"পানকৌড়ি মন" বইটা প্রকাশিত হওয়ার পর আমার লেখা আরো কিছু কবিতা নিয়ে আরেকটি কবিতার বই বের করবো ঠিক করেছিলাম, বইয়ের নামটাও ভেবে রেখেছিলাম- "বসন্তবৈরী"। ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখা সব কাজ করতে নেই, তাহলে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাটা আর ওভাবে অনুভব করা যায় না, তাই বইয়ের মলাটে আর যাবে না আমার "বসন্তবৈরী"! "বসন্তবৈরী" -র সব কবিতা সাইটে না দিয়ে বাছাই করা ২৮টি কবিতা প্রকাশ করলাম। "পানকৌড়ি মন" আর "বসন্তবৈরী" মিলিয়ে ১১৩টি কবিতা। অন্যসব কবিতা থাকবে "হিজিবিজি"-তে।
ঘুমকাতুরে বসন্তবৈরী
কোলাহলপূর্ণ পথে আজ হেঁটে চলি একা একা।
খোলা চোখে দেখা হয় অনেকটা দূর, অনেকটা!
তোমার বারান্দা, তোমার বাসার ছাদ, হেঁটে চলা
পথ তোমার, তোমার হাতের ছোঁয়া পাওয়া বেঞ্চিটা!
শুধু দেখা হয় না বারান্দার ওপাশটায় তোমায়,
বাসার ছাদে তোমার বিকেলের রোদ পোহানো!
তোমার হেঁটে চলা পথে নিয়ম করে হাঁটা হয় আজো,
বসা হয়না তোমার ছোঁয়া পাওয়া বেঞ্চিতে, ইচ্ছে করেই!
অনেকটা দিন তোমায় বলা হয় না শুভ সকাল, তবুও
তোমার সকালগুলো শুভ হয়, হয় শুভময়, আমিহীন।
রাতগুলো আগের মতই অন্ধকার, আগের মতই
জেগে থাকা রাতগুলোয় বলতে গিয়েও বলা হয় না, শুভ রাত্রি!
গলে যাওয়া মোমে আর গড়া হয় না তোমার অবয়ব,
কল্পলোকে বোনা হয়না তোমায় নিয়ে আর কোনো গল্প।
তোমার চোখের নিচের প্রায় অমোচনীয় কালিটা যেদিন মুছে যাবে,
সেদিন হয়তো আমি একটু মুচকি হাসবো,
হয়তো বলবো, শুভ সকাল, হাতে নিয়ে হাফ কাপ চা!
ততদিন পর্যন্ত ভালো থেকো ঘুমকাতুরে বসন্তবৈরী!
আমার আমি
ভাবছি, একটা মানুষ কিনবো! ৩৩ বছর বয়সী
সুস্থ-সবল, বড় বড় চোখের সাদা মনের একটা মানুষ!
মানুষটার সব সুখ-দুঃখ গুলোও কিনে নিবো ভাবছি!
মানুষটার সুখের গল্প শুনে খুব করে হাসবো,
উন্মাদের মত! অথবা তোমার মত! পারবো?
মানুষটার দুঃখগুলোর আবেগে কেঁদে কেটে
ভাসাবো আমার দু'চোখ! তার দুঃখের সাথে
হয়তো আমার দুঃখও ভাসাবো, একটুখানি!
মানুষটা কখনো মিথ্যা বলবে না আমাকে,
কখনো না! চুল পরিমাণ মিথ্যাও না!
মানুষটাকে আমি আস্তে আস্তে করে আমার
আমিত্ব দান করবো, ৩৩ বছর বয়সী আমার আমিত্ব!
আচ্ছা, এমন একটা মানুষের দাম কতো বলতে পারো?
বলতে পারো, আমার সবটা দিলেও সে কি হতে পারবে-
আমার আমি?
মানুষ!
মাঝে মাঝে শহরটা কাঁদে, খুব নীরবে।
চোখের জল গড়িয়ে পড়ার আগেই
তাকে আবার হাসতে হয়, নকল হাসি!
মাঝে মাঝে শহরটা অবসাদে ভুগতে থাকে,
অবলীলায় ডুবতে থাকে সময়ের চোরাবালিতে!
