ আবার আমার পরনের পায়জামার দিকে গেলো, পা দু'টোকে হাতির পা এর মতো মনে হচ্ছে! কেভিন সিমলার ও রবিন হ্যানসন এর 'এলিফ্যান্ট ইন দি ব্রেইন' বইটার নামটা পাল্টে ' দি এলিফ্যান্ট লেগ ইন দি ব্রেইন' রাখলে এখনকার অবস্থার সাথে একদম মিলে যেতো! কিন্তু এ ভাবনাটা আগে আসেনি বলে লেখকদের বলা হয়নি, হয়নি বলা কুসংস্কারের বিড়ালের কথাও!
আচ্ছা, কল্পনা করার জন্য সময়টা কি আসলেই অসীম? এটা ভেবে হঠাৎ আমার অমনোযোগী মন মনোযোগী হয়ে উঠলো। আমি কি মনোযোগী ভাবে আমার নিজের ভাবনাগুলো কিছু অমনোযোগী মানুষের ভাবনায় স্থানান্তর করছি! হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি বোধ করলাম, এটা কি আমাকে নিয়ে আমার মস্তিষ্কের খেলা, না কি সত্যিই ঝাঁকুনি খেলাম! এতো অপশনে না গিয়ে ধরে নেই সত্যি ঝাঁকুনি খেয়েছি, কারণ এখনো ঝাঁকুনি ভাবটা আছে। আস্তে আস্তে বিষয়টার সাথে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছি।
সবার মতো আমার মৃত্যুও অনিবার্য, তারপরও যদি জীবনে একটা শেষ সুযোগ আসে, আমি চাইবো বেঁচে থাকতে, আরো অনেক অনেকটা দিন! এমন চাওয়া একটা সমস্যার সৃষ্টি করে, যার সুন্দর কোনো সমাধানও নেই।
এখনো সকাল হয়নি, রাতের অন্ধকার এখনো আকাশ থেকে মিশে যায় নি। একটু ঘুমিয়ে নেই, হয়তো সূর্য উঠার আগেই আবার জেগে উঠবো! এই মুহূর্তে আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হলো ঘুম, প্রকৃতি তার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এখন কাউকে নিশ্চয়ই জাগিয়ে তুলবে! বিছানার পাশে দু'টো বক্স রাখা। বক্স দু'টো কিসের জানো? জাদুর বক্স! ভারসাম্য রক্ষাকারী বক্স! বক্স দু'টি আমি তৈরি করেছি, একদম শূন্য থেকে! তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে, জাদুর বক্স দু'টি আমাকে প্রভাবিত করতে শুরু করেছে। আচ্ছা, এখন যে ঘুমিয়ে যাচ্ছি, আমার ঘুমটা কি আর ভাঙবে? না কি আমার পুনর্জন্ম হবে? ঘাসফড়িং হয়ে! অথবা দেবতা হয়ে!
*** উপরের সম্পূর্ণ লেখাটা হজপজ_Hodgepodge সিরিজের ১ থেকে ৯৯ তম পর্বের লেখাগুলো থেকে ছোট ছোট লাইন নিয়ে লেখা হয়েছে। কত অদ্ভুত সব বিষয় নিয়ে যে লিখেছি! আজকের লিখাটাও অদ্ভুত!
১১ এপ্রিল, ২০২২
# বাংলাদেশ পুলিশের এক সমীক্ষা অনুসারে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ২,২১১ জন মানুষ মারা যায়! ২০২১ সালের একই সময়ে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩,০৯৫ জনে! মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪০% ! বিষয়টা বেশ উদ্বেগজনক।
মানুষের একটা বৈশিষ্ট্য হলো কোনো একটা বিষয় দ্বিগুণ বা তিনগুণ বৃদ্ধি বললে যতটা সহজে বুঝতে পারে, শতকরা হিসেবে বললে বিষয়টার বৃদ্ধি সম্পর্কে ঠিক ঠিকভাবে কল্পনায় আনতে পারে না। তাই মৃত্যুর হারের এই ৪০% বৃদ্ধিতে আমাদের খুব কম মানুষই উদ্বিগ্ন হয়।
লগারিদমে 'Rule of 70' বলে একটা বিষয় আছে। সহজভাবে বললে, কোনো একটি চলকের বৃদ্ধির হার যদি ধ্রুব হয়, ধরো, x%, তবে চলকটি প্রতি 70÷x বছরে দ্বিগুণ হবে। এটাই Rule of 70।
এখন আবার সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টায় ফিরে আসি। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি বছর ৪০% হারে বৃদ্ধি পেলে প্রতি ৭০÷৪০ = ১.৭৫ বছরে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে! কি ভয়াবহ অবস্থা! (আমি এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বলেছি, সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা আরো অনেক বেশি!)
আচ্ছা, বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় এতো এত জ্যাম! এটা কি সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা হ্রাসের জন্য প্রকৃতির নিজস্ব ব্যবস্থা! বাংলাদেশী মানুষ কিন্তু গতি পেলেই জীবনের অপচয় ঘটায়!
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একইভাবে ভেবে দেখা যাক। বিষয়টার সাথে আমরা কম বেশী পরিচিত, মুদ্রাস্ফীতি। বাংলাদেশের বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির হার ৬.১৭%। ধরে নিলাম, পরবর্তী বছরগুলোতে এটা অনেকটা ৬% এর আশেপাশে থাকবে (যদিও এটা অনেকটা অসম্ভব)। তাহলে ৭০÷৬ = ১১.৬৭ বছর পর আজকের ১০০ টাকার মূল্য কমে ৫০ টাকা হয়ে যাবে! এক যুগেরও কম সময়!
আচ্ছা, মুদ্রাস্ফীতির হার যদি নেগেটিভ হতো, তাহলে কি খুব ভালো হতো! একটা নির্দিষ্ট সময়ে ১০০ টাকার মূল্য বেড়ে ২০০ টাকা হয়ে যেতো! যদিও মনে হচ্ছে বিষয়টা তো অসাধারণ হতো, কিন্তু বাস্তবিকভাবে বিষয়টা বেশ খারাপই হতো। নেগেটিভ মুদ্রাস্ফীতি তখনই ঘটে যখন অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়ে! সর্বশেষ ১৯৩০ সাথে আমেরিকায় এবং ১৯৯০ সালে জাপানে নেগেটিভ মুদ্রাস্ফীতি দেখা গিয়েছিলো।
তুমি যখন দেখবে একই পরিমাণ টাকা দিয়ে তুমি আগের চেয়ে বেশী পণ্য কিনতে পারছো, অর্থাৎ তোমার ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তার অর্থ এই নয় যে অর্থনীতি বেশ ভালো পর্যায়ে আছে, তার অর্থ হলো পণ্য বিক্রেতার উৎপাদন অনেক বেশী, সে তুলনায় ক্রেতার পরিমাণ বেশ কম, নগদ টাকাও সবার কাছে খুব একটা নেই!
অনেক পেচানো? তাই না!
১২ এপ্রিল, ২০২২
# খুব গরম পড়েছে। এর মাঝে তোমার বাসার এসিটা নষ্ট হয়ে গেছে। এসি সার্ভিসিং এর জন্য তুমি অনলাইন মার্কেটপ্লেস "ন ঠকাই" -এ একটা জব পোস্ট করলে, সাথে ঠিক করে দিলে কাজটার জন্য তুমি সর্বোচ্চ কতো টাকা অফার করতে চাও। ধরে নেই, তুমি কাজটার জন্য সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকা অফার করেছ। ৩০ মিনিটের মধ্যেই ৫০ এর অধিক আগ্রহী প্রার্থী তোমার পোস্ট করা জবের জন্য আবেদন করলো। সবচেয়ে কম দামে (৬০০ টাকায়) যে প্রার্থী সার্ভিসটা অফার করলো তুমি তাকে কাজটা দিতে খুব দ্বিধা বোধ করছো! শেষ পর্যন্ত তুমি তাকে কাজটা দিলে না, কাজটা দিলে এমন একজন প্রার্থীকে যে কাজটার জন্য ১,৫০০ টাকা দাম হাকিয়েছে! কিন্তু তুমি এমনটা কেন করেছো বলতে পারো?
আমাদের, মানুষদের অদ্ভুত সব অভ্যাসের মধ্যে একটি হলো, আমরা খুব সস্তায় কোনো কিছু পেলে তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি! আমাদের মনে হতে থাকে, আমাকে ঠকাচ্ছে না তো! আমরা কোনো একটা পণ্যের মূল্য যে পরিমাণ অনুমান করি, মোটামুটি তার থেকে ২০% কম মূল্যে পণ্যটা কিনতে পারলে মনে করি ঠিকঠাক আছে। এর কমে কিনলেই এক ধরণের খুঁত খুঁত ভাব কাজ করে আমাদের মাঝে! বেশ অদ্ভুত না? এই ২০% কমের ধারণাটা দিয়েছেন কে জানো? বিশিষ্ট ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট।
আরেকটা মজার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক। ধরে নাও, তুমি হারতে একদমই পছন্দ করো না। তুমি একটা বেশ অদ্ভুত নিলামে অংশগ্রহণ করলে। একটি ১,০০০ টাকার সাধারণ কাগজের নোট নিলামে তোলা হয়েছে, নিলামের ভিত্তি মূল্য ধরা হয়েছে ১০ টাকা। বেশ লোভনীয় না? যথারীতি নিলাম শুরু হলো, তোমার মতো আরো অনেকেই ১,০০০ টাকার কাগজের নোটটি পেতে আগ্রহী। নিলামের এক পর্যায়ে নোটটির মূল্য ৯৯৯ টাকায় পৌঁছালো। এই মূল্যেও যদি কিনতে পারো, তাহলেও ১ টাকা প্রফিটে থাকতে পারো তুমি। কিন্তু একজন দাম হাকিয়ে বসলো ১,০০০ টাকা! এখন তোমার ভেতরের জয়ী সত্ত্বা তোমাকে খুব চাপ দিবে নিলামটা জয়ী হবার জন্য, এতে করে তোমার যদি লসও হয়, তারপরও! তুমি কি ১,০০১ টাকা দাম হাকাবে? অবশ্যই হাকাবে! হাকাবে আরো কিছুটা বেশি পর্যন্ত, ১,১০০ বা ১,২০০ পর্যন্ত! বিষয়টা অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটাই ঘটবে!
মানুষের জয়ী হবার লোভ বড্ড ভয়াবহ। তার চেয়ে ভয়াবহ হলো অযোগ্যের জয়লাভ!
১৩ এপ্রিল, ২০২২
# গতকাল ফেসবুক কোথাও একটা চমৎকার পোস্ট দেখেছিলাম। পোস্টটির বিষয়বস্তু ছিলো "পুরাতন জুতার দোকান"। ঢাকার গুলিস্তানের ফুটপাতে অনেক পুরাতন জুতার বা চোরাই জুতার দোকান আছে। এসব দোকানে নানান বয়সের, নানান ধরণের দেশী বিদেশী জুতা পাওয়া গেলেও একটা বিষয় মনে হয় কেউ সেভাবে লক্ষ্য করে না। বিষয়টা হলো, ছেলেদের পুরাতন জুতার দোকানে থাকলেও মেয়েদের পুরাতন জুতার দোকান কিন্তু নেই! বিষয়টা আপাত দৃষ্টিতে অদ্ভুত মনে হলেও সার্বিক বিবেচনায় বিষয়টা খুব স্বাভাবিক। চোরাই জুতার অধিকাংশের যোগান আসে মসজিদে চুরি যাওয়া জুতা থেকে। বাংলাদেশে খুব কম সংখ্যক মসজিদে মেয়েদের নামাজের ব্যবস্থা আছে, সংখ্যাটা এতটাই কম যে শতাংশের হিসাবে সেটা ১% এরও অনেক কম! তাই মেয়েদের জুতা চোরাই বাজারে তেমন একটা পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক।
এছাড়া, সমাজে অধিকাংশ পুরুষ মানুষ তার নিজের জন্য পুরাতন জিনিস কিনলেও তার মা, বোন, স্ত্রী বা সন্তানের জন্য পুরাতন জিনিস কিনতে চায় না। সব ছেলেই তার মা কে, সব ভাই-ই তার বোনকে, সব স্বামীই তার স্ত্রীকে বা সব বাবাই তার সন্তানকে নতুন কিছু উপহার দিয়ে তাদের হাসি মুখটা দেখতে চায়।
১৪ এপ্রিল, ২০২২
# সোমবার। সকাল ৮:৪৫। শোভন লোকাল বাসে করে মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজার আসছিলো। সৌভাগ্যক্রমে শোভন বাসের সামনের দিকের একটা সিটে বসতে পেরেছিলো। আস্তে আস্তে অসংখ্য মানুষে বাস ভর্তি হয়ে গেলো। সারাটা রাস্তায় শোভন চোখ বন্ধ করে বসে ছিলো। একটি বারের জন্যও চোখ খুললো না!
ফার্মগেটের কাছাকাছি আসতেই বাসের হেলপার শোভনকে ডাকতে লাগলো, 'স্যার আর ঘুমাইয়েন না, চইলা আসছি কারওয়ান বাজার'। শোভন চোখ খুলে বললো, 'কে বললো আমি ঘুমিয়েছি! আমি তো জেগেই আছি!'
বাসের হেলপার অবাক হলেও কিছু বললো না। শোভন কারওয়ান বাজারে বাস থেকে নেমে তার অফিসে চলে গেলো।
আচ্ছা, বলতে পারো শোভন কেন বাসের মধ্যে চোখ বন্ধ করে ছিলো? বাসে বেশ কয়েকজন বয়স্ক মানুষ, মহিলা সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, বয়স্ক মানুষ, মহিলাদের বসে সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে শোভনের খুব খারাপ লাগে! তাই চোখ বন্ধ করে এই খারাপ লাগা থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা ছিলো মাত্র!
চোখ বন্ধ করে খারাপ লাগাদের থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব কঠিন কাজ। সময়ের সাথে সাথে এই কঠিন কাজটা অনেকেই সহজ করে ফেলেছে, এমনকি চোখ খোলা রেখেই খারাপ লাগাদের অনেক দূরে সরিয়ে রাখতে শিখেছে অনেকে!
শুভ নববর্ষ!
১৫ এপ্রিল, ২০২২
# চার বন্ধুকে ১ কোটি টাকার চারটি চেক দিয়ে সজল সাহেব বললেন, এই টাকাটা তোমাদের হতে পারে, কিন্তু শর্ত একটাই, এই চেকগুলো ঠিক ১ বছর পর এনক্যাশ করতে হবে। এর আগ পর্যন্ত যার যার চেক তাকেই সংরক্ষণ করতে হবে!
প্রথম বন্ধু। তার চেকটি সে একটি ব্যাংকের ভল্টে রাখলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ব্যাংকে ডাকাতি হলো, এবং অনেক কিছুর সাথে তার চেকটিও ডাকাতের কাছে চলে গেলো।
দ্বিতীয় বন্ধু। তার চেকটি সে তার আরেক ঘনিষ্ট বন্ধুর কাছে রেখেছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বন্ধুটি বিশ্বাসঘাতক হিসেবে আবির্ভূত হলো।
তৃতীয় বন্ধু। তার চেকটি সে তার ঘরের কাঠের আলমারির এক কোণে একটা কাঠের বক্সে রেখেছিলো। ১ বছর পর সে দেখতে পেলো কাঠের বক্সটির ভেতর রাখা তার চেকটি ঘুনপোকারা খেয়ে ফেলেছে।
চতুর্থ বন্ধু। তার চেকটি সে ঠিক ঠিক ভাবে এনক্যাশ করতে পেরেছে! সে চেকটি কোথায় রেখেছিলো জানতে চাইলেন সজল সাহেব। তার সহজ সরল উত্তর, চেকটি সে রেখেছিলো তার ধর্মগ্রন্থের পাতার মাঝে! কেউ সেটি ধরেও দেখে না আজকাল, পরম যত্ন কিংবা অবহেলায় সেটি পড়ে আছে বুক শেলফের এক কোণে!
যার থাকার কথা পরম যত্নে, শত অবহেলায়ও সে ই ঠিকঠাক আমাদের যত্ন করে যাচ্ছে, সম্পূর্ণ নীরবে! একটা জড় বস্তু কিভাবে তোমার যত্ন নেয় বলতে পারো?
১৬ এপ্রিল, ২০২২
# দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকার সম্পাদক অফিসের সব সাংবাদিকের টেবিলে একটা নোটিশ লাগিয়ে দিলেন, "অ্যাকুরেসি! অ্যাকুরেসি! অ্যাকুরেসি! বি অ্যাকুরেট!"
ফিয়াজ সাংবাদিক হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছে অল্প কিছুদিন হলো। অফিসে এসে টেবিলে এই নোটিশ দেখে ফিয়াজ একটু চিন্তায় পড়ে গেলো। সব সংবাদেই কিছু না কিছু তথ্য অনুমান করেই লিখতে হয়। সে ঠিক করলো এখন থেকে অনুমানগুলো আরো বেশী অ্যাকুরেট করে করার চেষ্টা করবে!
কিছুদিন পর পত্রিকায় একটা সংবাদ প্রকাশিত হলো, শিরোনামটা এমনঃ "স্টেডিয়ামের ৩০ হাজার ১৯৯ টি চোখ আটকে ছিলো সাকিব আল হাসানের ব্যাটের দিকে!"
সংবাদটি সম্পাদকের চোখে পড়তেই ফিয়াজকে ডেকে পাঠালেন তিনি। ফিয়াজ হন্তদন্ত হয়ে সম্পাদকের কক্ষে আসলো। সম্পাদক সাহেব খুব বিরক্তি নিয়ে বললেন, "নির্বোধের মতো এমন একটা ভুল করার মানে কি? ৩০ হাজার ১৯৯ টা চোখ!"
"স্যার নির্বোধের মতো কেন হবে! আমি চেষ্টা করেছি সংবাদটা যেনো একটু বেশী অ্যাকুরেট হয়, স্টেডিয়ামে একজন দর্শকের একটা চোখ অন্ধ ছিলো!", ফিয়াজ ঝটপট উত্তর দিলো! উত্তর শুনে সম্পাদক সাহেবের মুখটা হা হয়ে গেলো!
বি অ্যাকুরেট, বি নির্বোধ!
১৭ এপ্রিল, ২০২২
# দশম শ্রেণীর বায়োলজি ক্লাস চলছে। মানবদেহের গঠনে শর্করা, আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাবারের গুরুত্ব স্যার খুব যত্ন সহকারে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। এই তিন ধরনের খাবার না খেলে বা বেশী খেলে আমাদের শরীরে কি কি অসুস্থতা দেখা দিতে পারে সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করলেন। কিছু কিছু অংশ বেশ কয়েকবার পুনরাবৃত্তিও করতে হয়েছে তাকে।
সাধারণত স্যার ক্লাসে যা পড়ান, ক্লাস শেষে তার উপর শিক্ষার্থীদের ছোট খাটো প্রশ্ন করেন। আজকেও করলেন। স্যার খুব সহজ একটা প্রশ্ন করলেন, "মানুষের শরীর সুস্থ রাখার জন্য তিনটি অপরিহার্য খাবারের নাম বলতে পারবে কে?"
পুরো ক্লাসে পিন পতন নীরবতা বিরাজ করছে, কেউ উত্তর দেয়ার জন্য হাত পর্যন্ত তুললো না! হঠাৎ এক শিক্ষার্থী হাত তুললো, স্যার তাকে কথা বলার অনুমতি দিলেন। "স্যার, মানুষের শরীর সুস্থ রাখার জন্য তিনটি অপরিহার্য খাবার হলোঃ ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার।", শিক্ষার্থীর সাবলীল উত্তর!
উত্তরটা শুনে স্যারের কেমন বোধ করা উচিত!!!
১৮ এপ্রিল, ২০২২
# ইকারাস তার ছেলে ইকাবুকাকে কয়েকদিন হলো সাঁতার শেখানো শুরু করেছে। ইকাবুকা বেশ চঞ্চল, কোনো কিছুতে সে খুব বেশীদিন আগ্রহ ধরে রাখতে পারে না। তাই তাকে সাঁতারের প্রতি আগ্রহী রাখতে ইকারাস প্রায়ই ইকাবুকাকে সাঁতার সম্পর্কে ছোট ছোট গল্প বলে থাকে।
সুইমিং পুলের পাশে বসে ইকারাস আজকে এমন একজন সাঁতারুর গল্প বলছিলো যিনি সকালের নাস্তা খাওয়ার আগেই কর্ণফুলী নদী তিনবার সাঁতরে পার হতেন!
গল্প শুনতে শুনতে ইকাবুকার চোখ দুষ্টুমিতে চিক চিক করতে থাকলো। আচ্ছা বাবা, "উনি কি সাধারণ কাপড় পড়ে সাঁতার কাটতেন?" - ইকাবুকা বললো।
"না, বাবা, উনি ওনার পরিধেয় কাপড় নদীর তীরে রেখে সুইমিং স্যুট পড়ে সাঁতার কাটতেন।" - ইকারাস উত্তর দিলো।
"তাহলে বাবা, উনি তিনবার নদী সাঁতরে পার না হয়ে চারবার পার হলে ভালো করতেন, কারণ ওনার পরিধেয় কাপড় তো নদীর ওপর পাড়ে রয়ে গেছে!" - বলেই ইকাবুকা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
১৯ এপ্রিল, ২০২২
# গেলো বছর সেপ্টেম্বরে সোহান সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়। অনেকটা মরতে মরতে বেঁচে গেলেও সোহানের বাম চোখটা সারাজীবনের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। সোহান যতবারই আয়নার সামনে দাঁড়ায়, ততবারই একটা চোখের অনুপস্থিতি তাকে মারাত্মক মনোকষ্টে ভোগায়। তার মনে হতে থেকে এর চেয়ে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেলেই মনে হয় ভালো হতো!
শেষ পর্যন্ত একটা কৃত্রিম প্রোসথেটিক চোখ লাগিয়ে নিলো সোহান। এখন আর আয়নায় তাকালে তার নিজের কাছে নিজেকে দেখতে অতটা খারাপ লাগে না! রাতে ঘুমানোর আগে সোহান খুব যত্ন করে চোখটা খুলে রাখে, কৃত্রিম প্রোসথেটিক চোখের তো আর বিশ্রামের প্রয়োজন নেই! এমনকি এই চোখতো ঘুমের মাঝে স্বপ্নও দেখতে পায় না!
আচ্ছা, এক চোখে দেখা স্বপ্নেরা কি দু'চোখে দেখা স্বপ্নের মতোই? হুম, একদম একই, এমনকি জীবনের কোনো এক পর্যায়ে দু'চোখ হারানো মানুষের স্বপ্নগুলোও একই রকম! সাদাকালো! তবে কারো করো স্বপ্ন একটা পর্যায়ে আর অতীতের গন্ডি ছাড়তে পারে না।
দূরে কোথাও মৃদু স্বরে গান বাজছে......
"এক জনে ছবি আঁকে এক মনে, ও মন
আরেক জনে বসে বসে রঙ মাখে, ও মন......."
সোহান নিজের একটা পোট্রেট আঁকতে বসেছে, পোট্রেটে পাশাপাশি দু'টো সোহান, একজনের দু'টো চোখই আছে কিন্তু গোমড়া মুখো! আরেকজনের বাম চোখটা নেই, হাস্যোজ্জ্বল!
কল্পনার জগৎটাকে হাস্যোজ্জ্বল না করে বাস্তব জগৎকে হাস্যোজ্জ্বল করতে পারে ক'জন!
২০ এপ্রিল, ২০২২
# পৃথিবীতে যত জায়ান্ট ব্যবসা আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে একটা কথা বেশ প্রযোজ্য- "যে কোনো ব্যবসায় প্রতিটি মুহূর্ত শুধুমাত্র একবার ঘটে।" পরবর্তী বিল গেটস কোনো অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করবেন না, পরবর্তী ল্যারি পেজ বা সের্গেই ব্রিন কোনো সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করবেন না, পরবর্তী মার্ক জুকারবার্গ কোনো সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করবেন না! কেউ যদি এমন কিছু তৈরি করে যা এদের করা কাজের অনুলিপি বা কিছুটা পরিবর্তিত রূপ, তবে সে আসলে তাদের কাছ থেকে কিছু শিখলোই না!
অবশ্য নতুন কিছু করার চেয়ে একটি মডেল অনুলিপি করা তুলনামূলক সহজ। প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যবসায়িক মডেল অনুসরণ করলে পৃথিবী আমাদের কাছ থেকে একই জিনিসের ২য়, ৩য় ........ N তম সংস্করণ পায়। কিন্তু যখনই আমরা নতুন কিছু তৈরি করি, তখন পৃথিবীকে আমরা একটা 0 থেকে 1 দেই! পৃথিবীকে অসংখ্য N দেয়ার চেয়ে একটা চমৎকার 0 থেকে 1 দেয়া অনেক কঠিন।
পিটার থিয়েল এর 'জিরো টু ওয়ান' বইয়ে এমন চমৎকার সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, আরেকদিন না হয় লিখবো সেসব নিয়ে!
শেষে একটা গল্প বলি। একজন বিখ্যাত শেফ দেশের সবচেয়ে বড় রেস্টুরেন্টে চাকরি পেলো। চাকরিতে যোগ দেয়ার পরদিন তার দেখা হলো তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে, যে পেশায় একজন ডাক্তার। তো ডাক্তার বন্ধু শেফকে জিজ্ঞেস করলো, "কেমন কাটলো তোর প্রথম দিন?" শেফ বন্ধু বললো, "আর বলিস না, কি যে হলো ঠিক বুঝলাম না, বেশ কিছু রান্না একদম যাচ্ছেতাই হয়েছে। খুব বাজে হলো ব্যাপারটা।" ডাক্তার বন্ধু বললো, "আরে এটা কোনো বিষয়ই না। আমি তো আমার প্রথম অপারেশনের রোগীটাকে বাঁচাতেই পারি নি!"
২১ এপ্রিল, ২০২২
# কিছু সময়ের জন্য মনে করো তোমার দেহের প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আলাদা করে একটা বিশাল টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে! তুমি দেখতে পাচ্ছো তোমার মস্তিষ্ক, তোমার হৃৎপিণ্ড, তোমার ফুসফুস, যকৃত, কিডনি, হাত, পা, তোমার চোখজোড়াও! চোখজোড়া টেবিলে রাখা হলেও তুমি সবকিছু দেখতে পাচ্ছো, কারণ জগৎটা তোমার ভাবনার!
তুমি কি তোমার হৃদস্পন্দন অনুভব করছো? তোমার দেহের বাহিরে তোমার হৃদপিণ্ডের কম্পন শুনে কি তোমার মনে হচ্ছে "এটা আমি!" না কি মনে হচ্ছে "এটা আমার হৃদপিন্ড।"
তুমি কি তোমার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস শুনতে পাচ্ছো! একটা নির্দিষ্ট গতিতে চলতে থাকা তোমার ফুসফুসদের দেখতে পাচ্ছো? তোমার কি মনে হচ্ছে "এটা আমি!" না কি মনে হচ্ছে "এটা আমার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস।"
তুমি তোমার যকৃত, কিডনি, হাত, পা, পাকস্থলী সবকিছুই দেখছো! তুমি তোমার যে অঙ্গটার দিকেই তাকাও না কেন তোমার কি মনে হচ্ছে "এটা আমি!" না কি মনে হচ্ছে "এটা একটা অঙ্গ মাত্র!" সর্বোচ্চ মনে হতে পারে, "এগুলো আমার অঙ্গ, আমার দেহের অংশ।"
সবগুলো অঙ্গ এক করে তোমার তোমাকে আবার আগের মতো পূর্ণাঙ্গ তুমি হিসেবে কল্পনা করতে পারো এখন। এবার ভাবো তো, তুমি তোমার তোমাকে অনুভব করো কোথায়? তোমার মস্তিষ্কে, তোমার হৃদপিণ্ডে! তুমি তোমার হাত বা পা বা পাকস্থলীতে তোমার তোমাকে অনুভব করো না!
মাঝে মাঝে আমরা আমাদের আমিত্বকে হারিয়ে আমাদের অনুভূতিদের কাছে নিজেদের সপে দেই। তখন আমাদের অবস্থা হয় একটা বিশাল টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো, অনুভূতিগুলো থাকে কিন্তু আমরা আর আমাদের মাঝে থাকি না!
এখন আরেকটা মজার বিষয় নিয়ে কথা বলি। আজকে ১১১ তম হজপজ_Hodgepodge! আজকের তারিখ ২১.০৪.২০২২। তারিখের প্রথম অংশ ২১০৪, দ্বিতীয় অংশ ২০২২ কে ১১১ দিয়ে ভাগ করলে একটা মজার বিষয় ঘটে!
২১০৪ ÷ ১১১ = ১৮.৯৫৪৯৫৪৯৫৪৯৫
২০২২ ÷ ১১১ = ১৮.২১৬২১৬২১৬২১
দশমিকের পরের অঙ্কগুলো আলাদা আলাদা করে যোগ করলে সবসময় ১১, ৬, ১০ সংখ্যা তিনটি আসতে থাকবে! ৯+২ = ১১, ৫+১ = ৬, ৪+৬ = ১০ ........
আবার লক্ষ্য করলে দেখবে, দুটি সংখ্যার দশমিকের পরই ৯৫৪ আর ২১৬ সংখ্যার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এখন ৯৫৪ আর ২১৬ কে ১১১ দিয়ে ভাগ করলে কি আসে দেখা যাক!
