নাটক
নাটক
সন্ধ্যে হয়ে এসেছে।
রিয়াজের মা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ছুটে আসলো। রিয়াজ তখন মাটিতে শুয়ে শুয়ে কল্পনা করছিলো- তার সামনে এক থালা ভাত আর একটা সিদ্ধ আলুর, সাথে এক পিছ পেঁয়াজও রাখা আছে! সে হাত বাড়ালেই খেতে পারবে, পেট ভরে! গত দুইদিনের ক্ষুধার্ত পেটে তার মাথায় খাবার ছাড়া আর অন্য কিছুর চিন্তা একটা মুহূর্তের জন্যও আসছে না।
'বাজান, তাড়াতাড়ি উঠ। বস্তির মুখে কয়ডা ছেমরা আইছে, কি জানি শুটিং অইবো। কয়ডা ছোড ছোড পোলা খুঁজতাছে, কি জানি শুটিং করবো, টেহাও দিবো হুনসি, তুই জলদি যা।', রিয়াজের মা এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে রিয়াজকে টেনে তুললো।
রিয়াজের গায়ে এক ফোঁটা শক্তি নেই, তারপরও মায়ের কথা শুনে সে যতো দ্রুত সম্ভব বস্তির সামনের অংশে এসে পড়লো। কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে ঘিরে ছোট বড় মানুষের একটা জটলা হয়ে আছে। রিয়াজ সেদিকে এগিয়ে গেলো।
ভীড়ের একপাশে দাঁড়িয়ে রিয়াজ যা শুনলো তার সারকথা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অনুষ্ঠানে একটা ছোট নাটক পরিবেশন করা হবে। সে নাটকে অভিনয়ের জন্য কিছু দরিদ্র রোগা ছেলে মেয়ে প্রয়োজন! তারা যাদের পছন্দ করবে তাদেরকে অভিনয়ের জন্য ৫০০ টাকা করে দেয়া হবে।
সৌভাগ্যক্রমে ৭ জন ছেলে মেয়ের মাঝে তারা রিয়াজকেও অভিনয়ের জন্য পছন্দ করলো! কাল সকালে এখানে এসে তাদেরকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে নাটকটি পরিবেশিত হবে। নাটক শেষে তাদেরকে আবার গাড়িতে করেই বস্তিতে দিয়ে যাওয়া হবে, সাথে দেয়া হবে ৫০০ টাকা! রিয়াজ বলতে চেয়েছিলো আমাকে আজকে ৫০ টা টাকা দিয়ে যান! কিছু কিনে খাই! দুইদিন কিছু খাই না। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই ওরা চলে গেলো।
রিয়াজ কষ্ট করে বাসায় ফিরে আসলো। আজ রাতটাও কিছু না খেয়েই থাকতে হবে রিয়াজ আর তার মাকে।
সকাল সকাল রিয়াজ বস্তির মুখে এসে দাঁড়িয়ে থাকলো। আসার আগে পেট ভরে পানি খেয়ে এসেছে সে! বাকি ৬ জন ছেলে মেয়েও তার মতো একে একে এসে বস্তির মুখে এসে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গাড়ি এসে রিয়াজসহ বাকি ছয়জনকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওয়ানা দিলো।
সকাল ১১ টার দিকে নাটক শুরু হবে। রিয়াজসহ বাকি সবাইকে যার যার ভূমিকা বুঝিয়ে দেয়া হলো। রিয়াজকে অভিনয় করতে হবে একটা বার্গারের পঁচা পেটির ভূমিকায়! তাকে এমন একটা কস্টিউম পরিয়ে দেয়া হলো যেটা পরার পর তাকে সত্যি সত্যি একটা বার্গারের পেটির মতোই লাগছিলো! রিয়াজের খুব বেশী ক্ষুধা লেগেছে, সে যদি সত্যি সত্যি বার্গারের পেটি হতো তাহলে সে হয়তো নিজেকেই নিজে খেয়ে নিতো এখন! হোক না তা পঁচা পেটি!
রিয়াজ নামের বার্গারের পঁচা পেটিটা খুব করুণ মুখে অপেক্ষা করছে নাটকটা শেষ হবার! ৫০০ টাকা পেলে কিছু খাবার খেতো সে, সাথে মায়ের জন্যও কিছু খাবার কিনে নিতো! তিন দিন ধরে কিছু খায় না সে!
সমাপ্ত