অবসাদগ্রস্থ শহর অপেক্ষায় থাকে, পুরোপুরি
ডুবে যাওয়ার! অপেক্ষায় থাকে হারিয়ে যাওয়ার!
মাঝে মাঝে শহরটা এলোমেলো ভাবতে থাকে,
ইচ্ছে করে, কেঁপে উঠে ধ্বসিয়ে দিতে, সবকিছু!
অনেক অনেক কষ্টে সে নিজেকে সংবরণ করে!
শহরটা এমন করতে পারে না, কারণ সে যে মানুষ নয়!
মানুষ হলে ঠিকই সে শেষ করে দিতো, সবকিছু!
জড় শহরটা তার সব কষ্ট বয়ে নিয়ে বেঁচে থাকে,
আরো ক'টা দিন! অপেক্ষায় থাকে মানুষ হবার!
অন্তর্নিহিত
এই সাত আসমানের কালো-নীলেরা
যতটা না তোমার, তার চেয়ে বেশী আমার!
আসমান বা জমিন আমাকে খুব টানে, তাদের-
সমান সমান টানে আমি জমিনে হেঁটে বেড়াই!
বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় মেঘের কান্নায় এখন-
তোমার মত আমিও ভিজতে ভালোবাসি।
ভিজতে থাকি যতক্ষণ না আমার উষ্ণ রক্ত-
হিমশীতল হয়ে আমায় অবশ করে দেয়!
শিশির ভেজা ঘাসের উপর হাঁটতে এখন-
তোমার মত আমারও বেশ ভালো লাগে!
হাঁটতে থাকি যতক্ষণ শিশির কণারা
রক্তজবার মত লাল টকটকে না হয়!
ভালো লাগারা একটা সময় সংজ্ঞা পাল্টায়!
কিন্তু অবাক করা বিষয় কি জানো?
অর্থটা বদলায় না, ঠিক একই থেকে যায়!
রচনাকাল: ২১ ডিসেম্বর, ২০২১। অফিস থেকে ফেরার পথে লিখা।
(আজকের তারিখটা অসম্ভব সুন্দর। ২১.১২.২১! এক আর দুই শেষ কবে এতো সুন্দর করে পাশাপাশি ছিলো আমার জানা নেই!)
দ্বিধান্বিত ভয়
যতটা দেরি করে ঘুম থেকে জাগলে
তোমায় দেখতে হয় না, ঠিক ততটা
ঘুম আমি ঘুমোতে চাই!
এর কম ঘুমালে তোমায় দেখতে
পাওয়ার ভয়ে আমি কুঁকড়ে যাই!
যতটা পথ হাঁটার পর মনে হতে পারে
আমি একা হাঁটছি, ঠিক ততটা
পথই আমি হাঁটতে চাই!
এর কম হাঁটলে আমার মনে হয়-
তুমি কোথায়! পাশে নেই বুঝি!
যতটা দূর আমি খালি চোখে দেখতে পাই,
তার পর কি? সেটা আর জানতে চাই না!
মনে হয় তার ঠিক পরই তুমি দাঁড়িয়ে আছো!
হয়তো হাসি হাসি মুখে, হয়তো বা বিষন্ন মনে!
আমি ঠিক জানতে চাই না, একদম না!
তোমায় দেখতে পাওয়ার ভয়টা,
তোমায় না দেখতে পাওয়ার চেয়ে বেশী!
তাই চোখ বুঁজে ভাবছি, ঠিক কতটা সময় পর-
আমি জানবো, তোমায় আর দেখবো না!
কোনোদিনও না!
সময়ের অপমৃত্যু
আমার যেদিন মৃত্যু হবে, দিনটা ভীষণ গুমোট হবে!
আকাশটা হবে থমথমে, বাতাস বইবে না একটুকুও,
চারিদিকটায় তীব্র রোদে চোখ মেলে রাখা হবে দায়!
সেদিন ঢাকা শহর তার সবটা ব্যস্ততা ভুলে যাবে,
ভুলে যাবে তার একান্ত নিষ্প্রয়োজনীয় কাজগুলো!
যে কাজগুলো তাকে ব্যস্ত রাখে, করে রাখে কৃত্রিম!