৯৫৪ ÷ ১১১ = ৮.৫৯৪৫৯৪৫৯৪৫৯৪
২১৬ ÷ ১১১ = ১.৯৪৫৯৪৫৯৪৫৯৪৫
উভয়ক্ষেত্রেই দশমিকের পর ৪, ৫ আর ৯ অঙ্ক তিনটি ছাড়া আর কিছু নেই! বেশ মজার না?
২২ এপ্রিল, ২০২২
# কয়েকদিন আগে কবরস্থানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আমাদের দেশের অধিকাংশ কবরস্থান সাধারণত রাস্তার পাশেই হয়। এর অবশ্য একটা ভালো দিক আছে, কবরস্থানের পাশ দিয়ে গেলে অনেক সময় আমাদের মনটা নরম হয়। আমাদের মনে হয় একদিন আমাদেরও যেতে হবে।
একটা কবরের দিকে চোখটা আটকে গেলো, মৃত্যু ১৯৩০ সাল! কত আগের! তার দেহের কিছুই এখন অবশিষ্ট থাকার কথা নয়, সম্ভ্রান্ত কেউ হবেন হয়তো, তাই কবরে এখনো নামের ফলকটা আছে। ১৯৩০ সালের যে দিনটায় তিনি মারা গিয়েছেন, সেদিন তার আত্মা তার দেহকে ছেড়ে গিয়েছিলো। আর ফিরে আসেনি! এই ইহলোকে আর আসবেও না!
আচ্ছা, আমাদের আত্মার কেন একটা দেহের প্রয়োজন পড়ে? যতটুকু মনে হয় আত্মার কোনো রং হয় না, থাকে না উচ্চতা, থাকে না মোটাত্ব কিংবা চিকনত্ব! আত্মা একটা শক্তি ছাড়া আর কিছু কি? আত্মার যদি দেহ না লাগতো তাহলে মানুষের সাথে মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যতা বা কদর্যতা নিয়ে তুলনা হতো না, প্রিয় কাউকে দেখে মানুষের হৃদকম্পন বেড়ে যেতো না, অপ্রিয় কাউকে দেখে বেড়ে যেতো না ব্লাড প্রেশার!
একটা দেহহীন আত্মা যদি পৃথিবীতে এসে আবার মরেও যেতো, দেহধারী মানুষ কি তাকে দেখতে পেতো বা মনে রাখতো? একটা মানুষ ওপর একজন মানুষের দেহ ত্যাগকারী আত্মাকে সময়ে সময়ে স্মরণ করলেও, যে আত্মা কোনোদিন দেহ ধারণ করেনি, তাকে কোনোদিন স্মরণ করে না! আসলে স্মরণ করার জন্য যে স্মৃতির প্রয়োজন, দেহহীন আত্মা সে স্মৃতিটুকু দিতে পারে না।
ওপর মানুষের স্মৃতিতে মানুষের বেঁচে থাকার ইচ্ছার কারণেই হয়তো একটা আত্মার একটা দেহ প্রয়োজন!
২৩ এপ্রিল, ২০২২
# ইকাবুকা তার মায়ের সাথে ঘরের টুকটাক বাজার করতে বাজারে গেলো। এটাই তার প্রথমবার মায়ের সাথে বাজারে যাওয়া। ইকাবুকার বেশ আনন্দ লাগছে বাজারে এসে, কতো রকম জিনিসপত্রে সাজানো সব দোকানপাট! অনেকগুলো দোকান ঘুরে ঘুরে ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার পর তারা ফলের মার্কেটে গেলো কিছু ফল কেনার জন্য।
আপেল, পেয়ারা, কমলা, আঙ্গুর, তরমুজ, নাশপাতিসহ আরো হরেক রকম ফলে মার্কেটের প্রত্যেকটা দোকান সুসজ্জিত। ইকাবুকা ফল খুব পছন্দ করে, তাই সে অবাক হয়ে দেখতে লাগলো চারদিক। এমন অনেক ফল আছে যেগুলো সে আগে কখনো দেখে নি!
একটা ফলের দোকানে গিয়ে ইকাবুকার মা কিছু আপেল আর কমলা কিনলো। দোকানদার বেশ বিনয়ী, ছোট্ট ইকাবুকার সাথে সে হাসিমুখে টুকটাক কথা বললো। হঠাৎ ইকাবুকার চোখ পড়লো আঙ্গুরের উপর! আঙ্গুর তার খুব পছন্দ, কিন্তু মা কেন জানি আঙ্গুর নেয় নি!
দোকানদার ইকাবুকার বিষয়টি লক্ষ্য করে তাকে বললো, "বাবু, কিছু আঙ্গুর নাও।" ইকাবুকা ইতস্তত বোধ করে না বোধক মাথা নাড়লো। দোকানদার আবার জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে বাবু? তোমার কি আঙ্গুর পছন্দ না?" ইকাবুকা এবার মৃদু স্বরে বললো, "জ্বী, আমি আঙ্গুর পছন্দ করি।" দোকানদার হাসিমুখে তার হাত দিয়ে বেশ কিছু আঙ্গুর তুলে নিয়ে ইকাবুকার হতে থাকা ছোট ব্যাগটায় পুরে দিলো। দোকানদার ছোট্ট ইকাবুকাকে স্নেহ করে আঙ্গুরগুলো দেওয়াতে তার মা বিষয়টাতে আর আপত্তি করলো না।
দোকান থেকে বের হয়ে ইকাবুকার মা তাকে জিজ্ঞেস করলো, "তোমাকে দোকানদার আঙ্কেল যখন আঙ্গুর নিতে বললো তখন নিলে না, কিন্তু যখন তোমার ব্যাগে কিছুটা আঙ্গুর দিলো তুমি সুন্দরভাবে নিলে! কেন এমন করলে?"
ইকাবুকা দুষ্টুমিতে ভরা মুচকি হেঁসে বললো, "কারণ দোকানদার আঙ্কেলের হাত আমার হাতের চেয়ে বড়।"
জীবনে আগ বাড়িয়ে নিজ কর্মের প্রতিদান না চাইলে অনেক সময় স্রষ্টা থেকে প্রাপ্ত প্রতিদানটা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বড় হয়!
২৪ এপ্রিল, ২০২২
# হায়মিন সুনিম এর 'Love for Imperfect Things' বইটিতে সব মিলিয়ে ৮ টি চমৎকার অধ্যায় আছে। প্রত্যেকটা অধ্যায় আবার ২ টি ভাগে বিভক্ত। সবগুলো অধ্যায় নিয়ে আমি এক একদিন টুকটাক আলোচনা করবো। আজকে আলোচনা করি প্রথম অধ্যায় 'Self-Care' এর প্রথম অংশ 'Don't Be Too Good' নিয়ে।
আমাদের মাঝে এমন অনেক শিশু আছে যারা "ভালো" হওয়ার জন্য প্রশংসিত হয়ে থাকে। তারা সবসময় তাদের বাবা-মা, শিক্ষক বা বয়স্ক আত্মীয়দের কাছে "ভালো" থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। যদিও মাঝে মাঝে এটা খুব কঠিন একটা পর্যায়ে চলে যায়।
এমন শিশুরা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখনও তারা অন্য মানুষদের খুশি করার জন্য, অন্য মানুষদের কাছে "ভালো" হওয়ার জন্য একটা মানসিক চাপ বোধ করে থাকে। তারা ক্রমাগত চেষ্টা করতে থাকে যেনো তারা কারো বিরক্তির কারণ না হয় বা তারা যেনো কারো উপর বোঝা না হয়।
এমন মানুষদের জীবনে কেউ যখন কোনো বিষয়কে কঠিন করে তোলে তখন তারা এটিকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে বা চেষ্টা করে সহ্য করার, কারণ তারা অভ্যাসগতভাবেই কাউকে এমন কিছু বলতে পারে না যেটায় কেউ আঘাত পায় বা অস্বস্তি বোধ করে।
বাস্তব জীবনে দেখা যায় এমন "ভালো" মানুষেরা জীবনে হতাশার শিকার হয়, কোনো কোনো বিষয়ে আতঙ্কিত হয়, আক্রান্ত হয় বিভিন্ন মানসিক সমস্যায়। কিন্তু কেনো এমনটা হয়, বলতে পারো?
আমরা যখন কাউকে "ভালো" বলি, খুব বেশি সম্ভাবনা থাকে যে সে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়ে আমাদের ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেয়! এমন "ভালো" মানুষেরা কেন এমন হয়? যেসব শিশুর বাবা খুব বেশি কতৃত্বপরায়ণ হয় বা মা হয় খুব দৃঢ়চেতা বা যেসব শিশু পরিবারের মেঝ সন্তান হয় (বড় বা ছোট ব্যতীত অন্য যে কোনো সন্তান), সচরাচর তারাই এমন "ভালো" হয়। তারা শিশু অবস্থায় তাদের অভিভাবকদের কাছে নিজেকে "ভালো" রাখার তাড়না বয়ে চলে আজীবন, যদিও নিজেকে ঠকিয়ে এমন "ভালো" থাকাটা যথেষ্ট কষ্টকর!
জীবনের সব পর্যায়ে সবার আগে নিজের প্রতি "ভালো" থাকতে হবে, তাহলেই কেবল পৃথিবীকে তুমি তোমার সবচেয়ে ভালোটা দিতে পারবে। নিজেকে ঠকিয়ে পৃথিবীকে ভালো রাখার পরিণাম ভালো কিছু হয় না, নিজের মানসিক চাপে রাখা ছাড়া।
২৫ এপ্রিল, ২০২২
# মানুষ বেঁচে থাকার জন্য সাধারণত সে জীবন বেছে নেয় না, যেভাবে সে সহজাতভাবে বাঁচতে চায়। মানুষ বেছে নেয় সে জীবন যেটাকে সে মন থেকে ভেবে নেয় স্বাভাবিক বা বেঁচে থাকার জন্য আদর্শ! তুমি সহজাতভাবে যে জীবন কাটাতে চাও সেটা আদর্শ না ও হতে পারে, হতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন! তাই বলে অস্বাভাবিক কি!
মানুষ সাধারণত বিশ্বাস করে, সে মন থেকে যা চায় কেবল তা অর্জন করার মাধ্যমেই তার জীবনকে সর্বোৎকৃষ্ট করে তুলতে পারবে। মানুষ আসলে কি চায়, কি করলে সে সুখী হবে সে বিষয়ে অনুমান করা বাস্তবিক জীবনে মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, অন্তত মানুষের মনস্তত্ত্ব তাই বলে। মানুষের মস্তিষ্ক তার জানা জিনিসের বাইরে খুব একটা অনুমান করতে পারে না, তাই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের চাওয়াগুলো হয় অতীত বা বর্তমান মিশ্রিত। আমাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা হয় অতীত বা বর্তমানের আদর্শ কোনো একটা অবস্থা মাত্র! তাই অনেক সময় আমাদের ভবিষ্যৎ ভাবনার সাথে যখন ভবিষ্যতের সেই সময়টায় কোনো তারতম্য ঘটে, আমরা ধরেই নেই আমরা ব্যর্থ! যদিও সেটা আমাদের কল্পনার চেয়ে উত্তম হোক না কেন!
আবার আমরা প্রায়শই ধরে নেই আমাদের সাফল্য ভবিষ্যতের কোনো একটা সময়ে লুকিয়ে আছে! আমরা ভাবতে পারি না আমাদের বর্তমানটাও আমাদের সাফল্যের সর্বোচ্চ হতে পারে! অনেক সফল লোকের জীবনের গ্রাফের দিকে তাকালে দেখতে পাবে তারা জীবনের একটা পর্যায়ে চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করে, এর আগে পরের সময়টায় সাফল্যের দিকে যাত্রা বা সাফল্যের একটা স্যাচুরেটেড অবস্থা বা অনেক সময় সাফল্যের অবনমনও দেখা যেতে পারে। তাই ভবিষ্যতের সাফল্যের পিছনে ছোটা নিছক বোকামি, এমন কিছু আসলে নেই যেখানে পৌঁছাতেই হবে! ছুটে চলা পথের শেষে একটা জিনিসই অপেক্ষা করছে, মৃত্যু! মৃত্যুর দিকে দ্রুত ছুটে চলতে চাওয়া লোকের সংখ্যা মনে হয়ে না খুব একটা বেশী হবে!
মানুষের আরেকটা মজার বৈশিষ্ট্য আছে, মানুষ অন্যের যে বিষয়টা ভালোবাসে, তা নিজের মাঝে আছে বলেই ভালোবাসে। আবার অন্যের যে বিষয়টা অপছন্দ করে, তার কিঞ্চিৎ পরিমাণও যদি নিজের মাঝে দেখতে পায় তবে চরম বিরক্ত হয়!
....... ইকাবুকা খুব মনোযোগ সহকারে ইকারাসের কথা শুনছিলো। তার বাবা মাঝে মাঝেই এমন সব কঠিন কথাবার্তা শোনায় তাকে। তার বাবার আজকের কথা শুনে সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো, সে অতীত বর্তমান মিশিয়ে তার জীবনকে সর্বোৎকৃষ্ট করতে চাইবে না, ভবিষ্যত তার জীবনটাকে যেভাবে প্রবাহিত করবে সে জীবনটাকে সেভাবে কাটাবে, সেটা সর্বোৎকৃষ্ট নাই বা হলো! প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে চোখ বন্ধ করে যদি বলা যায়, 'আজকের দিনটা ভালো ছিলো!' এটাই তো সর্বোৎকৃষ্ট জীবন!
২৬ এপ্রিল, ২০২২
# আমাদের কাছে সুখ মানেই 'ভালো', আর যতো দুঃখ আছে, ব্যথা আছে, আছে যতো ভয় - সবটাই আমাদের কাছে 'খারাপ'। লক্ষ্য করলে দেখা যায় আমরা যখন আমাদের খুব ভালো লাগা বা পছন্দের কোনো কাজ করতে যাই, তখন আমাদের সুখ সুখ বোধ হওয়ার পরিবর্তে আমাদের মাঝে কিছুটা ভয় ভয় একটা বোধ কাজ করে! কারণ কি জানো? কারণ আমরা আমাদের পছন্দের কাজে কোনো ভুল করতে চাই না, এই ভুল না করতে চাওয়াটা আমাদের মনে এক ধরণের সূক্ষ ভয়ের অনুভূতি তৈরি করে। তাই সব ভয় 'খারাপ' না, কিছু কিছু ভয় 'ভালো'!
কিছু কিছু মানুষ আজকাল বেশ কপট স্বভাবের হয়। সে নিজেই হয়তো করো পিছনে তাকে "খুব অহংকারী", "খুব ভাবে থাকে" টাইপস কথা বলে গীবত করে! যেখানে বাস্তবিক যাকে নিয়ে এসব বলা হচ্ছে সে মোটেও তেমন নয়!
সারাটা দিন যে মানুষটা অন্যের গীবত করে আবার দিন শেষে সে মানুষটাই গীবতের অপকারিতা নিয়ে বিশদ আলোচনা করে রচনা লিখে! কখনো বুঝতেও পারে না সে নিজে কতটা কপট, কতটা অথর্ব! স্রষ্টা তাদের দুনিয়াকে একটা প্রদর্শনীর দুনিয়ার গন্ডিতে আটকে দিয়েছেন, তারা এর মাঝে ঘুরতে থাকে, আর দেখাতে থাকে নিজের সব কদর্য কাজগুলো, যেনো সেগুলো এক একটা শিল্পকর্ম!
লক্ষ্য করলে এও দেখবে যে, এরা পবিত্র রমজান মাসে এসব কাজের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আবার মাস শেষে নতুন উদ্যমে নতুন নতুন ভাবে তোমার গীবত করা শুর করবে! না হলে আগামী রমজানে তারা ক্ষমা চাইবেটা কিসের জন্য!!!
তাই, সব ক্ষমা চাওয়া মন থেকে চাওয়া প্রকৃত ক্ষমা চাওয়া নয়! কিছু কিছু ক্ষমা চাওয়া হয় সামনের বার ক্ষমা চাওয়ার আগের বারের অতি প্রাকৃত ক্ষমা চাওয়া!
২৭ এপ্রিল, ২০২২
# এরিক গ্রিটেন্স তার 'Resilience: Hard-Won Wisdom for Living a Better Life' বইতে সুখ নিয়ে খুব সুন্দর একটা কথা বলেছেন। তার মতে সুখের তিনটি প্রাথমিক ধরণ আছে: আনন্দের সুখ, অনুগ্রহের সুখ আর শ্রেষ্ঠত্বের সুখ।
এ তিন ধরণের সুখ অনেকটা তিনটি মৌলিক রঙ- লাল, হলুদ, নীলের মতো কাজ করে। মৌলিক রঙের সংমিশ্রণ যেমন হরেক রকম রঙের সৃষ্টি করে, তেমনি এই তিন ধরণের সুখ থেকে হরেক রকম সুখের অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
আনন্দের সুখটা খুব সহজ সরল হয়। তুমি যখন খুব ক্ষুধার্ত থাকো তখন একটা মজার খাবার তোমার মনকে আনন্দিত করবে, বৃষ্টি শেষে বাতাসে মাটির গন্ধ তোমাকে আনন্দিত করবে, একটা ভালো ঘুম শেষে জেগে ওঠা তোমাকে আনন্দিত করবে, আর এসব আনন্দ তোমাকে সুখী করবে।
অনুগ্রহের সুখ পাওয়া যায় কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে। ঘুম থেকে উঠে পাশে তোমার পরম আদরের সন্তানদের দেখতে পাওয়া, জীবন সঙ্গীকে দেখতে পাওয়া, তোমার মনে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ তৈরি করে। তোমার যা কিছু আছে তার জন্য স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ তোমাকে সুখী করবে।
অর্থবহ কিছু বা মহান কিছুর সাধনা থেকে যে ধরনের সুখ আসে সেটা হলো শ্রেষ্ঠত্বের সুখ। যে মুহূর্তে তুমি এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছে দুহাত উপরে তুলে উল্লাসিত হয়ে পড়বে সে মুহূর্তটা নয়, বরং পর্বতারোহণের পুরো প্রক্রিয়াটা তোমাকে যে সুখ দিবে সেটাই শ্রেষ্ঠত্বের সুখ।
মৌলিক রঙের যে কোনো একটি ছাড়া যেমন অনেকগুলো রঙের সৃষ্টি সম্ভব না, তেমনি এই তিন ধরণের সুখের যে কোনো একটি ছাড়া অনেক ধরণের সুখের খোঁজ পাওয়া সম্ভব নয়। কোনোটাই কোনটার জায়গা দখল করে নিতে পারে না।
আচ্ছা, বর্ণান্ধ বা কালার ব্লাইন্ড মানুষের মত কি সুখান্ধ মানুষও আছে? (সুখান্ধ এর আদৌ কোনো ইংরেজি আছে কি না জানা নেই!)
২৮ এপ্রিল, ২০২২
# তুমি যখন খুব সুখ সুখ বোধ করো তখন মোবাইলে নিজের একটা সেলফি তুলে রেখো। সুখের মাত্রাটা যতো অল্পই হোক না কেন, একটা সেলফি তুলে রেখো। এভাবে একটা একটা করে অনেকগুলো সেলফি যখন তোলা হবে, তখন সবগুলো সেলফি নিয়ে তোমার মোবাইলে একটা ফটো অ্যালবাম তৈরি করে নিয়ো।
মাঝে মাঝে এই ডিজিটাল ফটো অ্যালবাম খুলে নিজেকে একটু দেখে নিয়ো! ছবিগুলো কেনো দেখবে? তুমি দেখতে কেমন ছিলে সেটা দেখতে? না কি স্মরণ করতে, কেনো সেই মুহূর্তটা তোমার জন্য এতটা সুখের ছিলো? না! তুমি ছবিগুলো দেখবে এটা বোঝার জন্য যে, সময়ের সাথে সাথে তোমার সুখী সুখী চেহারাটা পরিবর্তিত হয়ে গেছে! কিছু কিছু ছবি দেখে এমনও মনে হতে পারে যেনো ছবিগুলো ঠিক তোমার চেহারায় সুখী সুখী ভাবটা ফুটিয়ে তুলতেই ব্যর্থ। যদিও তুমি জানো ছবিটা তোলার সময় তুমি সুখী ছিলে!
সুখ, সেটা প্রকাশ না করলেও সুখ, আর দুঃখ, সেটা লুকিয়ে রাখলেও দুঃখ। সুখের চেহারা এক একসময় এক একরকম হলেও দুঃখের চেহারাগুলো অনেকটা একই!
২৯ এপ্রিল, ২০২২
# আমাদের প্রত্যেকের একটা দ্বিতীয় কণ্ঠস্বর আছে যেটা আমাদের সাথে কথা চালিয়ে যায় সারাটা সময়, আমাদের মনের কণ্ঠস্বর! এই যে এখন আমি লিখছি, সে ধীরে সুস্থে বলে যাচ্ছে, আর আমি লিখছি! মাঝে মাঝে সে যা বলে তার কোনো যুক্তি থাকে না, আবার মাঝে মাঝে সে এমন সব সূক্ষ সব বিষয় নিয়ে কথা বলে, যা শুনে আমার মনে হয় এ বিষয়টা নিয়ে আদৌ আমি কি কিছু জানি!
কিন্তু বাস্তবিক জীবনে দেখা যায়, অযৌক্তিকভাবে আসা ভাবনাগুলো থেকেই অনেক সময় পাওয়া যায় জীবনে এগিয়ে চলার মূল শক্তি। অযৌক্তিক মনে হওয়া এসব ভাবনার কিছু কিছু একসময় সবচেয়ে যৌক্তিক বলে প্রমাণিত হয়।
আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের সাথে এই সম্পূর্ণ বিষয়টা নিয়ে একটা ধাঁধার সৃষ্টি করে। ধরো তুমি একজনকে প্রচন্ড পছন্দ করো, কিন্তু তোমার মনের কণ্ঠস্বর সারাক্ষণ তোমাকে বলে চলছে- ও তোমার জন্য একদম ঠিক নয়! আবার একজনকে তুমি একেবারেই পছন্দ করো না, তোমার মনের কণ্ঠস্বরও তোমাকে বলছে- ও তোমার জন্য একদম ঠিক নয়! দুই ক্ষেত্রে একই কথা বললেও প্রথম ক্ষেত্রে তুমি তোমার মনের কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করো, আবার দ্বিতীয় ক্ষেত্রে নিজেকে বোঝাও- আসলেই ও আমার জন্য একদম ঠিক নয়! আমাদের মস্তিষ্কের এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আসলে কেনো!
৩০ এপ্রিল, ২০২২
# সকাল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, সাথে একটু পর পর কানের পর্দা ফাটানো শব্দে বজ্রপাত। ইকাবুকা তার বাবা মায়ের সাথে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে এসেছে। প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে ঘর থেকে বের হয়ে কোথাও যেতেও পারছে না সে। ইকাবুকা খুব অস্থিরতা বোধ করছে, কিছু না কিছু একটা তার করতেই হবে! তার অস্থিরতা দেখে তার মা তাকে জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখতে বললো।
ইকাবুকা এর আগেও তাদের শহরের বাসায় অনেকবার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি পড়া দেখেছে। কিন্তু গ্রামের বৃষ্টি পড়ার মাঝে কিছুটা ভিন্নতা আছে, বৃষ্টি শুরুর পর বাতাসে মাটির এক ধরণের গন্ধ পাওয়া যায়। ঘরের টিনের চালে বৃষ্টি পরার শব্দটাও চমৎকার সুন্দর। এছাড়াও আরেকটা মজার বিষয় আছে গ্রামে, বৃষ্টির মাঝে প্রচুর ব্যাঙের ডাক গুনতে পাওয়া যায়। ইকাবুকার কাছে এসব কিছুই বেশ ভালো লাগে।
হঠাৎ ইকাবুকার মনে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন আসলো। সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো মায়ের কাছে। মা আর দাদি ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছিলো। ইকবুকা মায়ের কানে কানে বললো, 'আচ্ছা মা, বৃষ্টির দুইটা ফোঁটার মাঝের দূরত্বকে কি বলে?' ইকাবুকার মা এমন প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। এ প্রশ্নের উত্তরও তার জানা নেই!
ইকাবুকার সব প্রশ্নই বড্ড আঁকাবাঁকা!
০১ মে, ২০২২
# মে মাস শুরু হয়ে গেলো, বিখ্যাত সব ভালো মানুষদের জন্মের মাস! আজ নতুন কিছু লিখার সময় করে উঠতে পারি নি, তাই শেষ ভরসা আমার কবিতা! আমার আরেকটা কবিতার বই ছাপানোর ইচ্ছা ছিলো, নামও ঠিক করেছিলাম 'বসন্তবৈরি'! 'পানকৌড়ি মন' এর পর 'বসন্তবৈরি'! হয়তো কোনোদিন ছাপানো হবে, হয়তো না!
ঘুমকাতুরে বসন্তবৈরি
কোলাহলপূর্ণ পথে আজ হেঁটে চলি একা একা।
খোলা চোখে দেখা হয় অনেকটা দূর, অনেকটা!
তোমার বারান্দা, তোমার বাসার ছাদ, হেঁটে চলা
পথ তোমার, তোমার হাতের ছোঁয়া পাওয়া বেঞ্চিটা!
শুধু দেখা হয় না বারান্দার ওপাশটায় তোমায়,
বাসার ছাদে তোমার বিকেলের রোদ পোহানো!
তোমার হেঁটে চলা পথে নিয়ম করে হাঁটা হয় আজো,
বসা হয়না তোমার ছোঁয়া পাওয়া বেঞ্চিতে, ইচ্ছে করেই!
অনেকটা দিন তোমায় বলা হয় না শুভ সকাল, তবুও
তোমার সকালগুলো শুভ হয়, হয় শুভময়, আমিহীন।
রাতগুলো আগের মতই অন্ধকার, আগের মতই
জেগে থাকা রাতগুলোয় বলতে গিয়েও বলা হয় না, শুভ রাত্রি!
গলে যাওয়া মোমে আর গড়া হয় না তোমার অবয়ব,
কল্পলোকে বোনা হয়না তোমায় নিয়ে আর কোনো গল্প।
তোমার চোখের নিচের প্রায় অমোচনীয় কালিটা যেদিন মুছে যাবে,
সেদিন হয়তো আমি একটু মুচকি হাসবো,
হয়তো বলবো, শুভ সকাল, হাতে নিয়ে হাফ কাপ চা!
ততদিন পর্যন্ত ভালো থেকো ঘুমকাতুরে বসন্তবৈরি!
০২ মে, ২০২২
# করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর থেকে আমার হোম অফিস চলছে। সারাদিন বাসায় থেকেই কম্পিউটারে বসে অফিসের সব কাজ মোটামুটি সেরে ফেলা যায়। বাসায় বসে অফিস করতে খুব একটা খারাপ লাগে না! তবে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর বাসার কাজের বুয়াকে ছুটি দেয়ায় গৃহস্থালী টুকটাক কাজে স্ত্রীকে আগের চেয়ে একটু বেশী সাহায্য করতে হয়।
মাস খানেক হলো করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমলেও এখনো বাসা থেকেই অফিস করা যাচ্ছে। তবে বাসার কাজের জন্য নতুন একটা কাজের বুয়া রাখতেই হলো, বেশ কষ্ট হয়ে যাচ্ছে দু'দিক সামলাতে। কাজের বুয়ার নাম সালেহা। আচার ব্যবহার বেশ ভালো। মাসে ৩,০০০ টাকা মাইনে।
মূল ঘটনায় আসা যাক। কাজে যোগদানের কয়েকদিন পর একদিন সালেহা আমার স্ত্রীকে বললো, 'খালা, আমারে তো মাসে ৩,০০০ টেহা দেন।' আমার স্ত্রী পুরো কথা শোনার আগেই ভাবলো সে মাইনে বাড়ানোর কথা বলবে, তাই সাথে সাথেই উত্তর দিলো, 'সালেহা, তুই বাসায় কাজ শুরু করলি যে তো একমাসও হয় নি, এখনি তোর মাইনে বাড়ানো যাবে না।'
সালেহা যারপরনাই বিরক্ত হয়ে বললো, 'খালা, আমি কি কইছি আমারে টেহা বাড়াইয়া দেন! খালু সারাদিন ঘরে বইসা থাহে, বেচারার কাম কাজ নাই, তাই আমি কইতে চাইসিলাম খালুর চাকরি হইবার আগ পর্যন্ত আমারে মাসে ২,০০০ টেহাই দিয়েন।'
আমার স্ত্রী রীতিমতো বাকরুদ্ধ!
০৩ মে, ২০২২
# ইসাডন শহরের আইনকানুন খুব কড়া, তার চেয়ে কড়া আইনকানুনের প্রয়োগ। শহরের কয়েদখানাটিও পৃথিবীর সবচেয়ে আরামদায়ক কয়েদখানাগুলোর মধ্যে একটি। অপরাধীরা সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এই কয়েদখানায় থাকতে পারলে মন খুব একটা খরাপ করার সুযোগ নেই!
মার্লোর বয়স প্রায় ৬৭ বছর। শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো না, বছর দুই ধরে প্রায়ই অসুস্থ থাকে। আয় রোজগারের অবস্থাও তথৈবচ। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও প্রচন্ড বেড়েছে। একদিন সকাল বেলায় হঠাৎ মার্লো তার বাসার কাছের সুপারশপ থেকে দুইটা প্রসেসড মুরগী চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লো! ইসাডন শহরে চুরির শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড!
মার্লোকে আদালতে হাজির করা হলো। বিচারক মার্লোকে জিজ্ঞেস করলো, 'তোমার উকিল কোথায়?'
