ঐন্দ্রিলা
ঐন্দ্রিলা
ঈদের কেনাকাটা শেষ হয়েছে দশ রোজার আগেই। ঐন্দ্রিলার ঈদের ড্রেসটা এবার একদম তার মনমতো হয়েছে। প্রতিবার ঈদের শপিংয়ে তার যে জামাটা পছন্দ হতো কেনো জানি সেটা তার মায়ের পছন্দ হতো না, আর তাই সারাবেলা মার্কেট ঘুরে দিনশেষে তার মায়ের পছন্দ করা জামাটাই কিনতে হতো। কিন্তু এবার কি হলো সে কিছুই বুঝতে পারছে না! ঐন্দ্রিলার পছন্দের জামাটা মা বিনা বাক্য ব্যয়ে কিনে দিলো! ঐন্দ্রিলার কি যে খুশি লাগছিলো, তা সে বলে বুঝাতে পারবে না। অবশ্য খুশিটা লাগছে অন্য কারণে, তার মায়ের শাড়িটাও এবার সে পছন্দ করে কিনে দিয়েছে, আর তার মাও সেটা অসম্ভব পছন্দ করেছে!
দেখতে দেখতে রোজা শেষ হয়ে আসলো, দুইদিন পর ঈদ।
ঐন্দ্রিলার স্কুলও বন্ধ, তাই সে একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠছে কয়টা দিন।
আজও সে ঘুমিয়েই ছিলো। হঠাৎ প্রচন্ড চিৎকারের শব্দে ঐন্দ্রিলার ঘুম ভেঙে গেলো! চিৎকারটা তাদের কাজের বুয়া শান্তার। নিশ্চয়ই রান্না করতে গিয়ে হাতে বা পায়ে গরম তেলের ছিটে লেগেছে!
ঐন্দ্রিলা আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে নেমে রান্না ঘরের দিকে গেলো। কিন্তু শান্তার কথা আসছে ঘরের সামনের খোলা জায়গাটা থেকে, সে তাই রান্না ঘরের দিকে না গিয়ে তাদের বাড়ির উঠোনের দিকে গেলো। উঠোনে এসে সে যা দেখতে পেলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না, একদমই না!
উঠোনে একটা পাটি বিছানো, আর তার মাঝে ঐন্দ্রিলার মায়ের রক্তাক্ত নিথর দেহটা রাখা! ঐন্দ্রিলা কয়েক মুহূর্তের জন্য একদম পাথর হয়ে গেলো, সে বুঝে উঠতে পারছে না তার এখন কি করা উচিত! বাবা মারা যাওয়ার সময় সে খুব ছোট ছিলো, বাবার মৃত্যুর কোনো স্মৃতিই তার নেই।
কতটা সময় কেটেছে তার মনে নেই, একটা সময় দৌঁড়ে গিয়ে সে মায়ের নিথর দেহের উপর আছড়ে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। মায়ের শীতল হাত তার চোখ পর্যন্ত আর আসে না, আর কোনোদিন আসবেও না!
.
.
.
মাস চারেক পর কোনো এক বৃহস্পতিবার। ঐন্দ্রিলা ঠিক করলো আজ বাসা থেকে বের হবে, অনেকদিন সে কোথাও যায় না, কোথাও না! ধীরে সুস্থে রেডি হয়ে সে ঘর থেকে বের হলো, কিন্তু বাড়ির মূল ফটকের আগে মেহেদী গাছটার কাছে যেতেই তার পা থমকে যায়। তার মা খুব শখ করে মেহেদী গাছটা লাগিয়েছিলো, যখন বুড়িয়ে যাবে আর চুলগুলো সব সাদা হয়ে যাবে, তখন যেনো মাথার চুলে মেহেদী লাগিয়ে চুলগুলো সুন্দর রাখতে পারেন সে আশায়! ঐন্দ্রিলার বুক ফেঁটে কান্না আসে, সে দৌঁড়ে তার শোবার ঘরে ফিরে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।
ঐন্দ্রিলা আর কোনোদিন ঘর থেকে বেরোয় নি! বাবা মায়ের সাথে দেখা করবে বলে সে ঈদের জন্য কেনা জামাটা গায়ে দিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলো অসীমের পথে! তার হাতে একটা পলিব্যাগে কিছু মেহেদী বাটা ছিলো, মায়ের জন্য নিয়েছিলো হয়তো! মা খুব খুশি হবেন মেহেদী বাটা পেয়ে!
সমাপ্ত