সেদিন তুমি রোজ সকালের মতো গুটি গুটি পায়ে-
এগিয়ে যাবে তোমার ব্যস্ততার কাছে, অলসভাবে
জানালার গ্রিলের ফাঁকে তাকিয়ে থাকবে রাস্তায়!
দিনের একটা সময় যে তুমি আকাশ দেখো, দেখো
রাস্তার কোলোহল, আর সময়ের ফুরিয়ে যাওয়া,
সেটা আমি ছাড়া আর কেউ কি জেনেছে কখনো!
আমি জানি সেদিন তুমি আকাশ দেখবে না, দেখবে না
আকাশের মেঘেদের এলোমেলো ভেসে বেড়ানো।
রাস্তার নিস্তব্ধতা তোমায় গ্রাস করে শোনাতে থাকবে,
সময়ের টিক টিক এগিয়ে চলা, বড্ড মন্থর গতিতে!
পৃথিবীর সবটা সত্য রঙ সেদিন তুমি বুঝতে শুরু করবে,
প্রিজমে সাদা আলোর সাত রঙে ভেঙে যাবার মত!
বড় অদ্ভুতভাবে আমি জানি এর সবটা! বিশ্বাস করো?
মেঘের কান্না
মাঝে মাঝে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ে থাকি-
পথ পানে! পথটা এমন না হলে কি ই বা হতো!
আমার চোখের দৃষ্টি একটু একটু করে ঝাপসা
হয়ে উঠে, পথের শেষটা আমি দেখতে পাই না!
মাঝে মাঝে আমি হাঁটি, অচেনা পথে, আমার-
মনের মাঝে তোমায় নিয়ে। হাঁটতে হাঁটতে
হঠাৎ আমি থমকে দাঁড়াই, আমার মনে হয়-
অনেকক্ষণ আমি কেবল হেঁটেই চলেছি,
তোমার সাথে গুনগুনিয়ে কথা বলা হয়নি,
অনেকক্ষণ! কত না বলা কথা জমেছে আমার!
সবটা কোনোদিন কি বলা হবে আমার তোমায়?
মাঝে মাঝে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে,
মেঘেদের দেখি! আমার কাছে মনে হয়- মেঘগুলো
আমার দিকেই তাকিয়ে আছে, আমায় দেখে
তারা কেনো জানি হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ে,
আমায় ভিজিয়ে দেয় তাদের অশ্রুকণায়!
আমি চোখ বন্ধ করে ভিজতে থাকি মেঘের
অশ্রুকণায়! তাদের বৃষ্টি বলে ভুল করে, অনেকেই!
ফিরে যাওয়া
এই শহর আমার!
এই রাস্তা, তীব্র জ্যামে আড়ষ্ঠ এই রাস্তা!
এই কোলাহলপূর্ণ চারপাশ, ব্যস্ত সন্ধাবেলা!
এই অফিস প্রাঙ্গণ, সকাল-সন্ধ্যার ব্যস্ততা!
সবকিছু থাকবে, ঠিক যেমনটা ছিলো!
শুধু আমি কাল থেকে আর আসবোনা-
এই পথ ধরে, তোমাদের মাঝে, আগের মত।
কেনো জানি মনে হচ্ছে,
হঠাৎ করেই সকাল সকাল সন্ধ্যে নেমে এলো!
বিকেল আসার অনেক আগেই দুপুরটা শেষ হলো!
পুনর্জন্ম
আমরা কোথাও যাইনি, তুমি-আমি কেউ না!
তবু আমরা একে অপরকে দেখি না, অনেকদিন!
আমার অনেক ইচ্ছের মত তোমাকে দেখার ইচ্ছাকে
আমি চেপে রাখি খুব সন্তর্পনে! খুব যত্ন করে!
তোমার চলার পথে অসময়ের বকুল ফুলের মত
আমি ঝরে পড়ি মাঝে মাঝে, অসময়ের বলে
তুমি আমায় দেখেও দেখো না। আবার যখন
পুনর্জন্ম হবে আমার, আমি সময়ের বকুল ফুল
হয়ে ঝরে পড়বো ঠিক ঠিক, একটু সময় করে
আমায় তুলে নিয়ে মাথায় গুঁজে নিবে তো?
পরের জন্মে আমি না হয় ঘাসফড়িং হবো,
ছোট্ট ডানায় ভর করে স্বপ্ন নিয়ে উড়বো!