'আমি কোনো উকিল নিয়োগ দেই নি জনাব, সত্যিকার অর্থে উকিল নিয়োগ দেয়ার মতো সামর্থ্য আমার নেই জনাব।' -মার্লো উত্তরে বললো।
'সমস্যা নেই, আমি একজন সরকারি উকিল নিয়োগ দিয়ে দিচ্ছি আপনার জন্য।' -বিচারক দয়াপরবশ হয়ে বললেন।
মার্লো আতকে উঠে বললো, 'না জনাব, অনুগ্রহ করে এ কাজ করবেন না! আমার উকিলের প্রয়োজন নেই, আমি চুরি করেছি, আপনি আমাকে এর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি দিন।'
মার্লোর এমন কথা শুনে বিচারক খুব অবাক হলেন! 'আপনি কেনো কোনো উকিল নিয়োগ দিতে চান না! আমি আপনার জন্য সরকারি উকিল নিয়োগ দিলে আপনার কোনো অর্থ প্রদানের প্রয়োজন নেই।' -বিচারক বললেন।
'শুনেছি কয়েদখানার বাবুর্চির রান্নার হাত বেশ ভালো, বিশেষ করে তার হাতের মুরগীর রান্না কয়েদিদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়! তিন বছরের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করার এর চেয়ে সহজ উপায় আমার জানা ছিলো না!' -মার্লোর সরল স্বীকারোক্তি।
*** 'ইসাডন' একটা কাল্পনিক শহর। তাই এর কয়েদখানা, 'মার্লো' সবটাই কাল্পনিক। আর আইনকানুনের যথাযথ প্রয়োগ বিষয়টা আরো বেশী কাল্পনিক!
*** আজ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। হজপজ_Hodgepodge এর প্রথম ঈদ!!! পাঠকদের সবাইকে হজপজ_Hodgepodge এর পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা।
০৪ মে, ২০২২
# আজ আবার Writer's Block ভর করেছে আমায়! মাঝে মাঝে মনে হয় হুমায়ুন আহমেদ এর 'হিমু' চরিত্রটা যদি আমার সৃষ্টি হতো! কি দারুণ হতো! (অন্তত আমার নিজের কাছে তা মনে হয়, বিখ্যাত কিছুর সাথে জড়িয়ে থাকার একটা আনন্দ তো থাকেই!)
আমার নিজের সৃষ্ট অনেকগুলো চরিত্র আছে - ইকাবুকা, ইকারাস, ফ্লেমিংগো, কিমোরা, বেক্সটার, আরাফ, আজমান, তিহান, থাইরু, মিশিতা! অনেকগুলো! আমার সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে 'ইকাবুকা'। তবে আমার সৃষ্ট চরিত্র না হলেও হিমুকে নিয়ে মাঝে মাঝে লিখতে ইচ্ছে হয়, তখন লিখে ফেলি যা মনে আসে। বেশ কিছুদিন আগে এ লেখাটা লিখেছিলাম:
"আজ অনেকদিন পর হিমু ঘর থেকে বের হলো। হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর থেকে হলুদ পাঞ্জাবী পড়া ছেড়ে দিয়েছে সে, হুমায়ূন বিয়োগের শোকে এখন সে নীল পাঞ্জাবী পড়ে। মুখভর্তি কাঁচা-পাকা দাড়িতে এখন তাকে খুব একটা চেনা যায় না। মাথার চুলগুলোও অবাধ্য হয়েছে অনেক আগেই। ঘর থেকে বের হবার উদ্দেশ্য চুল দাড়ি কাটানো! কিন্তু সমস্যা হলো হাতে একটা টাকাও নেই! হিমু ঠিক করলো সে খুব দামী কোনো সেলুনে গিয়ে শেভ করবে। শেভ করা শেষে টাকা চাইলে সোজা সাপ্টা বলে দিবে তার কাছে কোনো টাকা নেই! সেলুনের মালিক হয়তো তখন রাগের মাথায় তার মাথা ন্যাড়া করে দিবে! খুব ভালো না?
হাঁটতে হাঁটতে হিমু পথে একটা বসন্তবৈরি পাখি দেখলো। অদ্ভুত সুন্দর গোলাপী রঙের পাখিটা হয়তো তার নীড়ে ফিরছে। হিমু হাঁটা থামিয়ে অপলক তাকিয়ে থাকলো পাখিটার দিকে, যতক্ষণ পাখিটা তার দৃষ্টি সীমার মাঝে ছিলো। আচ্ছা বসন্তবৈরি কি গোলাপী হয়? হিমুর জানা নেই। কিন্তু এটা ঠিক ঠিক বসন্তবৈরি পাখিই ছিলো!"
একদিন ইকাবুকার সাথে হিমুর পরিচয় করিয়ে দিবো! যদিও জানি না কিভাবে এটা করবো! তবে গল্পের ভুবনে সবই সম্ভব।
০৫ মে, ২০২২
# জনৈক ব্যক্তি বললো, 'সমুদ্রের কিনারায় দাঁড়িয়ে কখনো সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা যায় না, গভীরতা মাপতে সমুদ্রে ডুব দিতে হয়।'
পাশে দাঁড়ানো আরেক ব্যক্তি বললো, 'সমুদ্রে ডুবে দেয়ার প্রয়োজন কি! রাডার বা স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েব ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীরতা মাপা যায়।'
আরেক ব্যক্তি একটু দূর থেকে এই দুই ব্যক্তির কথোপকথন শুনছিলো। মৃদু হেসে বললো, 'ভাই ডুব দিল ডুবে মরার সম্ভাবনা আছে, আর রাডার বা স্যাটেলাইট দিয়ে গভীরতা মাপার চেয়ে শব্দ ব্যবহার করে 'সাউন্ড নেভিগেশন এন্ড রেঞ্জিং' এর মাধ্যমে আরো অনেক দ্রুত সমুদ্রের গভীরতা মাপতে পারবেন। আচ্ছা, আপনারা সমুদ্রের গভীরতা মাপতে চাইছেন কেনো বলুনতো?'
দ্বিতীয় ব্যক্তি বললো, 'ভাই, আমিতো ওনার কথার প্রেক্ষিতে বললাম!'
প্রথম ব্যক্তি বললো, 'ভাই, আমিতো KGF 2 সিনেমার একটা ডায়লগ আওরাচ্ছিলাম।'
তৃতীয় ব্যক্তি এসব শুনে কি বলেছিলো অনুমান করতে পারো?
ঘটনা ঠিকঠাক না জেনে জ্ঞান দিতে আসা লোকের সংখ্যা খুব একটা কম নয়। মাঝে মাঝে নিজেকেও এ দোষে দোষান্বিত হিসেবে খুঁজে পাই! তবে এক শ্রেণীর ধূর্ত লোক আছে যাদের তুমি কোনো বিষয়ে ঠিকঠাক জ্ঞান দিলেও তোমাকে বলবে, ঘটনা ঠিকঠাক না জেনে জ্ঞান দিতে আসা ঠিক না!' বেশ অদ্ভুত শোনালেও ঘটনা কিন্তু সত্য।
০৬ মে, ২০২২
# সুমন গ্রাম থেকে ঢাকায় আসলো চাকরীতে যোগ দেয়ার জন্য। সাথে আসলো তার বৌ আর পোষা বিড়ালটা। আগে অনেকবার চাকরির পরীক্ষা দেয়ার জন্য ঢাকায় আসলেও ঢাকার রাস্তাঘাট তার কাছে একটা গোলক ধাঁধার মতো মনে হয়।
অফিসের সহকর্মী জামিল সাহেবের সহযোগিতায় পুরান ঢাকায় দুই রুমের একটা ছোট বাসায় উঠেছে সুমন ও তার পরিবার। বাসায় ওঠার পরপরই সুমনকে একটা মজার ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়।
অফিসের কাজের এক ফাঁকে জামিল সাহেবের সাথে সুমনের দেখা হলে সুমন জামিল সাহেবকে তার আন্তরিক সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ দিলো। পাশাপাশি গতকাল ঘটে যাওয়া মজার ঘটনা শেয়ার করতে ভুললো না।
'গতকাল বাসার সবকিছু গুছিয়ে আমি টুকটাক বাজার করতে বের হয়েছিলাম। বাজার শেষে বাসায় ফিরতে গিয়ে পড়লাম মহা সমস্যায়, বাসার রাস্তা তো চিনতে পারছি না!' -সুমন বললো।
জামিল সাহেব ঘটনা শুনে দুঃখ প্রকাশ করলেন। 'তো শেষ পর্যন্ত কিভাবে বাসায় গেলেন?' -জামিল সাহেব জানতে চাইলেন।
'ভাগ্যিস আমার পোষা বিড়ালটা আমার পিছু পিছু বাজার পর্যন্ত এসেছিলো, তার পিছু পিছু গিয়েই শেষ পর্যন্ত বাসায় যেতে পেরেছিলাম!' -সুমন আলতো হেসে উত্তর দিলো।
*** মাঝে মাঝে আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট ঘটনা আমাদের অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। আবার সবলের প্রতি দুর্বলের করা ছোট্ট কোনো উপকার সবলের প্রাণ রক্ষাকারী হিসেবেও প্রতিভাত হয়।
০৭ মে, ২০২২
# রবিবার গীর্জায় উপস্থিত সবাইকে গীর্জার পাদ্রী একটা করে চেইন আর লকেট উপহার দিলেন। আর উপদেশ দিলেন তারা যেনো তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের কিছু স্মৃতিচিহ্ন লকেটের খুপরিতে রেখে দেয়, এতে করে সুন্দরভাবে প্রিয়জনদের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
পরের রবিবার গীর্জার পাদ্রী সবাইকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন কে কি রাখলেন তাদের লকেটে। উপস্থিত সকলের মাঝে অ্যাম্বারের কথা শুনে পাদ্রী হতভম্ব হয়ে গেলেন! অ্যাম্বারকে পাদ্রী ব্যক্তিগতভাবে চেনেন বলেই তার উত্তরে এমন হতভম্ব হয়েছেন।
অ্যাম্বার তার গলার চেইনের লকেটে তার স্বামীর মাথার চুল রেখেছিলো! অথচ তার স্বামী এখনো জীবিত এবং তাদের মাঝে সম্পর্কও বেশ ভালো।
পাদ্রী তার এমন কর্মকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে অ্যাম্বার উত্তরে বলেছিলো, 'আমার স্বামী বেঁচে থাকলেও তার মাথায় আর একটিও চুল অবশিষ্ট নেই। তার চুলগুলো আমার খুব প্রিয় ছিলো।'
০৮ মে, ২০২২
# আজ বিশ্ব মা দিবস। ইকাবুকা তার মা-কে মা দিবস উপলক্ষে আলাদাভাবে কিছু বলতে পারে নি, তার কেনো জানি লজ্জা হয়! সারাটা বছর মা কে বলা হয় না, 'মা তোমায় ভালোবাসি!' আজ হুট করে মা কে একথা কিভাবে বলবে সে বুঝে উঠতে পারছে না। কিন্তু সে তার মা কে অনেক ভালোবাসে।
ইকাবুকার বাবা ইকারাস ড্রয়িং রুমের পাশের বারান্দায় বসে ছিলো উদাস মনে। ইকারাসের মা গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর হলো। প্রতিদিন তার মা কে যতোটা মনে পড়ে ততটা প্রকাশ করা হয় না, প্রকাশ করা যায়ও না। মায়ের কথা মনে করে তার চোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু ঝরতে লাগলো।
হঠাৎ ইকাবুকা তার বাবার কাছে এসে ১,০০০ টাকা চাইলো। ইকাবুকাকে দেখে ইকারাস হাত দিয়ে চোখটা মুছে নিয়ে ইকাবুকার কাছে জানতে চাইলো, 'আব্বু, ১,০০০ টাকা দিয়ে কি করবে তুমি?'
'আব্বু, আমার আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে কিছু ক্ষুধার্ত গরীব মানুষকে দুপুরে ভাত খাওয়াবো। তাই ১,০০০ টাকা লাগবে আমার। ১,০০০ টাকায় ১,০০০ জন মানুষকে খাওয়াবো আজ।' -ইকাবুকা বললো।
'১,০০০ টাকায় ১,০০০ জন মানুষকে দুপুরে ভাত খাওয়াবে কিভাবে!' -ইকারাস বিস্ময়ের সাথে জানতে চাইলো।
ইকাবুকা স্বভাব সুলভ মুচকি হেসে বললো, "আব্বু, '১ টাকায় আহার' নামে একটা সংগঠন আছে যারা মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে গরীব দুঃস্থদের খাবার দিয়ে থাকে। আমি ১,০০০ জন গরীব মানুষকে ১ টাকা করে দিবো, তারা সে ১ টাকা দিয়ে দুপুরের খাবার কিনে খাবে। তাহলে ১,০০০ টাকায় ১,০০০ জন মানুষকে দুপুরের খাবার খাওয়ানো যাবে। আর আমার যখন অনেক টাকা হবে আমি তখন এই সংগঠনে অনেক অনেক টাকা দিয়ে দিবো। ঠিক আছে না আব্বু?'
ইকাবুকার কথা শুনে ইকারাসের দু'চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো, সে কোনো কথা বলতে পারলো না। এ অশ্রু কি আনন্দের অশ্রু?
০৯ মে, ২০২২
# আমাদের পরকালের যাত্রা শুরু করতে হয় একা একা। যে মানুষটা একাকী থাকতে পারে না সেও এই পথ পাড়ি দিবে একা একা, কিচ্ছু করার নেই! আমাদের সাথে যাবে আমাদের কিছু স্মৃতি, যাবে আমাদের কর্মফল, আর কিচ্ছু না! যাবার বেলায় কিছু না নিয়ে গেলেও অনেক কিছু রেখে যাওয়া যায়, মূল্যহীন অনেক কিছু! এই যেমন কবিতা!
শেষ যাত্রা
আর ক'টা দিন পর আমি একা একা যাত্রা শুরু করবো,
যাবার কালে তুমি আমায় বিদায় জানাতে আসবে তো?
লম্বা যাত্রায় আমার সাথে তেমন একটা কিছু থাকবেনা,
যাবার কালে শুধু তোমার আরেকটু স্মৃতি নিবো, দিবে?
তোমার জন্য আমি রেখে যাচ্ছি ২১৭টি চিঠি-
গুনে গুনে ঠিক দুইশত সতেরোটি, একটা কমও না!
তোমার জন্য আমি রেখে যাচ্ছি ১১৩টি কবিতা-
সবগুলো তোমার জন্য! শুধুই তোমার জন্য!
রঙিন এ পৃথিবীতে রঙহীন আমায় মনে রাখবে তো!
আকাশে মেঘেদের আনাগোনায় আমায় খুঁজবে তো?
সাগর পাড়ে আছড়ে পড়া হাজারো ঢেউয়ের শব্দে-
কান পেতে আমার শব্দদের তুমি শুনবে তো!
তোমায় আমার একটা কথা বলার ছিলো-
কোনো এক শীতের সন্ধ্যায়! তোমার মনে আছে?
সেদিনের মতো আজও কথাটা তোমায় বলা হবে না,
সেদিনের মতো আজও আমার সাহসেরা-
দুঃসাহসী হবেনা!
১০ মে, ২০২২
# ইকাবুকা বাবা-মা সহ গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। প্রতিবছর বর্ষাকালে তারা নিয়ম করে গ্রামে বেড়াতে আসে। তাদের গ্রামের টিনের চালার বাড়িটা বেশ পুরোনো, কম করে হলেও পঞ্চাশ-ষাট বছর তো হবেই। এবার বর্ষার শুরু থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছে, একদম ঝুম বৃষ্টি! ইকাবুকা বৃষ্টি খুব পছন্দ করে, তার চেয়ে বেশী পছন্দ করে টিনের চালায় ঝুম বৃষ্টির শব্দ!
কিন্তু সবচেয়ে বাজে বিষয় হলো এবার গ্রামে আসার পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও একবারও বৃষ্টি হয় নি! ইকাবুকার মনটা তাই খুব খারাপ। কাল সকালেই তারা শহরের বাসায় চলে যাবে, এটা ভাবতেই ইকাবুকার খারাপ লাগাটা আরেকটু বেড়ে গেলো। খুব মন খারাপ লাগলে ইকাবুকার খুব ঘুম পায়, এখনো তার খুব ঘুম পাচ্ছে, ঘুমে তার চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসলো।
সন্ধ্যার খানিক আগে ইকাবুকার ঘুম ভাঙলো। ঘুম ভাঙতেই তার মনটা আনন্দে ভরে গেলো, আকাশে মেঘ করেছে! মনে হচ্ছে এখনই বৃষ্টি নামবে, এখনই! ঈশশ! মেঘে কেউ যদি আস্তে করে একটু টোকা দিতো! ...............কিন্তু তখনই বৃষ্টি আসলো না।
রাতের খাবার খেয়ে ইকাবুকা ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমের মাঝেই তার মনে হলো টুপ টুপ করে পানি পড়ছে কোথাও, হয়তো বৃষ্টির শব্দ! ইকাবুকা চোখ খুলে দেখলো সত্যি সত্যি বৃষ্টি হচ্ছে, আর শব্দটা আসছে তার বিছানার পাশে রাখা একটা পাত্র থেকে। টিনের চালার ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে পাত্রটায়। ইকাবুকা পাত্রটার উপর তার হাতটা ধরলো, এখন আর শব্দটা হচ্ছে না, বৃষ্টির পানি টুপ টুপ করে পড়ছে তার হাতে!
১১ মে, ২০২২
# একটা সময় ইকারাস কফি খেতে খুব পছন্দ করতো। বাসায় মায়ের কাছে প্রায়ই বায়না করতো কফি বানিয়ে দেয়ার জন্য। এক মগ কফি নিয়ে বারান্দায় বসে পড়তো পছন্দের সব বই নিয়ে! কফির মগে চুমুক দিতে দিতে এগিয়ে চলতো বই পড়া।
এলাকার প্রথম কফি শপটা যেদিন খুললো খুব আগ্রহ নিয়ে ইকারাস কফি শপটায় গেলো। খুব সুন্দর অনন্য সজ্জায় সজ্জিত একটা শপ। এক কোণে একটা বিশাল বুক শেলফ আর শেলফ ভর্তি বই! ইকারাস ভেতরে ভেতরে খুব আনন্দ বোধ করলো, এখন থেকে মাঝে মাঝে কফি শপে এসে কফি খাওয়া যাবে, সাথে পড়া যাবে বইও!
এরপর থেকে টানা অনেকটা বছর ইকারাস তার পছন্দের সব গল্পের বই না কিনে সে টাকায় কফি শপে গিয়ে কফি খেতো আর বই পড়তো। কফিটা এতো আস্তে আস্তে খেতো যে মোটামুটি এক কাপ কফি খেতে খেতে একটা বইয়ের অর্ধেকটা সে পড়ে ফেলতো!
এই কফি শপের আইডিয়া কিছুটা মডিফাই করে ইকারাস আজ দেশের সবচেয়ে বড় কফি শপ চেইনের মালিক! ইকারাসের কফি শপে বই পড়ার সুযোগ আছে, পাশাপশি প্রত্যেক নতুন কাস্টমারকে একটা ডিজিটাল আইডেনটিটি কার্ড দেয়া হয় আর দশ কাপ কফি খাওয়া হলেই কাস্টমারকে কফি শপের পক্ষ থেকে একটা বই গিফট করা হয়!
প্রফিটের একটা অংশ কাস্টমারের সাথে শেয়ার করার এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় আছে বলে ইকারাসের মনে হয় না!
*** মাঝে মাঝে কল্পনারা বাস্তবের চেয়ে বাস্তব হয়, আর বাস্তবগুলো হয় অধরা!
১২ মে, ২০২২
# পৃথিবীর সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় সাহিত্যের মাঝে কবিতা অন্যতম! সেই অপ্রয়োজনীয় সাহিত্যের পিছনে অনেকটুকু সময় নষ্ট করা হয়েছে আমার! মাঝে মাঝে একটা দু'টো খুঁজে পাই, আবার হারিয়ে ফেলি। নিচের কবিতাটার একটা নাম ছিলো, মনে পড়ছে না এখন। অপ্রয়োজনীয় কবিতার নাম থাকা বড্ড বেশী অপ্রয়োজনীয় বিধায় এটা নিয়ে ভেবে আর সময় নষ্ট করলাম না!
কিছু কিছু ভালো লাগা, ভালোবাসা দূর থেকেই ভালো,
কাছে গেলে ভালো লাগার তীব্রতায় দম বন্ধ হয়ে আসে!
কখনো যদি সুযোগ আসে আমার, অনন্তকাল বাঁচার!
অষ্টপ্রহর আমি থাকতে চাই নিভৃত একা, বড্ড একা,
আমার যত বোকা অনুযোগ, অভিমান, ভালোবাসা নিয়ে!
সারাটা সময় আমি কি করে কাটাবো সেটাও ভেবেছি বহুবার!
তোমায় নিয়ে আমার যত ভাবনাগুলো আছে,
আছে যত সময় স্রোতে বয়ে চলা গল্প-কবিতা,
উদাস মনের ক্যানভাসে আঁকা তোমার চিত্রকল্প,
সবটা দিয়ে গড়বো আমি বিশাল কল্পরাজ্য!
রাজ্য জুড়ে সকাল-সন্ধ্যা, দুপুর-রাত্রি ঘুরবো আমি একা,
সাথে নিয়ে তোমার স্মৃতি, তুমি বিহীন তোমারই অনুভূতি!
*** কবিতা পড়ে কবিতার ঘটনা মানুষের জীবনের সাথে মিলে গেলে সে কবিতাটা পছন্দ করবে, মিলে না গেলে সে মনে মনে বলবে, 'কি লিখেছে এসব! এটা কিছু হইলো!' (কেউ কেউ মনে মনে না বলে আমার সাথে দেখা হলে ঘটনা কি জানতে চাইবে! বড়ই মর্মান্তিক!)
১৩ মে, ২০২২
# মানুষ তার জন্মের আগের অবস্থা সম্পর্কে কিছু স্মরণ করতে পারে না, তার জন্ম কোথায় হবে সে সম্পর্কে আগে থেকে কিছু জানে না, এমনকি জন্ম হবার পর অনেক বছর প্রকৃতঅর্থে বুঝতেই পারে না সে কোথায় এসেছে!
মানুষ তার মৃত্যুর সময় সম্পর্কেও কিছু জানে না, জানে না কোন অবস্থায় তার মৃত্যু হবে, কিন্তু প্রত্যেক মানুষ তার নিজ নিজ ধর্মীয় জ্ঞান থেকে মৃত্যুর পর তার সাথে কি কি হতে পারে সে সম্পর্কে একটা ধারণা পায়।
মানুষ জন্মের আগে অসম্পূর্ণ কোনো কাজ রেখে আসে কি না আমার সঠিক জানা নেই, কিন্তু মৃত্যুর সময় অসম্পূর্ণ অবস্থায় রেখে যাওয়া কাজের সংখ্যা অসংখ্য!
আমাদের ব্যবহার্য আসবাবপত্রের মৃত্যু না থাকলেও একটা সময় পর নষ্ট হয়, নষ্ট হবার আগ পর্যন্ত এক একটা পরিবারের কয়েকটা প্রজন্মের ছোঁয়া নিয়ে যায়। আমার বাসায় আব্বা-আম্মার ব্যবহার্য বেশ কিছু আসবাবপত্র রয়েছে, আমার নিজের কেনা আসবাবপত্রের তুলনায় এরা একটু বেশি আদর যত্ন পায়! যদিও জড় বস্তু বলে তারা এই বেশী যত্নও বুঝে না, যত্নের কারণও বুঝে না!
আমার মনে হয়, জন্মের আগে আমাদের বাবা-মায়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য আমাদের মাঝে এক ধরণের ব্যাকুলতা ছিলো! মৃত্যুর পরও হয়তো আমাদের মাঝে সে ব্যাকুলতা থাকবে! পরকালে যদি পিতা-মাতার সন্তান হওয়ার সুযোগ থেকে থাকে তাহলে মানুষ সবসময় তার নিজ নিজ পিতা-মাতার সন্তানই হতে চাইবে, করো মনে অন্য কোনো মহামানবের সন্তান হওয়ার ইচ্ছের উদয় হওয়ার কথা নয়!
১৪ মে, ২০২২
# আজকের জন্য নতুন কোনো লেখা নয়, নিচের লেখাটা আমার খুব প্রিয়, কবে লেখেছি মনে নেই, তবে আজকের জন্য এই লেখাটি সবচেয়ে উপযুক্ত।
জন্মের পরপরই আমরা কাঁদতে শিখি। আমাদের অশ্রুবিহীন সে কান্না অনেককে অশ্রুসিক্ত করে। জীবনে আমরা আরো অনেকবার কান্না করি, সে কান্নায় নিজেরা অশ্রুসিক্ত হলেও আমাদের সে অশ্রু অন্য কাউকে অশ্রুসিক্ত করতেও পারে আবার আনন্দও দিতে পারে। নিজে অশ্রুসিক্ত হয়ে অন্যকে আনন্দিত হতে দেখা এক মারাত্মক অভিজ্ঞতা!
একটা জিনিস একটু আগে হঠাৎ করেই মাথায় আসলো। যে কোনো বস্তু ঘেঁষে দিনের পর দিন বায়ু প্রবাহিত হলে সেটা বাতাসের ঘর্ষণের কারণে আস্তে আস্তে ক্ষয়ে যায়। আমাদের গ্রহগুলোর বাইরে মহাশূন্য। কোনো বাতাস নেই। থাকলে কি হতো সেটা ভাবতেই অবাক হচ্ছি।
(তাই সবসময় বাতাসে গা ভাসিয়ে দেয়া ঠিক না! )
বয়স বাড়ার একটা ভালো দিক আছে। একজন মানুষের জীবনে সবকিছু নেগেটিভ হলেও প্রতিদিন বয়স আরো পজিটিভ হয়, পজিটিভ হতে হতে একদিন হুট করে ইনফিনিটিতে প্রবেশ করে! বয়সের ক্ষেত্রে ঋণাত্মক সংখ্যারেখা কোনোদিন ব্যবহৃত হয় না, এ এক প্রহসন। তবে মায়ের গর্ভে থাকা সময়টাকে সংখ্যারেখার বামে স্থান দেয়া যেতেই পারে!
*** আজকের জন্মদিনটা সত্যিকার অর্থেই আমার জন্য স্পেশাল ছিলো, গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত কেটেছে! জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেক অনেক ধন্যবাদ!
১৫ মে, ২০২২
# শাফকাত সাহেব মারা গিয়েছেন বেশ কয়েকমাস হলো। তার মৃত্যুর পর থেকে তার স্ত্রী রেহনুমা পাগলপ্রায়। একদিন বাজার করতে গিয়ে রেহনুমা রাস্তায় একটা পোস্টারে দেখতে পেলেন 'এখানে সুলভ মূল্যে মিডিয়াম/প্ল্যানচেট এর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা হয়।' পোস্টারটা দেখেই এতো কষ্টের মাঝেও তার চোখেমুখে এক ধরণের আনন্দের আভা দেখা গেলো।
রেহনুমা পরদিন পোষ্টারের ঠিকানা অনুযায়ী স্থানে গিয়ে যোগাযোগ করলো। বাসা বাড়ির মাঝে ছোটখাটো একটা অফিস। অফিসের একজন কর্মচারী রেহনুমার কাছে থেকে তার স্বামী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিলো। পরের বুধবার বিকালের সময় তার সাথে তার স্বামীর যোগাযোগ করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেদিনকার মতো রেহনুমাকে বিদায় করা হলো। তবে বুধবার আসার সময় সাথে করে ক্যাশ ২০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা বলতে ভুললো না!
রেহনুমার সময় যেনো কাটছেই না। কখন বুধবার হবে আর তার স্বামীর সাথে তার কথা হবে তা নিয়েই সে একটা ঘোরের মধ্যে সময় কাটাতে লাগলো। যথারীতি বুধবার এলো, আর রেহনুমা তড়িঘড়ি করে ছুটলো তার স্বামীর সাথে যোগাযোগের আশায়!
অফিসে পৌঁছানোর পর তাকে একটি কম আলোকিত কক্ষে রাখা টেবিলের একপাশের একটা চেয়ারে বসানো হলো (অবশ্য এর আগে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা বুঝে নিয়েছে অফিসের সেই কর্মচারী)। কিছুক্ষণ পর কক্ষে মিডিয়াম প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ পর কক্ষ আস্তে আস্তে ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ হতে থাকলো আর মিডিয়াম রেহনুমার সামনে নিরর্থকভাবে কিছু এলোমেলো কর্মকাণ্ড করতে লাগলো, এই যেমন - টেবিলে হাত দিয়ে সজোরে আঘাত করা, অযথা মাথা এদিক সেদিক দোলানো, বিড়বিড় করে কিছু মন্ত্র পাঠ করা!
এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর মিডিয়াম সর্বপ্রথম মুখ খুললো। 'আপনার স্বামীর সাথে আজকে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না, উনি কোনো একটা কাজে ব্যস্ত আছেন।'
রেহনুমা হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, 'এই সময়ে উনি সাধারণত অফিসেই কাজে ব্যস্ত থাকতেন, এখনো মনে হয় কাজেই ব্যস্ত! ব্যাংকার মানুষ তো, সন্ধ্যা ৭ টা ৮ টার আগে ফ্রি হবেন বলে মনে হয় না।'
*** অন্যান্য মানুষের মতো ব্যাংকাররাও মরে গেলে পচে যায়, তবে বেঁচে থাকলে কারণে-অকারণে বদলানোর পাশাপাশি মাঝে মাঝে রোবট হয়ে যায়!
১৬ মে, ২০২২
# আমাদের সবসময়ের ভালো লাগার সন্ধান আমাদের ক্ষণিকের সুখগুলোকে খেয়ে ফেলে, একদম চেটেপুটে। মানুষের মাঝে অনেকেই চোখে চোখ রেখে মিথ্যে বলে, আবার অনেকে কারো দিকে না তাকিয়েই বলে ফেলে হাজারটা সত্য কথা! সবটাই কিন্তু ঐ মিছে ভালো লাগার সন্ধানে!
ভালো লাগার সন্ধান করতে করতে প্রতি রাতে আমরা ঘুমুতে যাই, যদি ঘুমের মাঝে কোনো এক দৈববাণী এসে আমাদের ভালো থাকার, ভালো লাগার সূত্র বলে দিয়ে যায়!
ভালো লাগার সন্ধান করতে করতেই আমরা ঘুম থেকে জেগে উঠি, শুরু করি নিত্যদিনের কাজ, হয়তো কোনো কাজের ফাঁকেই খুঁজে পাবো ভালো থাকার, ভালো লাগার সূত্র, এই আশায়!
কিন্তু প্রতিদিন আমাদের ভালো লাগার সন্ধান আমাদের ক্ষণিকের সুখগুলোকে খেয়ে ফেলে, একদম চেটেপুটে! আমরা টেরও পাই না!
১৭ মে, ২০২২
# সকাল থেকে হিব্রণ ছোট ছোট চিরকুট খামের মাঝে পুরছে। অজস্র খাম আর অজস্র ছোট ছোট চিরকুটের আচ্ছাদনে ঘরের মেঝে দেখা যাচ্ছে না। হিব্রণের পাশে আরেকটা সুন্দর বড় লাল খাম রাখা আছে, সবগুলো থেকে আলাদা!
একটা একটা চিরকুট খামে পুরে তার উপর একটা করে নম্বর লিখছে হিব্রণ, ১, ২, ৩, . . . . . . . এভাবে ১১৩ পর্যন্ত। তারপর বড় লাল খামটায় খুব যত্ন করে সবক'টা ছোট খাম পুরে খামের মুখটা ভালোভাবে বন্ধ করে দিলো সে।
লাল খামটা একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে পুরে নিয়ে হিব্রণ তাদের বাগানের একদম শেষ প্রান্তের পেয়ারা গাছটার নিচে চলে গেলো। সেখানে আগে থেকে একটা গর্ত করে রেখেছে সে। পরম যত্নে খামটা গর্তে রেখে আস্তে আস্তে তা মাটি চাপা দিয়ে হিব্রণ তার ঘরে ফিরে আসলো। ঘরে এসেই একটু আগে যেখানে অজস্র খাম আর চিরকুট ছিলো সে মেঝেটায় সটান শুয়ে পড়লো। মাথার নিচে দু'হাত দিয়ে ঘরের সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো, 'চিঠিগুলো পৌঁছবে তো?'
লাল খামটার উপর হিব্রণ সুন্দর করে লিখে দিয়েছিলো:
"সব কটা চিঠি খামে পোরা সারা,
এবার তবে বিদায়ের পালা!"
১৮ মে, ২০২২
# মানুষের দেহে যখন ক্যান্সার বাসা বাঁধে তার অনেক পরে সেটা তার উপস্থিতির জানান দেয়, আর জানান দেয়ার পর মাস খানেকের মধ্যেই মানুষের দেহকে পুরোপুরি কাবু করে ফেলে! অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্যান্সার প্রকাশিত হওয়ার আগেই তার পোষকের দেহে তার জীবনের ৮০% সময় কাটিয়ে দেয়।
বাঁশ মাটির উপরে তার অস্তিত্বের জানান দেয়ারও পাঁচ বছর আগে থেকেই মাটির নিচে তার শেকড় ছড়িয়ে দিতে থাকে, কিন্তু মাটির উপর তার অস্তিত্বের জানান দেয়ার এক থেকে দেড় মাসের মাথায় প্রায় নব্বই ফুট পর্যন্ত বেড়ে উঠতে পারে!
মানুষের জীবনে হুট করে কিছু ঘটে না। যা কিছু দেখে মনে হয় এটা বুঝি হুট করেই ঘটেছে, বুঝে নিতে হবে তার বীজ অনেক আগেই বপন করা হয়ে গেছে!
১৯ মে, ২০২২
# সপ্তাহে ছুটির দিনে আমরা সারা সপ্তাহে আমাদের জমিয়ে রাখা কাজগুলো করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কেউ কেউ এদিন দেরি করে ঘুম থেকে উঠে উচ্চ শব্দে গান শুনতে পছন্দ করে, যেনো এদিন উচ্চ শব্দে গান শুনলে আশেপাশে কারো কোনো সমস্যা হবে না! উচ্চ শব্দে গান ছেড়ে দিয়ে জমিয়ে রাখা পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে তুমি ভাবতে থাকো ঠিক এই মুহূর্তটাই তুমি এর আগেও অনেকবার কাটিয়েছো! ঘুরে ফিরে তুমি পুরনো কিছু গানই সবসময় শুনো, মাঝে মাঝে একটা দু'টো নতুন, সেটাও কদাচিৎ। পত্রিকার পাতা অনেকটা উদ্দেশ্যহীনভাবে উল্টাতে উল্টাতে তুমি হঠাৎ করেই হারিয়ে যাও ভাবনার রাজ্যে, যে রাজ্য থেকে তুমি সহসাই বাস্তবে ফিরে আসো না। তোমার স্ত্রী যথারীতি বাচ্চাদের দেখভালে ব্যস্ত, এর মাঝে কিছু সময় পরপর তোমারও খোঁজ-খবর নিচ্ছে টুকটাক।
সবটুকু ঘটনার জন্য তোমার কাছে একটা অজুহাত সবসময় থাকে, 'আসলে জীবন এমনই!'
আসলে জীবনটা এমন নয়, জীবনের কয়েকটা দিন হয়তো এমন! কারো কারো জন্য হয়তো কখনোই জীবনটা এমন নয়, কয়েকটা দিনের জন্যও নয়!
২০ মে, ২০২২
# জেইমস ক্লিয়ার তার 'অ্যাটমিক হ্যাবিটস' বইয়ের শুরুতে ভালো অভ্যাসের উন্নতি/অবনতি নিয়ে সুন্দর একটা পয়েন্ট বলেছেন। আমরা যদি কোনো একটা ভালো অভ্যাস রপ্ত করার চেষ্টা করি আর প্রতিদিন ১% করে সে অভ্যাসকে উন্নত করতে থাকি তাহলে বছর শেষে আমরা মোটামুটি ৩৭ শতাংশ উন্নতি লাভ করতে পারি। আর যদি প্রতিদিন কোনো ভালো অভ্যাসের ১% করে অবনতি ঘটে তাহলে বছর শেষে আমাদের সে ভালো অভ্যাস মোটামুটি বিলুপ্ত হয়ে পড়বে!
হিসেবটা এমন:
প্রতিদিন ১% উন্নতি হলে বছর শেষে তা হবে, (১+০.০১)^৩৬৫ = ১.০১^৩৬৫ = ৩৭.৭৮
প্রতিদিন ১% অবনতি হলে বছর শেষে তা হবে, (১-০.০১)^৩৬৫ = ০.৯৯^৩৬৫ = ০.০৩
ছোট ছোট পরিবর্তন সত্যিকার অর্থেই একটা সময় বিশাল পার্থক্য গড়ে তোলে।
২১ মে, ২০২২
# আমাদের জীবনের লক্ষ্যগুলো নির্ধারণের সময় আমরা প্রায়শঃই একটা ভুল করে থাকি। লক্ষ্য নির্ধারণের সময় লক্ষ্যবস্তুটাকে এতটাই কঠিন করে ফেলি যে সেটায় অধিকাংশ সময় পৌঁছানো যায় না, বা পৌঁছানো গেলেও অনেক লম্বা একটা সময়ের প্রয়োজন হয়। আর শেষ পর্যন্ত আমরা যখন লক্ষ্যে পৌঁছাই তখন যতটুকু আনন্দিত হবার কথা ততটুকু আনন্দিত হতে পারি না।
আমাদের উচিত আমাদের লক্ষ্যগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নেয়া অথবা এমন সব লক্ষ্য নির্ধারণ করা যেগুলো ছোট ছোট। তাহলে লক্ষ্য পূরণের সময়টা কমে আসবে, লক্ষ্য পূরণের আনন্দগুলোও আর নিরানন্দে ভরে উঠবে না।
সমগ্র পৃথিবী জয় করতে হলে একটা একটা অঞ্চল জয় করেই এগিয়ে যেতে হয়, একসাথে জয় করতে গেলেই যতো বিপত্তি!
আচ্ছা, পৃথিবীর সবাই কি তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে? না, পারে না। কারণ সবাই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে কষ্ট করতে হয় সেটা করতে পারে না। তাই সবার উচিত জীবনে আনন্দিত হওয়ার বিষয়টাকে লক্ষ্য পূরণের সাথে সম্পর্কিত না করা, তাহলে জীবনে আনন্দ ফিরে আসবে ঘুরে ফিরে, কারণে-অকারণে!
২২ মে, ২০২২
# তুমি যদি কারো জন্য ভালো কিছু করতে চাও তাহলে তার কাছাকাছি থেকেই করতে হবে এমন নয়, ভালো করতে চাইলে তা অনেক দূরে থেকেও করা যায়। দেশকে ভালোবাসলে দেশেই থাকতে হবে এমনটা নয়, দেশের উন্নয়ন যেমন দেশের বাইরে থেকেও করা যায়, তেমনি দেশের ভিতরে থেকেও অনেকে দেশের সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এ কথাগুলো কেন বলছি জানো? আজকে আমাদের দেশের একজন স্বঘোষিত ইনফ্লুয়েন্সার ফেসবুকে কারো একজনের স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন, স্ট্যাটাসটা এমন:
স্কুলে "স্বদেশপ্রেম" রচনা লিখে সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়াদের অনেকেই আজ বিদেশে সেটেল্ড।
স্কুলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী যে বয়সে "স্বদেশপ্রেম" রচনা লেখা শুরু করে, আরো সঠিকভাবে বললে মুখস্থ করতে শিখে সে বয়সে দেশপ্রেমের বোধ তৈরি হয় কি না আমার জানা নেই। আর সে বয়সে যা লিখে সবটা লেখকের স্বদেশপ্রেম লিখে, নিজের থেকে লেখার মতো সক্ষমতা সে বয়সে তৈরি হয় না। দেশের বাইরে সেটেল্ড অনেকেই দেশের জন্য যা করেন দেশে থেকে অনেকে তা করতেই পারেন না, শত বছরেও না।
এসব খোচামূলক কথাবার্তা সবার জন্যই ভীষণ পীড়াদায়ক। আমার কোনো কিছুতে পীড়া লাগলে সেটা আমি প্রকাশ করতে পছন্দ করি, পীড়া নিজের ভেতর রেখে সেটাকে আগ্নেয়গিরি বানানোর কোনো অর্থ হয় না।
২৩ মে, ২০২২
# আমাদের সমাজে কিছু জায়ান্ট মানুষ থাকে, যাদের অনেক অনেক ক্ষমতা। তেমন একজন জায়ান্ট মানুষের সাথে একবার আরেক জায়ান্ট মানুষের দ্বন্দ্ব লেগে গেলো। অবস্থা এমন একজনকে পারলে আরেকজন মেরেই ফেলে! তো এই দুই জায়ান্টের প্রথমজন আবার ভাগ্যে খুব বিশ্বাস করেন, তিনি বড় কোনো কাজ করার আগে সবসময় বিখ্যাত এক ভবিষ্যদ্বক্তার সাথে দেখা করতে যান।
যথারীতি এবারও তিনি গেলেন ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে। তাকে দেখে, তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ভবিষ্যদ্বক্তা বললেন, 'শীঘ্রই এই শহরের এক জায়ান্টের পতন হবে তোমার কারণেই।'
কথা শুনে তো গল্পের প্রথম জায়ান্ট বিশাল খুশি! তার সাথে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব চলতে থাকা দ্বিতীয় জায়ান্টের পতন তাহলে হতেই চললো! এই খুশিতেই প্রথম জায়ান্ট এমন একটা কাজ করে বসলো যে কয়েক সপ্তাহের মাঝেই সে দ্বিতীয় জায়ান্টের কাছে ব্যবসায়িকভাবে ভয়াবহ রকমভাবে পরাস্ত হলো।
এই পরাজয়ে সে যতটা না মানসিকভাবে ভেঙে পড়লো তার চেয়ে বেশি রেগে গেলো সেই ভবিষ্যদ্বক্তার উপর! সে এর আগে কখনোই তাকে ভুল ভবিষৎবাণী করে নি! এবার তার কথা শুনেই তার ভুল হয়েছে!
রেগে মেগে আমাদের গল্পের প্রথম জায়ান্ট ছুটে গেলেন ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে। ভবিষ্যদ্বক্তা তাকে দেখেই বুঝলেন এরই মাঝে জায়ান্টের পতন তাহলে হয়েই গেলো! 'আপনি আমাকে এবার ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যার কারণে আমার আজকের এই দশা।'
ভবিষ্যদ্বক্তা শান্তভাবে বললেন, 'আমি বলেছিলাম এই শহরের এক জায়ান্টের পতন হবে তোমার কারণেই, তা কি হয় নি? তুমি কি নিজেকে এই শহরের জায়ান্ট মনে করো না!'
আমাদের মাঝে কিছু কিছু মানুষ থাকে যাদেরকে কেউ হারাতে পারে না, যদি কখনো তাদের হার হয়েই থাকে তাহলে তার জন্য দায়ী তারা নিজেরাই!
২৪ মে, ২০২২
# হিব্রণ ক্লাসের মেধাবী শিক্ষার্থী, গণিতে বেশ ভালো। তার ক্লাসের গণিত বইয়ের সবটাই তার কাছে খুব সহজ মনে হয়। তাকে আরো জটিল গাণিতিক সমস্যা দেওয়ার জন্য ক্লাসের গণিত শিক্ষকের কাছে মাঝে মাঝেই সে বায়না ধরে। গণিত শিক্ষক বিষয়টা পজিটিভলি নিয়ে হিব্রণকে মজার মজার সব গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে দেন। হিব্রণও বেশ আগ্রহ নিয়ে নেমে পড়ে সমস্যার সমাধানে!
হিব্রণের মতো আমাদের মাঝে এমন অনেকে আছে যাদের জীবনে সমাধানের জন্য কঠিন কোনো সমস্যা না থাকলে তাদের খুব বাজে সময় কাটে! মনে হয় জীবন এতটা পানশে কেনো! আমাদের স্রষ্টা আমাদের খুব ভালোবাসেন, আমাদের একটু মন খারাপ হলেই স্রষ্টা অনেক উপলক্ষ্য তৈরি করে দেন তা ভুলে থাকার (অধিকাংশ মানুষ এসব উপলক্ষ্য অনুধাবন করতে পারে না)। তাই আমাদের আশেপাশে জটিল সব সমস্যা দেখে আমরা বুঝতে পারি না এসব সমস্যা এমন সব মানুষদের জন্যই দেয়া হয়েছে যাদের জীবন এমন সব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা ছাড়া একেবারেই পানশে!
*** মানুষের জীবনে কিছু কিছু ব্যথা বা কষ্ট আসে তরঙ্গের মতো, একটা নিয়মিত বিরতিতে সে ব্যাথা বা কষ্ট প্রবল শক্তিতে আঘাত হানে। তবে এমন কষ্টের একটা ভালো দিক হলো তরঙ্গের চূড়া বা খাঁজ অনেক ছোট্ট পরিসরের হয় আর তরঙ্গের এক চূড়া থেকে এক খাঁজ, বা এক খাঁজ থেকে এক চূড়া পর্যন্ত সময়টা বেশ দীর্ঘ হয়।
২৫ মে, ২০২২
# জীবনে মাঝে মাঝে তোমাকে একা হাঁটতে হবে। কিন্তু ঠিক কতটা সময়? কতটা পথ?
যতটা সময়, যতটা পথ একা একা পাড়ি দেয়া যাবে বলে তোমার মনে হয় ঠিক ততটা পথ!
আচ্ছা, তুমি একা কেনো হাঁটবে?
একা হাঁটবে কারণ তোমার জানতে হবে প্রয়োজনে তুমি একা হাঁটতে পারো, অনেকটা পথ, খুব সুন্দরভাবে! যখন জীবনের কঠিন কোনো পথ একা পাড়ি দিতে হবে তখন যেনো তোমার মনে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব না থাকে, যেনো তুমি বুঝতে শিখো তুমি সবটা হয়তো সমাধান করতে পারবে, একা একা!
একা একা হাঁটতে হাঁটতে তুমি নিজের অজান্তে তোমার স্রষ্টার সাথে কখন যে কথা বলতে শুরু করবে তুমি ঠিক বুঝতেও পারবে না! তাই তোমার একা পথ চলায় তুমি কখনোই একা নও!
একা একা পথ চলো
তবু মনে একা নও,
বহুজনের মাঝেও একা
যখন মনে একা হও।
২৬ মে, ২০২২
# প্রতিদিন আমরা ঘর থেকে মূলত দু'ভাবে বের হতে পারি, আজ চমৎকার কিছু হবে সে স্বপ্ন নিয়ে, অথবা একেবারেই কোনো স্বপ্ন ছাড়াই! আমাদের জীবনে প্রতিদিনই চমৎকার কিছু ঘটে, আমরা তার সবটুকু বুঝতে পারি না সেটা ভিন্ন কথা। চমৎকার সব ঘটনার মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকা, গতকালের মতো আজও আমি বেঁচে আছি, এটা কতো চমৎকার বিষয় সেটা আমরা বুঝতেই পারি না! আর যারা একেবারেই স্বপ্নহীনভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে, তাদের দিনগুলো হয় আরো চমৎকার, তারা তাদের সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাকে চমৎকার ঘটনা হিসেবে ভেবে নেয়ার একটা অতিরিক্ত সুবিধা পায়।
এছাড়া আরেক দল মানুষ আছে (মানুষ না বলে সুপার হিউম্যান বলা ভালো!!!) যারা প্রতিদিন ঘর থেকে বের হয় কারো বাড়া ভাতে ছাই ছিটানোর স্বপ্ন নিয়ে, অথবা কেউ ভাত খাওয়ার জন্য হাত ধুতে গেলে সে ফাঁকে ভাতগুলো খেয়ে চম্পট দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে! মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় এদের দুই-এক লোকমা ভাত নিজ হতে খাইয়ে দেই, খাওয়া শেষে মুখটা সুন্দর করে মুছে দিয়ে বলি আবার এসো কিন্তু! দুঃখজনক হলেও সত্যি, এমনটা করতে পারি না!
*** এদের সুপার হিউম্যান উপমা দেয়া গেলেও সুপারম্যান উপমা দেয়া যাবে না, দুইটায় বিস্তর ফারাক!
*** আদর্শ বিসর্জন দিয়ে স্বপ্ন পূরণ করার চেয়ে স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে আদর্শ আকড়ে বেঁচে থাকা শ্রেয়। স্বপ্ন নতুনভাবে দেখা যায় কিন্তু বার বার কারো মাঝে আদর্শ ফিরে আসে না! (বাহ্ কি অসাধারণ একটা কথা বলে ফেললাম!)
২৭ মে, ২০২২
# বিছানায় আধ শোয়া হয়ে অনেকক্ষণ ধরে তুমি বই পড়ছো। সকাল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি হওয়ায় একটু ঠাণ্ডা লাগছে তোমার। বই ছেড়ে উঠে ফ্যানটা অফ করতেও তোমার ইচ্ছে করছে না। একটা সময় ঠাণ্ডা লাগার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তুমি ভাবলে বইটা বন্ধ করে ফ্যানটা এবার বন্ধ করাই যাক। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ফ্যানটা তখনই বন্ধ হয়ে গেলো! এমন না যে ইলেকট্রিসিটি চলে গিয়েছে, লাইট তো দিব্যি জ্বলছে! তুমি বিছানা থেকে উঠে ফ্যানের সুইচটা পরীক্ষা করে দেখলে, সুইচটা বন্ধই! তার মানে ফ্যানের সুইচ অফ করা হয়েছে! কিন্তু তুমি তো ফ্যানের সুইচ অফ করোনি বা বাসায় অন্য কেউ নেই যে সুইচটা অফ করবে!
পুরো ঘটনাটায় তুমি বেশ ভয় পেয়ে গেলে। তখনই ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে দেখতে পেলে এমন ঘটনার একটা নাম আছে, 'টেলিকাইনেসিস' বা 'সাইকোকাইনেসিস'। শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে কোনো বস্তুর স্থান পরিবর্তন করতে পারার প্রক্রিয়াকেই টেলিকাইনেসিস বলে। কিন্তু তোমার এমন কোনো শক্তি আছে বলে তোমার মনে হয় না।
এই ঠাণ্ডা আবহাওয়াতেও তুমি হালকা ঘামতে শুরু করেছ। ফ্যানের সুইচটা ভয়ে ভয়ে অন করে দিয়ে তুমি আবার বিছানায় গিয়ে বসলে। নতুন এই শক্তির পরীক্ষা করার জন্য তুমি আবার মনে মনে চাইলে ফ্যানটা অফ হয়ে যাক! কিন্তু এবার এর ফ্যানটা নিজ থেকে বন্ধ হলো না!
আচ্ছা, বিষয়টার সাথে কি জ্বীন-ভূতের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে!!!
*** তুমি এখনো অনুধাবন করতে পারোনি তোমার মনের কোন স্টেজের ইচ্ছা টেলিকাইনেসিস ঘটাতে সক্ষম! ঠিক যেদিন তুমি তা বুঝতে পারবে, সেদিন বদলে যাবে.........সবকিছু!
২৮ মে, ২০২২
# আজ ইকাবুকার স্কুল বন্ধ। অন্য ছুটির দিনের মতো তাই ইকাবুকার মনটা আজ বেশ ভালো। সকাল থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বারান্দায় বসে বৃষ্টির ঝরে পড়া দেখেই সারাটা সকাল কাটিয়ে দিলো সে। দুপুরের খাবার খেয়ে গল্পের বই পড়তে পড়তে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়লো ঠিক বলতে পারবে না।
ইকারাস অফিস থেকে ফিরেই ইকাবুকাকে খুঁজতে খুঁজতে তার রুমে আসলো। অফিস থেকে ফিরতে আজ বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে। ইকাবুকা তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ইকারাস আস্তে করে ইকাবুকার কপালে একটা চুমু খেয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। নাস্তা করে ইকারাস ছাদে গেলো, সন্ধ্যার পর নিয়মিত সে ছাদে কিছুটা সময় কাটায়।
ইকাবুকার ঘুম ভাঙলো রাত ৯ টার কিছুটা পর। ঘুম থেকে উঠেই বাবার খোঁজে ছাদে চলে গেলো সে। এ সময়টায় তার বাবা সাধারণত ছাদেই থাকে। ছাদে বৃষ্টির পানি জমে একাকার। ছাদ থেকে পানি নামার পাইপের মুখটা কোনোভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বোধহয়।
ইকারাস ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো, সিড়িতে পায়ের আওয়াজ শুনে পেছন ফিরে তাকাতে সে ইকাবুকাকে দেখতে পেলো। ছেলেকে দেখে ইকারাস একটা মৃদু হাসি দিলো, ইকাবুকাও মৃদু হেসে তার বাবার পাশে এসে রেলিং ধরে দাঁড়ালো।
হঠাৎ করেই ইকারাস বললো, 'আব্বু, তুমি একটু দাঁড়াও, আমি এখনি আসছি!' ইকারাস দুই মিনিট পরেই আবার ছাদে ফিরে আসলো, তার হাতে একটা পুরনো খাতা।
খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ইকারাস নৌকা বানাতে শুরু করলো, কয়েক মিনিটেই বেশ কয়েকটা নৌকা বানানো হলো। 'আব্বু, নাও, এগুলো তোমার জন্য। এগুলো ছাদের পানিতে ভাসিয়ে দাও। আমি যখন তোমার মতো ছোট্টটি ছিলাম তখন আমার মা আমাকে এমন কাগজের নৌকা বানিয়ে দিতো আর আমি বাড়ির পুকুরে তাদের ভাসিয়ে দিতাম। বেশ মজা হতো!' - ইকারাস বললো।
ইকাবুকা বাবার কথামতো নৌকাগুলো ছাদের উপর জমে থাকা পানিতে ভাসিয়ে দিলো। হালকা বাতাসে নৌকাগুলো আস্তে আস্তে ভাসতে শুরু করলো! ইকবুকার মনটা অসম্ভব ভালো লাগায় ভরে উঠলো, সে আগে কখনো এমনভাবে কাগজের নৌকা পানিতে ভাসায়নি।
সারাদিন বৃষ্টি শেষে আকাশ এখন একদম মেঘমুক্ত, চাঁদটা এতটা সুন্দর আর কাছে দেখাচ্ছে যে মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে! ইকারাস ছাদের জমে থাকা পানি মাঝেই শুয়ে পড়লো। ইকাবুকাও তার বাবার দেখাদেখি দুই হাতের উপর মাথা রেখে ছাদের মাঝে শুয়ে পড়লো। চাঁদ আর ছাদের পানি মিলেমিশে একাকার! তার মাঝে কাগজের নৌকাগুলো দেখে মনে হচ্ছে চাঁদের বুকেই সেগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে!
আচ্ছা, চাঁদের মতো এমন কিছু কি আর আছে, যা অনেক দূরে থেকেও আমাদের খুব কাছে থাকার অনুভূতি দেয়?
২৯ মে, ২০২২
# মাঝে মাঝে আমি ভাবি স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করতে হলে আসলে আমাদের কি করা উচিত? ধর্মীয় যে বিধি নিষেধ আছে তা মেনে চললেই কি স্রষ্টা সন্তুষ্ট হবেন? হবেন অবশ্যই। কিন্তু যে স্রষ্টার সৃষ্টিতে এত বৈচিত্র্য, যে স্রষ্টা পরম দয়ালু, পরম ক্ষমাশীল, তিনি সন্তুষ্ট হবেন এমন কাজের পরিধিটাও নিশ্চয়ই অনেক অনেক বড় হবে! মানুষ তার নিজের সংকীর্ণতার কারণেই হোক বা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণেই হোক, স্রষ্টার সন্তুষ্টিকে একটা ছকে বেঁধে রাখে।
মানুষ অবসর সময়ে নানান ধরণের ছক কষে- ভবিষ্যতের ছক, জীবনে উন্নত হবার ছক, সুস্থ থাকার ছক....এই ছকের কোনো শেষ নেই! তবে বেশীরভাগ ছকই দুনিয়াকেন্দ্রিক, আর দুনিয়াকেন্দ্রিক যতো ছক আছে তার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর ছক হলো অতীতকে মেপে মেপে স্মরণ করার ছক!
জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে এই ছক কষার সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক! যার জীবন যতো বেশী ঘটনাবহুল, তার জীবন তত কম ছক মেনে চলে! কম ঘটনা সমৃদ্ধ জীবনের তুলনায় ঘটনাবহুল জীবনের স্মৃতি বেশী হওয়া সত্ত্বেও ঘটনাবহুল জীবনের স্মৃতি ধারণে মস্তিষ্কে কম স্টোরেজ খরচ হয়, মস্তিষ্কের স্টোরেজের একটা বিশাল অংশ এসব অপ্রয়োজনীয় ছক ধারণ করতে করতেই খরচ হয়ে যায়।
আমিও ছক কষতে বসেছি, আরো ২১৬ দিন কিভাবে এবং কি নিয়ে লিখবো! আদৌ শেষ পর্যন্ত লিখতে পারবো কি না জানা নেই।
৩০ মে, ২০২২
# ঠিক এই মুহূর্তে তোমার কি বলা উচিত? তোমার কি আদৌ কিছু বলা উচিত?
তোমার মাথায় কি কোনো শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছে? বা শব্দগুচ্ছ? তুমি কি কি শব্দ নিয়ে ভাবছো আমি কি অনুমান করতে পারি? হুমম.... চেষ্টা করে দেখি! তুমি ভাবছো 'ঘুম' নিয়ে, অথবা ভাবছো গ্রীষ্মের প্রচন্ড 'গরম' নিয়ে, যে গরম তোমার রান্না ঘরের চুলোয় ফুটন্ত চালের চেয়ে বেশী উষ্ণতা ছড়ায়। হয়তো তুমি ভাবছো 'সিলিং ফ্যানটা' নিয়ে, যার পাখাগুলো ঘুরছে অনেক জোরে তবুও কোথাও যেনো কচ্ছপের সাথে মিলে যায় তার গতি! ঠিক তখনি তোমার মাথায় একটা গল্প খেলে যায়, গল্পের নামটাও, "দুরন্ত কচ্ছপ!"
হয়তো তুমি ভাবছো আরো অনেক অনেক কিছু, কিন্তু আমি নিশ্চিত তুমি 'তোমাকে' নিয়ে ভাবছো না, একটুকুও না, সে সময় কোথায় তোমার! এই 'তুমি'-টা তুমি, (আমি,) সবাই..... অথবা এই 'তুমি'-টা শুধুই তুমি! এই 'তুমি'-টা আমি নই, কারণ আমি আমাকে নিয়ে ভাবি, ভাবনাগুলো হয় ঠিক ঐ দুরন্ত কচ্ছপের মতো, যেটা কোনো একটা টাইমফ্রেমে বেশ দ্রুত!