আচ্ছা, আমার কি পুনর্জন্ম হবে! বলতে পারো?
বসন্তবৈরী
সবসময় আমার এমনটা মনে হয় তা নয়।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি হারিয়ে গেছি!
আমি হারিয়ে গেছি অকারণে, অবহেলায়!
কেউ নেই একটু হাত বাড়িয়ে আমায় ফেরাবে,
কাছে টেনে বলবে, কেন এতটা মন খারাপ?
অথচ আমি একা বেরোইনি! তুমিও ছিলে সাথে।
তবু আমি হারিয়ে গিয়েছি, ছোট্ট কোনো কারণে!
আকাশের নীল রং দেখবো বলে যখন তাকাই,
আমার দু'চোখ ঝলসে যায়, সূর্যের আলোয়।
দু'হাতে চোখ ঢাকতে গিয়েও থেমে যাই, যদি-
আমার হাত দু'টোও ঝলসে যায়, চোখের মতো!
ঝলসানো হাতে তোমার হাত ধরবো কিভাবে!
খরস্রোতা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আমার বলা
কথাগুলো প্রচন্ড বাতাসে হারিয়ে যায়,
শোনা যায় শুধু বাতাসের শো শো শব্দ, আর এক
বসন্তবৈরীর ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ!
কেমন আছো মহারাণী?
একটার পর একটা শব্দ বসে যে কবিতা
সৃষ্টি হয়, শুধু তোমার জন্য, সে সব কবিতারা
আমায় আজ বুঝতে শিখিয়েছে, কতটা কাল
ধরে আমি প্রতীক্ষায় ছিলাম, শুধুই তোমার!
রোজ বেলা শেষে তুমি ফিরে যাও আপন নীড়ে।
কিন্তু তোমার যে তুমি লুকিয়ে আছো
আমার হৃদয় মাঝে, সে তো আমার সাথেই
ভ্রমণ করে, আমার কল্পরাজ্যে, অষ্টপ্রহর।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় আমার ঘরের জানালাটা
জুড়ে দেই তোমার ঘরের জানালায়, তারপর
আমি প্রাণ ভরে দেখবো শুধুই তোমায়।
মাঝে মাঝে হয়তো আমার হাতের চায়ের
কাপটা বাড়িয়ে দিবো তোমার দিকে!
মাঝে মাঝে তোমার ঘরের আলোয় আমার
ঘুম ভাঙ্গবে, আলতো আলোয় তোমায় দেখে
হয়তো আমি বলবো, কেমন আছো মহারাণী?
হাফ কাপ চা
বৃষ্টিস্নাত এক বিকেল বেলায় তোমায় খুব মনে পড়ে।
চায়ের কাপে টি ব্যাগটা অলসভাবে ডুবে আছে- অনেকক্ষণ!
হঠাৎ কাপে একটা চুমুক দেই, আবার-
দেই না! ধূলো জমা ঘরের এক কোণে বসে আছি,
একা একা। যে চেয়ারটায় তুমি সবসময় বসতে-
তাতে আমি ধূলো জমতে দেই নি, একটুও।
ঘোলাটে আকাশ আমার মনের আকাশ ঢেকে রাখে,
অদ্ভুতভাবে। এমন দিনগুলোয় শহরটাও কেমন যেন
বিষন্ন হয়ে থাকে! এই বিষন্নতা আমার ভালো লাগে না।
আমার ভালো লাগে তোমার হাসিমুখ, আর তোমার
হাতে ধোয়া উঠা এক কাপ চা! যার হাফটা শুধুই আমার।
অকারণ ভালোবাসা
একটা কথা কি জানো? যখন তুমি কাউকে ভালোবাসবে,
সবসময় ভালোবাসি, ভালোবাসি. . . .বলা লাগবে না!
তোমার প্রতিটা কাজে, প্রতিটা কথায়, এমনকি নীরবতায়
তোমার ভালোবাসারাই তাকে বলে যাবে, ভালোবাসি!
ভালোবাসি, ভালোবাসি, অনেক অনেক ভালোবাসি!
আচ্ছা, তোমায় আমি কেন ভালোবাসি? তুমি কি জানো?
তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় ভালোবাসি বলেই!