৩১ মে, ২০২২
# আমাদের মনে সবসময় ঘুরতে থাকে নানান সব প্রশ্ন। আমরা সবসময় ব্যস্ত থাকি এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে। কিন্তু আশ্চর্যরকমভাবে এসব প্রশ্ন কখনোই শেষ হয় না, কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজে পেলেও সাথে খুঁজে পাই আরো কিছু নতুন প্রশ্ন! একটার পর একটা প্রশ্ন জমতে জমতে অনেক সময় কিছু কিছু প্রশ্ন হারিয়ে যায় যেগুলোর উত্তর জানা হয়তো আমাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এসব প্রশ্ন-উত্তরের সাথে আমাদের আশপাশের মানুষজনের একটা সরাসরি সম্পর্ক থাকে। আমাদের আশেপাশের মানুষ যত বেশী বুদ্ধিমান হয় আমাদের মনে ততো বেশী প্রশ্নের উদয় হয়। তবে এসব প্রশ্নের মাঝে অধিকাংশেরই উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যাটা হয় যখন আমাদের চারপাশের মানুষজন তুলনামূলক কম বুদ্ধিমান হয়। তখন আমাদের মনে তেমন একটা প্রশ্নের উদয় হয় না, আবার এসব প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে পাওয়া হয় না!
লক্ষ্য করলে দেখতে পাবে, পৃথিবীতে যতো কিছুতে সমানুপাতিক সম্পর্ক দেখা যায় তার চেয়ে বেশী দেখা যায় ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক। তাই মানুষ তার বিপরীতধর্মী মানুষ দ্বারাই বেশী আকৃষ্ট হয়, সমধর্মী মানুষ তার কাছে অনেকটা লবণ বিহীন তরকারির মতো!
*** আচ্ছা লেখার সাথে ভুট্টার ছবি কেনো দিয়েছি বলতে পারো? একটা সম্পর্কতো অবশ্যই আছে, চিন্তা করে বের করো।
০১ জুন, ২০২২
# আমরা প্রায় সময়ই আমাদের অনেক প্রয়োজনীয় কাজ নিয়মিতভাবে করি না। যখন করি হয় একসাথে অনেক বেশী করে ফেলি, বা না করলে একেবারেই করি না! মাঝে মাঝে মনে হতে পারে এটাই বোধহয় সঠিক, এটাই বোধহয় স্বাভাবিক। কিন্তু আসলেই কি তাই?
প্রিয় মানুষটাকে প্রতিদিন শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি না বলে যদি পুরো সপ্তাহের/মাসের সকাল বা রাত্রিদের শুভ হওয়ার প্রত্যাশায় একসাথে অনেকগুলো শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি বলা হয় তাহলে কেমন লাগবে বিষয়টা? অবশ্যই ভালো লাগবে না। আবার প্রিয় মানুষটাকে কখনোই যদি শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি বলা না হয় তাহলে সেটাও কি ভালো দেখায়? অবশ্যই না। তবে এ বিষয়গুলো খুব একটা যে গুরুত্বপূর্ণ তা কিন্তু নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে উদাহরণ অন্য কোনো সময় দেয়া যাবে।
তবে, এত শত বিষয়ের মাঝে একটা বিষয় আছে যেটা প্রয়োজনীয়, কিন্তু কেবল একবারই করতে হয়। কোনো কিছু ভুলে যাওয়ার কাজটা একবারই করতে হয়, বারবার করতে যাওয়া এর আগেরবার ভুলতে না পারাকেই বোঝায়।
*** মাঝে মাঝে আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের দেহের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়, তখন আমাদের দেহ খুব করুণভাবে আমাদের মস্তিষ্ককে বলে,
'শেষমেশ আমি হয়তো মরেই যাবো-
দৈহিক মৃত্যুর আগে, তোমার নীরবতায়!'
০২ জুন, ২০২২
# সন্ধ্যা থেকে এ আর রহমান এর 'কুন ফায়াকুন' গানটা শুনছিলাম। বেশ কয়েকবার শুনলাম, বেশ কয়েকবার। আগে গানটা শুনলেও আজকের মতো মনোযোগ দিয়ে আগে কখনো শোনা হয়নি। গানটার মাঝে স্রষ্টার স্রষ্টাত্ব যেমন বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তেমনি চেষ্টা করা হয়েছে আমাদের প্রতি স্রষ্টার অনুগ্রহও বোঝানোর।
গানটার মাঝে যে দুইটি শব্দ বার বার এসেছে 'কুন' আর 'ফয়াকুন', শব্দ দুইটি পবিত্র কুরআন মাজীদেও এসেছে। শব্দ দুইটি কুরআনের আটটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে এসেছে, আবার আলাদাভাবে 'কুন' শব্দটি দুইবার আর 'ফয়াকুন' শব্দটি একবার কুরআনে এসেছে।
শব্দ দুইটি মহান স্রষ্টার সবচেয়ে আশ্চর্যজনক একটি ক্ষমতাকে নির্দেশিত করে, তিনি যখন বলেন, 'হও', তখনই তা 'হয়ে যায়'।
তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর নির্দেশনা কি? সবচেয়ে সুন্দর নির্দেশনা হচ্ছে যখন তিনি আমাদের এই স্বল্প দিনের আবাসস্থল পৃথিবী থেকে তাঁর কাছে ডেকে নেন! এই নির্দেশনা কিন্তু তিনি দিয়েই দিয়েছেন আমাদের এই জীবন শুরুরও আগে, যখন বলেছিলেন 'হও', ঠিক তখনি!
আমরা সবাই সেই অনুমোদিত সময়ের ঘণ্টা বাজার অপেক্ষায় আছি, চেতন বা অবচেতন বা একেবারেই অচেতন অবস্থায়!
*** আচ্ছা, আমাদের মস্তিষ্কের এক একটা সেল কি পরিমাণ তথ্য ধারণ করতে পারে? গবেষণায় দেখা গেছে সংখ্যাটা অস্বাভাবিক বড়! এক পেটাবাইট! অর্থাৎ দশ লক্ষ গিগাবাইট! ভাবা যায়! আর আমাদের অনেকেই তার মস্তিষ্কের সবকয়টা সেল পূরণ করে ফেলেছে তার 'আমিত্ব' দিয়ে! এতো এতো 'আমি' দিয়ে শেষ পর্যন্ত হবেটা কি!
০৩ জুন, ২০২২
# ধরো তুমি একটা পথ ধরে হাঁটছো। তুমি হাঁটছো স্বাভাবিক গতিতে। তোমার চোখজোড়া চলার পথে আবদ্ধ নয়, তুমি আশপাশ দেখছো, তবুও তুমি অনেকটা সরল পথেই হেঁটে চলেছ।
এবার তুমি তোমার চোখ বন্ধ করে মোটামুটি সরল পথে হাঁটার চেষ্টা করো। ভয়ে ভয়ে পা ফেলে কিছুটা পথ পেরিয়ে চোখ খুলে দেখলে তুমি চলার পথ থেকে ডান বা বাম যেকোনো একদিকে অনেকটা সরে এসেছ! আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো তুমি যদি বাম দিকে সরে যাও তাহলে যতবারই এভাবে হাঁটবে বাম দিকেই সরে যাবে, কখনো ডান দিকে সরে যাবে না! আর যে ডান দিকে সরে যাবে সে সবসময় ডান দিকেই সরে যাবে।
পথের দিকে না তাকিয়েও চোখ খোলা রেখে আমরা অনেকটা সরল পথে হাঁটতে পারলেও চোখ বন্ধ করলে তা আর করতে পারি না! একজন অন্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রে কিন্তু এমনটা হয় না, একজন অন্ধ মানুষ লাঠির সাহায্য নিয়ে মোটামুটি সরল পথেই এগিয়ে যেতে পারে।
এমনটা কেনো হয় বলতে পারো? আমি এর বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা জানি না, তবে আমার মনে হয় আমরা চোখ বন্ধ করার পর আমাদের নিজের পায়ের উপর আর আমরা আর আস্থা রাখতে পারি না, অন্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই, কিন্তু তার হাতের লাঠি তার সেই আস্থার ঘাটতি পূরণ করে দেয় বলে সে মোটামুটি সরল পথে হাঁটতে পারে।
০৪ জুন, ২০২২
# হঠাৎ তুমি নিজেকে আবিষ্কার করলে সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা জায়গায়। সেখানে তোমার সাথে আরো অনেকেই আছে, কিন্তু কেউই একদম তোমার মতো নয়, তাদের দেখে মনে হচ্ছে অন্য কোনো দেশের বাসিন্দা। তুমি একজনকে তার দেশের নাম জিজ্ঞেস করলে উত্তরে সে বললো হন্ডুরাস। তুমি উত্তরটা শুনে অবাক হলে, তার চেয়ে বেশী অবাক হলে তার মুখের ভাষা বুঝতে পেরে! সে তার নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছে যেটা তুমি জানো না, তারপরও তার কথা বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি তোমার! এমনকি তোমার বলা আঞ্চলিক ভাষার কথাও হন্ডুরাসের লোকটা বুঝে নিয়েছে!
কিছু বুঝতে পারছো না দেখে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলে তুমি। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা দেওয়ালে লিখা দেখলে- "ভালো যেথায় মন্দ, মন্দ সেথায় ভালো! মন্দ তোমায় জীবন দিবে, ভালো দিবে মৃত্যু!" কথাটির মর্মার্থ বুঝতে পারছো না তুমি। কিছুদূর যাওয়ার পর আরেকটা দেওয়ালে লিখা দেখলে- "অপেক্ষা করো, অপেক্ষা তোমায় জীবন দিবে। দেখে শিখো। তবে, অপেক্ষাই জীবন। দেখার পর ভাবতে শিখো। মনে রেখো, অপেক্ষাই জীবন!" এই কথারও আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছো না তুমি! আরো কিছুদূর এগোনোর পর তোমার বেশ ক্ষুধা লাগলো। খানিকটা দূরে তুমি বেশ কিছু ফলের গাছ দেখতে পেলে। খাবার সন্ধানে তুমি হেঁটে গেলে সে গাছগুলোর দিকে। তোমার সাথে হন্ডুরাসের সে মানুষটাও হাঁটছে। খুব সম্ভবত সে ও ক্ষুধার্ত! ফলের গাছের কাছে আসতেই তুমি লক্ষ্য করলে এখানে অনেক ধরণের ফল গাছ থাকেলও একই ফলের গাছ কেবল একটিই! আর অনেক ফল গাছ তোমার অপরিচিত, জীবনে কখনো দেখেছো বলে মনে পড়ছে না! তুমি কোন ফলটা খাবে ভাবছো, এর মাঝেই হন্ডুরাসের মানুষটা একটা আম গাছ থেকে একটা আম নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। খাওয়ার একটু পরই তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে হতে লোকটা মারা গেলো! পুরো ঘটনায় তুমি এতটাই হতভম্ব হয়ে গেলে যে একটু এগিয়ে মানুষটার পাশেও গেলে না।
তুমি এখন কি করবে বুঝতে পারছো না। একদিকে প্রচন্ড ক্ষুধা, অন্যদিকে ফল খেয়ে মারা যাওয়ার ভয়! ভাবতে ভাবতে দেওয়ালে লেখা কথাগুলো মনে পড়লো তোমার! "ভালো যেথায় মন্দ, মন্দ সেথায় ভালো! মন্দ তোমায় জীবন দিবে, ভালো দিবে মৃত্যু!" আম একটা ভালো ফল, যেটা খেয়ে হন্ডুরাসের মানুষটা মারা গিয়েছে একটু আগে। তাহলে নিশ্চয়ই তার জানা বিষাক্ত কোনো ফল খেলে তার ক্ষুধাও মিটবে, জীবনও সংকটে পড়বে না!
দেওয়ালে দেখা দ্বিতীয় লাইনটাও তোমার মনে পড়লো, "অপেক্ষা করো, অপেক্ষা তোমায় জীবন দিবে। দেখে শিখো। তবে, অপেক্ষাই জীবন। দেখার পর ভাবতে শিখো। মনে রেখো, অপেক্ষাই জীবন!" তুমি যদি হন্ডুরাসের লোকটার আগে ফলটা খেয়ে নিতে তাহলে তুমিই মারা যেতে, তুমি কিছুটা অপেক্ষা করেছো। লোকটার মৃত্যুর পর মৃত্যুর ধরণ ও কারণ নিয়ে ভেবে তুমি একটা সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছো। তুমি বুঝতে পেরেছো তোমায় কি খুঁজতে হবে, বিষাক্ত একটা ফলের গাছ!
ভাবতে ভাবতে তুমি হঠাৎ করে একটা কক্ষে নিজেকে আবিষ্কার করলে! তোমার সমস্ত শরীর কাঁপছে। তোমার ছোট্ট একটা অপারেশন হয়েছিলো কিছুক্ষণ আগে, চেতনানাশকের প্রভাবে তুমি বেশ খানিকটা সময় অচেতন ছিলে। অপারেশনের আগে তোমায় ডাক্তার বলেছিলো অপারেশনের পর কি কি খেতে পারবে আর কি কি খেতে পারবে না!
এতক্ষণ তোমার মস্তিষ্ক তোমাকে নিয়ে কি একটা অদ্ভুত ভ্রমণ করে আসলো! তবে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন, এতসব দেশ থাকতে তোমার সাথে একজন হন্ডুরাসের মানুষের দেখা কেনো হলো? পুরো ভ্রমণটায় তুমি একবারও তোমার নিজেকে দেখেছো? তোমার মস্তিষ্ক তোমায় নিয়ে অদ্ভুত ভ্রমণ করে আসলো, তুমি আর তোমার মস্তিষ্ক কি ভিন্ন সত্ত্বা?
মানুষ যেদিন একজন জীবিত মানুষের মস্তিষ্কের সাথে সদ্য মৃত মানুষের দেহের সংযোগ কোনোভাবে ঘটাতে পারবে, সেদিন হয়তো একটা মস্তিষ্ক দিয়ে হাজারটা দেহ নিয়ন্ত্রিত হবে! একটা সূক্ষ্ম মস্তিষ্ক হয়তো সেদিন সবচেয়ে মূল্যবান যন্ত্রের জায়গাটা দখল করে নেবে! একটা সূক্ষ্ম মস্তিষ্কের মানুষ তার দেহটাকে যেভাবে সূক্ষ্ম কাজে নিয়োজিত করে, তখন হয়তো হাজারটা দেহে সে সূক্ষ্মতা ছড়িয়ে পড়বে মুহূর্তেই!
আচ্ছা, নিউরনের নেটওয়ার্ক তৈরি করা আসলেই কি সম্ভব!
০৫ জুন, ২০২২
# আজকের দিনটা ভয়ংকর কষ্টের। কিছু কিছু কষ্ট একজনের হয় না, হয়ে উঠে সবার। এমন কষ্ট আর না আসুক, কখনোই না আসুক।
ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন
চারিদিকে আর্তনাদ আর বিস্ফোরণের শব্দ!
কি হয়েছে ঠিক! আমি বুঝতে পারছি না এখনো!
শুধু বিকট একটা শব্দ! আর কিছু মনে নেই আমার।
আমি পড়ে আছি খোলা আকাশের নীচে,
আমার আশেপাশে আছে আরো অনেকেই!
আকাশ এতটা লালচে হয়? আগে জানতাম না!
উঠে বসার চেষ্টা করতে যেয়ে পারলাম না।
হাতে ভর দিয়েও কেনো জানি পারছি না উঠতে!
আমার হাত কই! আমি প্রচন্ড ভয় পাচ্ছি, প্রচন্ড!
আমি কি ঘুমিয়ে আছি? ঘুমের মাঝে ভয়ংকর-
কোনো স্বপ্ন কি এটা! আমাকে কেউ ডাকো প্লিজ,
প্রচন্ড ভয়ের এ স্বপ্ন থেকে আমায় ডেকে তোলো।
আমার আশেপাশে যারা আছে তারাও কি ঘুমিয়ে?
কারো কোনো শব্দ নেই কেনো? একটা শব্দও না!
হঠাৎ করেই আমি একটা প্রচন্ড শব্দ শুনতে পাচ্ছি,
শব্দটা আমার হৃৎপিণ্ডের, প্রচন্ড সে শব্দ!
লালচে আকাশে সাদা চাঁদটা দেখতে বাজে লাগছে,
চোখটা বন্ধ করে ফেলাই ভালো। ভয়ংকর আকাশ,
ভয়ংকর চাঁদ, হৃৎপিণ্ডের শব্দ, ভালো লাগছে না।
কেউ আমাকে একটু ডেকে তুলবে প্লিজ?
ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া এটা কি আর কিছু?
০৬ জুন, ২০২২
# আমরা যখন বুড়িয়ে যেতে শুরু করি তখন আমাদের অনেকের দৃষ্টিশক্তি দূর্বল হয়ে পড়ে। চোখের কাছের জিনিস বা চোখ থেকে অনেক দূরের জিনিস দেখতে আমাদের অনেকের বেশ সমস্যা হয়, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। কিন্তু আমাদের সাথে কেউ অন্যায় করলে সেটা আমরা ভুলতে পারি না, বা ভুলতে চাইও না! আমাদের সাথে অন্যায়কারী আমাদের কাছে থাকুক বা দূরে থাকুক, তার স্মৃতি হয়তো ঝাপসা হতে হতেও শেষ পর্যন্ত ঝাপসা হয় না!
কিন্তু আমরা চাই আমাদের নিজেদের করা অন্যায়গুলো স্রষ্টা ভুলে যাক (যদিও আমরা জানি তিনি কিছুই ভুলেন না), আমাদের করা অন্যায়গুলোর জন্য আমাদের কোনো কিছুই যাতে করা না হোক! আবদারটা বড্ড বেশী হয়ে যায় না? হুম, বড্ড বেশীই! কিন্তু এই আবদার করা যাবে, কারণ তিনি আমাদের মতো নন, তিনি চাইলেই ক্ষমা করতে পারেন, যেটা আমি আপনি চাইলেই অনেক সময় পারি না।
আমাদের অনেকেই মেনে নেই স্রষ্টা আমাদের সাথেই আছেন, আমাদের মাঝেই আছেন। আমরা স্রষ্টা ধারণ করতে পারি, কিন্তু তার গুণাবলী ধারণ করতে পারি কি! ধারক হিসেবে মানুষ অত্যন্ত নিম্ন মানের। মানুষ স্রষ্টার এমন সব গুণাবলী ধারণ করে যা শুধুমাত্র স্রষ্টাকেই মানায়, যেমন- অহংকার!
মাটির পাত্র তৈরির শুরুর দিকটায় তাকে যে কোনো ধরণের আকৃতি দেয়া যায়। সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় উত্তম ধারক যেমন তৈরি করা যায়, তেমনি হাতের নৈপুণ্যের অভাবে এমন ধারক তৈরি হয় যা অনেকটা অকেজো হয়ে আবির্ভূত হয়। আমার মনে হয় স্রষ্টা মানুষকে এ কারণেই মাটি দিয়ে বানিয়েছেন!
মাটির তৈরী ধারককে মানুষের সাথে তুলনা করা হলেও ধারক তৈরির হাতটাকে স্রষ্টা ভেবে ভুল করি অনেকেই! স্রষ্টা মাটি দিয়েছেন, পানি দিয়েছেন, ধারক তৈরির হাতটাও দিয়েছেন! তাহলে ধারক তৈরির এই হাতটা আসলে কি বলতে পারবে? একটু চিন্তা করলে বুঝতে পারার কথা।
০৭ জুন, ২০২২
# আমাদের মাঝে এমন অনেকে আছে যারা অন্য মানুষের থেকে কোনো প্রকার অনুগ্রহ নিতে আগ্রহী নয়। এমন মানুষের চলার পথে অন্য কোনো মানুষ একটু বাড়তি স্বস্তি দিতে এগিয়ে আসলে তারা সেটাকে অনুগ্রহ বলেই ধরে নেয়।
কিন্তু তাদের চলার পথে তাদের স্রষ্টার করা হাজারটা অনুগ্রহকে তারা অনুগ্রহই মনে করো না! মনে করে এগুলো তাদের নিজ গুনে তারা অর্জন করেছে! তারা তাদের সুখের জন্য দায়ী ভাবে একজনকেই, আর সেটা তাদের নিজেদেরকেই! নিজের সুখের জন্য অন্য কেউ দায়ী, সেটা তারা মেনে নিতে পারে না! তাদের কাছে মনে হয় সুখ একটা পাত্রে থাকে, আর তাদের সে সুখপাত্র পূরণে তারা অন্যের অংশগ্রহণ সহজভাবে মেনে নেয় না, সেটা তাদের কাছে এক ধরণের দূষণ ছাড়া কিছুই নয়!
আমার মতে 'সুখ' ধারণাটার সাথে 'সময়' এর একটা মিল আছে। সুখ আসলে কি? এটা কেমনই বা হয়!সুখ মানে কিছু সময়, যেটা সাধারণ সময়ের চেয়ে একটু বেশী ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। সময়ের যেমন কোনো ধারক থাকে না, সময় যেমন কোনো স্থান দখল করে না, সুখেরও কোনো ধারক নেই, সুখও কোনো স্থান দখল করতে পারে না। সুখের ধারক থাকে না বলেই কোনো বিষয়ে আমাদের সুখ একটা সময় পর হারিয়ে যায়! এটা স্থান দখল করে না বলেই পৃথিবীর সব সুখ আমাদের চেপে ধরে মেরে ফেলতে পারে না!
আবার যদি ধরে নেই সুখ সুখপাত্রেই থাকে, তাহলে সুখপাত্রটা নিশ্চয়ই ছাকনির মতো কোনো পাত্র হবে, ছাকনির ছিদ্র দিয়ে যতক্ষণ সবটা সুখ পড়ে না যায় ততক্ষণ আমরা সুখী থাকি! এভাবেই একটা সময় পর সুখ হারিয়ে যায়।
০৮ জুন, ২০২২
# জীবনে ভয়ংকর কোনো কাজ করার আগে যদি তুমি ভয় পাও, তবে তা ঠিক আছে। ভয়ংকর বিষয়ে ভয় পাওয়া মানে তুমি ঠিকঠাক আছো। ভয়কে ধারণ করে ভয়ংকর কাজের সমাধান করতে পারলেই ধরে নেয়া যায় তুমি সাহসী (মোটামুটি কথাটা সঠিকই বলা যায়)।
আর যদি ভয়ংকর কোনো কাজ দেখে তোমার ভয় না লাগে? তুমি যদি খুব সহজেই ভয়ংকর কাজটা করেও ফেলো, তাহলেও কি তুমি আসলে সাহসী? না, তোমাকে ঠিক সাহসী বলা যায় না। তোমাকে বড়োজোর বলা যায় বোকা! কারণ তুমি ভয়কে ঠিক ভয় হিসেবে বুঝতেই পারো নি! তুমি যে সাফল্য পেয়েছো সেটা কেবলই দৈবক্রমে!
পৃথিবীর সবচেয়ে মজার খেলনা হলো মানুষ! মানুষকে নিয়ে খুব ভালো খেলতে পারা মানুষটা খেলনা হিসেবেও খুব ভালো! ভালো খেলোয়াড় হতে হলে আগে নিজেকে ভালো খেলনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। তবে সব খেলোয়াড় খেলনা হতে পারলেও সব খেলনা খেলোয়াড় হতে পারে না! আচ্ছা, তুমি কি একজন খেলোয়াড়? না কি খেলনা?
মানিক বন্দোপাধ্যায়ের "পুতুলনাচের ইতিকথা" বইটা সুন্দর, বেশ সুন্দর! আমার লেখার সাথে যদিও এটার কোনো সম্পর্ক নাই!
০৯ জুন, ২০২২
# মাঝে মাঝে নিজের পুরাতন লেখা পড়ে সময়ের সাথে সাথে নিজের ভাবনার বিবর্তন বুঝতে পারলেও ভাবনার বিবর্তনের কারণ হয়তো পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারি না! তবে মনে হয় ভাবনার বিবর্তনটা খুব জরুরী, ভাবনার বিবর্তনে 'এলেবেলে' থেকে 'অলস ভাবনা', তারপর 'হজপজ'...... এরপর?
সময় নিয়ে একটা সময়ের ভাবনা:
বর্তমানটা এত দ্রুত অতীত হয়ে যায় যে আমরা বুঝতে পারি না আমরা যা কিছু ভাবছি সবটাই আসলে অতীত! বর্তমান নিয়ে ভাবনাটা আসলে ভবিষ্যৎ নিয়েই ভাবা বা প্রকৃতঅর্থে বলতে গেলে আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের অতীতেই পরিকল্পনা করি! আমার লেখার প্রতিটা শব্দ লিখা শেষ হবার মুহূর্তে বা তারও আগে অতীতে প্রবেশ করছে! কি রোমাঞ্চকর! সময়ের শুরু এবং শেষ দুইটাই আছে। সময়হীন অনুভূতি কেমন হবে সেটা আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় আসলে।
সময়টাকে আমি দেখি বেলুনের মত, একই সময়কে ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ব্যাপ্তি নিয়ে অনুভব করে। কেউ কেউ আলসেমী করে হোক বা না জেনেই হোক, সারাজীবনে সময়ের বেলুনটা ফোলায় না, তার সময়ের শুরু আর শেষের মাঝখানটা হুট করেই কেটে যায়। আর কেউ কেউ এমনও থাকে যারা অনেক ছোট্ট ব্যাপ্তির জীবনের বেলুনকে ফুলিয়ে ফুলিয়ে সময়টাকে করে তোলে মহিমান্বিত, ভীষণ ভালো লাগা কিছু অনুভূতি নিয়ে সে সময়ের যাত্রাটা শেষ করে!
সময়টাকে বাড়িয়ে নাও, একই সময়ে অন্যের চেয়ে বেশী বাঁচতে শিখো, অন্যকেও বাঁচতে শিখাও।
** সবশেষে আশফাক নিপুণের ওয়েব সিরিজ 'মহানগর' এর একটা সংলাপ ধার করি, 'দুইটা কথা মনে রাখবা, আমি ভালো মানুষ, আর ভালো মানুষ বেশিদিন বাঁচে না। হা হা হা।'
১০ জুন, ২০২২
# আমরা মানুষেরা এক অদ্ভুত সৃষ্টি। স্রষ্টার সাথে শয়তানের লড়াইয়ের মাঝে পড়ে মানুষ আরো বেশী অদ্ভুত আচরণ করে বসে মাঝে মাঝে (যদিও এ ক্ষেত্রে লড়াই শব্দটা সঠিক শব্দ নয়, তবে এটা প্রকাশের অন্য কোনো শব্দও আমি খুঁজে পাচ্ছি না)। এই অদ্ভুত আচরণ করো তুমি, আমি, সবাই!
স্রষ্টা আর শয়তান, দুইটা পক্ষ বিবেচনা করলে প্রত্যেক মানুষকে যে কোনো একটা পক্ষ অবলম্বনকারী হিসেবে বিবেচনা করা যায়। শয়তানের রোল প্লে করা মানুষগুলো বেশ ঠিকঠাক তাদের রোল প্লে করে যাচ্ছে, কিন্তু স্রষ্টার পক্ষ অবলম্বনকারী মানুষগুলো একটু বেশীই আত্মপ্রসাদে ভুগতে থাকে, ফলে তাদের যে রোল প্লে করার কথা সেটা তারা করতে পারছে না। একটু ভেবে দেখলে দেখতে পাবে শয়তানের বাণী প্রচারে মানুষ শান্ত থাকতে পারলেও স্রষ্টার বাণী প্রচারে মানুষ কেমন যেনো উত্তেজিত হয়ে পড়ে। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে শয়তানের বাণী কেউ মেনে না নিলে তাকে শত হাজারবার তা শান্তভাবে শোনানোর কাজটা করে যাওয়া হলেও স্রষ্টার বাণী কেউ মেনে না নিলে সে বাণীর প্রচারক উত্তেজিত হয়ে পড়ে, অথচ এমনটা হওয়া উচিত ছিলো না!
স্রষ্টার অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়ে যেখানে আরো নমনীয় হওয়ার কথা সেখানে সেটা হচ্ছে না, বরং অনুগ্রহপ্রাপ্তরা অন্যের ভুল ধরতে ধরতেই তার সময় শেষ করে বেড়ায়। অথচ শয়তানি করা একটা মানুষ আরেকটা শয়তান মানুষকে বলে না, 'তোমার শয়তানি ঠিক মতো হচ্ছে না, আরেকটু ভালো করে শয়তানি করো!'
মূল সমস্যাটা কোথায়? সরল পথে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব না খুঁজে তা খোঁজা হচ্ছে কিছু ছকে বাঁধা পথে! এই পথের বাইরে একটা কদম ফেলার সাহস তোমার হয়না! অথচ শয়তানি করার কোনো ছকে বাঁধা পথ নেই! ছকহীনভাবে ছকে বাঁধা পথে চলা মানুষদের মনে আত্মপ্রসাদ সৃষ্টি খুব একটা কঠিন কিছু নয়!
*** তুমি কি জানো, তোমার মন খারাপের সময়ে তোমার খেয়াল রাখা মানুষটাকে তুমি তোমার মন ভালোদের সময় মনে রাখো না! তোমার মন খারাপের সঙ্গী তবুও তোমার মন খারাপের দিনে ঠিকই তোমাকে সঙ্গ দিবে! এমনটা করি আমিও, এমনকি এমনটা করে সবাই!
*** পাখিরা অবসরে তাদের প্রিয় বৃক্ষে বসে সময় কাটায়। বৃক্ষটা যখন মারা যায় তখন পাখিরা অনেক আকুপাকু করে, যেটা অধিকাংশ সময় তাদের মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়ী হয়! মানুষ কখনো পাখি হতে পারবে না, তাই যখন মানুষের আপনজন মরে যায় তখন মানুষের আকুপাকু পাখির মতো হবে না, মানুষের আকুপাকু কার মতো হয়, বলতে পারো?
১১ জুন, ২০২২
# সারারাত জেগে থেকে শেষ পর্যন্ত রাত তিনটায় রাজিব তার অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করলো। খুব ক্লান্ত লাগছে তার। কোনমতে দাঁতটা ব্রাশ করেই বিছানায় গা টা এলিয়ে দিল সে। মুহূর্তেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল রাজিব......
রাজিব...রাজিব...এই রাজিব।
বন্ধু সাফকাতের কণ্ঠে নিজের নামটা শুনে ঘুমটা আবছাভাবে ভেঙ্গে গেল তার।
কি হয়েছে? এত রাতে ডাকছিস কেন?
কই রাত! ভোর হলো বলে। একটু পরেই আকাশে আলো ফুটবে। চল ছাদ থেকে ঘুরে আসি। অনেক গরম পরেছে। অনেকদিন তোর সাথে সকাল বেলা হাঁটা হয় না। চল।
অগত্যা অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজিবকে বিছানা ছেড়ে উঠতে হলো।
রাজিব যে বাড়িটায় ভাড়া থাকে সেটা আট তলা। সাত তলার ২ রুমের একটা ছোট্ট বাসায় সে, সাফকাত আর রাফসান থাকে। রাফসান এখন বাসায় নেই। ওর এখন ছুটি চলছে। সাফকাতও ছিলনা এক সপ্তাহ ধরে। মাঝে মাঝেই ডুব মারার অভ্যাসটা তার পুরনো। রাজিব তাই আর সাফকাতকে কিছু জিজ্ঞাস করলো না।
দুই বন্ধু মিলে ছাদের একদম কিনারায় এসে পা ঝুলিয়ে বসলো। রাজিবের চোখ থেকে ঘুম ঘুম ভাবটা এখনো যায় নি। বার বার খালি হাই আসছে তার।
দোস্ত, আমার খবর নিলি না কেন এই ক’টা দিন? আমার কথা এভাবে ভুলে গেলি? আমার তো কোনও বিপদও হতে পারতো।
রাজিবের ঘুম ঘুম ভাবটা কেটে গেল সাফকাতের এমন অনুযোগপূর্ণ কন্ঠ শুনে। সাফকাত কোনদিন এভাবে কথা বলেনি।
স্যরি দোস্ত। আমি আসলে ক্লাস নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম, সামনেই সেমিস্টার ফাইনাল তুইতো জানিস। আর কখনো এমন হবে না। আর তুই তো প্রায়ই এভাবে না বলে হারিয়ে যাস, ফোনটা পর্যন্ত অফ করে রাখিস। আমার কি দোষ বল?
হুম। আমিও স্যরি দোস্ত। অবেলায় তোদের ফেলে চলে গেলাম, এই মাস থেকে রাফসান আর তোকেই বাসা ভাড়াটা ভাগ করে দিতে হবে। আমার ড্রয়ারে হাজার খানেক টাকা আছে, চাইলে সেটা রাখতে পারিস, আর না রাখলে আমার মা কে পাঠিয়ে দিস। অনেকদিন বাড়ি যাই না, মা কে টাকা পাঠানোও হয় নি।
রাজিব ভীষণ ভয় পেয়ে গেল সাফকাতের এমন কথায়, অবাকও হলো। আমাদের ছেড়ে চলে গেলি মানে কি? কোথায় গেলি? পাগলামি করিস না তো। টাকা না থাকলে সমস্যা নাই, আমরা দুই জনেই বাসা ভাড়া দিব। কোথাও যেতে হবে না তোকে। আর খালাম্মাকে টাকাটা পাঠিয়ে দিস আজকেই, আমার কাছেও কিছু এক্সট্রা আছে, লাগলে নিস।
সাফকাত কিছু বলল না, একটু হাসলো শুধু।
আচ্ছা রাজিব তুই ঘুমোতে যা, সকাল হয়ে আসছে, তোর আবার ক্লাস আছে। আমি কিছুক্ষণ বসি এখানে একা।
আচ্ছা ঠিক আছে, বেশীক্ষণ বসে থাকিস না। তুইও একটু ঘুমা, না ঘুমালে শরীর খারাপ করবে।
সাফকাত এবারও কিছুই বললো না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে একটু হাসলো।
রাজিব রুমের দরজাটা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লো।
রাজিব...রাজিব...এই রাজিব।
এবার আর সাফকাত নয়, রাফসান ডাকছে রাজিবকে।
সকাল হয়ে গেছে। রাজিব বিছানা থেকে উঠে বসলো। সাফকাত হয়ত এখনো ঘুমাচ্ছে পাশের রুমে।
কখন আসলি বাড়ি থেকে? আর ছুটি তো এখনো বেশ ক’দিন আছে। চলে আসলি যে?
তুই কিছু জানিস না? সাফকাত গত পরশু রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছ। আমাকে ওর মা ফোন করে জানালো রাতে, তোকে অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম, তোর ফোন অফ। তাই আর দেরি না করে চলে এলাম। চল রেডি হয়ে নে, সাফকাতের বাড়ি যেতে হবে।
রাজিব নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না! রাফসান নিশ্চয়ই তার সাথে মজা করছে!
রাফসান, ফাজলামি করিস না তো। আমি সকালেই সাফকাতের সাথে ছাদে বসে অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। আর তুই বলছিস ও দুইদিন আগে মারা গেছে। মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে ফাজলামি আমার একদম ভালো লাগে না বলে দিলাম।
রাফসান আমার চেয়ে আরও বেশি অবাক হলো। না দোস্ত আমি সত্যি বলছি, তোর কোথাও ভুল হচ্ছে, কাল নিশ্চয়ই রাত জেগেছিলি? স্বপ্ন দেখেছিস!
রাজিব প্রচণ্ড রেগে গেল রাফসানের কথা শুনে। আরে আমি স্বপ্নে দেখলে বুঝি বুঝতাম না এতক্ষণে? সাফকাত বলেছিল ওর ড্রয়ারে হাজার খানেক টাকা আছে, ওর মাকে পাঠাবে। পারলে গিয়ে দেখে আয় ওর ড্রয়ারে।
রাফসান দৌড়ে গেল সাফকাতের রুমে, তার ড্রয়ার খুলেই দেখল দুই হাজার টাকা রাখা আছে একপাশে, সাথে কিছু খুচরো পয়সা। রাফসান ভীষণ অবাক হলো। রাজিব, চল আর দেরি না করে সাফকাতের বাড়ি যাই, সেখানে গিয়েই দেখি ব্যাপারটা কি। আর সময় নষ্ট করিস না।
রাজিব দ্রুত রেডি হয়ে রাফসানের সাথে রওনা দিল। গাবতলি থেকে বাসে উঠে পড়লো দুই বন্ধু। সিটে বসার একটু পড়েই রাজিব ঘুমিয়ে পড়লো।
রাজিব...রাজিব...
রাজিব এবার আর চোখ খুললো না। চোখ না খুলেই সে দেখলো তার দুই বন্ধু, সাফকাত আর রাফসানের কান্না ভেজা চোখ-মুখ। শুধু তার বন্ধুরা নয়, তার বাবা-মা, এলাকার সবাইও আছে। সবাই কান্না করছে। রাজিব কিছু বুঝতে পারছে না। উঠে বসার চেষ্টা করলো সে, পারলো না। তার মা কে ডাকার চেষ্টা করেও পারলো না। রাজিব বড্ড অসহায় বোধ করলো। আস্তে আস্তে তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসলো। হয়ত আবার ঘুম আসছে তার।
রাজিব দুইদিন আগে ছাদ থেকে পড়ে মারা যায়। যেদিন মারা যায় সেদিন সন্ধ্যায় সাফকাতকে দুই হাজার টাকা দিয়ে রাজিব তার বাড়িতে পাঠাতে বলেছিল। সামনে পরীক্ষা, বাড়ি যাবার সময় নেই তার হাতে। সত্যি সময় নেই............
*** পৃথিবী ছেড়ে আমাদের চলে যাওয়া শুধুই আমাদের চলে যাওয়া নয়। আমরা পৃথিবী থেকে ছোট ছোট অনেকগুলো গল্পের অনুষঙ্গ সাথে করে নিয়ে যাই। তাই অনেকগুলো ছোট গল্প কখনো কেউ জানতেও পারে না......
১২ জুন, ২০২২
# যখন তুমি কিছু একটা করতে চাও সেটা শিশুর মতো করেই করো। এতে করে কাজটা যেমনই হোক না কেনো তুমি শেষ পর্যন্ত সেটা করতে পারবে! শিশুদের লক্ষ্য করলে দেখবে সে যতোই ক্লান্ত হোক না কেনো একটা কাজে সফল না হওয়া পর্যন্ত সে চেষ্টা করে যেতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমনটা হয়।
শিশুদের সকল অভিব্যক্তি হয় অকৃত্রিম। যখন একটা শিশু কাঁদে সেটা এমন হয় যে আশেপাশের সবাইকে একটু হলেও ছুঁয়ে যায়, আবার যখন একটা শিশু খিল খিল করে হাসে তখন আশেপাশের সবার মাঝে সে হাসি সংক্রমিত হয়, এমনকি সবচেয়ে মন খারাপ কোনো মানুষও কিছুটা সময়ের জন্য ভুলে যায় তার মন খারাপ!
শিশুদের মাঝে তুমি তোমার সব সমস্যার সমাধান খুঁজে নিতে পারো, অন্তত সমাধান খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারো। শিশুদের মন খারাপ হতে যেমন সময় নেয় না, মন ভালোও হয়ে যায় খুব ছোটখাটো বিষয়ে। কিন্তু তোমার বা আমার মন খারাপ হওয়াটা যতোটা সহজ, মন ভালো হওয়াটা ততটাই কঠিন! শিশুর মতো ভাবতে শিখলে তুমি একটা জিনিস হয়তো প্রায়শই শুনবে, 'ইম্যাচিউর'! কিন্তু নিশ্চিতভাবে তুমি ভালো থাকবে। জীবনে ভালো থাকাটা ম্যাচিউরড হওয়ার চেয়ে কি বেশী জরুরী নয়?
*** আচ্ছা, একটা শিশু সবার আগে কি শিখে জানো? সে কাঁদতে শিখে! কান্নার মাধ্যমে সে তার সব চাওয়া পাওয়া তার পরিবারের আপনজনদের জানিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা শিশু থেকে বড় হতে হতে ভুলে যাই স্রষ্টার কাছে কিছু চাইতে হলেও কান্না করা যেতে পারে। তবে সে কান্না চোখ টিপে জোর করে করা কান্না নয়, সে কান্না আসতে হবে অন্তর থেকে, যার জন্য অন্তরটা শিশুর মতো হওয়াটা অত্যাবশ্যক।
১৩ জুন, ২০২২
# তোমার, আমার, সবার মনে একটা জিনিস বসিয়ে দেয়া আছে। হ্যাঁ, শব্দটা ঠিকঠাকই আছে, বসিয়ে দেয়া আছে! সে জিনিসটা তোমাকে, আমাকে, আমাদের সবাইকে দিয়ে মোটামুটি সব কাজ করিয়ে নেয়। এটা আমাদের যেমন অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করে, তেমনি অনেক সময় আমাদের চলার পথও রোধ করে।
তবে ঠিক কবে থেকে এটা আমাদের মাঝে বসে আছে সে সম্পর্কে আমি সঠিক জানি না, হয়তো সৃষ্টির শুরু থেকেই বা সৃষ্টির শুরুর কিছুটা সময় পর থেকে, তবে এর থেকে বেশী সময় পর নয় সেটা আমি নিশ্চিত!
জিনিসটা কি জানো? "ভয়!" অনেক সময় ভয় কি করে জানো? অনেকের কাছে মৃত্যুর চেয়ে জীবনকে ভয়ংকর করে তোলে, বাস্তবের চেয়ে কল্পনাকে বেশী ভয়ংকর করে তোলে! অনেকে আবার মৃত্যুর ভয়ে কখনো বাঁচতেই পারে না!
মানুষ একদম জনমানবহীনভাবে থাকতে ভয় পায়, আবার অনেক বেশী মানুষের মাঝে থাকতেও ভয় পায়। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, মানুষের মাঝে ভয় না পাওয়ার ভয়ও কাজ করা!
"ভয়"-কে বাঁচিয়ে রাখে কে? ভয়কে বাঁচিয়ে রাখে "আশা!" আমাদের যতো আশা আছে সবটাকে যদি একটা পাত্রে রাখা যেতো তাহলে দেখা যেতো তার অনেকটা জায়গা ইতোমধ্যে দখল করে আছে ভয়! ভয় থাকা সত্বেও আমরা আশায় বুক বাঁধি। কেনো জানো? কারণ আশার পাত্রের সবটা কোনোদিনও ভয় দিয়ে পূর্ণ হবে না, সব সময় কিছুটা আশা অবশ্যই থাকবে। তাই আমরা আশা নিয়ে বাঁচি!
তোমার আশাটাকে বৃত্তাকার করে নাও। বৃত্তাকার আশা দিয়ে ভয়টাকে ঘিরে ধরে মনের মাঝে ভয় নিয়েও বেঁচে থাকো ভয়হীন!
১৪ জুন, ২০২২
# মানুষ সাধারণত অনিশ্চিত কোনো কিছু আগ্রহ নিয়ে করে না। এটা তার স্বভাব বিরুদ্ধ। কিন্তু খুব অনিশ্চিত একটা কাজ যেটা একটা মানুষের পুরোটা জীবন বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে, সে কাজটা মানুষ খুব আগ্রহ নিয়ে করে! এমন কাজ আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার মনে হয় না।
একজন পুরুষ এবং একজন নারী যখন পিতৃত্বের/মাতৃত্বের স্বাদ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন সে একটা চরম অনিশ্চিত পথে যাত্রা শুরু করে হাসিমুখে! একজন মা জানে সন্তান জন্মদানে তার মৃত্যু ঝুঁকি আছে। একজন পিতা/মাতা সন্তান জন্মের আগেও জানে না তাদের সন্তান সুস্থ হবে কি না, সন্তানের সুস্থতার অনিশ্চয়তা যদিও আমাদের ততক্ষণ ভাবায় না যতক্ষণ আমরা ব্যক্তিগতভাবে আক্রান্ত হই। একজন পিতা/মাতা সন্তান জন্মের আগে জানে না এই অনাগত সন্তান তাদের জীবনকে কি অনাবিল আনন্দে ভরে তুলবে, না কি তাদের জীবনের নানা সময়ে নানান বিষাদের কারণ হবে?
তারপরও আমরা আমাদের অপত্যের জন্য আমাদের অনিশ্চিত যাত্রার সবটা হাসিমুখে মেনে নেই। কারণ আমাদের সন্তান, সে যেমনই হোক, আমাদের কাছে অত্যন্ত ভালোবাসার, অত্যন্ত আদরের। সন্তানের প্রতি আমাদের ভালোবাসার কাছে হার মানে আমাদের সব অনিশ্চয়তা।
১৫ জুন, ২০২২
# ফ্লেমিংগো মাঝেমাঝে এলেমেলো ঘুরে বেড়ায়। কোনো কারণ ছাড়া এসব ঘুরাঘুরির একটা নাম সে দিয়েছে- 'দৃষ্টিভ্রমণ'! এমন ঘুরাঘুরিতে ফ্লেমিংগো যতটুকু পারে পরিবেশের উপাদান তার স্মৃতিতে নেয়ার চেষ্টা করে, যাতে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার পরও স্মৃতিতে সে তার প্রিয় সবকিছু দেখতে পায়। পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার ঠিক কত সময় পর এসব স্মৃতি নিয়ে ভাবার সময় তার হবে সে ঠিক জানে না, কিন্তু সে জানে অবশ্যই সে সময় আসবে! বিশ্বাস মানুষকে স্বস্তি দেয়, পরম মুহূর্তেও!
দুই আর দুই মিলে সবসময় চার হবে এমন কিন্তু নয়, দুই আর দুই মিলে দুইও হয়। AND লজিকে দুই আর দুই মিলে দুই হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। বাস্তব জীবনেও এমনটা হয়। সুন্দর একটা উদাহরণ জানা থাকলেও সেটা কখনও দিবো না।
আগে রাস্তায় অনেক সাদা কুকুর দেখতে পেতাম। অনেক অনেকদিন ধরে দেখা যায় না আর! বেশিরভাগ কুকুরই লাল আর অল্প কিছু পাওয়া যায় কালো আর মিশ্র বর্ণের। কুকুরের মাঝে কালো কুকুর আমার পছন্দ, অন্ধকারে তাদের জ্বলজ্বল চোখ দেখতে বেশ লাগে আমার। মানুষের চোখ অন্ধকারে এমন জ্বলজ্বল করে না। এটা ভেবে প্রায় আমার মনে হয় যে শুধুমাত্র বিশ্বস্তদের চোখই অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে! এটা একটা একান্ত ভাবনা, সিরিয়াস কিছু না! আচ্ছা আমার নিজের চোখ কি অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে!!!
অনেক সময় আমরা আমাদের আপনজনদের সাথে কথা বলতে যেয়েও কিছুই বলতে পারি না। ঠোঁটের কাছে শব্দ এসে শব্দগুলো মুখ থেকে আর বেরোয় না। যারা লেখালেখি করে তারা হয়তো শব্দগুলো নিয়ে কিছু একটা লিখে ফেলে, আর যাদের লেখালেখির অভ্যাস নেই তারা কি করে? এক কাপ গরম চা বা কফির সাথে শব্দগুলো গিলে ফেলে!
অবশ্য আরেক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা কফির মগে চুমুক দিতে দিতে একটার পর একটা শব্দ দিয়ে লিখতে থাকে গল্পকথা!
১৬ জুন, ২০২২
# পরকালে নিজের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকগুলো স্মৃতি গুছিয়ে নিচ্ছি! স্মৃতিগুলো একান্তই আমার নয়, স্মৃতি কখনোই একার হতেও পারে না! নিজের সকল স্মৃতির সাথে অন্য কোনো সত্ত্বা জড়িয়ে থাকে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। স্বার্থপরের মত কারো অনুমতি না নিয়েই তার কিছু স্মৃতি পরপারে নিয়ে যাওয়ার মাঝে এক ধরণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়ে যায়, যে অধিকার এই নশ্বর পৃথিবীর জ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা সম্ভব না!
আমরা যতগুলো ডাইমেনশন সম্পর্কে জানি তার বাইরে যেমন অন্য কোনো ডাইমেনশন নিয়ে ভাবতে পারি না তেমনি এসব ডাইমেনশনের কোনো একটা না থাকলে কেমন লাগবে সেটাও বুঝতে পারি না! মানুষের চিন্তাশক্তির মাঝে স্রষ্টা প্রদত্ত যে সীমাবদ্ধতা আছে তা আসলে আমাদের কি বলতে চায়? তোমার সবটা বুঝতে হবে না! 'সময়' ডাইমেনশনটা না থাকলে কেমন হতো তা আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। জানার কি কোনো উপায় আছে?
'সময়' ডাইমেনশনটা না থাকলে কি হতো ভাবতে না পারলেও, মাঝে মাঝে কিছু কবিতা লিখা শুরু করা হলেও আর শেষ করা হয় না এই সময়ের অভাবে! 'সময়' ডাইমেনশনটা না থাকলে এসব অসমাপ্ত কবিতা হয়তো শেষ করা যেতো! একটা অসমাপ্ত কবিতা কেমন হয়? অনেক রকম হতে পারে, এই যেমন এটা:
"কখনো ভাবি নি, এমনটা হবে! ঠিক যেমনটা হলো!
মনে হচ্ছে অনেকটা দিন চিন্তা করে, খুব যত্নে,
খুব খুব সাবধানে তুমি এমনটা করেছো! যেমনটা
করতে আমি হয়তো পারতাম না! না কি পারতাম!
আমি যেদিন ঠিক ঠিক কবিতা লিখা ছেড়ে দিবো,
সেদিন হয়তো বুঝবে, কবিতা আসলে লিখা যায় না!
কবিতার জন্ম হয়, অদ্ভুতুড়ে অদ্ভুত সব প্রলাপে!"
১৭ জুন, ২০২২
# 'ঠিক' আর 'সঠিক' এর মাঝে অনেক অনেক পার্থক্য। পার্থক্যটা 'ঠিক' আর 'বেঠিক' এর চেয়েও বিস্তর বেশী!
মাঝে মাঝে পিন পতন নীরবতায় আমরা ভাবতে চাই আমাদের নিজেদের নিয়ে। ভেবে ভেবে একটা সময় আমরা ক্লান্ত হয়ে আবার কোলাহল খুঁজতে থাকি। কোলাহল খুঁজে পাওয়া হয়, খুঁজে পাওয়া হয় একদল বন্ধু বা একদল মানুষ যাদের আমরা বন্ধু ভাবি (!), খুঁজে পাওয়া হয় অনেক কিছু, কিন্তু আমরা আর খুঁজে পাই না আমাদের 'আমি' -কে।
আমাদের খুঁজতে আমরা অধিকাংশই আসলে তেমন কিছু একটা করি না। কখনো কখনো হয়তো মনের কোনে একটু ইচ্ছে জাগে নিজেকে খোঁজার, সেটাও আবার আমাদের অবহেলায় হারিয়ে যায় মনের আরো গভীর কোনো কোনে!
এক জীবনে নিজেকে খোঁজার ইচ্ছে কয়বার জাগে বলতে পারো? সংখ্যাটা সর্বোচ্চ আমাদের বয়সের ৬০ শতাংশ হতে পারে। অর্থাৎ কারো বয়স ৫০ বছর হলে সে তার জীবনে সর্বোচ্চ ৩০ বার নিজেকে নিয়ে ভেবে থাকতে পারে, এর বেশী সাধারণত হয় না। তবে আমার মনে হয় মানুষ খুব বেশী সমস্যায় না থাকলে নিজেকে নিয়ে ভাবার মতো বিলাসিতা (!) করে না।
১৮ জুন, ২০২২
# দুইজন স্বাধীন মানুষ হাসতে হাসতে পরাধীন হয় ভালোবেসে! অনেকেই সে পরাধীনতার মাঝে খুঁজে পায় এক নতুন ধরণের স্বাধীনতা, আর অনেকেই পরাধীন হয়ে পড়ে আজীবনের জন্য!
কেউ কেউ বাহ্যিকভাবে স্বাধীন হলেও মানসিকভাবে পরাধীন হয়, আবার এর উল্টোটাও হয়। উদ্দাম স্বাধীনতা মানুষকে পরাধীনতার দিকে ঠেলে দেয়, আবার অনেক বেশী পরাধীনতা স্বাধীন হওয়ার বাসনাকে তীব্র করে তোলে।
জীবনে নিজেকে একটা নির্দিষ্ট স্বাধীনতায় আবদ্ধ করে তার বাইরে একটা পরাধীনতার আস্তরণ এঁকে দেয়া গেলে সবচেয়ে ভালো থাকা সম্ভব। কিন্তু পরাধীনতায় আবদ্ধ থেকে স্বাধীনতার আস্তরণ এঁকে দেয়া হলে তা জীবনকে প্রেশার কুকারে রূপান্তর করা ছাড়া আর কিছুই করবে না! কখন হুইসেল বেজে উঠবে সে শংকায় দু'জন অভিনয় শিল্পী সামনা-সামনি বসে থাকে, হাসিমুখে! আচ্ছা, প্রেশার কুকারের নিচে আগুনের উৎসটা কি? বুঝতে পারছো?
১৯ জুন, ২০২২
# আমরা সাধারণত ভালো কিছু বোঝাতে সাদা রঙের ব্যবহার করি আর মন্দ বোঝাতে ব্যবহার করি কালো রঙের। এমনটা কেনো করা হয় তার অনেক ধরণের ব্যাখ্যা ইন্টারনেট ঘাটলে পাওয়া যাবে। তবে আমার কাছে সাদাকে ভালোর প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করার একটা ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে, এটা সম্পূর্ণ আমার নিজের ভাবনা, তাই ভুলও হতে পারে!
আমাদের কাছে ভালো মানেই আলোকিত, মন্দ মানেই অন্ধকারাচ্ছন্ন। জগতের কোনো ভালোই ১০০% ভালো নয়, ভালোর মাঝে কিছুটা ত্রুটি থাকেই। কিন্তু সেখানে ত্রুটির চেয়েও ভালোত্বের মাত্রা বেশী থাকে বলেই শেষ পর্যন্ত আমরা সেটাকে ভালো হিসেবে ধরে নেই। সাদা আলোও সাত রঙের আলোর সমষ্টি, কিন্তু সবটা মিলিয়ে সাদাটাই আমরা দেখি, ঠিক যেমনটা আমাদের অনেকের ছোট ছোট ত্রুটি ছাপিয়ে ভালোটা মুখ্য হয়ে দেখা দেয়!
অন্ধকার (কালো) মানেই আলোর অনুপস্থিতি, আলোর ১০০% অনুপস্থিতি আমাদের একদম মিশমিশে কালো অনুভূতি দেয়! ঠিক এ মিশমিশে কলোর মতো, মন্দ মানে কিন্তু শুধুই মন্দ, এর মাঝে আর কিছুর সংমিশ্রণ নেই। শুনতে অবাক লাগলেও মন্দ কিন্তু ১০০% বিশুদ্ধ! কোনো কিছু মন্দ মানে সেটা ১০০% মন্দই, এর মাঝে কোনো ভালো মিশে নেই!
তাই ভালোত্বের প্রতীক হিসেবে সাদা আর মন্দত্বের প্রতীক হিসেবে কালোর ব্যবহার একদম ঠিকঠাকই আছে!
তবে শুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে নীল রঙও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রঙ হিসেবে নীল আমার বেজায় পছন্দ!
*** লেখাটা লিখেছি অনেকটা ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে, তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে। ঘুম ঘুম চোখে লেখার অনেক অসুবিধা আছে, এর মাঝে অন্যতম হলো এক লেখার মাঝে অন্য লেখার সংমিশ্রণ ঘটা!
একটা কবিতা এলো ঘুম ঘুম মস্তিষ্কে, অর্থহীন একটা কবিতা হলেও এর একটা মর্মার্থ আছে!
লাল আর নীল মিশে ছিলো,
একেবারে গলায় গলায়!
হঠাৎ করেই তাদের মাঝে
কোথা থেকে সাদা এলো!
আস্তে আস্তে নীল বিলীন হলো!
অনেকটা নীল আকাশে যখন-
সাদা মেঘের আগমন ঘটে, আর
নীল হারিয়ে যায়, সাদার আড়ালে!
এখন সাদা আর হলুদ মিশে থাকে!
যখন থেকে নীল হারিয়ে গেলো,
লাল কখন যেনো হলুদ হয়ে গেলো!
২০ জুন, ২০২২
# পাথরে বেশ কিছু প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মায়। কিন্তু পাথরে সে সকল উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন কোথায় সংঘটিত হয়? পাথরের মাঝে? না কি পাথরের বুকে জন্ম নেয়া উদ্ভিদে?
আমরা এসব পরিবর্তন নিয়ে কখনো মাথা ঘামাই না, আমরা মাথা ঘামাই পাথরের বুকে জন্ম নেয়া উদ্ভিদের সৌন্দর্যতা নিয়ে।
মানব সমাজে তোমার ভূমিকা কি? পাথরের? না কি উদ্ভিদের? তুমি কি করবে? পাথর হয়ে উদ্ভিদ সৃষ্টিতে অবদান রাখবে? না কি উদ্ভিদ হয়ে পাথরের বুকে জন্ম নিয়ে সৌন্দর্যের পূজায় মনোনিবেশ করবে?
তুমি পাথর বা উদ্ভিদ হতে পারো না, তুমি অধিকাংশ সময় পাথরের বুকে জন্ম নেয়া উদ্ভিদটির পাত্র হও! তোমার মাঝেই পাথর থাকে, তোমার মাঝেই উদ্ভিদ! তুমি যে শুধুই একটা পাত্র সেটা বুঝতে পারছো কি? পাথরের বুকে উদ্ভিদ জন্মানোয় তোমার কোনো ভূমিকা নেই, তোমার মাঝে থাকায় পাথরের মাঝে বা উদ্ভিদের মাঝে কোনো পরিবর্তন সাধিত হয় না, তোমার মাঝে যখন যা রাখা হয় তুমি শুধু তা ধারণ করো, এর বেশী কিছু নয়!