তোমায় আমি ভালোবাসি আরো ভালোবাসবো বলেই!
তোমায় আমি ভালোবাসি রোদমাখা সকালের মতো,
তোমায় আমি ভালোবাসি এক টুকরো মেঘের মতো,
তোমায় আমি ভালোবাসি কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতো,
তোমায় আমি ভালোবাসি নীল আকাশের মতো,
তোমায় আমি ভালোবাসি আমার সবটা দিয়ে!
তোমায় আমি ভালোবাসি অসীম সময়ের জন্য!
মাঝে মাঝে তোমাকে হারানোর ভয়ে আমি কুঁকড়ে যাই!
ভয়ে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে, বন্ধ চোখে আমি-
নিজেকেও আর খুঁজে পাই না। কোথাও না!
এমনকি আমার একান্ত কল্পনার রাজ্যেও না!
আমি আমার চোখ দু'টো বন্ধ করতে চাই না!
আমি তোমাকে হারাতে চাই না, সত্যি বলছি!
আচ্ছা, তোমায় কি আমি বললাম, ভালোবাসি!
ভালোবাসি, ভালোবাসি, অনেক অনেক ভালোবাসি!
একদিন জুপিটারে
তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাবো, জুপিটারে!
একসাথে দেখবো তার নীল আকাশ আর
লালচে অরোরা! অদ্ভুত সে সুন্দর দৃশ্য দেখে
তুমি হবে বিমোহিত, আমিও অবাক বিস্ময়ে
দেখবো, তোমায়! অদ্ভুত প্রাণোচ্ছ্বল তোমায়!
জুপিটারের চারটি উপগ্রহ আইয়ো, ইউরোপা,
গ্যানিমেড, ক্যালিস্টো এর নাম পাল্টে আমরা
তাদের নতুন নাম দিবো- তিন, ছয়, নয়, তেরো!
হঠাৎ গ্রেট রেড পয়েন্টের দিকে তোমার চোখ
পড়লো, এত সুন্দর লাল ঝড় তুমি কখনো দেখনি!
আমার খুব ইচ্ছে হয় এক ফোঁটা লাল এনে দেই
তোমায় সে লাল ঝড় থেকে! অনেকে অনেকে লালের
মাঝে তুমি হয়তো খুশি হতে এই অদ্ভুত লালকে পেয়ে!
অনেকদিন
অনেক দিন দেখা হয়না তোমার সাথে!
গুনে গুনে দুই দিন! তারপর একদিন-
দেখা হলো তোমার সাথে! আমি বলবো-
"কতদিন তোমায় দেখি না! অনেক অনেকদিন!"
তুমি একটু হেসে আমার কথায় সায় দিয়ো!
মাঝে মাঝে আমি বড্ড পাগলামি করে বসি!
মাঝে মাঝে না বোধহয়, সবসময়ই!
যে চাওয়ায় পাগলামি নেই, নেই অস্থিরতা,
সে চাওয়া কেমন চাওয়া বলো! তুমি আমার-
পাগলামিদের ভালোবেসো, আমার অস্থিরতাদেরও!
আমার ছেলেমানুষী, আমার খামখেয়ালীদেরও!
আমি চাই আমাদের কথা হোক সবসময়,
বেলায় - অবেলায়, কারণে - অকারণে!
আমি চাই আমাদের দেখা হোক সবসময়,
জীবনের সবটা সময়, জীবনের পরের জীবনেও!
মেঘবালিকা আমার
মেঘবালিকা আমার! তুমি মেঘ হও বা বৃষ্টি-
আমায় একটু ছায়া দিয়ো! সূর্যের তাপে-
না হয় আমি গলে যাবো, হিমশীতল বরফের মত,
অথবা একটুকরো মোমের মত!
বসন্তবৈরী আমার! রোজ সকালে আমার ডালে
একটু বসো এসে! ডালটা আমার হোক না ছোট,
থাকবে সেথায় তুমি আমার মহারাণীর বেশে।
বিকেল বেলায় আমার ডালে খানিক আঁচড় কেটো!
যে আঁচড়ে থাকবে মিশে ভালোবাসা শত।
বেদনাবিধুর নীল
আমার যখন খুব মন খারাপ হয়
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি,
আমার মন খারাপের কিছুটা হয়তো
ছড়িয়ে পড়ে আকাশের বিশালতায়!