২১ জুন, ২০২২
# স্রষ্টা আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করার পর আমাদের জন্য সময়ে সময়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। দিক নির্দেশনার রয়েছে বেশ কিছু ভার্সন। ভার্সন ১, ভার্সন ২, ভার্সন ৩, ভার্সন ৪ .... ইত্যাদি। ভার্সনগুলোর মূল বক্তব্য একই (কিছু কিছু ভার্সন মানুষ কর্তৃক বিকৃত করা হয়েছে, স্রষ্টা ভালো জানেন)। এক একটা ভার্সন এক এক সময়ে আসায় নতুন ভার্সনগুলোয় আগের ভার্সনের তুলনায় আরো নতুন কিছু দিক নির্দেশনা যুক্ত করা হয়েছে, এসেছে নতুন নতুন ঘটনার বর্ণনা (ভার্সন ৩ আর ৪ এর মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা অবশ্যই ভার্সন ১ এ থাকবে না, এটাই যুক্তিযুক্ত)।
এখন মূল আলোচনায় আসা যাক। জন্মগতভাবে ভার্সন ১ অনুসরণ করা একজন মানুষ ছোট থেকে ভার্সন ১ এর পথটাকে সঠিক ধরে নিবে এটাই স্বাভাবিক। অন্যান্য ভার্সন যে আছে সেটা জানলেও সে সেসব ভার্সন নিয়ে অতটা পড়াশুনা করে নি, তাই তার পক্ষে জানাও সম্ভব না যে অন্য ভার্সনের বিষয়বস্তু আসলে কি! সে তার ভার্সন ১ এর জীবন পথ অনুসরণ করেই তুষ্ট।
জন্মগতভাবে ভার্সন ৪ অনুসরণ করা একজন মানুষ ছোট থেকে ধরেই নেয় তার অনুসরণ করা পথটাই সেরা, কারণ এটাই সবচেয়ে আধুনিক ভার্সন। সেও তার ভার্সনের জীবন পথ নিয়ে তুষ্ট। সেও অন্য ভার্সনের বিষয়বস্তু নিয়ে তেমন একটা পড়াশুনা করে নি।
এক একজন মানুষ এক একটা ভার্সন অনুসরণ করে জীবন যাপন করলেও স্রষ্টা কেনো সবাইকে অনুগ্রহ করে? বলতে পারো? কারণ সবাইকে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন। স্রষ্টা তার সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসেন। তাদের ভুলের শাস্তি যখন দিবেন তখন দিবেন, কিন্তু তিনি সত্যি তার সৃষ্টিদের অনেক ভালোবাসেন। তাই ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন অনুসরণ করলেও স্রষ্টা কারো কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন না, তাঁর ভালোবাসার কাছে অন্য সবকিছু পরাজিত হয়ে যায়।
তবে স্রষ্টা সবাইকে চিন্তা করার জন্য মস্তিষ্ক দিয়েছেন, তিনি চান তার সৃষ্টি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক (আমরা আমাদের সন্তানদের কাছে থেকেও চাই সে সবকিছুতেই সঠিক থাকুক, কোনো ভুল না করুক, যেখানে আমাদের সন্তান আমাদের নিজের সৃষ্টি করা কিছু নয়! সেখানে স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির কাছে সবচেয়ে ভালোটা চাইতেই পারেন!)
কেউ যদি নিজের চিন্তায় একটা ভার্সনকে সঠিক ভেবে নেয় এবং সেটা ভুল সিদ্ধান্তও হয়, তাহলে সেটা তার আর স্রষ্টার মধ্যকার বিষয়। তুমি বা আমি কে এ বিষয়ে কাউকে পুরষ্কৃত করার বা তিরস্কৃত করার? তোমার জীবনযাপনের ভার্সন আমি অনুসরণ করবো না বলে তুমি আমাকে মারতে পারো কি? বা আমার অনুসরণ করা পথ তুমি অনুসরণ না করলে আমি তোমার ক্ষতি করতে পারি কি? না, পারি না।
পৃথিবীটা অনেক ছোট হলেও অমিল থাকা লোকেদের দূরে দূরে থাকার জন্য যথেষ্ট বড়। তাই নিজেদের মাঝে কোন্দল সৃষ্টি না করে স্রষ্টা প্রদত্ত নিজের মস্তিষ্কটা ব্যবহার করে সঠিক পথে চলার চেষ্টা করার মাঝেই জীবনের সার্থকতা।
*** একদল আছে যারা কোনো ভার্সন অনুসরণ করে না। তাদের নিয়ে আজ কিছু বলার নেই। তাদের জন্য ২১ জুনের দীর্ঘতম দিন উৎসর্গ করলাম।
২২ জুন, ২০২২
# শেষ কবে আকাশে উড়েছিলাম আমি? আমার পায়ের শিকলে জং ধরেছে অনেক জায়গায়, অনেক অনেক দিনের অযত্নে, অবহেলায়, একটু একটু করে! একটু চেষ্টা করলেই কি উড়ে যেতে পারবো? হয়তো। হয়তো না! ঘুম জড়ানো চোখে আমি জং ধরা শেকলের দিকে তাকিয়ে থাকি, আসলেই কি আমি শেকলে বাঁধা? না কি সবটাই আমার ঘুম ঘুম চোখের তৈরি কৃত্রিম বাস্তবতা! ঘুমিয়ে পড়ার আগে প্রতিবারই ভাবি ঘুম ভেংগে গেলে শেকলটা ভেঙে আমি উড়ে যাবো। হয়তো ঘুমের মাঝেই চেষ্টা করে বসবো একদিন!
আপাতত একটু ঘুমাই, ঘুমের ভারে চোখ জোড়া বন্ধ হয়েছে সেই কখন!
২৩ জুন, ২০২২
# যখন ছোট ছিলাম, শহরটাও আমার কাছে ছোট্টটি ছিলো। শহরটার নামটাও চমৎকার, চট্টগ্রাম! আর কোনো শহর মনে হয় এতোটা সুন্দর করে গ্রামকে নিজের মাঝে ধারণ করে না। বাসার খুব কাছেই কর্ণফুলী নদী, সাগরটাও খুব একটা দূরে ছিলো না। মাঝে মাঝে আম্মা যখন দুপুর বেলায় একটু ঘুমাতো, আমি তখন চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করতাম। শহরের মাঝে গাছগাছালির কমতি ছিলো না। ছোটবেলার সেই একা একা ঘুরে বেড়ানো, একা একা নদীর পাড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা, জেলেদের মাছ ধরার জাল বুনতে দেখা, বরফকলের পাশে দাঁড়িয়ে পানির অদ্ভুত শব্দ শোনা, আকাশে ঘুড়িদের উড়তে দেখা আমায় খুব খুব টানে।
এখনো মাঝে মাঝে একা একা বেরিয়ে পড়ি, শহরের পথে পথে। কিন্তু যে শহরটায় এখন থাকি সেটা গ্রামকে নিজের মাঝে ওভাবে ধারণ করতে পারেনি, বরং নামের মতোই দ্রুত ঢেকে চলেছে গ্রামের আবহটাকে! তাই আমার বরফ গলা নদীর মতো বয়ে চলা আর হয় না, জমে থাকা বরফের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে ভাবি- এ ঘুমটা এতো লম্বা কেনো? কখন ঘুম ভেঙে জেগে উঠবো? আম্মার দুপুরের ঘুমটা হয়তো ভেঙে যাবে আমার ঘুম ভাঙার আগেই!
২৪ জুন, ২০২২
# আজ দশ দিন হলো রিভান হাসপাতালে। একটা মেজর অপারেশনের পর এখন তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ক্যামোথেরাপী নেওয়ার ফলে তার মেমোরী লসের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় হয়তো রিভান নিজেকেই চিনতে পারবে না! রিভান এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না, তাই এর একটা সমাধানের চেষ্টা সে করেছে।
রিভান নিজে একজন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় তার নিজের উপর কিছু পরীক্ষামূলক জিন থেরাপী সে চালাচ্ছে। TET1 (ট্যাট মিথাইলসাইটোসিন ডাইঅক্সিজেনেস ১) জিন নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে সে জেনেছে এটা মানুষের ভয়ের স্মৃতিগুলো আস্তে আস্তে মস্তিষ্কের সেল থেকে মুছে যেতে সাহায্য করে।
রিভানের হতে সময় খুব কম, তাই সে ঠিক করলো তার DNA সিকোয়েন্স থেকে TET1 জিন অপসারণ করে দেখবে তার এই সমস্যার কোনো সমাধান করা যায় কি না! দশদিন আগে তার টীমের সহায়তায় শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত গোপনে অপারেশনটা করা হলো, কেউ জানে না ফলাফল কি হবে?
আরো কিছুদিন পরের ঘটনা। রিভান এখন নিজেকে আর চিনতে পারে না! বাকি সবাইকে চিনতে পারে, মনে রাখতে পারে সবকিছু!
নিজেকে হারিয়ে সবাইকে চিনতে পারাটা বেশ রোমাঞ্চকর, এই Know Thyself এর যুগে নিজেকে ভুলে থাকাটা একটা আশীর্বাদ।
মাঝে মাঝে জীবনে অনেক সমস্যার সহজ কোনো সমাধান থাকে না, তখন তার সমাধান খুঁজতে হয় অন্য কোনো সমস্যার মাঝে! সব সমস্যার সমাধান আছে, অবশ্যই আছে!
২৫ জুন, ২০২২
# গল্পটা অনেক আগের। গল্পটা ইকারাসের কঙ্গো রেইনফরেস্ট ভ্রমণের!
বর্ষাকালটা ইকারাসের বেশ প্রিয়। বর্ষাকালে সে প্রায়শই হোস্টেলের ছাদে পদ্মাসনে বসে বৃষ্টিতে ভিজে। ইকারাস তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। হঠাৎ তার মনে হলো রেইনফরেস্টে গিয়ে পদ্মাসনে বসলে কেমন হয়? যেমন ভাবনা তেমন কাজ! পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্ট আমাজনে যাবে না দ্বিতীয় বৃহত্তম রেইনফরেস্ট কঙ্গো রেইনফরেস্টে যাবে সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত ঠিক করলো কঙ্গোতেই যাওয়া যাক! টিউশনি করে বেশ কিছু টাকাও জমিয়েছে ইকারাস, এতেই আপাতত হয়ে যাবে।
অক্টোবরের ভারী বর্ষণটা এবার কঙ্গোতে কাটানোর আশায় সেপ্টেম্বরের শেষে ইকারাস কঙ্গোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। কঙ্গোতে পৌঁছে সময় নষ্ট না করে ইকারাস কঙ্গো নদীর অববাহিকায় থাকা কঙ্গো রেইনফরেস্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। বিকেলের শেষ দিকে ইকারাস বনের কাছাকাছি এসে পৌঁছালো। বনের ভিতরে মানুষের হাঁটার জন্য একটা পথ দেখা যাচ্ছে। সেটা ধরেই হাঁটতে লাগলো সে। হাঁটতে হাঁটতে ইকারাস প্রথম যে প্রাণীটার দেখা পেলো সেটা হলো ওকাপি! দেখতে বেশ অদ্ভুত! কিছুটা জেব্রার মতো বা কিছুটা ঘোড়ার মতো বা কিছুটা গাধার মতো! মুখটা আবার জিরাফের মতো! এমন অদ্ভুত প্রাণী আগে কখনো সে দেখেনি।
কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি শুরু হলো। ইকারাস তার ব্যাগ থেকে দ্রুত তাবুটা বের করে পথের কাছাকাছি একটা উচু সমতল জায়গায় সেটা লাগাতে লাগলো। তাবু লাগানো হলে তাবুর ভেতর তার ব্যাগটা রেখে ইকারাস তাবুর বাইরে ঘাসের উপর পদ্মাসনে বসে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো। চারিদিকে বৃষ্টির শব্দ। গাছের পাতা বেয়ে বৃষ্টির পানি ঝরে পরার শব্দ এতটা সুন্দর হয় তা ইকারাসের জানা ছিলো না! বৃষ্টি পরার শব্দের পাশাপাশি পাখির মিষ্টি কিচিরিচির শব্দও শোনা যাচ্ছে। এভাবে কতটা সময় কেটে গিয়েছে ইকারাসের জানা নেই। হঠাৎ একটা বজ্রপাতের শব্দে ইকারাস চোখ খুললো. . . . .
প্রকৃতি সুন্দর! আদিমতা সুন্দর।
ইকারাসের পড়ার টেবিলের এক কোণে রাখা কাঁচের পাত্রটায় কয়েকমুঠো মাটি রাখা আছে, কঙ্গো রেইনফরেস্টের মাটি!
২৬ জুন, ২০২২
# ইকারাসের মনটা আজ ভীষণ খারাপ। মন খারাপের ঠিক ঠিক কারণটা তার জানা নেই। সকাল থেকে সে ভাবছে মনটা ভালো করবে, কিন্তু কিছুতেই তার মন ভালো হচ্ছে না। তার যে মন খারাপ এ কথাটা কাউকে বলতে পারলে হয়তো কিছুটা ভালো লাগতো। কিন্তু সে উপায়ও আপাতত নেই। ইকাবুকা আর কিমোরা এখনো ঘুমোচ্ছে আর বাইরেও প্রচন্ড বৃষ্টি, না হয় অনুপের বাসায় গিয়ে অনুপের সাথে কথা বলে মন খারাপ কিছুটা কমানো যেতো।
ইকারাস চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো তার মন খারাপটা আসলে কিসের জন্য! বন্ধ চোখে কল্পনার রাজ্যে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ইকারাসের চোখে পড়লো একটা জরাজীর্ণ পুরনো বাড়ি। এ বাড়িটা কি তার কল্পনার রাজ্যে আগে থেকেই ছিলো? তার ঠিক মনে পড়ছে না। সে জরাজীর্ণ বাড়িটার দিকে এগুতে থাকলো। হঠাৎ সে লক্ষ্য করলো অনেকক্ষণ হাঁটার পরও সে বাড়িটা থেকে ঠিক ততটাই দূরে আছে যতটা দূরে সে ছিলো কিছুক্ষণ আগেও! সে তার হাঁটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সে একটুও এগুতে পারলো না! মনে হচ্ছে সে যতটা এগুচ্ছে ঘরটাও ঠিক ততটাই পিছিয়ে যাচ্ছে! কল্পনার রাজ্যে হাঁটতে হাঁটতে ইকারাস ঘুমিয়ে পড়লো......
ইকারাস কল্পনার রাজ্যের জরাজীর্ণ ঘরটা কি ছিলো জানো? ঘরটা ছিলো ইকারাসের অকারণ মন খারাপের ঘর! যে ঘরে সে কখনোই পৌঁছুতে পারে না আর জানতেও পারে না তার অকারণ মন খারাপের কারণ।
কারণের মন খারাপের সমাধান হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু অকারণ মন খারাপের কোনো সমাধান হয়তো হয় না! তাই অকারণ মন খারাপেরা বার বার ফিরে আসে কোনো এক বর্ষণমুখর দিনে বা একাকী কোনো সন্ধ্যায়!
*** হঠাৎ কোনো একদিন আমার হজপজ_Hodgepodge লিখা থেমে যাবে, হয়তো খুব খুব শীঘ্রই! হয়তো থেমে যাওয়ার পরও থেমে থেমে মাঝে মাঝে একটা দু'টো হজপজ_Hodgepodge লিখা হবে! ইকারাসের কল্পরাজ্যের অকারণ মন খারাপের জরাজীর্ণ ঘরের মতো আমার কল্পরাজ্যের কোনো এক ঘরে লুকিয়ে থাকা হজপজ ভাবনাদের লিখতে গিয়ে আমার হয়তো মনে হবে, থাকুক না আমার ভাবনার ঘরটা হজপজ ভাবনায় পরিপূর্ণ! সব ভাবনা ফুরিয়ে গেলে আমি হাঁটার অনুষঙ্গ কোথায় পাবো!
২৭ জুন, ২০২২
# সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই রশিদ মিয়া তার মেয়ের (পায়েল) পায়ে শিকলটা পড়িয়ে দিল। শিকলটা লম্বায় প্রায় ২৫ হাত হবে। এটা যথেষ্ট পুরো বাড়িটায় চলাচলের জন্য!
পায়েল মেয়েটার নামটা রাখার সময়ও তার বাবা-মা জানত না যে বড় হলে তাদের আদরের সন্তানের পায়ে পায়েলের পরিবর্তে লোহার মোটা শিকল পড়াতে হবে! তার সুস্থ-সবল, উচ্ছল, জীবনীশক্তিতে ভরপুর মেয়েটার পায়ে এভাবে শিকল পড়াতে প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হত, মেয়েটাও খুব কান্নাকাটি করত। এখন সব স্বাভাবিক, মেয়েটাও মাঝে মাঝে নিজে থেকেই সন্ধ্যেবেলায় নিজের পায়ে শিকলটা পরে নেয়। পায়েল বুঝতে শিখেছে যে তার দেশ তার নিরাপত্তা দিতে পারে না, তার দেশের নপুংসকরা তাদের সকল হতাশা রাতের আধারে নিঙরে ফেলার জন্য তার মত পায়েলদের খুঁজে বেড়ায়।
আজ পায়েল তার বাবাকে বলল, “বাবা, শিকলতো পড়ালে, কিন্তু পশুগুলো যদি বাসায় এসে পড়ে? তখন এই ২৫ হাতের শিকলটাইতো আমাকে আটকে দিবে।“
রশিদ মিয়ার বুকটা এক অসহায় আর্তনাদে কেঁদে উঠলো। বলল, “মা, এমন যদি কোনদিন হয় তাহলে এই শিকলটা দিয়ে পশুটার গলা পেচিয়ে মেরে ফেলিস।“
পায়েল একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। তার বাবা অন্তত শিকলটা তার নিজের গলায় পেচাতে বলেনি। অসহায় বাবার এহেন আচরণে পায়েল যারপরনাই খুশি হল!
*** গল্পটা বেশ ক'বছর আগে লিখেছিলাম পত্রিকায় পড়া একটা বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষিতে। গল্পটা লিখার সময় আমার বেশ কষ্ট লেগেছিলো, তার চেয়ে বেশী কষ্ট লেগেছিলো লিখার পর গল্পটা পড়তে। অনেক দিন হলো পত্রিকা পড়া ছেড়ে দিয়েছি, টিভি দেখিনা প্রায় ১৩ বছর! তারপরও খারাপ সংবাদ ঘুরে ফিরে কানে এসে ধরা দেয়, সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো মনকে করে তোলে অশান্ত। দুঃখের বিষয় সে সমুদ্রের কোনো তীর নেই, অশান্ত মন তার কষ্টগুলো কোথাও আছড়ে ফেলতে পারে না তাই!
২৮ জুন, ২০২২
# ইকারাসের বাসা থেকে অফিস খুব একটা দূরে না। হেঁটে গেলে ১৫-২০ মিনিট আর রিক্সায় গেলে ১০ মিনিটের বেশী লাগে না। বেশীরভাগ সময় ইকারাস হেঁটেই অফিসে যায়। আজ তার প্রচন্ড গরম লাগছে, তাপমাত্রাও প্রায় ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস! তাই সে একটা রিক্সা ডেকে তাতে চেপে বসলো।
রিক্সাওয়ালা মধ্যবয়সী। বলতে গেলে একদম ইকারাসের বয়সেরই হবে। শরীরটা জরাজীর্ণ হলেও পা দু'টো বেশ পেশীবহুল। প্রচন্ড গরমে সে ঘেমে একাকার। ইকারাস রিক্সায় বসেই চারদিকটা দেখতে থাকে, রাস্তার দু'পাশের ছোট ছোট দোকান, ব্যস্ত মানুষদের হুটোপুটি করে হেঁটে চলা, কিছু কিছু মানুষের বিনা কারণে অলস দাঁড়িয়ে থাকা, ভিক্ষুকদের সারাদিনের জন্য প্রস্তুতি..... সবকিছু ইকারাস দেখতে থাকে গভীর মনোযোগ দিয়ে।
একটা সময় রিক্সা ইকারাসের অফিসের সামনে এসে দাঁড়ায়। ইকারাস রিক্সা থেকে নেমে ভাড়াটা দিয়ে অফিসের দিকে ফিরে হাঁটা শুরু করলো। পেছন থেকে রিক্সাওয়ালা ইকারাসকে ডাক দিলো, 'ভাইজান, একটু শুনবেন?'
ইকারাস রিক্সাওয়ালার এমন ডাক শুনে পিছন ফিরে তাকালো। দেখলো রিক্সাওয়ালা তার দিকে ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে। ইকারাস রিক্সাওয়ালার দিকে এগিয়ে গেলো।
'ভাইজান, আপনে একটু হাসবেন? আমি প্রত্যেক দিন যত্তোজন যাত্রী লইয়া যাই সক্কলের মুখের হাসিটা একবার হইলেও দেখবার চাই। হাসি দেইখা আমার মনডায় বড়ই শান্তি লাগে।', কথাটা বলেই রিক্সাওয়ালা ফিক করে হেসে দিলো।
ইকারাস তার কথা শুনে বেশ অবাক হলেও একটু হাসার চেষ্টা করলো। কিন্তু হাসিটা খুব একটা ভালো হলো না। এভাবে অন রিকুয়েস্ট হাসি এর আগে কখনো সে হাসেনি!
ইকারাসের গরম লাগা ভাবটা হঠাৎ করেই কমে গেছে, হাসির সাথে ঠাণ্ডা বা গরম লাগার অনুভূতির কি কোনো সম্পর্ক আছে? ইকারাসের তা জানা নেই। কিন্তু সে জানে কোনো কিছু না করেও একটু আগে সে একটা মানুষের মানসিক শান্তির কারণ হতে পেরেছে!
২৯ জুন, ২০২২
# ইকাবুকা স্কুল থেকে আসার সময় পথে একটা ফটো অ্যালবাম পড়ে থাকতে দেখলো। আশেপাশে এমন কাউকে দেখতে পেলো না অ্যালবামটা যার হতে পারে। ইকাবুকা কি করবে তা বুঝে উঠতে পারছে না, শেষমেশ কৌতূহলের কাছে পরাজিত হয়ে সে ঝটপট ফটো অ্যালবামটা তুলে ব্যাগে নিয়ে নিলো!
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ইকাবুকা শোবার ঘরে আসলো। একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে তার। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখটা বুঝতেই হঠাৎ তার ফটো অ্যালবামটার কথা মনে পড়লো! বিছানা থেকে তড়াক করে উঠে সে স্কুল ব্যাগ থেকে ফটো অ্যালবামটা নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় খুব আয়েশ করে বসলো।
অ্যালবামটায় বহু পুরাতন ছবি যেমন আছে, তেমনি আছে খুব সাম্প্রতিক ছবিও (নতুন ছবিগুলোর এক কোণে তারিখ লিখা আছে)। শুরুর দিকের সবগুলো ছবিই সাদা-কালো, একটা ছোট্ট শিশু আর তার মা ও বোনের ছবি! সাদা-কালো হলেও ছবির মাঝে তাদের হাসিমাখা মুখ দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে সময়টা তাদের বেশ বর্ণীল ছিলো! অধিকাংশ মানুষের ছোট বেলাটা খুব সম্ভবত বর্ণীলই হয়, সে সময়ের ছবি সাদা-কালো বা রঙিন যাই হোক না কেনো জীবনের রঙ ঠিকঠাক প্রকাশিত হয়!
অ্যালবামের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ইকাবুকা একসময় ছোট্ট শিশুটির সাম্প্রতিক কিছু ছবি দেখতে পেলো। এখন সে আর ছোট্টটি নেই, ইকাবুকার বাবার চেয়ে খানিক বেশী বয়সী হবে খুব সম্ভবত। সবগুলো ছবি বেশ কালারফুল! ছবিগুলোতে লোকটির মুখে আগের সেই হাসি হাসি ভাবটা নেই, যেমনটা ছিলো তার মায়ের সাথে ছোট্ট বেলার ছবিগুলোয়, বা যেমনটা ছিলো তার মায়ের মুখে, বোনের মুখে! ছবিগুলো রঙিন ঠিকই, কিন্তু কেমন যেনো রঙহীন! ছোট্ট ইকাবুকা ঠিক বুঝতে পারে না সমস্যাটা কোথায়!
*** জীবন সাদা-কালো বা রঙিন, যেমনই হোক না কেনো জীবনে প্রাণ থাকা জরুরী। আশেপাশে এমন অনেক রঙিন জীবন দেখবে যাদের জীবনে প্রাণ নেই, আবার অনেকের জীবন বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে একেবারে সাদামাটা, সাদা-কালো, কিন্তু বাস্তবে তাদের জীবনে প্রাণের কোনো কমতি নেই! জীবনে প্রাণ থাকা চাই ই চাই, সেখানে রঙ থাকুক বা না থাকুক!
৩০ জুন, ২০২২
# আজ ঠিক ঠিক ছয় মাস বয়স হলো আমার হজপজ_Hodgepodge এর! হ্যাপি হাফ বার্থডে!
আমার দুই সন্তানের পর হজপজ_Hodgepodge -ও অনেকটা আমার সন্তানের মতোই! অন্য সন্তানদের মতো তুমিও অনেক বড় হও সে প্রার্থনা করি তোমার জন্য! অবশ্য ছোট্ট বয়সেই তুমি অনেকের মাঝে অনেক ভাবনার উদ্রেক ঘটিয়েছ!
প্রিয় হজপজ_Hodgepodge,
তোমাকে আমার একটা প্রিয় লেখা উৎসর্গ করছি আজ, অবসর পেলে পড়ে দেখো।
"একজন মানুষের জীবনের মূল্য আসলে কত? এটা নির্ধারণ করা আসলেই কি সম্ভব? মানুষের জীবনের মূল্য আসলে কত হতে পারে? আমার মতে একটা মানুষকে কোনো একটা মুহূর্তে বাঁচিয়ে রাখতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন সে মুহূর্তে সেটাই আসলে তার জীবনের মূল্য। এর চেয়ে কম হলে মানুষটা বাঁচবে না! বেশী হলে সমস্যা নেই, অতিমূল্যায়ন হওয়া ছাড়া! যেমন ধরো, একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষকে বাঁচাতে ৩০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন, তাহলে সে মানুষটার জীবনের মূল্য ঐ মুহূর্তের জন্য ৩০ লক্ষ টাকাই!
জীবনের অনেকগুলো সমীকরণ থাকে। এক একজন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সেসব সমীকরণের সমাধান করে, সমাধানে তাদের সময়ও লাগে ভিন্ন ভিন্ন। যে কারণে কোনো একটা সমীকরণের সমাধান আগেই করে ফেলা মানুষটার কথা যারা সমীকরণটা সমাধান করে নি তারা বুঝতে পারে না! যতদিনে সমাধান করে সেটা বুঝতে পারবে ততদিনে হয়তো ওপর মানুষটা অন্য কোনো সমীকরণ সমাধানে ব্যস্ত! তাই মাঝে মাঝে সমীকরণের উত্তর কেউ বলে দিলে সেটা নিয়ে ভাবা উচিত, সেটা গ্রহণ করা উচিত, সমাধান করে তো শেষমেশ সেই উত্তরটাই পাওয়া যাবে! সবকিছু নিজেকেই করতে হলে স্রষ্টা আমাদের জাতিগতভাবে সৃষ্টিই করতেন না হয়তো!
প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে অনেকগুলো মেঘ আকাশ থেকে ঝরে পড়ে জমিনে। মেঘের এই ঝরে পড়া আমার পছন্দ না, মেঘ আকাশেই ভালো। মেঘহীন বৃষ্টি সম্ভব না, কিন্তু বৃষ্টি সেটা বুঝেই না! মেঘ ছাড়া বৃষ্টির কোনো মূল্য নেই, একদম না।"
০১ জুলাই, ২০২২
# ঈদের কেনাকাটা শেষ হয়েছে দশ রোজার আগেই। ঐন্দ্রিলার ঈদের ড্রেসটা এবার একদম তার মনমতো হয়েছে। প্রতিবার ঈদের শপিংয়ে তার যে জামাটা পছন্দ হতো কেনো জানি সেটা তার মায়ের পছন্দ হতো না, আর তাই সারাবেলা মার্কেট ঘুরে দিনশেষে তার মায়ের পছন্দ করা জামাটাই কিনতে হতো। কিন্তু এবার কি হলো সে কিছুই বুঝতে পারছে না! ঐন্দ্রিলার পছন্দের জামাটা মা বিনা বাক্য ব্যয়ে কিনে দিলো! ঐন্দ্রিলার কি যে খুশি লাগছিলো, তা সে বলে বুঝাতে পারবে না। অবশ্য খুশিটা লাগছে অন্য কারণে, তার মায়ের শাড়িটাও এবার সে পছন্দ করে কিনে দিয়েছে, আর তার মাও সেটা অসম্ভব পছন্দ করেছে!
দেখতে দেখতে রোজা শেষ হয়ে আসলো, দুইদিন পর ঈদ। ঐন্দ্রিলার স্কুলও বন্ধ, তাই সে একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠছে কয়টা দিন। আজও সে ঘুমিয়েই ছিলো। হঠাৎ প্রচন্ড চিৎকারের শব্দে ঐন্দ্রিলার ঘুম ভেঙে গেলো! চিৎকারটা তাদের কাজের বুয়া শান্তার। নিশ্চয়ই রান্না করতে গিয়ে হাতে বা পায়ে গরম তেলের ছিটে লেগেছে!
ঐন্দ্রিলা আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে নেমে রান্না ঘরের দিকে গেলো। কিন্তু শান্তার কথা আসছে ঘরের সামনের খোলা জায়গাটা থেকে, সে তাই রান্না ঘরের দিকে না গিয়ে তাদের বাড়ির উঠোনের দিকে গেলো। উঠোনে এসে সে যা দেখতে পেলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না, একদমই না!
উঠোনে একটা পাটি বিছানো, আর তার মাঝে ঐন্দ্রিলার মায়ের রক্তাক্ত নিথর দেহটা রাখা! ঐন্দ্রিলা কয়েক মুহূর্তের জন্য একদম পাথর হয়ে গেলো, সে বুঝে উঠতে পারছে না তার এখন কি করা উচিত! বাবা মারা যাওয়ার সময় সে খুব ছোট ছিলো, বাবার মৃত্যুর কোনো স্মৃতিই তার নেই।
কতটা সময় কেটেছে তার মনে নেই, একটা সময় দৌঁড়ে গিয়ে সে মায়ের নিথর দেহের উপর আছড়ে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। মায়ের শীতল হাত তার চোখ পর্যন্ত আর আসে না, আর কোনোদিন আসবেও না!
.
.
.
মাস চারেক পর কোনো এক বৃহস্পতিবার। ঐন্দ্রিলা ঠিক করলো আজ বাসা থেকে বের হবে, অনেকদিন সে কোথাও যায় না, কোথাও না! ধীরে সুস্থে রেডি হয়ে সে ঘর থেকে বের হলো, কিন্তু বাড়ির মূল ফটকের আগে মেহেদী গাছটার কাছে যেতেই তার পা থমকে যায়। তার মা খুব শখ করে মেহেদী গাছটা লাগিয়েছিলো, যখন বুড়িয়ে যাবে আর চুলগুলো সব সাদা হয়ে যাবে, তখন যেনো মাথার চুলে মেহেদী লাগিয়ে চুলগুলো সুন্দর রাখতে পারেন সে আশায়! ঐন্দ্রিলার বুক ফেঁটে কান্না আসে, সে দৌঁড়ে তার শোবার ঘরে ফিরে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।
ঐন্দ্রিলা আর কোনোদিন ঘর থেকে বেরোয় নি! বাবা মায়ের সাথে দেখা করবে বলে সে ঈদের জন্য কেনা জামাটা গায়ে দিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলো অসীমের পথে! তার হাতে একটা পলিব্যাগে কিছু মেহেদী বাটা ছিলো, মায়ের জন্য নিয়েছিলো হয়তো! মা খুব খুশি হবেন মেহেদী বাটা পেয়ে!
০২ জুলাই, ২০২২
# ১২৫৬ সালের ১৫ এপ্রিল। সনেট বসে আছে তার বাবার বিছানার পাশে। সকাল থেকে বাবা বেশ অসুস্থ, সারাদিনে একটা কথাও বাবা বলেন নি, কোনো নড়াচড়াও নেই। শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে বুকের উঠানামা দেখে বোঝা যাচ্ছে বাবা এখনো বেঁচে আছেন।
সনেটদের গ্রামে কোনো কবিরাজ নেই, কয়েক গ্রাম পরে একজন আছেন, তার বাড়িও অনেক দূর। খুব দ্রুত হেঁটে গেলেও ছয় সাত ঘণ্টা সময় লেগে যায় কবিরাজের বাড়ি পৌঁছুতে! সনেটের বড় ভাই কবিরাজকে আনতে গিয়েছে সেই দুপুর বেলায়, এখন সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হতে চললো। এতক্ষণে সনেটের ভাই কবিরাজকে নিয়ে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছে হয়তো, ভোরের আগেই কবিরাজের আসা হবে না খুব সম্ভবত। সনেট বাবার পায়ের তালুতে গরম সরিষার তেল মালিশ করে দিচ্ছে। কিন্তু কেনো সে তেল মালিশ করছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই, কিছু একটা করা দরকার বাবাকে সুস্থ করার জন্য, সনেট শুধু এতটুকুই জানে!
রাত আরেকটু গভীর হলো। অনেক চেষ্টা করেও বাবাকে কিছু খাওয়ানো গেলো না। বাবার শ্বাসের টানটা অনেকটা বেড়েছে। সনেট কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না, আবার খানিকটা সময় বাবার পায়ের তালুতে গরম সরিষার তেল মালিশ করলো সে। খানিক বাদেই সে তার মা কে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো, মন্দিরে গিয়ে একটু প্রার্থনা করতেই হবে। ভগবান ছাড়া কেউ যে নেই এখন আর! কখনো কি ছিলো আসলে!
সনেটের বড় ভাই শেষ পর্যন্ত কবিরাজকে নিয়ে আসতে পেরেছিলো কি না, বা সনেটের বাবা শেষ পর্যন্ত বেঁচে গিয়েছিলেন কি না সেটা আমার জানা নেই, মাঝে মাঝে লেখক ইচ্ছে করে অনেক কিছু জানতে চান না।
এখন ২০২২ সাল। জুলাই মাস। এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে, এখন আর কবিরাজ খুঁজতে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয় না। তারপরও অনেক সন্তান এখনো তার অসুস্থ বাবার বিছানার পাশে বসে থাকে, হয়তোবা বাবার পায়ের তালুতে গরম সরিষার তেলও মালিশ করে, বাবার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করে। কবিরাজ বা ডাক্তার থাকুক বা না থাকুক, স্রষ্টা সবসময় আমাদের পাশে থাকেন। কবিরাজের কবিরাজি যাতে ঠিকঠাক কাজ করে, বা ডাক্তারের দেয়া ঔষধ যাতে ঠিকঠাক কাজ করে সে জন্য আমরা প্রার্থনা করি, আমাদের আপন মানুষের জীবনের জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা!
০৩ জুলাই, ২০২২
# 'ভাবতে অবাক লাগে পৃথিবীতে একটা সময় মানুষ রক্তের অভাবে মারা যেতো!', জিহান হাঁটতে হাঁটতে তার বন্ধু ইউশানকে কথাগুলো বলছিলো।
ইউশান মৃদু হাসলো শুধু। মুখ দিয়ে কিছু বললো না।
জিহান আর ইউশান প্রায় ৩ বছর ধরে 'বায়োব্লাড' প্রজেক্টে কাজ করছে। আরো পয়ষট্টি বছর আগে এই প্রজেক্টটি চালু করেন ইউহান নামের একজন বিজ্ঞানী। তার লেখা বই পড়ে জানা যায় 'বায়োব্লাড' প্রজেক্টের ধারণা তার মাথায় আসে বিভিন্ন পশুপাখির খামার দেখে। মানুষ তার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য মুরগির খামার, গরুর খামার, ছাগলের খামার গড়ে তুলেছিলো একটা সময়। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আক্রান্ত মানুষের রক্তের প্রয়োজন হলে প্রায় সময় প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত পেতে মানুষকে বেশ কষ্ট করতে হতো। এই কষ্ট দূর করতে ইউহানের মাথায় 'বায়োব্লাড' প্রজেক্টের চিন্তা আসে। আর এই প্রজেক্টের জন্য তার দরকার ছিলো একটা বিশাল মানুষের খামার! হ্যাঁ, সত্যি সত্যি মানুষের খামার! মানুষের রক্তের জন্য 'মানুষের খামার'! ইউহানের আগে কেউ 'মানুষের খামার' গড়ে তোলার কথা ভাবতে পেরেছিলো কি?
সে সময় মানুষের ক্লোনিং নিষিদ্ধ ছিলো, তাই ইউহানের জন্য 'বায়োব্লাড' প্রজেক্ট চালু করা বেশ কষ্টকর ছিলো। দরিদ্র মানুষদের ধরে ধরে তাদেরকে রাসায়নিকভাবে এক ধরণের জীবন্মৃত পরিস্থিতিতে রেখে বছরের পর বছর রক্ত সংগ্রহ করে তা বিক্রি করা হতো বিভিন্ন হাসপাতালের রক্ত প্রার্থী মানুষদের কাছে।
এভাবে অনেকটা বছর কেটে গেছে, আস্তে আস্তে এই প্রজেক্টের ব্যাপকতা বেড়েছে, বেড়েছে ইউহানের প্রভাব প্রতিপত্তিও। আরেকটি জিনিস বেড়েছে, রক্তের দাম!
স্বেচ্ছা রক্তদান আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আইন করে মানুষের ক্লোনিংও বৈধ করা হয়েছে! এখন রক্তের প্রয়োজন হলেই সবাই ছুটে যায় 'বায়োব্লাড' এ, যেখানে যেকোনো গ্রুপের রক্তের কোনো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন একটা জিনিস, অগাধ টাকা! সস্তায় রক্ত কিনে জীবনের মূল্য কমানো এ যুগে মানায় না!
০৪ জুলাই, ২০২২
# জীবনে চলার পথে অনেকের সাথেই আমাদের পরিচয় ঘটে, তাদের মাঝে অনেকের সাথেই বিনা কারণে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, একদম বিনা কারণেই! তাদের মাঝে এমন অনেকেই থাকে যাদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা হয় বেশ উষ্ণ, তারপরও সে উষ্ণতা কোথাও না কোথাও ঠিকই শীতলতা খুঁজে নেয়! আমরা কখনো কি ভেবেছি কার কার সাথে আমাদের বিনা কারণে কোনো যোগাযোগ নেই? জীবনের টাইমলাইনে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভাবতে বসলে অনেকগুলো এমন নাম মনে আসবে যাদের কথা মনে পড়তেই আমরা আঁতকে উঠি! এত্তো কাছের মানুষের সাথে যোগাযোগটা ছুটে গেছে!
একজন মানুষের সাথে একটা নির্দিষ্ট টাইমলাইনে ঠিক কতজন মানুষের সুসম্পর্ক বজায় থাকে? সংখ্যাটা ব্যক্তিনির্ভর হলেও একজন ব্যক্তি একটা নির্দিষ্ট টাইমলাইনে তার নিজস্ব সীমার নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকের চেয়ে বেশি লোকের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না! নতুন কারো সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠা শুরু হলে সুসম্পর্ক বজায় আছে এমন কেউ না কেউ তার চিন্তার আড়ালে চলে যাবে।
তবে নিজস্ব সীমার বাইরে কাউকে স্মৃতিতে ধরে রাখতে গিয়ে আমাদের মাঝে কেউ কেউ নিজের সাথে নিজের সম্পর্কটাই বেজায় ভুলে বসে থাকে! এমন মানুষের সংখ্যা খুব খুব কম, এবং মানুষ হিসেবে এরা বেশ ভালো! স্রষ্টা যেমন তার সৃষ্টি মানুষকে ভালোবাসে, এরাও ঠিক তার মতো মানুষকে ভালোবেসে নিজেকে ভুলে যায়!
০৫ জুলাই, ২০২২
# সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। রিয়াজের মা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ছুটে আসলো। রিয়াজ তখন মাটিতে শুয়ে শুয়ে কল্পনা করছিলো- তার সামনে এক থালা ভাত আর একটা সিদ্ধ আলুর, সাথে এক পিছ পেঁয়াজও রাখা আছে! সে হাত বাড়ালেই খেতে পারবে, পেট ভরে! গত দুইদিনের ক্ষুধার্ত পেটে তার মাথায় খাবার ছাড়া আর অন্য কিছুর চিন্তা একটা মুহূর্তের জন্যও আসছে না।
'বাজান, তাড়াতাড়ি উঠ। বস্তির মুখে কয়ডা ছেমরা আইছে, কি জানি শুটিং অইবো। কয়ডা ছোড ছোড পোলা খুঁজতাছে, কি জানি শুটিং করবো, টেহাও দিবো হুনসি, তুই জলদি যা।', রিয়াজের মা এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে রিয়াজকে টেনে তুললো।
রিয়াজের গায়ে এক ফোঁটা শক্তি নেই, তারপরও মায়ের কথা শুনে সে যতো দ্রুত সম্ভব বস্তির সামনের অংশে এসে পড়লো। কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে ঘিরে ছোট বড় মানুষের একটা জটলা হয়ে আছে। রিয়াজ সেদিকে এগিয়ে গেলো।
ভীড়ের একপাশে দাঁড়িয়ে রিয়াজ যা শুনলো তার সারকথা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অনুষ্ঠানে একটা ছোট নাটক পরিবেশন করা হবে। সে নাটকে অভিনয়ের জন্য কিছু দরিদ্র রোগা ছেলে মেয়ে প্রয়োজন! তারা যাদের পছন্দ করবে তাদেরকে অভিনয়ের জন্য ৫০০ টাকা করে দেয়া হবে।
সৌভাগ্যক্রমে ৭ জন ছেলে মেয়ের মাঝে তারা রিয়াজকেও অভিনয়ের জন্য পছন্দ করলো! কাল সকালে এখানে এসে তাদেরকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে নাটকটি পরিবেশিত হবে। নাটক শেষে তাদেরকে আবার গাড়িতে করেই বস্তিতে দিয়ে যাওয়া হবে, সাথে দেয়া হবে ৫০০ টাকা! রিয়াজ বলতে চেয়েছিলো আমাকে আজকে ৫০ টা টাকা দিয়ে যান! কিছু কিনে খাই! দুইদিন কিছু খাই না। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই ওরা চলে গেলো।
রিয়াজ কষ্ট করে বাসায় ফিরে আসলো। আজ রাতটাও কিছু না খেয়েই থাকতে হবে রিয়াজ আর তার মাকে।
সকাল সকাল রিয়াজ বস্তির মুখে এসে দাঁড়িয়ে থাকলো। আসার আগে পেট ভরে পানি খেয়ে এসেছে সে! বাকি ৬ জন ছেলে মেয়েও তার মতো একে একে এসে বস্তির মুখে এসে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণে পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গাড়ি এসে রিয়াজসহ বাকি ছয়জনকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওয়ানা দিলো।
সকাল ১১ টার দিকে নাটক শুরু হবে। রিয়াজসহ বাকি সবাইকে যার যার ভূমিকা বুঝিয়ে দেয়া হলো। রিয়াজকে অভিনয় করতে হবে একটা বার্গারের পঁচা পেটির ভূমিকায়! তাকে এমন একটা কস্টিউম পরিয়ে দেয়া হলো যেটা পরার পর তাকে সত্যি সত্যি একটা বার্গারের পেটির মতোই লাগছিলো! রিয়াজের খুব বেশী ক্ষুধা লেগেছে, সে যদি সত্যি সত্যি বার্গারের পেটি হতো তাহলে সে হয়তো নিজেকেই নিজে খেয়ে নিতো এখন! হোক না তা পঁচা পেটি!
রিয়াজ নামের বার্গারের পঁচা পেটিটা খুব করুণ মুখে অপেক্ষা করছে নাটকটা শেষ হবার! ৫০০ টাকা পেলে কিছু খাবার খেতো সে, সাথে মায়ের জন্যও কিছু খাবার কিনে নিতো! তিন দিন ধরে কিছু খায় না সে!
০৬ জুলাই, ২০২২
# অনেকদিন পর ক্যান্টিনে বসে ডালপুরি আর আলুর চপ স্যান্ডউইচ করে খাচ্ছি। ডালপুরি আর আলুর চপ এভাবে খেতে আমার বেশ ভালো লাগে। খাওয়া শেষে এক গ্লাস পানি খেয়ে উঠে পড়লাম। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে, ক্যাম্পাসে তেমন কেউ নেই। যারা আছে তাদের অধিকাংশই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
হাঁটতে হাঁটতে ফুসকাওয়ালা মামার দোকানের কাছে চলে আসলাম। মামা আমাকে দেখে একটু মুচকি হেসে বললো, 'আঙ্কেল এক প্লেট চটপটি দেই?' আমি না বোধক মাথা নেড়ে একটা টুলে বসলাম। দোকানে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। ফুসকাওয়ালা মামার মাথার উপর এক ঝাঁক মশা উড়ছে। আমার মাথার উপরও হয়তো এমন এক ঝাঁক মশা উড়ছে!
পকেট থেকে ফোনটা বের করে কতক্ষণ ফেসবুক স্ক্রল করলাম। ফেসবুকের এই আনলিমিটেড স্ক্রল মাঝে মাঝে আমার কাছে বেশ বিরক্ত লাগে, আরে ভাই সবকিছুর একটা শেষ থাকে, তুই সামান্য একটা অ্যাপ! তোর স্ক্রলিং কেনো আনলিমিটেড হতে হবে!
হঠাৎ করেই সন্ধ্যা নেমে এলো, হঠাৎ বললে অবশ্য ভুল বলা হবে, আমি একটু আগেও আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সন্ধ্যার আগমন দেখছিলাম। ফুসকাওয়ালা মামা দোকান বন্ধ করে দিচ্ছেন। আমি উঠে পড়লাম। ক্যাম্পাস থেকে শহরে যাওয়ার ট্রেনটা ছাড়বে ৩০ মিনিট পর। ট্রেন পর্যন্ত হেঁটে যেতে ১৫ মিনিট সময় লাগবে আমার। এই ১৫ মিনিট শুধু হেঁটে হেঁটে কাটানো আমার জন্য কষ্টকর। আমি নিজের কষ্ট একদম সহ্য করতে পারি না!
হাঁটতে হাঁটতে সূচনাকে ফোন দিলাম। আমার ব্যাচমেট হলেও সূচনা অন্য ডিপার্টমেন্টে পড়ে। তার সাথে আমার কথা হয় কালেভদ্রে, দেখা হয় তার চেয়েও কম। কিন্তু যখনই কথা বলি মনে হয় একটু আগেই মনে হয় কথা বলেছিলাম ওর সাথে! তার সাথে কথা বলার টপিকগুলোও অদ্ভুত! বেশীরভাগ কথাই অবশ্য আমি বলি, তাই অদ্ভুত টপিকগুলো নিয়ে আলোচনার একক কৃতিত্ব আমার! মানুষ সাধারণত শোনার চেয়ে বলতে বেশী পছন্দ করে, কিন্তু সূচনা এক্ষেত্রে একদম উল্টো, তার সবচেয়ে ভালো গুণ সে খুব ভালো শ্রোতা।
তিন বার রিং পরার পর সূচনা ফোনটা ধরলো। ধরেই সেই পরিচিত কণ্ঠে বললো, 'হ্যালো, শাফকাত, বলো তোমার মন কেনো খারাপ?' আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। সাধারণত আমার মন খারাপ থাকলেই আমি ওকে ফোন দেই। একটা সময় বিষয়টা সে ধরতে পেরেছে এবং এরপর থেকে ফোন ধরেই সে এই এক ডায়লগ দেয়া শুরু করেছে। এতে অবশ্য আমার মন খারাপ ভাবটা একটু কমে যায়! আজকে আমার মন খারাপের কারণটা বেশ অদ্ভুত! আজকে সন্ধ্যা নামের মুহূর্তটা একটু বেশীই অন্ধকারাচ্ছন্ন লেগেছে আমার কাছে, আর তা দেখেই আমার মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেছে! সূচনাকে একথা বলতেই সে খুব স্বাভাবিকভাবে আমাকে সন্ধ্যার অন্ধকার নিয়ে ছোটখাটো একটা লেকচার দিলো। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনে জিজ্ঞেস করলাম, 'আজকে তোমার মন কেনো খারাপ? তুমি তো এতো কথা বলো না! শুধু মন খারাপ থাকলেই বলো।' আমার কথা শুনে সূচনা হাসলো কি হাসলো না বুঝলাম না। কিন্তু সে কিছু বললো না। আমি প্রসঙ্গ পাল্টে টুকটাক কথা বললাম। স্টেশনের কাছাকাছি এসে তার থেকে বিদায় নিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম।
ট্রেনে উঠে বসলাম। ঠিক এক ঘণ্টা সময় লাগবে শহরে পৌঁছুতে। ট্রেনে বসে সূচনার কথা ভেবে একটু খারাপ লাগছে আমার। সূচনা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত, তাই সাম্প্রতিক সব স্মৃতি মনে রাখা তার জন্য খুব কষ্টকর। খুব সম্ভবত এ কারণে আমি আমার খারাপ লাগা অনুভূতিগুলো ওর সাথে শেয়ার করি! আমার কষ্টের স্মৃতি ওকে ভাবালেও খুব বেশী সময় হয়তো ভাবাবে না!
সূচনা সাম্প্রতিক অনেক কিছু ভুলে গেলেও কোনো এক অদ্ভুত কারণে এখনো আমার নাম বা আমাকে ভুলে যায় নি! এখনো ফোন ধরেই বলবে, 'হ্যালো, শাফকাত, বলো তোমার মন কেনো খারাপ?'
মাঝে মাঝে ভাবি, কোনোদিন হয়তো সে ফোনের ওপর পাশ থেকে বলবে, 'হ্যালো, কে বলছেন? আপনার নাম্বারটা আমার মোবাইলে শাফকাত নামে সেইভ করা আছে, কিন্তু আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না, স্যরি!' সেদিন হয়তো আমার অনেক অনেক কষ্ট লাগবে! ইচ্ছে করবে সূচনাকে আরো একবার ফোন করে বলি আমার খুব মন খারাপ! কিন্তু আমি জানি তা আর বলা হবে না! সেদিন সূচনার সাথে আমার কথাদের ইতি টানা হবে.......
০৭ জুলাই, ২০২২
# মানুষের দেহের উপর তার মনের আছে মারাত্মক শক্তিশালী প্রভাব। মানুষ চাইলেই কি কোনো প্রকার ঔষধ ছাড়া কোনো রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে? হয়তো পারে! অবশ্য এ ধারণা থেকে উৎপত্তি হয়েছে এক চমৎকার থিওরি- 'প্লাসিবো ইফেক্ট'। প্লাসিবো হলো এমন নকল একটি বস্তু যা গ্রহণে প্লাসিবো ইফেক্টের প্রভাবে একজন অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠে। অস্বাভাবিক মানসিক কষ্ট দূর করতে প্লাসিবো ইফেক্ট খুব ভালো কাজ করে থাকতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের জন্য সঠিক প্লাসিবো খুঁজে পাওয়া অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্লাসিবো গ্রহণ করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুরু হলে সেটা দূর করতে নতুন প্লাসিবো খুঁজে পাওয়া কি আসলেই সম্ভব!
# বাটারফ্লাই ইফেক্ট নিয়ে পৃথিবীর খুব কম মানুষই ভাবে। এটা নিয়ে ভাবতে আমার সবসময়ই খারাপ লাগে। বাটারফ্লাই ইফেক্টের সমস্যা হলো এটা যে কোনো একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরের কারণটাই বুঝতে সহায়তা করে, ঘটনা যা ঘটার তা তো ঘটেই যায়! অতীতে ফিরে যাওয়ার একটা উপায় হলো অতীতের স্মৃতিকে রিক্রিয়েট করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা অতীতের স্মৃতিতে আমরা একা থাকি না, তাই এর রিক্রিয়েশন করা আমাদের পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না।
০৮ জুলাই, ২০২২
# স্রষ্টার কাছ থেকে আমাদের বা আমাদের কাছ থেকে স্রষ্টাকে সবচেয়ে দূরে রাখে কোন জিনিসটা বলতে পারো? প্রশ্নটা করলে অনেকে অনেকভাবে ভাবতে শুরু করে। আমার মতে স্রষ্টাকে আমাদের কাছ থেকে দূরে রাখে শুধুমাত্র একটা জিনিস, সেটা হলো আমাদের জীবন! তাই বলে স্রষ্টাকে পাওয়ার জন্য জীবন ত্যাগ, বা জীবনকে পাওয়ার জন্য স্রষ্টাকে ত্যাগ করাও সমীচীন নয়। আমরা যেন এই দুইয়ের মাঝে একটা অত্যানুকুল অবস্থা তৈরি করে চলতে পারি তার জন্যই আমাদের দেয়া হয়েছে আমাদের মস্তিষ্ক!
স্রষ্টাকে বিশ্বাস করা আর স্রষ্টার প্রার্থনা করা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ স্রষ্টার প্রার্থনা না করলেও যদি স্রষ্টায় বিশ্বাস রাখে তবে তার একটা আশা থাকলেও বিশ্বাসবিহীন প্রার্থনাকারীর কোনো আশা নেই।
জীবনের কোনো কোনো পর্যায়ে আমাদের সামনে অনেকগুলো দরজা থাকে, যার মধ্যে একটা দরজা খুললেই অন্য সব দরজা ছোট হয়ে জানালা হয়ে যায়। জানালা দিয়ে তুমি দেখতে পাবে ওই কক্ষে কি আছে, কিন্তু আর সেখানে যেতে পারবে না!
০৯ জুলাই, ২০২২
# মাঝে মাঝে আমি 'সময়' নিয়ে ভাবি। ভাবার জন্য এর চেয়ে সুন্দর টপিক আর কিছু হতে পারে না। অবশ্য এ ভাবনার কোনো শেষও নেই!
মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মহাবিশ্ব তৈরির যে পর্যায়ে সময় তৈরি করেছেন তার আগে তো সময় বলে কিছু ছিলো না! তাহলে সময়বিহীন তখনকার সবকিছু কেমন ছিলো? পৃথিবীতে সময় গণনা শুরু হওয়ার আগেই সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে যে দিবা-রাত্রি হয় তার সাথে আমাদের দেহঘড়ি মানিয়ে নিয়ে একটা সিস্টেম দাঁড় করিয়েছে। দিন-রাত মিলিয়ে যে ২৪ ঘণ্টা ধরা হয়েছে আমরা চাইলেও এই সময় কাঠামো ভাঙতে পারি না, একটা নির্দিষ্ট সময় জেগে থাকার পর আমাদের দু'চোখ ভেঙে ঘুম আসবেই!
পৃথিবী যদি আমাদের আবাস না হয়ে ভেনাস গ্রহে আমাদের আবাস হতো (এটা নিছক কল্পনা!), যেখানে দিন-রাত মিলিয়ে ৫,৮৩২ ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হয়, তাহলে হয়তো আমরা একবার কয়েক হাজার ঘণ্টা ঘুমানোর পর কয়েক হাজার ঘণ্টা জেগে থাকতে পারতাম! আমাদের জীবনের দৈর্ঘ্য কেমন হতো? ১০০ দিন! বা ১১০ দিন! নাকি এখনকার মতোই অনেকগুলো বছর!
মহাবিশ্ব সৃষ্টির অনেক পরে পৃথিবী তৈরি হয়েছিলো, পৃথিবী যেদিন ধ্বংস হবে সেদিন কি মহাবিশ্বের অন্যান্য অংশ ঠিকঠাক থাকবে? আমার জানা নেই।
তবে একটা মজার ভাবনা মাঝে মাঝে আমার মাথায় আসে! বহির্জাগতিক কোনো সভ্যতার সাথে যোগাযোগের জন্য সে কবে থেকে আমরা চেষ্টা করে আসছি! কিন্তু মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার অবস্থান সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা দিয়েছেন, সে অনেক অনেক দূরে আমাদের আরজি প্রেরণে আমাদের কোনো কষ্টই করতে হয় না, অনেকক্ষেত্রে হয়না কোনো সময়ক্ষেপণ! আমরা মন থেকে যা বলি সেটাই পৌঁছে যায়! তাহলে পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্যালাক্সিতে হয়তো আমরা আমাদের মনের অজান্তেই প্রতিনিয়ত তথ্য প্রেরণ করে যাচ্ছি! তথ্য গ্রহণের পদ্ধতি হয়তো আমাদের মাঝেই আছে, আমরা এখনো তা অনুধাবণ করতে পারি নি!
০২ আগষ্ট, ২০২২
মৃত নীলকন্ঠ
তোমায় আমি বলে কয়ে খুন করেছিলাম!
তবে, ঠিক কবে খুন করেছিলাম? মনে নেই!
মনে নেই কেনই বা তোমায় খুন করেছিলাম!
তবে, ঠিক ঠিক মনে আছে সে সন্ধ্যার কথা,
যেদিন তোমার ফুসফুসের শেষ বাতাসটুকু-
আমার হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো, চিরতরে!
আজ হঠাৎ তোমায় মনে পড়ে গেলো! কেন?
অনেকক্ষণ ভেবে বুঝেছি তোমায় মনে পড়ার কারণ!
তোমার কণ্ঠে আমার কবিতাদের শুনিনা,
অনেকটা দিন !
আজ একটা কবিতা শুনাবে? তোমার মৃত কণ্ঠে?
*** "কবিতা লেখা যায় না, নাজিল হতে হয়।", নাট্যকার মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসে মোটামুটি এমনটা লিখেছিলেন। কথাটা কি সত্য? খুব সম্ভবত!
১২ এপ্রিল, ২০২৩
# হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেলো। আমি শুয়ে আছি আমার বিছানায়। মনে হচ্ছে অনন্তকাল ঘুমিয়ে ছিলাম আমি, ঠিক কতক্ষণ? একদিন? দুইদিন? এতোটা লম্বা সময় আমি কখনো ঘুমাইনি, একবার সর্বোচ্চ ২২ ঘণ্টা টানা ঘুমিয়েছিলাম! আমি লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাই না সাধারণত, তবে এখন ঘরের লাইটটা জ্বলছে!
ভাবনায় ছেদ পড়লো মায়ের ডাকে, ভাত খেতে ডাকছে আমাকে। বিছানা ছেড়ে উঠে ডাইনিং টেবিলে বসলাম। মা কে বললাম কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি? মা তো শুনেই অবাক! এই তো ১০ মিনিট আগে ভাত খাবি বলে তোর রুমে গেলি! এর মাঝে আবার ঘুমিয়েছিসও?
আমি বেশ অবাক হলাম। ১০ মিনিট এর চেয়ে কম ঘুমিয়েও আমার কাছে কেনো মনে হচ্ছে আমি অনন্তকাল ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম! ঘুমের মাঝে কত শত স্বপ্ন দেখলাম! আমার ভবিষ্যৎ, আমার সংসার, আমার সন্তান, আমার অর্জন! সবটাই এখন দেখি নিছকই স্বপ্ন! ধুর!
মুখটা ধুয়ে খেতে বসলাম। ভাত খেয়ে একটু পড়তে বসবো। সামনে এসএসসি পরীক্ষা!
সেদিন বুঝতে পারিনি সময়ের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে আমি অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম। শুধুমাত্র একবারের জন্য, সেই একই পথ ঠিক একইভাবে আবার পাড়ি দিবো বলে। মাঝে মাঝে তাই মনে হয় ঠিক এই মুহূর্তটায় আমি আগেও ছিলাম!