আকাশের নীল আর আমার বেদনার
নীলেরা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়!
আকাশের সে বেদনাবিধুর নীল দেখে
সবার মতো তুমিও হয়তো বিমোহিত হও!
মনে আছে তোমায় আমি বলেছিলাম,
ভালোবাসি! কতটা ভালোবাসি সেটাও
কি বলেছিলাম কখনো! বলে না থাকলে-
আজও আমি বলবো না! তুমি বুঝে নিয়ো।
এক রঙা রংধনু
আকাশের কালো মেঘ যখন ঝরে পড়ে-
স্বচ্ছ বৃষ্টি বেশে, তোমার মন খারাপেরা-
হুটোপুটি করে ছুটে আসে তোমার-
চোখের কোণে! স্বচ্ছ বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায়-
তারাও মিশে যেতে চায়!
মাঝে মাঝে বৃষ্টি আসে ঝড় হয়ে,
হয়তো কালবৈশাখীর মতই, হঠাৎ!
তোমার মন খারাপেরা তখন খুব নীরবে
ঝরে পড়ে, তোমার দু'চোখ বেয়ে!
বৃষ্টির ফোঁটায় মিশতে না পারা মন খারাপের প্রবল স্রোত-
সেদিন হয়তো বন্যা বইয়ে দেয়, তোমার চারপাশটায়!
মাঝে মাঝে তোমার মুখজুড়ে রংধনু খেলা করে!
আমি বসে বসে সবটা আঁকি আমার চোখে,
আমার মানসপটে।
রংধনুর সবক'টা রঙ আমার কাছে নেই,
আমার আঁকা রংধনুটা শুধুই লাল!
এক রঙা রংধনু কি রংধনু হয়!
আমার ভালোবাসার রংধনুটা লাল!
লুকিয়ে রাখা শব্দ
আমার কিছু শব্দ আমি উড়িয়ে দেই প্রতিদিন,
তোমার কাছে, আরো কিছু শব্দ আমি লুকিয়ে
রাখি আমার কল্পরাজ্যের সিন্দুকে, বড় যত্নে!
কিছু কিছু শব্দ লুকিয়ে থাকে মেঘের রাজ্যে,
কোন এক বর্ষণমুখর দিনে তারা ঝরে পড়বে
তোমার গায়ে, তখন কি তাদের শুনতে পাবে?
কিছু কিছু শব্দ তোমায় ভালোবেসে তোমার
কানে গুনগুন করে বলে যায় অনেক কথা!
নিস্তব্ধ নীরবতায় তুমি তাদের কান পেতে শুনো।
তোমার কণ্ঠে অনেকদিন আমি শুনতে পাই না
আমার শব্দদের! তাদের খুব সুন্দর শোনায়-
তোমার কণ্ঠে। আবার কবে শুনবো আমি তাদের?
বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠ
এখন মধ্যরাত। তুমি নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে আছো।
আমার জানালার কাঁচে বাতাসের তীব্র ধাক্কা
আছড়ে পড়ছে একের পর এক, অবিরাম।
জানালাটা খুলে আমি তাকিয়ে থাকি দূরের
অন্ধকারে। এই শহরে এমন ঘুটঘুটে অন্ধকার
দেখিনি অনেকদিন! দেখিনি এমন নীরবতাও!
অথচ সকাল হলেই থাকবে না এই নীরবতা,
সবক'টা জানালায় একে একে জ্বলে উঠবে
নিভে যাওয়া আলোগুলো। অস্থির হবে চারপাশ।
তবু আমি অপেক্ষায় থাকি উজ্জ্বল সকালের।
যখন ভাঙবে তোমার ঘুম, আর আমি বলবো,
সুপ্রভাত প্রিয়! আমার বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠ আরও
কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না কখনো!
হয়নি শুধু বিদায় বলা!
কিছু কিছু যাত্রা শুরু হয় আমাদের মৃত্যুর পর,
যে তোমায় পাওয়া হয়নি এ জীবদ্দশায়,
সে তোমায় পাওয়ার যাত্রা যেমন শুরু হবে!
অধীর আগ্রহে আমি অপেক্ষায় আছি,
অন্তিম সে যাত্রা শুরুর, তোমায় ছাড়া!
যাত্রা শুরুর অনেক অনেক পর দেখা হবে-
তোমার সাথে! কি বলবো তোমায় আমি সেদিন!
কিছুই বলবো না হয়তো! হয়তো শত সহস্র বছর
শুধু তোমার চোখে চোখ রেখেই কাটিয়ে দিবো!
হয়তো একটু হেসে বলবো, শেষ পর্যন্ত দেখা হলো!
আচ্ছা, তোমার কি মন খারাপ হবে আমায় দেখে!
আমার উপর কি রাগ করে থাকবে? যেমনটা থাকো?
এ বেলায় তোমার সাথে শেষ দেখাটা হয়ে গেছে।
হয়নি শুধু বিদায় বলা! হয়নি বলা অনেক কিছুই!
তোমার সবটা স্মৃতি আমি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি,
নিয়ে যাচ্ছি সবটা না বলা কথা, তোমারই জন্য!
পরের জন্মে আমায় অনেক অনেক ভালোবেসো,
ঠিক যেমনটা আমি তোমায় বেসেছি, এই জন্মে!
এই জন্মে একবার কি আমায় বলবে, ভালোবাসি!
বলছি কি শোনো
বলছি কি শোনো, আমি কিন্তু যাচ্ছি চলে!
উদ্দেশ্যহীন পথে পথে ঘুরে বেড়াবো বলে!
আমার সাথে আমার তুমি যাবে না তা জানি,
তারপরেও হাতের মুঠোয় থাকবে তোমার-
অনেক খানি তুমি!
বলছি কি শোনো, পথের মাঝে হঠাৎ যদি-
ইচ্ছে জাগে মনে, আসতে ফিরে তোমার কাছে,
সব অভিমান ভুলে! করবো টা কি বলবে?
আসলে ফিরে তোমার কাছে, হাসবে কি তুমি?
বলছি কি শোনো, যাবে কি আমার সঙ্গে?
ভয় পেয়ো না, ঝড় বা তুফান, সামলে নিবো-
সবটা আমি ঠিকই। হয়তো তুমি ভাবছো আমায়-
বড্ড ছেলেমানুষী!
বলছি কি শোনো, এবার কিন্তু সত্যিই আমি যাচ্ছি!
উদ্দেশ্যহীন পথে পথে ঘুরে বেড়াবো বলে!
আজ কি একবার আসবে?
আজ কি একবার আসবে, আমার কল্পরাজ্যে?
সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে আমার সে রাজ্যে,
একা একা ভালো লাগছে না আমার।
তুমি এলে একটু গল্প করা যেতো,
বলা হতো অনেক না বলা কথা, তোমার, আমার!
আজ কি একবার আসবে, আমার কল্পরাজ্যে?
রঙ তুলিতে তোমায় আঁকবো বলে বসে আছি,
অনেকক্ষণ, অনেক অনেক ক্ষণ!
তুলির ছোট্ট ছোট্ট আচড়ে একটু একটু করে-
আমার ক্যানভাসে তোমায় আঁকবো বলে বসে আছি,
অনেকক্ষণ, অনেক অনেক ক্ষণ!
আজ কি একবার আসবে, আমার কল্পরাজ্যে?
অনেকদিন তোমার সাথে যাওয়া হয় না আমার-
সাজোয়া নদীতে! নদীর পাড়ে দুইটি অশ্বত্থ গাছ,
একা, নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে কতকাল!
আমায় নিয়ে তাদের কাছে কিছুটা কাল বসবে?
আচ্ছা, থাক। এসো না তুমি! এসো না আজ!
হঠাৎ করেই মনটা আমার খারাপ হয়ে গিয়েছে!
আমি চাই না আমার মন খারাপদের ছড়িয়ে দিতে-
তোমার মাঝে!
মাঝে মাঝে
তোমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো-
আমার কাছে অমূল্য, ভয়ঙ্কর সুন্দর!
মাঝে মাঝে মনে হয় ঘড়ির কাঁটার চেয়ে
বড়ো শত্রু বোধহয় আমার আর নেই!
তুমি এলেই কেনো জানি সে ছুটতে শুরু করে-
তার সঅঅঅবববব. . . . . . . . . . . . শক্তি দিয়ে!
মাঝে মাঝে তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে
আমার সবকিছু বড্ড এলেমেলো হয়ে যায়!
আমি জানি, এলেমেলো আমায় তুমি বুঝতে পারো!
যতোটা না আমি বুঝতে পারি আমার আমাকে!
বসন্তবৈরী ঘুমায়েছে
আমি জানি তুমি ঘুমায়েছ সখী,
আমি যে একা একা বসিয়া আছি!
তোমার জন্য, তোমার কথা শুনিবার জন্য!
কতটা পথ করিয়াছি পায়চারি, অকারণ!
তুমি ঘুমায়ে রয়েছো সখী! আমি জানি!
বিকাল গড়াইয়া সন্ধ্যা নামিলো,
বড্ড শান্তভাবে।
বসন্তবৈরী ঘুমায়েছে আমার,
আমি তার শান্তির ঘুম
ভাঙাই কেমনে!
তোমার জন্য অপেক্ষারা
তোমার জন্য আমার অপেক্ষারা বসে থাকে-
সারাক্ষণ! সকাল-দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যা বেলা,
এমনকি গভীর রাতের সীমাহীন নিস্তব্ধতায়!
তুমি আমার অপেক্ষাদের দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করো,
আমি চোখ বুঁজে বসে থাকি একা, শুধু তোমারই জন্য!
আধো আলো-আধারিতে আমি যে তোমায় খুঁজে চলেছি- অনন্তকাল।
এই বুঝি তুমি এলে! আমার বাহুডোরে!
হঠাৎ আমার অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে তুমি এলে!
তোমার হাতটি বাড়িয়ে আমায় তুমি টেনে তুললে।
আমার সমস্ত মন খারাপদের ছুড়ে ফেলে আমি চললাম-
তোমার সাথে। অনেকটা পথ একসাথে হাঁটবো বলে।
দূর আকাশে
আমার আকাশে প্রতিদিন আর মেঘবালিকা আসে না,
আমি একা একা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি-
বিষন্ন মনে। আমার বিষন্ন মনের খোঁজ কি সে জানে!
মেঘের রাজ্যে অসংখ্য মেঘের মাঝে আমি অস্থিরভাবে
খুঁজে বেড়াই আমার মেঘবালিকাকে! খুঁজে পাই না!
আমার মনের আকুলতা ঐ দূর আকাশে তার কাছে
পৌঁছায় না, পৌঁছায় না আমার মনের বিষন্নতাও!
একদিন আমি যাবো ঐ দূর আকাশে, তখন না হয়
খুঁজে নেবো আমার মেঘবালিকাকে! ততদিন না হয়
থাকুক আমার মনটা বিষন্ন! ভেঙে হোক খান খান!
সাহসেরা দুঃসাহসী
আর ক'টা দিন পর আমি একা একা যাত্রা শুরু করবো,
যাবার কালে তুমি আমায় বিদায় জানাতে আসবে তো?
লম্বা যাত্রায় আমার সাথে তেমন একটা কিছু থাকবে না,
যাবার কালে শুধু তোমার আরেকটু স্মৃতি নিবো, দিবে?
তোমার জন্য আমি রেখে যাচ্ছি ২১৭টি চিঠি-
গুনে গুনে ঠিক দুইশত সতেরোটি, একটা কমও না!
তোমার জন্য আমি রেখে যাচ্ছি ১১৩টি কবিতা-
সবগুলো তোমার জন্য! শুধুই তোমার জন্য!
রঙিন এ পৃথিবীতে রঙহীন আমায় তুমি মনে রাখবে তো!
আকাশে মেঘেদের আনাগোনায় আমায় খুঁজবে তো?
সাগর পাড়ে আছড়ে পড়া হাজারো ঢেউয়ের শব্দে-
কান পেতে আমার শব্দদের তুমি শুনবে তো!
তোমায় আমার একটা কথা বলার ছিলো-
কোনো এক শীতের সন্ধ্যায়! তোমার মনে আছে?
সেদিনের মতো আজও কথাটা তোমায় বলা হবে না,
সেদিনের মতো আজও আমার সাহসেরা-
দুঃসাহসী হবেনা!